সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ফেসবুক বর্তমানে এতো বেশি জনপ্রিয় যে এটি এখন আমাদের একটি অপরিহার্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রতিনিয়ত আমাদের বন্ধু-বান্ধব সঙ্গে যোগাযোগ,হচ্ছে সহজ কথায়, আমাদের ফেসবুক প্রোফাইলটি আমাদের নিজেরদের বাহ্যিক একটা রেপ্লিকা, আর আপনার এই ফেসবুক একাউন্টটি যদি হ্যাক করা হয়, এটি আমাদের কাছে কতটা কস্টের ব্যপার হতে পারে
প্রতিদিন একবেলা ফেসবুক, মেসেঞ্জার। উহু! না হলে চলেই না!
তো এখন কি আপনার উচিত নয় এই প্রফাইল টি নিরাপদ রাকহা? তো চলুন যে সব বিষয়ে আমাদের নজর না দিলেই নয়।
টপিক্সঃ
– কিভাবে ফেসবুকের নিরাপত্তা দিবেন?
– পাসওয়ার্ড প্রটেকশন
– লগ ইন এলার্ট
– Two step ভেরিফিকেশন
– বিশ্বাসযোগ্য লিষ্ট
– ব্রাওজার এবং এপ এর নিরাপত্তা
– ফ্রেন্ড লিস্ট
– ফেসবুক প্রাইভেসি সেটিংস
– নিউজ ফিড
– ফিসিং
– ইমেইল বা এসএমএস স্পাম
১। পাসওয়ার্ডঃ
একটি শক্তিশালী পাসওয়ার্ড তৈরি করুন। আপনার পাসওয়ার্ড কখনই আপনার নাম, জন্ম তারিখ, পোষা প্রাণী বা সাধারণ শব্দগুলি এড়িয়ে চলুন।
কেন?
কারন ফেসবুকে লগ ইন করতে ইমেইল, ফোন নাম্বার আর পাসওয়ার্ডের প্রয়োজন। আপনার ফোন নাম্বার, ইমেইল একজনের জানা খুব কঠিন কিছু না। পরিচিত যে
কারও কাছেই এগুলো থাকবে। এখন আপনার পাসওয়ার্ড যদি হয় ০১১৮১৯৯৬, বা ১২৩৪৫৬, ৬৫৪৩২১ বা আপনার খুব কমন কিছু, যেগুলো আপনার ফেসবুক পোষ্ট
বা মেসেঞ্জারে কথা বলার সময় ইউস করেন, তো এটা কি ফেসবুক হ্যাক করার জন্য সহজ না?
এমন পাসওয়ার্ড দিন, যেটি আপনার মনে রাখতেই আপনি হিমসিম খাবেন। পাসওয়ার্ডে নাম্বার+এলফাবেট+কিবোর্ডের আজগুবি চিহ্ন গুলো দিয়ে দিন। পাসওয়ার্ড যত বড়
দিবেন তত ভালো।
ধরুন আপনার পাসওয়ার্ডঃ ABde12 (এখানে ৬টা কেরেক্টার আছে)
ধরুন আপনার ইমেইলঃ abcde@gmail.com
এটা কি হ্যাক করতে পারবে?
উত্তরঃ হা পারবে, কিন্তু সময় লাগবে।
পাসওয়ার্ড কিভাবে হ্যাক হয়?
পাসওয়ার্ড ভাঙ্গার অনেক প্রোগ্রাম আছে, কোন একটা প্রোগ্রাম কে বলা হলো, তুমি A-Z, a-z, 1-0 এ যতগুলো ক্যারেক্টার আছে সবগুলো চেক কর, পরিচিত শব্দগুলোও চেক কর, সর্বোচ্চ ক্যারেক্টার যেন ৬ টা হয়। সাথে বলা হলো, প্রতিটা পাসওয়ার্ড যেন, facebook.com/login.php সার্ভারে গিয়ে ইনপুট করা হয়। লগ ইন হয়ে গেলে যেন জানানো হয়।
*facebook.com/login.php হলো ফেসবুক লগ ইন পেজ।
প্রোগামটি কাজ করা শুরু করল, পাসওয়ার্ডঃ AAaa11,… AAba11,… AAab11,…, ABdd12,… ABde12
Program Result=Found: ABde12
তো এখন কত সময় লাগবে আপনার পাসওয়ার্ড পেতে?
১ঘন্টা? ২ঘন্টা? ১০ঘন্টা?
