আমাদের মধ্যে অনেকেই রয়েছেন
যাদের কোন কিছু মনে থাকে না।
আবার এমন কিছু ব্যক্তি রয়েছে, যারা
কোন কিছু খুব বেশি দিন মনে রাখতে
পারেন না। এমন সমস্যা মূলত দূর্বল
স্মৃতিশক্তির কারণে হয়ে থাকে।
সেগুলো হলো-
১. ইখলাস বা আন্তরিকতাঃ
যে কোনো কাজে সফলতা অর্জনের
ভিত্তি হচ্ছে ইখলাস বা আন্তরিকতা।
আর ইখলাসের মূল উপাদান হচ্ছে বিশুদ্ধ
নিয়ত। নিয়তের বিশুদ্ধতার গুরুত্ব
সম্পর্কে উস্তাদ খুররাম মুরাদ বলেন,
“উদ্দেশ্য বা নিয়ত হল আমাদের আত্মার
মত অথবা বীজের ভিতরে থাকা
প্রাণশক্তির মত। বেশীরভাগ বীজই
দেখতে মোটামুটি একইরকম, কিন্তু
লাগানোর পর বীজগুলো যখন চারাগাছ
হয়ে বেড়ে উঠে আর ফল দেওয়া শুরু
করে তখন আসল পার্থক্যটা পরিস্কার
হয়ে যায় আমাদের কাছে। একইভাবে
নিয়ত যত বিশুদ্ধ হবে আমাদের কাজের
ফলও তত ভালো হবে।” এ প্রসঙ্গে
আল্লাহ তা’আলা বলেন, “তাদেরকে
এছাড়া কোন নির্দেশ করা হয়নি যে,
তারা খাঁটি মনে একনিষ্ঠভাবে
আল্লাহর এবাদত করবে, নামায কায়েম
করবে এবং যাকাত দেবে। এটাই সঠিক
ধর্ম।” [সূরা আল-বায়্যিনাহঃ ৫] তাই
আমাদের নিয়ত হতে হবে এমন যে,
আল্লাহ আমাদের স্মৃতিশক্তি যেনো
একমাত্র ইসলামের কল্যাণের জন্যই
বাড়িয়ে দেন।
২. দু’আ ও যিকর করাঃ
আমরা সকলেই জানি আল্লাহর সাহায্য
ছাড়া কোনো কাজেই সফলতা অর্জন
করা সম্ভব নয়। এজন্য আমাদের উচিত
সর্বদা আল্লাহর কাছে দু’আ করা যাতে
তিনি আমাদের স্মৃতিশক্তি বাড়িয়ে
দেন এবং কল্যাণকর জ্ঞান দান করেন।
এক্ষেত্রে আমরা নিন্মোক্ত দু’আটি
পাঠ করতে পারি, “হে আমার
পালনকর্তা, আমার জ্ঞান বৃদ্ধি
করুন।” [সূরা ত্বা-হাঃ ১১৪] তাছাড়া
যিকর বা আল্লাহর স্মরণও স্মৃতিশক্তি
বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। আল্লাহ
সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন, “…যখন
স্মরণ করুন…” [সূরা আল-কাহ্ফঃ ২৪] তাই
আমাদের উচিত যিকর, তাসবীহ (সুবহান
আল্লাহ), তাহমীদ (আলহামদুলিল্লাহ),
তাহলীল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) ও
তাকবীর (আল্লাহু আকবার) – এর
মাধ্যমে প্রতিনিয়ত আল্লাহকে স্মরণ
করা।
৩. পাপ থেকে দূরে
থাকাঃ
প্রতিনিয়ত পাপ করে যাওয়ার একটি
প্রভাব হচ্ছে দুর্বল স্মৃতিশক্তি। পাপের
অন্ধকার ও জ্ঞানের আলো কখনো
একসাথে থাকতে পারে না। ইমাম
আশ-শাফি’ঈ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,
“আমি (আমার শাইখ) ওয়াকীকে আমার
খারাপ স্মৃতিশক্তির ব্যাপারে
অভিযোগ করেছিলাম এবং তিনি
শিখিয়েছিলেন আমি যেন পাপকাজ
থেকে নিজেকে দূরে রাখি। তিনি
বলেন, আল্লাহর জ্ঞান হলো একটি
