আসসালামু আলাইকুম ।
কেমন আছেন সবাই? প্রায় বছর দুয়েক পরই লিখতে বসলাম। আশা করছি সবার ঈদটা সুন্দর কেটেছে।
টাইটেল দেখে হয়তো অবিশ্বাস করে অনেকে এখুনি পোস্টটি ইগনোর করা শুরু করবেন। ভাববেন, ভালো বেতনে চাকরি করেও অনেকে ক্রেডিট কার্ড নিতে পারে না আর তিনি এসেছেন কোথাকার কোন ফ্রিল্যান্সার কার্ড দিয়ে ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার গপ্পো বলতে। 😀 তাদের জন্য শুরুতেই দুটো প্রুভ দিয়ে দিচ্ছি। কষ্ট করে দেখে নিন।
বলে রাখা ভালো, এখানে আমি ক্রেডিট কার্ড কিংবা কোনো ব্যাংক বা ব্লগের মার্কেটিং করছি না। আমার মতো অনেকেই আছেন যারা নিজের একটা ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার জন্য চেষ্টা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, কিন্তু কোনোভাবে পাচ্ছেন না। আমি মনে করি আমার এই “ফ্রিল্যান্সার আইডি কার্ড দিয়ে নিয়ে নিন টাইটেনিয়াম ক্রেডিট কার্ড” রিভিউ ব্লগটি তাদের জন্য অনেক হেল্পফুল হবে।
তোহ শুরু করা যাক।
অনেকদিন যাবত ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার জন্য ভাবছিলাম, কিন্তু কিছুতেই নিতে পাচ্ছিলাম। যেকোনো ব্যাংকে গিয়ে ক্রেডিট কার্ডের নাম ধরলেই দেখা যাচ্ছিলো, কার্ড সেকশানের অফিসিয়ালের হাসিখুশি চেহেরা বড়োই বেজার হয়ে যায় এবং তাদের প্রথম প্রশ্নই হতোঃ “কোন প্রতিষ্ঠানে আছেন? স্যালারি কত?” লল, একজন স্টুডেন্ট আর ফ্রিল্যান্সার শুনলেই তারা আবার হাসিমুখি ভাইবে ব্যাক করতো আর বলতো, “আমরা চাকরি ব্যতীত কাউকে কার্ড দেই না।” তারপর এফডিআর করে ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার শত “সুবিধা” শুনে আমার বাড়ি ফেরা লাগতো। আমি কখনো এফডি করে কার্ড নেওয়ার পক্ষে না। কেননা এতে কার্ড পেলেও ঠিক ব্যাটে বলে মেলে না। আইমিন, আপনার টাকা আপনি ব্যবহার করবেন তাও ৯০% ! কেমন না?
পরে অনেক ঘাটাঘাটির পর খোঁজ পেলাম ব্রাকের নিউ মাল “মিলেনিয়াল টাইটেনিয়াম মাস্টার ক্রেডিট কার্ড” এর। এটি নিতে লাগছেনা আমার চাকরী, শুধুমাত্র ফ্রিল্যান্সিং ডকুমেন্টস দিয়েই কার্ডটি পাওয়া যাচ্ছে। যদিও প্রথমে মাস্টার কার্ড দেখে দমে গিয়েছিলাম। কারণ পারসোনালি আমি ভিসা লাভার। কিন্তু বাংলাদেশের প্রায় সব আলোচিত ব্যাংকে খোঁজ করেও যখন কিনারা করতে পারিনাই, তখন “কানা মামা” ভেবে এই কার্ডটির জন্যই এপ্লাই করে বসলাম। এইছাড়া উপায়ও ছিলো না। আমাদের ফ্রিল্যান্সারদের কোনো বাপে মেয়ে দিবেনা আবার কোনো ব্যাংক কার্ড ইস্যু করবেনা। 🙁 ব্র্যাকই সম্বল ভেবে কার্ডটি নিয়েছিলাম, আলহমাদুলিল্লাহ এখন পর্যন্ত সব ঠিকঠাক। সামনে দুবাই সফরে কার্ডটির উপর পূর্ণ আস্থা রেখে ক্যাশলেস থাকার চেষ্টা করবো। এক্সপেরিয়েন্স পরে নাহয় পোস্ট এডিট করে জানিয়ে দিবো।
