বাংলাদেশের এবং বাঙালির জন্য ঐতিহ্যবাহী একটি পানিও হলো খেজুরের রস। যা শীতকালীন মৌসুমে পাওয়া যায়। শহরে বসবাস করা ব্যক্তিরা এই পানি সম্পর্কে তেমন একটা না বলতে পারলেও বিশেষ করে যারা বাংলাদেশের গ্রামগঞ্জে বসবাস করেন তারা এই ঐতিহ্যবাহী পানিওর সাথে বেশ পরিচিত। কারণ এই পানি শুধুমাত্র গ্রামগঞ্জেই দেখা যায়। তবে বলতে গেলে বর্তমান সময়ে আধুনিকতার ছোঁয়ায় এই ঐতিহ্যবাহী পানিটি প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। অনেক গ্রামগঞ্জেও এখন আর এই পানির বা রসের তেমন একটা দেখা পাওয়া যায় না। এই খেজুরের রসটি এতোটাই স্বাধ যে, যা আমাদের বাঙালির চিরদিনের ঐতিহ্য হিসেবে রয়ে গিয়েছে। শীতের মৌসুমে মোটামুটি সকলেই এই খেজুরের রস দিয়ে নাস্তা তৈরি করেন। বিশেষ করে খেজুরের রস দিয়ে গুড় তৈরি করা হয় যা খুবই সুস্বাধু। খেজুরের রস অনেক স্বাদ হওয়ার কারণে অনেকেই আছেন কাঁচা রস খেয়ে থাকেন বা খেতে পছন্দ করেন। যার কারণে হতে পারে এক ধরনের রোগ। রোগটির নাম হচ্ছে নিপাহ। যা এই শীতের মৌসুমে বিশেষ করে লক্ষ্য করা যায়। তো আজকের এই টপিকে আমরা এই রোগ নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করব। আলোচনাতে আমরা উল্লেখ করব এই রোগ কি কারণে হতে পারে এবং এর প্রতিকার কী? ইত্যাদি।
নিপাহ রোগ কী?
নিপাহ একটি ভাইরাসজনিত মারাত্মক প্রাণগাতী রোগ, তাই এটি থেকে সবাইকে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। এটি মূলত বাদুড়ের মাধ্যমে ছড়িয়ে থাকে। আর তা বিশেষ করে খেজুরের রসের মাধ্যমে মানুষের মাঝে শীতকালে ছড়িয়ে পড়ে। এটি এতোটাই মারাত্মক রোগ যে, এই রোগের মৃত্যুর হার প্রায় ৭০ শতাংশেরও বেশি।
নিপাহ রোগের উৎপত্তি স্থলঃ
নিপাহ রোগ কী? সেই নিবন্ধনেই আমরা বলেছিলাম বা জেনেছিলাম যে এই রোগের মূল উৎপত্তি স্থল কোথায়। এই রোগটি বাদুড়ের মাধ্যমে ছড়িয়ে থাকে। যা শীতকালে লক্ষ করা যায় বেশি। যেহেতু শীতকালে খেজুরের গাছ থেকে রস সংগ্রহ করা হয়। আর ঐ সময় খেজুরের গাছে রস পান করার উদ্দেশ্যে বাদুড় গিয়ে থাকে। তখনই বাদুড়ের লালা থেকে নিপাহ রোগটি রসের মধ্যে মিশ্রিত হয়ে যায়। যখন মানুষ উক্ত রস কাঁচা পান করে তখন মানুষের মাঝে রোগটি ছড়িয়ে পড়ে।
নিপাহ রোগ থেকে বাঁচার উপায়ঃ
আপনি যদি নিপাহ রোগ থেকে বাঁচতে চান। তাহলেই অবশ্যই আপনাকে খেজুরের রস খাওয়ার সময় সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। অর্থাৎ আপনি গাছ থেকে রস সংগ্রহ করার পর কাঁচা রস খেতে পারবেন না। কারণ এর মাধ্যমেই মূলত রোগটি ছড়িয়ে থাকে। তাই আপনার যদি রস খেতেই তাহলে রসকে পূর্বে রান্না বা জাল করে নিয়ে তারপর খেতে হবে।