এটা নির্ভর করবে যে প্রোগ্রামটি কত ফাস্ট! যে কম্পিউটারে প্রোগ্রাম টি চলছে সেটি কত দ্রুত কাজ করতে পারে!
স্বাভাবিক ভাবে এই পাসওয়ার্ডটি পেতে সর্বোচ্চ ২-৩ ঘন্টা সময় লাগবে!
এখন বলতে পারেন, তাহলে তো যেমন ই পাসওয়ার্ড ই দেই না কেন, হ্যাক ত হবেই। হা হবেই। শুধু সময়ের ব্যাপার। যত ছোট পাসওয়ার্ড তত দ্রুত হ্যাক!
আপনার কি-বোর্ডে যে কয়টা চিহ্ন আছে, সবার কাছে সেই কয়টাই চিহ্ন আছে। আপনি কি-বোর্ড দিয়ে আপনার পাসওয়ার্ড দিয়েছেন, যে হ্যাক করবে তার কি-বোর্ডেও তো সমান বাটন, তো পাসওয়ার্ড ত হ্যাক করা কঠিন কিছু না। শুধু সময়ের ব্যাপার।
এখন আপনার কি করনীয়?
১। আপনি মানুষ টা যত ছোটই হোন, আপনার পাসওয়ার্ড যে মুটামুটি বড় সাইজ হয়।
২। অবশ্যই আনকমন।
৩। এই পাসওয়ার্ড আপনি পৃথিবীর আর কোথাও ইউস করবেন না।
৪। কমন শব্দ যেন না থাকে।
৫। এমন কোথাও লিখে রাখবেন না, যেখানে অন্য কারোও নজরে পড়ে।
৬। যে ব্রাউজার দিয়ে লগ ইন করবেন, সেখানে পাসওয়ার্ড দেয়ার পর পর সেভ করতে বলে, এটা ভুলেও করবে না, যদি আপনি আপনার ব্রাউজারের প্রটেকশন দিতে পারেন তা হলে আলাদা কথা।
৭। যার তার মোবাইল, কম্পিউটার পেলেই আপনার ফেসবুকে ঢুকবেন না।
পাসওয়ার্ড তো দিলাম, 123ffser*7(*&*($Y|}*{_$$UGGUDBIPCU*(#Y#(#Y^C
এখন কি আমার একাউন্ট নিরাপদ?
উত্তরঃ আপনি কেবল হ্যাকিং এর একটা ধাপ বন্ধ করলেন।
আর কতগুলো ধাপ আছে, আপনি জানেন?
২। LOG IN alert চালু করুনঃ
৩। Two step verification চালু করুনঃ
৪। Choose Trusted Contacts:
এখন ধরুন এতকিছু করার পরেও হ্যাকারের কোন একটা ফাঁদে আপনি পা দিয়ে ফেললেন, আপনার একাউন্ট হ্যাক হয়ে গেলো। মাথা নষ্ট! কি করবেন?
৫। Review Your Browsers and Apps:
৬। অপরিচিত দের না জেনে ফ্রেন্ড লিস্টে এড করবেন নাঃ
৭। ফেসবুক প্রাইভেসি সেটিংসঃ
৮। নিউজ ফিডঃ
ফেসবুকে অনেক পেজ, গ্রুপ, ফ্রেন্ড্ররা অনেক কিছুই সেয়ার করে। দেখবেন অনেকেই লিংক দিয়ে দেয়, অন্য কোন ওয়েবসাইটের লিংক, যেমনঃ
খবরের জন্য পোষ্ট পেলেন, সাথে সাথে ক্লিক করে ফেললেন। লিংক টা কি আপনার পরিচিত? বিশ্বাসযোগ্য? যদি না জেনে ক্লিক করেন?
এতে কি হয়?
কিছছু হয় না। আপনি লিংকে গিয়ে নিউজ পড়লেন, আপনি জানলেন ও না হিডেন স্ক্রিপ্ট আপনার ব্রাউজারের সব কুকিজ নিয়ে নিল।
কুকিজ কি? আপনার সফটয়ার এর ডেটা, যেখানে আপনার অনেক কিছু থাকে, সাথে আপনার পাসওয়ার্ড এবং লগ ইন ইনফরমেশন গুলোও থাকে।
বিস্তারিতঃ কুকিজ
সো, ফেসবুক নিউজ ফিডে যা পাবেন তাতেই ক্লিক করে বসবেন না। খুব সাবধান!
