VPN কি শুধু ইলিগ্যাল অথবা আনঅথারাইজড ওয়েবসাইট ব্যবহার করার জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে, আর যদি তাই হয় তাহলে কি পুরো VPN বিষয়টিই ইলিগ্যাল। এইরকম প্রশ্ন হয়তো আপনার মাথায় ঘুরপাক খায়। VPN বিষয়টির সাথে আমরা সকলে পরিচিত হলেও এটার মূল কাজ সম্পর্কে আমরা তেমন জানি না। পাশাপাশি এটা সম্পর্কে আমাদের অনেক ভুল ধারণা রয়েছে। তো আজকের এই টপিকে আমরা জানবো যে মূলত ভিপিএন কী? কিভাবে কাজ করে এবং ভিপিএন সম্পর্কে যত ভুল ধারণা রয়েছে সেগুলো সম্পর্কে আলোচনা করবো এবং ভুলগুলো শুধরে নিবো।
VPN বা ভিপিএন কী?
VPN এর পূর্ণরূপ হচ্ছে Virtual Private Network যখন আমরা এটি ব্যবহার করে কোনো ওয়েবসাইটে ভিজিট করি তখন তা সুরক্ষিতভাবে ভিজিট করা হয়। স্বাভাবিকভাবে আমরা যখন কোনো ওয়েবসাইটে প্রবেশ করি অর্থাৎ ধরেন আমাদের এই www.trickbd.com ওয়েবসাইট ভিজিট করার জন্য ডিভাইস থেকে রিকুয়েস্ট করি তখন তা আপনার ISP বা ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারের কাছে সর্বপ্রথম যায়। ISP হচ্ছে আপনার যে সিম দিয়ে নেট চালাচ্ছেন সেটি হতে পারে অথবা ওয়াইফাই দিয়ে নেট চালালে সে ব্রডব্রেন্ড। তারপরই আইএসপি মূলত আপনি যে ওয়েবসাইটে ভিজিট করতে চাচ্ছেন সেটিতে রিকুয়েস্ট পাঠায়। তো এই যে কানেকশনের ফাকা জায়গাগুলো হ্যাকাররা চাইলে আপনার ডাটা এখানে আড়ি পেতে নিয়ে নিতে পারে। ডেটার মধ্যে আছে আপনার আইপি অ্যাড্রেস এবং পাশাপাশি আপনার অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ ইনফরমেশন নিয়ে নিতে পারে।
আর যদি আপনি একটি ভিপিএন ব্যবহার করে কোনো একটি ওয়েবসাইটে প্রবেশ কনতে চান, যেমন ধরেন আমরা ভিপিএন ব্যবহার করে যদি আমাদের এই ওয়েবসাইট www.trickbd.com ভিজিট করি তাহলে অর্থাৎ আমাদের ডিভাইস থেকে এই ওয়েবসাইটে প্রবেশ করার জন্য রিকুয়েস্ট করি তখন এটির সর্বপ্রথম রিকুয়েস্ট যাবে ভিপিএন ক্লায়েন্ট সার্ভারে। এখান থেকে আপনার ডেটাটাকে ইনক্রিপ্ট করা হবে তারপর একটা সিক্রেট টানেলের মাধ্যমে আইএসপি সার্ভারে যাবে। আইএসপি সার্ভার থেকে এইবার আবারও আরেকটি ভিপিএন হয়ে তারপর আপনি যে সাইটে প্রবেশ করতে চাচ্ছেন সেটিতে রিকুয়েস্ট যাবে অর্থাৎ আমাদের এই ওয়েবসাইটে রিকুয়েস্ট পাঠাবে। আর তারপরই আমরা উক্ত সাইটটিতে প্রবেশ করতে পারবো। ভিপিএন ব্যবহারের এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আপনার পুরো ডাটাটি সিকিউরড থাকবে পাশাপাশি আপনার আইপি অ্যাড্রেসটা পরিবর্তীত হয়ে যাবে। সুতরাং কোনো হ্যাকার যদি আপনার ডাটা হ্যাক করতেও পারে তবুও সে আপনার কোনো ডাটা জানতে পারবে না। এইভাবে ভিপিএন ব্যবহার করলে আপনি ইন্টারনেটে নিরাপদ এবং সুরক্ষিত থাকতে পারবেন। আর এটিই হচ্ছে ভিপিএন এর কার্যপ্রণালী। ভিপিএনকে শুধুমাত্র আইপি হাইড করার ক্ষেত্রে কাজে লাগানো হয় না, বরং নিরাপদ এবং সুরক্ষিত থাকার জন্য ব্যবহার করতে হয়।
VPN বা ভিপিএন নিয়ে যত ভুল ধারণাঃ
এতোক্ষণ তো ভিপিএন নিয়ে মোটামুটি ধারণা নিয়েছি এইবার আমরা ভিপিএন নিয়ে আমাদের যে ভুল ধারণাগুলি রয়েছে সেগুলো নিয়ে আলোচনা করব।
VPN বা ভিপিএন শুধু অবৈধ কাজে ব্যবহৃত হয়ঃ