মানুষের মধ্যে নিপাহ রোগ হলে বেশকিছু লক্ষণ দেখা দিতে পারে। সেগুলো হলো, জ্বরসহ মাথাব্যথা, খিঁচুনি, প্রলাপ করা, অজ্ঞান হওয়া এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্টে ভোগা। তাই বলে রাখা আপনার মাঝে এইরকম কোনো লক্ষণ প্রতিফলিত হলে অবশ্যই অতি দ্রুত চিকিৎসকের স্মরণাপন্ন হোন।
নিপাহ রোগ প্রতিরোধে করণীয়ঃ
বেশকিছু উপায় অবলম্বন করে চলতে পারলে আপনি এই রোগ থেকে দূরে থাকতে পারবেন অথবা সেরে উঠতে পারবেন। উপায়গুলো হচ্ছে,
☞ বানা অথবা যে কোনোভাবে ঢেকে রাখা সংগৃহীত খেজুরের কাঁচা রস পান করবেন না।
☞ রস ও রস সংগ্রহের পাত্রের সংস্পর্শে আসলে ভালোভাবে সাবান পানি দিয়ে হাত ধুয়ে নিন। যেহেতু এটি একটি ভাইরাসজনিত বা ছোঁয়াচে রোগ।
☞ কোনো ধরণের আংশিক খাওয়া ফল খাবেন না। (অনেক সময় লক্ষ করবেন বিভিন্ন ফল গাছে থাকা ফলের কিছু অংশ পাখপাখালিরা খেয়ে থাকে। ঐ ধরনের ফল খাওয়া যাবে না। কারণ আপনি তো আর বলতে পারেন না যে, এটি কি বাদুড়ে খেয়েছে নাকি অন্যকোনো প্রাণি খেয়েছে। তাই এই ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।)
☞ আক্রান্ত রোগীকে সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে সেবাকারীকে অবশ্যই নাক ও মুখ ঢেকে সঠিক উপায়ে সেবা প্রদান করতে হবে। যেমন সেবা দানের সময় মাস্ক পরিধান করতে হবে এবং সেবা প্রদান শেষে সাবান পানি দিয়ে হাত ধুয়ে নিতে হবে।
☞ নিপাহ রোগের লক্ষণ দেখা দিলে যত দ্রুত সম্ভব নিকটস্থ চিকিৎসা কেন্দ্রে গিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। এই ক্ষেত্রে আপনি সরকারি অথবা বেসরকারি যেকোনো চিকিৎসা কেন্দ্রে যেতে পারেন।
জরুরী প্রয়োজনে যোগাযোগঃ
আপনি চাইলে জরুরী প্রয়োজনে এই রোগের জন্য নির্ধারিত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হটলাইন নাম্বারে যোগাযোগ করতে পারেন। হটলাইন: 10655 এবং 01731314600 এই নম্বরগুলির মাধ্যমে সরাসরি যোগাযোগ করে আপনি জরুরীভাবে সমাধান পেতে পারেন।
তো এই ছিলো মূলত আমার ভাইরাস জনিত রোগ নিপাহ রোগ নিয়ে বিস্তারিত টপিক। এখন আমার কাম্য থাকবে এই মারাত্মক রোগ থেকে বাঁচতে হলে উপরোল্লিখিত নির্দেশনাগুলি ফলো করবেন। তাহলেই সুস্থ থাকতে পারবেন এবং প্রিয়জন বা অন্য যে কাউকে সুস্থ রাখতে পারবেন।
তথ্যসূত্রঃ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
ছবিঃ ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত।
আপনাদের সুবিধার্থে আমি আমার টিপস এন্ড ট্রিকসগুলি ভিডিও আকারে শেয়ার করার জন্য একটি ইউটিউব চ্যানেল তৈরি করেছি। আশা করি চ্যানেলটি Subscribe করবেন।
সৌজন্যে : বাংলাদেশের জনপ্রিয় এবং বর্তমান সময়ের বাংলা ভাষায় সকল গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ক টিউটোরিয়াল সাইট – www.TutorialBD71.blogspot.com নিত্যনতুন বিভিন্ন বিষয়ে টিউটোরিয়াল পেতে সাইটটিতে সবসময় ভিজিট করুন।