অনলাইন জগত বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম—যা-ই বলুন না কেন, সেখানে ফেইসবুকের জনপ্রিয়তার ধারে কাছেও নেই কেউ। অথচ পুরো বিশ্বকে নাড়িয়ে দেওয়া এই ফেইসবুকের জন্ম হয়েছিল একেবারেই ক্ষুদ্র পরিসরে, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে শখের বশে নতুন কিছু তৈরি করার আগ্রহ থেকে!
১৯৮৪ সালের ১৪ই মে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের হোয়াইট প্লেইনস এলাকাতে মনোচিকিৎসক ক্যারেন ও দন্তচিকিৎসক এডওয়ার্ড জাকারবার্গের ঘরে জন্ম নেওয়া মার্ক স্কুল জীবনে গ্রীক ও ল্যাটিন ভাষায় পারদর্শী ছিলেন। তার পুরো নাম হল মার্ক এলিওট জাকারবার্গ। ফেইসবুকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং প্রেসিডেন্ট ছাড়াও পেশাগত জীবনে তিনি একজন কম্পিউটার প্রোগ্রামার ও সফটওয়্যার ডেভেলপার। স্কুল জীবনে বিভিন্ন মহাকাব্য থেকে চমৎকার আবৃত্তি করতে পারার সুনাম ছিল তার।
২০০২ সালে ফিলিপস এক্সেটার অ্যাকাডেমি থেকে পাস করে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ২০০৪ সালে হার্ভার্ডে পড়াকালীন বন্ধুদের সাথে মিলে প্রতিষ্ঠা করেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুক ডট কম। শুরুতে এটি স্রেফ হার্ভার্ডের ছাত্রছাত্রীরা ব্যবহার করলেও পরবর্তীতে এটা পুরো আমেরিকাতেই ছড়িয়ে পড়ে। ধীরে ধীরে ফেইসবুক পৌঁছে যায় সারা বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের কাছে।
ফেইসবুকের কল্যাণে মাত্র ২৩ বছর বয়সে বিলিয়নেয়ার হন জাকারবার্গ। পৃথিবীর চতুর্থ শীর্ষ ধনী জাকারবার্গের বর্তমানে সম্পদের পরিমাণ ৫১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। মজার ব্যাপার হচ্ছে ফেইসবুকের সিইও হিসেবে জাকারবার্গ বছরে বেতন নেন মাত্র এক ডলার বা ৮০ টাকা। মৃত্যুর আগে মার্ক তার মোট সম্পদের ৫০ শতাংশ সম্পদ দান করে যাবেন। কন্যা ম্যাক্সের জন্মের পর তাকে উপহার হিসেবে জাকারবার্গ ঘোষণা দেন, ফেইসবুকের থাকা তার শেয়ারের ৯৯% সম্পদই তিনি দান করবেন দাতব্য কাজে। মেয়ের কাছে লেখা এক খোলা চিঠিতে জাকারবার্গ এবং তার স্ত্রী প্রিসিলা চ্যান জানান, দানের ওই অর্থ ব্যবস্থাপনায় তারা ‘চ্যান-জাকারবার্গ ইনিশিয়েটিভ’ নামে একটি নতুন দাতব্য সংস্থা গঠন করতে যাচ্ছেন। সংস্থাটির লক্ষ্য হবে—মানুষের সম্ভাবনাকে এগিয়ে নেয়া এবং আগামী প্রজন্মের সব শিশুর জন্য সমতা নিশ্চিত করা।
জাকারবার্গ বলেন, তাদের কাজের প্রাথমিক ক্ষেত্রগুলো হবে—ব্যক্তিগত শিক্ষা, রোগ-ব্যাধির চিকিৎসা, মানুষকে সংযুক্ত করা এবং শক্তিশালী কমিউনিটি (অথবা দেশীয় ভাষায় মহল্লা) গড়ে তোলা। এছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন অনুন্নত এলাকায় বিনামূল্যে ইন্টারনেট সুবিধা পৌঁছে দেওয়াও জাকারবার্গের লক্ষ্য।
২০১০ সালে বিশ্বের সর্বাধিক পঠিত সাপ্তাহিক ‘টাইম’ ম্যাগাজিন কর্তৃক তাদের প্রচ্ছদে ঠাঁই করে নেন৷মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ‘টাইম’ ম্যাগাজিন ঐ বছর তাকে ‘পারসন অব দ্য ইয়ার’ হিসেবে মনোনীত করেছিল।
২০১১ সালে সিলিকন ভ্যালিতে সবচেয়ে বাজে পোশাক পরিহিত ব্যক্তি হিসেবে মার্ক জাকারবার্গ নির্বাচিত হন। তিনি নিয়মিত ধূসর রঙের টি-শার্ট ও জিনসের প্যান্ট পরেন। এর কারণ হিসেবে তিনি জানান, অপ্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে মাথা ঘামিয়ে সময় নষ্ট না করে তিনি বরং সে সময়টা ফেইসবুক কমিউনিটির কিভাবে আরও উন্নতি করা যায়, সেই চিন্তায় ব্যয় করতে চান। তাই তিনি প্রতিদিন একই টি-শার্ট ও জিনস পরেন যেন কোন রংয়ের টি-শার্ট পড়তে হবে, সেটা নিয়ে ভেবে অহেতুক সময় নষ্ট করতে না হয়।
পৃথিবীর সকল মানুষকে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে এক অসাধারণ বন্ধনে বেঁধে ফেলার অসামান্য কর্মযজ্ঞ চালিয়ে যাওয়া মার্ক জাকারবার্গের চেষ্টা, সাধনা এবং দৃঢ় প্রতিজ্ঞা আমাদের জন্য অসামান্য অনুপ্রেরণা।