সকলেরই জানা যে মধু হলো মহা ঔষুধ। কুরআন ও হাদিসে মধুকে রোগের প্রতিকার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে হ্যাঁ, মধুকে আপনি তখনই রোগের প্রতিকার বলতে পারবেন। যদি মধুটি একদম খাটি মধু হয়ে থাকে। কারণ আমাদের সমাজ ভেজালে ভরপুর। কিছু লোভী ব্যবসায়ীরা অতি লাভের আশায় মধুতে ভেজাল করে থাকে। যার ফলে সাধারণ মানুষ মধু ক্রয় করতে গিয়ে বিপদের সম্মুখীন হয়ে থাকে। তাই যারা সচেতন তারা মধু ক্রয় করার আগে মধুটি খাটি কিনা তা যাচাই করে নেন। তবে এখানে বলে রাখা ভালো যে আমরা মধু যাচাইয়ের যে পদ্ধতিগুলো সচারচর ব্যবহার করে থাকি। তা দিয়ে আসলে খাটি মধু যাচাই করা সম্ভব নয়। খাটি মধু যাচাইয়ের জন্য গণমাধ্যমে আমরা যেসব পদ্ধতি দেখে থাকি তার মাধ্যমেও কিন্তু খাটি মধু যাচাই করা সম্ভব নয় একজন সাধারণ মানুষের পক্ষে। আজকের এই টপিকের মাধ্যমে আমরা চেষ্টা করবো খাটি মধু চেনার উপায় আসলে আছে কিনা? থাকলেই বা কিভাবে করে এবং মধু কতরকমের হয়ে থাকে বিস্তারিত।
খাটি মধু চেনার উপায়ঃ
আসলে একজন সাধারণ মানুষের পক্ষে কখনোই খাটি মধু চিহ্নিত করা সম্ভব নয়। একমাত্র যারা মধু স্পেশালিস্ট ল্যাবে বিভিন্ন যন্ত্রপাতির সাহায্যে তারাই চিহ্নিত করতে পারেন যে খাটি মধু কোনটি। আপনার আর আমার পক্ষে সাধারণত সম্ভব না খাটি মধু চিহ্নিত করার। আমরা সাধারণত পত্রপত্রিকায় বা গণমাধ্যমে খাটি মধু চিহ্নিত করার যে উপায়গুলি দেখে থাকি আসলে তার মাধ্যমে কখনোই সম্ভব না। যেমন একটি উপায় আমরা জানি যে, মধু ফ্রিজে সংরক্ষণ করে রেখে দিয়ে সেটি যদি জমে যায় তাহলে তা ভেজাল মধু। আসলে কিন্তু একধরণের মধু রয়েছে যেটি এমনিতেই জমে যায়। তখন আপনি কিভাবে চিহ্নিত করবেন ডে এটি খাটি নাকি আসল। আবার অনেকে মধুর রংয়ের উপর ভিত্তি করে মধু খাটি নাকি ভেজাল তা নির্বাচন করেন। এইভাবেও আসলে খাটি মধু চিহ্নিত করা যায় না। কারণ মধুর হালকা, গাঢ় ইত্যাদি রং রয়েছে। তবে হ্যাঁ, চেনা সম্ভব। তবে তা কিন্তু সহজে না। একটু কষ্ট করলে হয়তো, সময়, শ্রম, মনোযোগ ও মেধা খাটালেই যে কেউ খাঁটি মধু অথবা ভেজাল মধু চিনতে সক্ষম হবেন।
মধুর ধরণঃ
আপনি অবাক হচ্ছেন যে, মধুর আবার ধরণ হয় নাকি? হুম মধুর বেশ কয়েক ধরণ রয়েছে। যার মধ্যে বাংলাদেশে বেশ করা ধরণের মধু পাওয়া যায়। সেগুলো হলো ফুলের উপর ভিত্তি করে।
- সরিষা ফুলের মধু,
- লিচু ফুলের মধু,
- সুন্দরবনের মধু (খলিশা, গড়ান, কেওড়া, বাইন ইত্যাদি),
- কালোজিরা ফুলের মধু,
- ধনিয়া ফুলের মধু,
- বরই ফুলের মধু,
- ইত্যাদি।
বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি যে মধুগুলি পাওয়া যায় তা হলো উপরে উল্লেখিত মধুগুলি। বলে রাখা ভালো যে উপরে উল্লেখিত মধুগুলি এক একটি থেকে এক একটি স্বাধের দিক দিয়ে, গন্ধের দিক দিয়ে, রং এর দিক দিয়ে এবং বৈশিষ্ট্যগত দিক দিয়ে ভিন্নতা রয়েছে। নিম্নে আমরা উপরোল্লিখিত মধুগুলির বৈশিষ্ট্য নিয়ে নিচে বিস্তারিতভাবে জানা যাক, কি বলেন? চলুন তাহলে।
সরিষা ফুলের মধুঃ
- টাটকা মধু দেখতে সাধারণত Extra Light Amber রঙের হয়। তবে কিছু দিন পরে জমে যাওয়ার ফলে সাদা রঙের হয়ে যায়।
ঘ্রাণ অনেকটা সরিষার ফুলের সাথে মিল খুঁজে পাওয়া যায়। - মধুর ঘনত্ব কম বা বেশি হতে পারে।
- মধু পাতলা হলে ফেনা হতে দেখা যায়। আর ঘনত্ব বেশি হলেও সরিষা মধুতে অনেক সময় সামান্য ফেনা হতে পারে।
- এই মধুতে গ্লুকোজের পরিমাণ বেশি থাকে।
লিচু ফুলের মধুঃ
- দেখতে সাধারণত Light Amber রঙের হয় (তবে সময়, স্থান ও ঘন-পাতলার উপর নির্ভর করে কিছুটা Light বা Dark হতে পারে)।