কার্ডটি সম্পর্কে জানতে এই নিউজটি দেখুন।
ক্রেডিট কার্ডটি পেতে আমাদের যা যা লাগবেঃ
নিম্নোক্ত ডকুমেন্টস গুলো আমার লেগেছিলো। স্পেশাল কেসে আপনাদের হয়তো আরো ডকুমেন্টস লাগতে পারে। কিন্তু মেন্ডেটরি এইসব ডকুমেন্টস সাধারণত লাগে। আমি সিরিয়ালি নিচে দিয়ে দিচ্ছি।
১) গভর্মেন্ট এপ্রুভড ফ্রিল্যান্সার আইডি কার্ড। (অপশনাল)
আমরা যারা ফ্রিল্যান্সিং করি, আমরা প্রায় সবাই এই কার্ড সম্পর্কে অবগত আছি। মাত্র এক হাজার ডলার আর্ণ করার পর কিছু ভ্যালিড তথ্য দিয়ে কার্ডটি গ্রহন করতে হয়। শুরুতেই কার্ডটি আমার কাছে ইউজলেস লাগলেও, এখন আমি এর সুবিধা পাচ্ছি। যেমনঃ কোভিড পরবর্তি ভারতীয় টুরিস্ট ভিসা যখন চালু হয়েছিলো, তখন আমি ১ম বার স্টুডেন্ট আইডি কার্ড দিয়ে ভিসা পেতে ব্যর্থ হয়। কিন্তু পরবর্তীতে ফ্রিল্যান্সার আইডি কার্ড দিয়ে ভিসা এপ্লাই করে ভিসা পেতে সমর্থ হয়। তারপর অবধারিতভাবে ক্রেডিট কার্ড নিতে হলেও এই ফ্রিল্যান্সার কার্ডটি লেগেছিলো। সুতরাং, প্রথমে ইউজলেস ভাবলেও পরে কার্ডটি দিয়ে অনেক উপকৃত হয়েছি।
যাইহোক, কার্ডটি নিয়ে লিখতে গেলে একটা ব্লগই হয়ে যাবে। আপনার থেকে কার্ডটি থাকলে ফাইলের সাথে ইনক্লুড করে দিতে পারেন। না থাকলেও সমস্যা নেই। ফ্রিল্যান্সার আইডি কার্ড মেন্ডেটোরি না।
কার্ডটি করতে এই ব্লগটি ফলো করুন।
২) আইডি কার্ড / পাসপোর্ট।
সাধারণত এই দুটোর যেকোনো একটা হলেই হয়। তবে আপনি যদি চান কার্ডটি বিদেশে ব্যবহার করবেন বা আলি এক্সপ্রেস বা ইন্টারন্যাশনাল প্লাটফর্মে পেমেন্ট করবেন, সেক্ষেত্রে পাসপোর্টে ডলার এন্ডোর্সমেন্ট জরুরী। কার্ডের জন্য আপনার এবং আপনার নমিনির দুইজনেরই এনআইডি কপি লাগবে।
৩) ইনকাম সোর্স।
আপনি ফাইবার / আপওয়ার্কে যদি ফ্রিল্যান্সিং করেন, সেখানে আপনার একটি ইনকাম স্টেটমেন্ট জেনেরেট করা যায়। এই ইনকাম স্টেটমেন্টটি ক্রেডিট কার্ড নিতে হলে “ইনকাম সোর্স” হিসেবে দিতে হবে।
৪) ব্যাংক স্টেটমেন্ট।
আপনার দেশীয় কোনো ব্যাংকে লেনদেন থাকলে বা আপনি যদি রেমিট্যান্স দেশীয় ব্যাংকে গ্রহন করেন, তাহলে উক্ত ব্যাংক স্টেট্মেন্টটি (১ বছরের) লাগবে।
৫) টিন সার্টিফিকেট।
টিন সার্টিফিকেট কিভাবে বানাতে হয় এই ব্লগে দেখে নিন।
৬) পেওনিয়র স্টেটমেন্ট। (অপশনাল)
এটি মেন্ডেটোরি না। বাট সেফজোনে থাকার জন্য আমি আমার ওয়াইজ এবং পেয়নিয়রের লাস্ট একবছরের স্টেটমেন্ট দিয়েছিলাম।
৭) ছবি।
