আজকে আপনাদের সামনে আলোচনা করবো মানসিক রোগী হওয়া কি জিনিয়াস বা অতিবুদ্ধিমান হওয়ার মুলমন্ত্র? এই টপিকস এর উপরে।
আপনি যদি খেয়াল করে দেখেন যাদের আমরা জিনিয়াস বলে জানি তাদের বেশির ভাগই কোনো না কোনো মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত ছিলো। যেমনঃ আলবার্ট আইনস্টাইনের সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট ডিসওর্ডার ছিলো যাকে Asperger’s Syndromes বলে। তেমনি ইলন মাস্কেরও এইধরনেরই সিনড্রোম আছে যাকে স্পেশাল ক্যাটাগরিতে ভাগ করে Autism Spectrum Disorder (ASD) বলে।
একই ভাবে:
স্টিভ জবসের Obsessive-Compulsive Personality Disorder.
ডগলাস ম্যাকআর্থার এর Narcissistic Personality Disorder
মেরিলিন মনরো এর Histrionic Personality Disorder
মাইকেলেঞ্জেলো Autism
বিথোব্যানের Bipolar Disorder.
ভ্যান গগের Bipolar Disorder.
এ্যন্ডি ওয়ারহোলের Autism ছিলো।
উপরের এসব বিখ্যাত ব্যক্তিদের নামের পাশে তাদের ডিসওর্ডারগুলো দেখে এটাই মাথায় আসা স্বাভাবিক যে হয়তো জিনিয়াস হওয়ার প্রথম শর্ত কোনো সলিড ডিসওর্ডারের শিকার হওয়া!
এখন যাদের আইকিউ এবং মেধা বেশি তাদের মানসিক সমস্যায় পড়তে হয় নাকি যাদের মানসিক সমস্যা আছে তাদের সাধারণ ভাবেই মেধা অন্যদের তুলনায় বেশি হয় এই নিয়ে ‘ইন্টেলিজেন্স’ জার্নালে নতুন একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
আমেরিকান মেনসা সোসাইটির ৩ হাজার ৭১৫ জন সদস্যের তথ্য নিয়ে যাচাই-বাছাই করেছেন এই গবেষণা নিবন্ধের লেখকেরা।গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিভাবান ব্যক্তিদের অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডারে (এএসডি) আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা ২০ শতাংশ বেশি। এছাড়া এডিএইচডিতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা ৮০ শতাংশ, দুশ্চিন্তায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা ৮৩ শতাংশ এবং অন্য যেকোনো একটি মুড ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা ১৮২ শতাংশ বেশি।
সাইকোনিউমারোলজির (পিএনআই) সাহায্য নিয়ে গবেষকরা এর কারণ অনুসন্ধানের চেষ্টা করেন। সেখানে দেখা যায়, অত্যন্ত বুদ্ধিমানদের মধ্যে ‘অতিরিক্ত বুদ্ধিবৃত্তিক উত্তেজনা’ এবং কেন্দ্রীয় নার্ভাস সিস্টেমের অতি-প্রতিক্রিয়াশীলতার প্রবণতা রয়েছে। এতে বেশি আইকিউ সংবলিত মানুষরা তাদের সৃজনশীল কাজে অন্যদের চেয়ে বেশি মেধার প্রয়োগ করতে পারে। বস্তুত বেশি বুদ্ধিমানরা তাদের পরিপার্শ্বকে অত্যন্ত গভীরভাবে বোঝার সক্ষমতা রাখেন।
তবে এই অতি গভীর ভাবে বুঝার ক্ষমতা ডিপ্রেশন ও মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থা আরও খারাপ করে তুলতে পারে (কারণ তারা অন্যদের তুলনায় সব কিছু আরও গভীরভাবে উপলব্ধি করতে পারেন)। বিশেষ করে কবি, ঔপন্যাসিক ও অতি বুদ্ধিমানদের ক্ষেত্রে এ ঘটনা বেশি ঘটে। অতীত স্মৃতি মনে করা ও দুশ্চিন্তা করার সময় এই শ্রেণির মানুষদের আবেগি প্রতিক্রিয়া তীব্রতর হয়। আর এই দুটোই ডিপ্রেশন ও অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডারের অন্যতম কারণ।
গবেষকরা আরও লিখেছেন, অতিরিক্ত মানসিক প্রতিক্রিয়ায় ইমিউনিটি সিস্টেম প্রভাবিত হতে পারে। আপাতদৃষ্টিতে নিরীহ উদ্দীপনা, যেমনঃ একটু জোরে শব্দ অতিরিক্ত উত্তেজনাপ্রবণ মানুষের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। এই প্রতিক্রিয়ার ফলে সৃষ্টি হতে পারে নিম্ন স্তরের চাপ। ফলে ইমিউন রেসপন্সে দেখা দিতে পারে অনিয়ম।
শরীর যখন মনে করে সে বিপদে আছে, তা সে বিপদ প্রকৃতই হোক কি কাল্পনিকই হোক, ওই মুহূর্তেই শরীর স্বতঃস্ফূর্তভাবে মানসিক প্রতিক্রিয়া নির্গত করতে থাকে। শরীর তখন অজস্র হরমোন, নিউরোট্রান্সমিটার প্রভৃতি নিঃসৃত করে। এ প্রক্রিয়া চালু হওয়ার সময় শরীর ও মস্তিষ্কে পরিবর্তন আসতে থাকে। সেইসঙ্গে অনিয়ন্ত্রিত হয়ে যেতে পারে ইমিউন কার্যক্রম। যার কারণে দেখা দিতে পারে অ্যাজমা, অ্যালার্জি ও অটোইমিউন রোগ।
গবেষকরা আরও নিশ্চিত করেছেন, মেধাবী শিশুদের অ্যালার্জি ও অ্যাজমা বেশি হয়। একটি গবেষণায় দেখা যায়, যাদের আইকিউ ১৬০-এর বেশি, তাদের ৪৪ শতাংশই সমবয়সি অন্যান্য ব্যক্তিদের চেয়ে অ্যালার্জিতে ২০ শতাংশ বেশি ভোগেন। সাম্প্রতি অন্য আরেকটি গবেষণায় একই ফলাফল দেখা গিয়েছে।
গবেষকরা ধারণা করছেন, বেশি বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে যুক্ত অতিরিক্ত উত্তেজনা এই ব্যক্তিদের ঝুঁকিতে ফেলে দেয়। এর কারণ, বাহ্যিক বা অভ্যন্তরীণ ঘটনার প্রতি এসব মানুষ অতি সংবেদনশীল। আবার পরক্ষণেই নতুন কোনো উদ্দীপনায় তারা অতি-সক্রিয় হয়ে ওঠেন। এরকম নানামুখী আবেগ প্রতিনিয়ত ক্রিয়াশীল থাকার কারণে প্রতিভাবানরা শারীরিক ও মানসিক রোগে ভোগেন বেশি।
সোর্সঃ
Psychiatrictimes.com
TvsNews
তো বন্ধুরা আজকের আলোচনা কেমন হলো তা অবশ্যই জানাতে ভুলবেন না। আর হ্যাঁ দেখা হচ্ছে অন্য কোন টিউটোরিয়ালে, ততক্ষন পর্যন্ত বাই।