৯। ফেসবুকের ওয়েব এড্ড্রেসঃ
facebook.com
fb.com
mbasic.facebook.com
touch.facebook.com
আর বাকি যা আছে,
সব এমনঃ
xxxx.facebook.com
xxxx এখানে অনেক কিছুই আছে, এগুলোকে বলে sub domain । এসব শুধু facebook developer দের জন্য, আপনি যদি সাধারন facebook ইউজার হোন, তাহলে, এই চারটি লিংক ছাড়া আর কোন লিংকে যাবেন নাঃ
facebook.com
fb.com
mbasic.facebook.com
এখন আপনাকে আপনার এক ফেসবুক ফ্রেন্ড একটা লিংক দিলঃ
faaaaceeeebooook.com
বলল ফেসবুকের নতুন লিংক, বা আরো কিছু! আপনি ক্লিক করে দেখলেন, ফেসবুক!
log in করতে বলতেছে।
ভুলেও এইসব লিংকে যাবেন না। বা ফেসবুক ভেবে পাসওয়ার্ড দিয়ে বসবেন না।
এইসব ওয়েবসাইট পুরো ফেসবুকে কপি। এদের বলা হয় “Phishing”
আপনাকে বোকা বানিয়ে আপনার account এর পাসওয়ার্ড নিয়ে নিবে।
* এমন কিছু দেখলে, রিপোর্ট অপশন চালু আছে, ফেসবুকে রিপোর্ট করে দিবেন।
১০। ইমেইল বা এসএমএস লিংকঃ
আপনার কাছে কোন মেসেজ বা ইমেই আসলো, বলা হলো আপনার ফেসবুক একাউন্ট হ্যাক হয়েছে, রিকোভার করতে এই লিংকে যান।
এসব ক্ষেত্রে দেখবেন কোথা থেকে ইমেইল বা মেসেজ টি এসেছে?
ফেসবুকের ইমেইলঃ
– noreply@facebookmail.com
– notification+zj426s0z6c0c@facebookmail.com
– security@facebookmail.com
– info@facebook.com
ফেসবুকের মেসেজ নাম্বারঃ 32665
যদি উপরের কোনটা হয়, trust করতে পারেন। কিন্তু ভিন্ন কিছু হলে ignore করুন।
১১। প্রিটেনডিং রিপোর্ট । Pretending Report
- পাসপোর্ট বা ন্যাশনাল আইডি কার্ড এবং তা ভালো স্ক্যানার দিয়ে একটি এইচডি স্ক্যান করে ফেলুন।
- মাঝে মাঝে আইডি কার্ড দিয়ে হয়না, তাই তখন পাসপোর্ট ছাড়া উপায় থাকেনা।
- তাই পাসপোর্ট হলে আইডি ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
- নতুন আইডির নাম যেন আপনার পাসপোর্ট বা আইডি কার্ডের সাথে দাড়ি কমা সহ ঠিক থাকে।
- পুরাতন আইডির নাম আর নতুন আইডির নাম এক না হলেও হবে, তবে বয়স যেন ঠিক থাকে।
- নতুন আইডি পুরাতন আইডি এবং আপনার পাসপোর্ট বা আইডি কার্ডের বয়স যেন একই থাকে। যদি হ্যাক করার পর পুরাতন আইডির বয়স চেঞ্জ করে ফেলে তাহলে কোন টেনশন নেই।
- আবার বলছি পাসপোর্ট বা আইডি কার্ডের বয়স এবং আইডির দেয়া বয়স একই হতে হবে।
অন্যান্য বিষয়ে সতর্কতাঃ
১। ফ্রি wifi পেলেই কানেক্ট করে বসবেন না।
– যদি কানেক্ট করতেই হয়, কানেক্ট করার সাথে সাথে VPN চালু করে দিন।
২। ফেসবুকের অনেক মোডেড এপ আছে, সেগুলো ভুলেও ইউস করবেন না।
৩। ফেসবুক এপ শুধুমাত্র প্লে-স্টোর বা এপ স্টোর থেকে ডাওনলোড করবেন।
৪। সন্দেহ জনক কিছু দেখলে রিপোর্ট করুন।
৫। কারো কাছ থেকে ফেসবুক নিয়ে ইউস করবেন না।
৬। গুগলে অনেক আজাইরা জিনিস আছে, দেখেশুনে একসেস করবেন।
৭। দুইটি ব্রাওজার রাখুন আপনার ডিভাইসে, একটি দিয়ে আপনার সোসাল সাইট গুলো সার্ফিং করুন, এই ব্রাওজার দিয়ে ভুলেও আউল-ফাউল লিংকে যাবে না, ২য় ব্রাওজার টি আপনার দৈনিন্দিন সার্চের জন্য রাখুন।