আপনার এবং নমিনির দুই কপি ছবি।
৮) ইউটিলিটিস বিলের কপি।
এটি এড্রেস ভেরিফিকেশনের জন্য। পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস কিংবা নেট বিলের কপি দিয়েই কাজ সারতে পারবেন।
মোটামুটি এইসব পেপারস রেডি করে আপনি চাইলে ব্র্যাক ব্যাংক থেকে একটি ক্রেডিট কার্ড নিতে পারেন।
কার্ড লিমিটঃ
এটি আপনার ইনকাম এর উপর ডিপেন্ড করছে। তবে যতদূর জানতে পেরেছি, আপনার ইনকামের ২এক্স টাইম লিমিট নিতে পারেন। মানে আপনার যদি ইনকাম হয়, ১ লক্ষ টাকা, তাহলে আপনি সর্বোচ্চ দুই লক্ষ টাকা লিমিট পেতে পারেন। তবে এখানে জানিয়ে রাখছি মিলেনিয়াল ক্রেডিট কার্ডটি মিনিমাম লিমিটই দেড় লক্ষ টাকা। সুতরাং, কার্ড লিমিটটা আপনার ইনকাম হিসেব করে নির্ণয় করে নিতে পারেন।
কার্ডটির সুবিধা এবং অসুবিধাঃ
কার্ডটির সাথে আমার কাছে অনেকগুলো ডিস্কাউন্ট বান্ডেল পাঠানো হয়েছিলো। ক্রেডিট কার্ডের ক্ষেত্রে কেনাকাটায় বড় একটা সুবিধা এই ডিস্কাউন্ট অফার। তাছাড়া, কার্ডটি মাস্টারকার্ড। সুতরাং, মাস্টারকার্ডের অফিসিয়াল অফার গুলোও এভেইল করতে পারছেন। সাথে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বলাকা লাউঞ্জে আনলিমিটেড টাইম এক্সেস একজন গেস্টসহ। আর ইন্টারন্যাশনাল লাউঞ্জে বছরে চারবার এক্সেস পাবেন। সুতরাং, ফ্লাইট জার্ণিতে এই কার্ডোটি আপনাকে ভালোই সাপোর্ট দিবে। কার্ডটি নেওয়ার জন্য এটিও আমার একটি বড় কারণ। আবার ১৫ হাজার টাকা ব্যবহারে প্রথম বছর ফ্রি এবং পরবর্তী বছরে ৬০ হাজার টাকা ব্যবহারে ৩য় বছরও ফ্রি। আর ইএমআই ফ্যাসিলিটিসও পাচ্ছেন। আর সবচে বড় সুবিধা হলো, এটি কন্ট্যাক্টলেস কার্ড। মানে আপনার থেকে কষ্ট করে পিওএস মেশিনে কার্ড সোয়াপ / ঢুকানো / পিন দেওয়া লাগবেনা। পিওএসের কন্ট্যাকলেস টার্মিনালে কার্ডটি ছোঁয়ালেই পেমেন্ট হয়ে যাবে।
জোস না?
আর অসুবিধার কথা বলতে গেলে, বলতে হয় প্রথমে নেটওয়ার্কের কথা। সাধারণত বাংলাদেশ এবং এশিয়ান দেশগুলোতে ভিসা ভালো সার্ভিসের পাশাপাশি ভালো অফারও দেই। তবে মাস্টারকার্ড দেই না, এমনটা না। মাস্টারকার্ডও অনেক অফার দেই। তবে কার্ডটি ভিসা হলে ভালো হত। এখনো খারাপ না। দ্বিতীয় অসুবিধা যা লেগেছে, তা হলো বহুল আলোচিত ” ১৮ ট্রাঞ্জেকশনে ফি মওকুফ ” ফিচারটি নেই। তবে সুবিধা সেকশানে বলেছি ফি মওকুফের উপায়… নাই মামার চেয়েও কানা মামা ভালো, তাই না?
আপাতত এই দুটো অসুবিধায় আমার চোখে পড়েছে। আরো কিছু মনে পড়লে বা ফেস করলে পোস্ট ইডিট করে দিবোনে।
বক্সে যা থাকবেঃ
উপরে যখন কার্ড বক্স এর ছবি দিয়েছিলাম, আপনার হয়তো জানতে আগ্রহ হতে পারে, কি আছে এই বক্সে?