আমরা অনেকেই মনে করি ভিপিএন শুধু ইন্টারনেট জগতে অবৈধ কাজ করার জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে, আসলে তা কিন্তু নয়। ভিপিএন মূলত ইন্টারনেটে নিরাপদ এবং সুরক্ষিত থাকার জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে। আগে ভিপিএন শুধু ইন্টারনেটে সরকারি কাজকর্ম সম্পাদন করার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হতো। এখন মোটামুটি সবাই ব্যবহার করে থাকেন।
VPN বা ভিপিএন ব্যবহার করলে লুকিয়ে থাকা যায়ঃ
অনেকেই মনে করেন ভিপিএন ব্যবহার করলে ইন্টারনেট থেকে নিজেকে একদম লুকিয়ে রাখা যায়। আসলে ব্যাপারটা কিন্তু তা নয় একদমই ভুল। হ্যাঁ আপনি ভিপিএন ব্যবহার করে একটা এক্সট্রা সিকিউরিটি ব্যবহার করতে পারবেন। যেন হ্যাকার থেকে আপনি বাঁচতে পারেন। তবে আপনি ইন্টারনেটে কোনো ইলিগ্যাল কিছু করেন এবং কর্তৃপক্ষ যদি চায় তাহলে তা বের করা সম্ভব। যদি এটা বেশ কঠিন বিষয় তবুও সম্ভব। তাই ভিপিএন ব্যবহার করছেন বলে ভুলেও কেউ এমন ধরণের অবৈধ কাজ করবেন না যেটার জন্য আপনাকে আবার শাস্তি ভোগ করতে হতে পারে।
প্রক্সি আর ভিপিএন একই জিনিসঃ
আমরা অনেকেই মনে করি প্রক্সি আর ভিপিএন একই জিনিস। প্রক্সি মূলত আপনার আইপিটাকে হাইড করে বা লুকিয়ে রাখে। আর ভিপিএন আইপি হাইডও করে এখন পাশাপাশি আপনার ডাটাকে এনক্রিপ্ট বা সুরক্ষিত করে। আর তাই বলা যায় ভিপিএনে একটা একটা সুরক্ষার ব্যাপার বা সুবিধা রয়েছে যা প্রক্সিতে নেই। প্রক্সি ব্যবহার করে হয়তো আপনি কোনো ব্যান করা ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে পারবেন। কিন্তু আপনার ডাটা সুরক্ষিত থাকবে না৷ আর এই হচ্ছে প্রক্সি আর ভিপিএন এর মধ্যে পার্থক্য।
ভিপিএন বাংলাদেশে ইলিগ্যাল বা অবৈধঃ
আমরা অনেকেই মনে করি ভিপিএন বাংলাদেশে ইলিগ্যাল বা অবৈধ। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অবশ্যক ভিপিএন ইলিগ্যাল। তবে বাংলাদেশে ভিপিএন ইলিগ্যাল নয়। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় চায়না এবং রাশিয়াতে ভিপিএন অবৈধ।
টর ব্রাউজার এবং ভিপিএন একই জিনিসঃ
অনেকেই মনে করেন টর ব্রাউজার ও ভিপিএন একই জিনিস। আসলে কিন্তু তা নয়। ভিপিএন হচ্ছে একটি সিঙ্গেল সার্ভার যা একটি সিঙ্গেল ভিপিএন সার্ভার হয়ে আপনার কাঙ্খিত গন্তব্যে চলে যায়। আর টর হচ্ছে ডিসেন্ট্রালাইজড বা বিকেন্দ্রিকৃত সার্ভার যেখানে ভলান্টিয়াররা মাল্টিপল সার্ভার মেইনটেইন করে আর এইক্ষেত্রে আপনার ডাটাটা এনক্রিপ্ট হয়ে মাল্টিপল সার্ভার হয়ে কাঙ্খিত সার্ভারে পৌছায়। আর এই থেকে বুঝা য়ায় যে ভিপিএন থেকে টর অনেকটা নিরাপদ। তবে টর ব্রাউজার অনেক ধীরগতির বা স্লো হয়ে থাকে ভিপিএন থেকে।
আর এই ছিলো মূলত আমাদের ভিপিএন নিয়ে যত ধরণের ভুল ধারণা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা। আশা করি আজকের এই ভিপিএন নিয়ে করা টপিকের মাধ্যমে আপনাদের সকলের ভুল ধারণাগুলি শুধরে গিয়েছে। আর হ্যাঁ, অবশ্যই ভিপিএন ব্যবহার করার ক্ষেত্রে চেষ্টা করবেন একটি ভালোমানের ভিপিএন ব্যবহার করার।
আপনাদের সুবিধার্থে আমি আমার টিপস এন্ড ট্রিকসগুলি ভিডিও আকারে শেয়ার করার জন্য একটি ইউটিউব চ্যানেল তৈরি করেছি। আশা করি চ্যানেলটি Subscribe করবেন।
সৌজন্যে : বাংলাদেশের জনপ্রিয় এবং বর্তমান সময়ের বাংলা ভাষায় সকল গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ক টিউটোরিয়াল সাইট – www.Trickbd.com নিত্যনতুন বিভিন্ন বিষয়ে টিউটোরিয়াল পেতে সাইটটিতে সবসময় ভিজিট করুন।