অন্যান্য অনেক নতুন নতুন সোশ্যাল মিডিয়ার খোঁজ পেলেও এখনো বাংলাদেশের বেশীরভাগ মানুষ ফেসবুকের দিকেই নজর দেন বেশি করে। নিত্যদিন ফেসবুকের খোঁজখবর নিতে গিয়ে আমাদের মেজাজ ভালো হবার পাশপাশি খারাপও হয় বই কি। এমন অনেক কাজ আছে, ভালো মনে যেগুলো করতে গিয়ে উল্টো আপনি মানুষের অপছন্দের পাত্র হয়ে দাঁড়াতে পারেন। গবেষণার ভিত্তিতে এমনই কিছু ফেসবুক সংক্রান্ত আচরণের কথা জেনে নিন যেগুলো বন্ধুদের কাছে আপনাকে করে তুলতে পারে অপ্রিয়।
১) খুব বেশি ছবি শেয়ার করা
নিজের সদ্যজাত ভাতিজির প্রথম হামা দেওয়ার খান-পঞ্চাশেক ছবি ফেসবুকে আপলোড করতে যাচ্ছেন? আরেকবার ভেবে দেখুন। কারণ এতে আপনার ব্যাপারে মানুষের ধারণা খারাপ হয়ে যেতে পারে। এক গবেষণায় গড়ে ২৪ বছর বয়সী ৫০০ মানুষের ফেসবুকীয় আচরণের দিকে লক্ষ্য করা হয়। এসব মানুষকে ধরিয়ে দেওয়া হয় একটি প্রশ্নপত্র। এতে বন্ধু, কাছের বন্ধু, সহকর্মী, আত্মীয়, পিতামাতা এবং ফেসবুক বন্ধুদের সাথে তাদের সম্পর্কের গভীরতা নিয়ে প্রশ্ন ছিলো। এরপর গবেষণায় অংশ নেওয়া এসব মানুষের ফেসবুকে ছবি আপলোড করা নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। তারা সেলফি থেকে শুরু করে পারিবারিক ছবি, বন্ধুদের সাথে সময় কাটানোর ছবি ইত্যাদি কতো ঘন ঘন ফেসবুকে আপলোড করেন তা জানতে চাওয়া হয়। গবেষণাটি থেকে দুইটি মজার তথ্য পাওয়া যায়। এক হলো, ফেসবুকে যারা বন্ধুদের সাথে অনেক ছবি আপলোড করে তখন পরিবারের সাথে তাদের সম্পর্ক খুব একটা ভালো হয় না। আবার পরিবারের অনেক বেশি ছবি আপলোড করলে দেখা যায় বন্ধুদের সাথে তাদের সম্পর্ক খুব একটা ভালো হয় না। গবেষণার সাথে জড়িত বেন মার্ডার বলেন, “শেয়ার করার সময়ে সতর্ক থাকুন আর ভাবুন অন্যরা একে কি চোখে দেখবে। শেয়ার করলে সম্পর্ক ভালো হতে পারে বটে, কিন্তু খারাপও হতে পারে।”
২) খুব বেশি বা খুব কম বন্ধু থাকা
নিজের ফ্রেন্ড লিস্টের দিকে লক্ষ্য করুন। এখান থেকে উপড়ে ফেলে দিন কিছু আগাছা। অথবা দরকার মনে করলে নতুন কিছু মানুষ খুঁজুন যারা আপনার বন্ধু হতে পারে। কারণ গবেষণায় দেখা যায় খুব বেশি বা খুব কম বন্ধু থাকলে তা অন্যদের চোখে আপনার ভাবমূর্তি নষ্ট করতে পারে। একটি গবেষণায় ১৫০ জন কলেজ শিক্ষার্থীকে বানোয়াট কিছু ফেসবুক প্রোফাইল চেক করতে বলা হয় এবং এই প্রোফাইলের মানুষগুলোকে তাদের পছন্দ হয় কিনা তা জানতে চাওয়া হয়। ২০০৮ সালে এই গবেষণাটি করা হয়। আর এই গবেষণায় অংশ নেওয়া মানুষদের নিজেদের ফেলসবুক ফ্রেন্ড ছিলো গড়ে ৩৯৫ জন করে। ফলাফলে দেখা যায়, মোটামুটি ৩০০ জনের মতো বন্ধু থাকলে সেসব মানুষকে পছন্দের তালিকায় রাখেন এসব ছাত্র। একটি প্রোফাইলে ১০০ জনের মতো বন্ধু থাকলে সেটাকে সবচাইতে বেশি অপছন্দ করা হয়। আবার ৩০০ জনের বেশি থাকলেও অপছন্দ করা হয়। কী কারণে বেশি বন্ধু থাকলে তারা অপছন্দের পাত্র হন? গবেষণায় বলা হয়, যাদের এতো বেশি বন্ধু আছে, দেখে মনে হয় তারা তারা ফেসবুকে বেশি মনোযোগ দিচ্ছেন এবং যাকে তাকে বন্ধু বানিয়ে ফেলছেন। এক্ষেত্রে অবশ্য এই গবেষণায় যারা অংশ নিয়েছিলেন তাদেরও ভূমিকা আছে। তাদের বন্ধু সংখ্যা ৩০০ এর কাছাকাছি বলেই তারা তিনশোর বেশি বা কম বন্ধু থাকা পছন্দ করেন না। যদি তাদের বন্ধু সংখ্যা গড়ে ১০০০ হতো তাহলে তারা হয়তো ১০০০ বন্ধু থাকলেও কাউকে অপছন্দ করতো না। তবে একটি জরিপ থেকে দেখা যায় ২০১৪ সালে মানুষের বন্ধু সংখ্যা ছিলো গড়ে ৩৩৮। এই সংখ্যার খুব বেশি বা কম সংখ্যাক বন্ধু থাকলে আপনিও অপ্রিয় হয়ে যেতে পারেন।
৩) খুব কাছে থেকে তোলা ছবি
আপনি যতই সুন্দর/সুন্দরী হয়ে থাকেন না কেন, মুখের একদম কাছে থেকে তোলা ছবি প্রোফাইল পিকচার হিসেবে দিলে আপনারই ক্ষতি। ছোট একটি গবেষণায় এটা দেখা যায়। ৪৫ জন মানুষকে নিয়ে করা হয় এই গবেষণা। তাদেরকে ১৮ জন পুরুষের সাদাকালো ছবি দেখানো হয় কম্পিউটারে। শুধু ছবি দেখে প্রতিটি মানুষের বিশ্বস্ততা, দক্ষতা এবং আকর্ষণের ব্যাপারে রেটিং করতে বলা হয়। গবেষণায় দেখা যায়, “পার্সোনাল স্পেস” অর্থাৎ দেড় ফুটের কম দুরত্ব থেকে মুখের ছবি তোলা হলে তা অপছন্দ করে থাকেন মানুষ। মোটামুটি সাড়ে চার ফুট দুরত্ব থেকে ছবি তুললে আবার তাদের রেটিং ভালো হয়ে থাকে।
৪) অর্থহীন স্ট্যাটাস
ব্রিটেনে মোটামুটি ১০ জনের মাঝে চার জন খুবই অপছন্দ করেন অর্থহীন স্ট্যাটাস আপডেট- দেখা যায় একটি গবেষণায়। “ডিনার করছি” অথবা “চা পান করছি” এ ধরণের বোরিং স্ট্যাটাস সবচাইতে অপছন্দ করেন তারা এবং চান যে ফেসবুক ব্যবহারকারীরা এমন অভ্যাস বন্ধ করে দিন, জানা যায় Daily Mail থেকে।