জানিয়েই দিই। সাধারণত আমরা ডেবিট কার্ডের বক্সে যা পাই, এখানেও তাই পাবেন। তবে এক্সট্রা করে পাবেন আরো একটি ক্রেডিট কার্ড যেটি সাপ্লেমেন্টোরি কার্ড হিসেবে পরিচিত। এটি আপনার নমিনির নামেই ইস্যু হবে এবং উনি সকল ফিচার উপভোগ করতে পারবেন। পাবেন আপনার ফুল ক্রেডিট লিমিটও।
আর ছিলো ডিস্কাউন্ট বান্ডেল। মাশাল্লাহ, ভালো সাইজেরই বান্ডেল। অনেক গুলো ডিস্কাউন্ট কূপন পেয়েছি। কোনো একসময় নাহইয় ব্যবহার করবো 😉
ভাই সব তোহ বুঝলাম, কিন্তু কার্ড পাবো কেমনে????????????
আপনার উপোরক্ত সকল ডকুমেন্টস রেডি হলে সোজা বাড়ির পাশের ব্রাঞ্চে চলে যাবেন। কার্ড সেকশানে যিনি আছেন, তাকে ডকুমেন্টস দিয়ে সাইন করে চলে আসবেন। হোপফুলি, ৭ দিন থেকে ১৫ দিনের মাঝে আপনার মেইল এড্রেসে কার্ড ডেলিভারি করবে ব্যাংক।
তবে মাথায় রাখবেন, সব ব্যাংক অফিসিয়াল এখনো বিষয়টা সম্পর্কে অবগত নন। আমার হোম ব্রাঞ্চের উনি আরো বাজে ছিলেন। উনি সাফ বলেই দিলেন চাকরী ছাড়া কোনো ক্রেডিট তার ব্যাংক দিবেন না। আমিও নিরাশ হয়নি, সোশ্যাল মিডিয়াতে এক আপুর খোজ পায়, উনি ব্র্যাকে কর্মরত আছেন। উনাকে সব খুলে বলার পর, উনি আমার ফাইল প্রসেস করে দিলেন। এবং খুব জলদিই কার্ড হাতে পাইয়ে দিলেন। তার প্রশংসা করতেই হয়। অনেক সাপোর্টিভ এবং ডে বাই ডে আপডেট দিয়েছিলেন।
সো আপনি যদি হোম ব্রাঞ্চে কার্ড সুবিধা না পান, তাহলে আপুর ফেসবুক লিংক দিলাম, উনার সাথে কথা বলে ফাইল প্রসেস করে নিন। কিছু জানার থাকলেও তারে নক দিয়ে জেনে নিতে পারবেন। ডিস্ট্যান্স বেশি হলে উনি আপনাকে ফাইল কুরিয়ার করে দেবেন। যেমনটা আমাকে দিয়েছিলেন। 😀 আমার কথা কইলে বাড়তি সুবিধা পাইবেন 😀 সাথে আপনার কষ্ট করে আর ব্রাঞ্চে দৌড়াতে হচ্ছেনা। আরাম আয়েশ করতে করতে কার্ড পেয়ে যাবেন।
ওহ হ্যা, বলতে ভুলেই গেছি। কার্ডটির সকল ফিচার কিন্তু পরিবর্তিত হতে পারে। কাইন্ডলি কোনো প্রব্লেম ফেস করলে ব্যাংকের কল সেন্টারে কল করে জেনে নিবেন… বা ফিচার সম্পর্কে আপডেটেড থাকার চেষ্টা করবেন। নতুন কোনো অফার পেলে এভেইল করে নিতে যেন দেরি নাহয়!
পরিশেষে ভালো খারাপ মিলিয়েই আমাদের জীবন, সো সব কিছুরই ভালো খারাপ থাকবে এবং এটা মেনে নিতে হবে। ক্রেডিট কার্ডেরও ভালো খারাপ আছে। বিল টাইমলি দিতে পারলে রাজা আর মিস হইলেই সাজা। তাতে কি ? আমরা বাঙ্গালী, সব কিছুর প্রপার ইউজ করতে জানি 😀 আশা করছি, আপনার ক্রেডিট কার্ড জার্ণিটি শুভ হোউক। লেখাতে অনেক ভুল ত্রুটি থাকতে পারে কিংবা অনেক ইম্পোর্ট্যান্ট তথ্য গ্যাপ থাকতে পারে তাছাড়া অনেক এক্সটার্নাল লিংকও ইউজ করেছি তা নাহলে রাত পার হইতো মাগার পোস্ট শেষ হইতো না। আশা করি সকল ভুল ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন।
এই লেখা শেষ লেখা নয়, আসছি আবার নতুন কিছু নিয়ে, টিল দেন টেক কেয়ার।
আল্লাহ হাফিজ।