আমাদের সমাজে কিছু প্রচলিত কুসংস্কার
রয়েছে যেগুলো অধিকাংশই মানুষের
তৈরি করা। কোথাও রওনা দিলে ঝাড়ু, খালি
কলসি বা কেউ হাছি দিতে দেখলে
অযাত্রা হয়! আসলে ইসলামে এ ধরনের
কুসংস্কারের কোনো ভিত্তি নেই।
আমাদের আজকের আলোচনা
সমাজের প্রচলিত কুসংস্কারগুলোর
মধ্যে অন্যতম একটি। আর তা হলো
জোড়া কলা খাওয়া। শুধু জোড়া কলা কেন
কোনো খাবারেরই জোড়া সন্তান
জন্মানোর ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখার
কোনো ক্ষমতা নেই।
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন
পবিত্র কোরআনে পাকে ইরশাদ
করেছেন :
ﻟِﻠَّﻪِ ﻣُﻠْﻚُ ﺍﻟﺴَّﻤَﺎﻭَﺍﺕِ ﻭَﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ ﻳَﺨْﻠُﻖُ ﻣَﺎ ﻳَﺸَﺎﺀ
ﻳَﻬَﺐُ ﻟِﻤَﻦْ ﻳَﺸَﺎﺀ ﺇِﻧَﺎﺛًﺎ ﻭَﻳَﻬَﺐُ ﻟِﻤَﻦ ﻳَﺸَﺎﺀ ﺍﻟﺬُّﻛُﻮﺭَ
– ﺃَﻭْ ﻳُﺰَﻭِّﺟُﻬُﻢْ ﺫُﻛْﺮَﺍﻧًﺎ ﻭَﺇِﻧَﺎﺛًﺎ ﻭَﻳَﺠْﻌَﻞُ ﻣَﻦ ﻳَﺸَﺎﺀ
ﻋَﻘِﻴﻤًﺎ ﺇِﻧَّﻪُ ﻋَﻠِﻴﻢٌ ﻗَﺪِﻳﺮٌ
অর্থ : নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের
রাজত্ব আল্লাহ তা’য়ালারই। তিনি যা ইচ্ছা, সৃষ্টি
করেন, যাকে ইচ্ছা কন্যা-সন্তান এবং
যাকে ইচ্ছা পুত্রসন্তান দান করেন। অথবা
তাদের দান করেন পুত্র ও কন্যা উভয়ই
এবং যাকে ইচ্ছা বন্ধ্যাত্ব করে দেন।
নিশ্চয় তিনি সর্বজ্ঞ, ক্ষমতাশীল। [সুরা
শূরা : ৪৯,৫০]
সুতরাং মহান আল্লাহর পবিত্র কালামে
পাকের এই দুটি আয়াত থেকে সুস্পষ্ট
প্রমাণিত হয় যে, সবকিছুর ক্ষমতা এক
মাত্র মহান আল্লাহর হাতে। তিনি চাইলে যা
ইচ্ছা তাই করতে পারেন।
আরেকটি তথ্য আপনাদের ভুল ভাঙার
সুবিধার্থে বলতে হচ্ছে, বর্তমানে
অনেক দেশেই দেখা যায় দুইয়ের
অধিক সন্তান জন্ম নিচ্ছে। যেমন কিছুদিন
আগে আমাদের দেশের খুলনায় এবং
রংপুর জেলায় ৫টি করে সন্তান জন্ম
হয়েছে। তাহলে তারা কয়টি করে কলা
খেয়েছিলেন? আসলে এ ধরনের
কথাগুলোর ইসলামে কোনো প্রকার
ভিত্তি নেই। তাই এমনসব আলােচনা
থেকে নিজে দূরে থাকুন এবং
অপরকেও সচেতন করুণ।
জোড়া কলা খাওয়ার কারণে জোড়া
সন্তান জন্ম হবে- আমাদের সমাজের
এমন একটি কুসংষ্কারের প্রচলন
রয়েছে। অনেকে এই কুসংস্কারের
কারণে শুধু গর্ভকালীন সময়ই নয়,
যেকোনো সময়েই জোড়া কলা
খাওয়া থেকে বিরত থাকেন।
অবার অনেককেই দেখা গেছে,
বিয়ে করেননি তারাও এই কলা খাওয়া
থেকে বিরত থাকেন। তারা মনে
করেন, জোড় কলা খাওয়ার কারণে
বিয়ের পর তাদের ঘরে জোড় সন্তান
জন্ম নেবে। অথচ ইসলাম এমন
কোনো ধারণাকে কখনোই সমর্থন
করে না।
প্রাচীনকালে এমন কিছু প্রথা আমাদের
সমাজে প্রচলিত ছিল। ঠিক আজো সেই
প্রাচীনকালের অকেজো
ধারণাগুলোকে আঁকড়ে ধরে আছেন
কিছু মানুষ। বিশেষ করে দেখা যায়
পরিবারের প্রবীণ লােকদের কাছে
এসব কুসংস্কারের কথা শোনা যায় এবং
তাদের কাছেই এই প্রথার মূল্য বেশি।
আবার গর্ভবতী মায়েরা কি খেতে
পারবেন আর কি খেতে পারবেন না এ
নিয়েও রয়েছে আমাদের সমাজে নানা
কুসংস্কার। যেমন, জোড়া কলা খেলে
যমজ সন্তান জন্ম নেয়। আসলে এ
কথাটি নিতান্তই হাস্যকর এবং এর পেছনে
না আছে কোনো ইসলামী
শরীয়তের নির্দেশনা, না আছে
কোনো যুক্তি। ইসলাম কারো মুখের
কথায় চলে না এবং চলতে পারে না। তাই
এমন বিশ্বাস অবশ্যই বর্জন করা উচিত।