আলো এবং আল্লাহর আলো কোন
পাপচারীকে দান করা হয় না।” আল-
খাতীব আল-জামী'(২/৩৮৭) গ্রন্থে
বর্ণনা করেন যে ইয়াহইয়া বিন
ইয়াহইয়া বলেনঃ “এক ব্যক্তি মালিক
ইবনে আনাসকে প্রশ্ন করেছিলেন, ‘হে
আবদ-আল্লাহ, আমার স্মৃতিশক্তিকে
শক্তিশালী করে দিতে পারে এমন
কোন কিছু কি আছে? তিনি বলেন, যদি
কোন কিছু স্মৃতিকে শক্তিশালী করতে
পারে তা হলো পাপ করা ছেড়ে
দেয়া।’” যখন কোনো মানুষ পাপ করে
এটা তাকে উদ্বেগ ও দুঃখের দিকে
ধাবিত করে। সে তার কৃতকর্মের
ব্যাপারে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ে। ফলে
তার অনুভূতি ভোঁতা হয়ে যায় এবং
জ্ঞান অর্জনের মতো কল্যাণকর ‘আমল
থেকে সে দূরে সরে পড়ে। তাই
আমাদের উচিত পাপ থেকে দূরে
থাকার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করা।
৪. বিভিন্ন উপায়ে চেষ্টা
করাঃ
একটু গভীরভাবে লক্ষ্য করলে আমরা
দেখবো যে, আমাদের সকলের মুখস্থ
করার পদ্ধতি এক নয়। কারো শুয়ে পড়লে
তাড়াতাড়ি মুখস্থ হয়, কারো আবার
হেঁটে হেঁটে পড়লে তাড়াতাড়ি মুখস্থ
হয়। কেউ নীরবে পড়তে ভালোবাসে,
কেউবা আবার আওয়াজ করে পড়ে।
কারো ক্ষেত্রে ভোরে তাড়াতাড়ি
ভালো মুখস্থ করতে পারে। তাই
আমাদের প্রত্যেকের উচিত নিজ নিজ
উপযুক্ত সময় ও পারিপার্শ্বিক পরিবেশ
ঠিক করে তার যথাযথ ব্যবহার করা। আর
কুর’আন মুখস্থ করার সময় একটি নির্দিষ্ট
মুসহাফ (কুর’আনের আরবি কপি) ব্যবহার
করা। কারণ বিভিন্ন ধরনের মুসহাফে
পৃষ্ঠা ও আয়াতের বিন্যাস বিভিন্ন রকম
হয়ে থাকে। একটি নির্দিষ্ট মুসহাফ
নিয়মিত ব্যবহারের ফলে মস্তিষ্কের
মধ্যে তার একটি ছাপ পড়ে যায় এবং
মুখস্থকৃত অংশটি অন্তরে গভীরভাবে
গেঁথে যায়।
৫. মুখস্থকৃত বিষয়ের উপর ‘আমল
করাঃ
আমরা সকলেই এ ব্যাপারে একমত যে,
কোনো একটি বিষয় যতো বেশিবার
পড়া হয় তা আমাদের মস্তিষ্কে ততো
দৃঢ়ভাবে জমা হয়। কিন্তু আমাদের এই
ব্যস্ত জীবনে অতো বেশি পড়ার সময়
হয়তো অনেকেরই নেই। তবে চাইলেই
কিন্তু আমরা এক ঢিলে দু’পাখি
মারতে পারি। আমরা আমাদের
মুখস্থকৃত সূরা কিংবা সূরার অংশ
বিশেষ সুন্নাহ ও নফল সালাতে
তিলাওয়াত করতে পারি এবং দু’আসমূহ
পাঠ করতে পারি সালাতের পর
কিংবা অন্য যেকোনো সময়। এতে
একদিকে ‘আমল করা হবে আর অন্যদিকে
হবে মুখস্থকৃত বিষয়টির ঝালাইয়ের
কাজ। আবার কোনো কিছু শেখার
একটি উত্তম উপায় হলো তা অন্যকে
শেখানো। আর এজন্য আমাদেরকে একই
বিষয় বারবার ও বিভিন্ন উৎস থেকে
পড়তে হয়। এতে করে ঐ বিষয়টি
আমাদের স্মৃতিতে স্থায়ীভাবে
গেঁথে যায়।
পৃথিবীর সবথেকে ভাল ডিসাইন এর সাইট
http://postmaza.com থেকে একবার ঘুরে যান প্লিজ