- খেতে খুবই সুস্বাদু হয়। মধু খাওয়ার সময় অনেক সময় মধুতে লিচু ফলের স্বাদ পাওয়া যায়।
- ঘ্রাণ টাও লিচু ফলের সাথে মিলে যায় (তবে মধু পুরাতন হলে স্বাদ এবং ঘ্রাণ কিছুটা পরিবর্তন দেখা যায়)।
মধুর ঘনত্ব কম বা বেশি হতে পারে। - মধু পাতলা হলে ফেনা হতে দেখা যায়। আর ঘনত্ব বেশি হলে ফেনা হতে দেখা যায় না।
- সাধারণত লিচু ফুলের খাটি মধু সামান্য জমতে দেখা যায়। যদি মধু পাতলা হয় তাহলে সেটা কয়েকমাস পরে সামান্য জমতে পারে। আর যদি মধু খুবই ঘন হয় তাহলে সেটা দ্রুত জমতে শুরু করে এবং সম্পূর্ণ মধুই জমে যেতে পারে বা বেশীরভাগ জমতে পারে।
সুন্দরবনের মধুঃ
- দেখতে সাধারণত Light Amber রঙের হয় (তবে সময় ও ফুল ভেদে কিছুটা Light বা Dark হতে পারে)।
- খেতে খুবই সুস্বাদু, হালকা টকটক মিষ্টি লাগে।
- কিছু মানুষের কাছে হয়তো সুন্দরবনের মধু অনেকটা আখের রসের মতো লাগে।
- মধুর ঘনত্ব সবসময় পাতলা হবে।
- সুন্দরবনের মধুর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, একটু ঝাঁকি লাগলেই প্রচুর পরিমাণে ফেনা হয়ে যায়। তবে শীতকালে ফেনা হওয়ার প্রবণতা কম হয়ে থাকে।
- সুন্দরবনের খাটি মধু কখনই জমে না। হোক সেটা ফ্রিজের ভেতরে বা বাইরে।
- এই মধুর আরেকটি বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, হাতে চাক কাটা পদ্ধতিতে সংগ্রহ করা মধুর উপরে হলুদ রঙের পোলেন জমা হয়। এটাকে অনেকে গাদ জমা বলে থাকেন।
কালোজিরা ফুলের মধুঃ
- দেখতে কালচে রঙের হয় (Dark Amber)।
- খেতে একেবারে খেজুরের গুড়ের মত স্বাদ লাগে।
- ঘ্রাণ টাও খেজুরের গুড়ের সাথে মিলে যায়।
- মধুর ঘনত্ব কম বা বেশি হতে পারে।
- মধু পাতলা হলে ফেনা হতে দেখা যায়। আর ঘনত্ব বেশি হলে ফেনা হতে দেখা যায় না।
- সাধারণত কালোজিরা ফুলের খাটি মধু জমে যেতে দেখা যায় না। তবে ধনিয়া ফুল সহ অন্যান্য ফুলের মধুর মিশ্রনের ফলে অনেক সময় সামান্য জমতে দেখা যায়।
বরই ফুলের মধুঃ
- দেখতে সাধারণত Amber রঙের হয়।
- খেতে খুবই সুস্বাদু। মধু খাওয়ার সময় অনেকটা পাকা বরই এর মতো স্বাদ লাগে।
- ঘ্রাণ বরই ফুলের মতো লাগে।
- মধুর ঘনত্ব খুবই পাতলা হবে।
- বরই ফুলের মধুর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, একটু ঝাঁকি লাগলেই প্রচুর পরিমাণে ফেনা হয়ে যাবে।
- সাধারণ তাপমাত্রায় বরই ফুলের খাটি মধু জমতে দেখা যায় না।
ভালো মধুঃ
উপরে এতো ধরণের মধু দেখে হয়তো আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে, এখান থেকে কোন ধরণের মধুটি সবচেয়ে ভালো। আসলে খাটি হলে সব মধুই ভালো। কেননা সবগুলো মধুই বিভিন্ন ফুল থেকে এবং মৌমাছি দ্বারা সংগৃহীত। যদিও ঘ্রাণে, স্বাধে, ঘণত্বে ইত্যাদিতে পার্থক্য রয়েছে। মধুর উপকার পাওয়ার জন্য আপনি উপরোল্লিখিত যেকোনো মধুই খেতে পারেন। আমি বলবো সবগুলো মধুর যদি পার্থক্য বা স্বাধ আলাদাভাবে পেতে চান এবং আপনার পক্ষে যদি সম্ভব হয় তাহলে সবগুলোই মধুই একবার অন্তত খেয়ে দেখতে পারেন।
আপনাদের সুবিধার্থে আমি আমার টিপস এন্ড ট্রিকসগুলি ভিডিও আকারে শেয়ার করার জন্য একটি ইউটিউব চ্যানেল তৈরি করেছি। আশা করি চ্যানেলটি Subscribe করবেন।
সৌজন্যে : বাংলাদেশের জনপ্রিয় এবং বর্তমান সময়ের বাংলা ভাষায় সকল গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ক টিউটোরিয়াল সাইট – www.TutorialBD71.blogspot.com নিত্যনতুন বিভিন্ন বিষয়ে টিউটোরিয়াল পেতে সাইটটিতে সবসময় ভিজিট করুন।