অন্যান্য ইবাদতের চেয়ে রোজা
আল্লাহর কাছে বেশি প্রিয়। কোনো
ইবাদতের ক্ষেত্রে নিজহাতে
প্রতিদান দেয়ার ঘোষণা আল্লাহ
দেননি, একমাত্র রোজা ছাড়া। এর
প্রধান কারণ হচ্ছে তাকওয়া।
এই ইবাদতে তাকওয়ার যে স্থান তা আর
কোনো ইবাদতে নেই। পবিত্র
রমজানের সুফল বর্ণনা করতে গিয়ে
কোরআনে বলা হয়েছে, ‘যেন তোমরা
তাকওয়া অর্জন করতে পার।’ তাকওয়া
কী? সাধারণভাবে তাকওয়ার অর্থ
আল্লাহর ভয়ে নিজের অভ্যন্তরের রিপু
দমন করে আল্লাহর আদেশ-নিষেধ
মেনে চলা। রোজা মুমিন বান্দার
অন্তরে আল্লাহভীতি ও আত্মসমর্পণ
জাগিয়ে তাকে পরিশুদ্ধ হওয়ার সুযোগ
করে দেয়।
ক্ষুধা-পিপাসা ও সংযমের পবিত্র দহন
রোজাদার মুমিনকে আল্লাহর
বিধানের সামনে খুশিমনে
আত্মসমর্পণের প্রেরণা দেয়। ইসলামি
শরিয়তের পরিভাষায় তাকওয়া বলা হয়
সেসব বিষয়কে, যা আখেরাতের জন্য
তাকওয়ার বিভিন্ন স্তর রয়েছে। এর
সর্বনি¤œ স্তর হচ্ছে কুফর ও শিরক থেকে
বাঁচা। মধ্যম স্তর হচ্ছে কবিরা গোনাহ
থেকে বেঁচে থাকা এবং সগিরা
গোনাহ বারবার না করা।
আর সর্বোচ্চ স্তর হচ্ছে মন্দ বিষয়
থেকে বেঁচে থাকার উদ্দেশ্যে এমন
জায়েজ অনেক বিষয়কেও পরিহার
করে চলা, যেগুলো করলে না-জায়েজ
কাজে জড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা
থাকে। তাকওয়া অবলম্বনকারী
ব্যক্তিকেই বলা হয় মুত্তাকি।
রমজানের রোজায় আমরা দেখি
রোজাদার বান্দা প্রতিদিন
খানাপিনা ও বৈধ সম্ভোগ থেকে
নিজেকে বিরত রাখেন। সামর্থ্য
থাকা সত্ত্বেও বহু কষ্ট সয়ে রোজাদার
বান্দা বৈধ জৈবিক চাহিদাগুলো
থেকেও বিরত থাকার এ কাজটি করেন
কেবল আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ
পালনার্থে, তার সন্তুষ্টির জন্য।
হাদিসে আছে, ‘যে ব্যক্তি রোজা
অবস্থায় মিথ্যাচার ও মন্দ কাজ ত্যাগ
করেনি, তার পানাহার ত্যাগে
আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই।’ মূলত
প্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রণ করে বিবেকের
শক্তিকে প্রবল করার জন্য রোজার
মানুষের ভেতরকার জৈবিক ও
আধ্যাত্মিক শক্তির দ্বন্দ্বে আধ্যাত্মিক
শক্তিকে বিজয়ী করে তোলে। মানব
স্বভাব থেকে পাশবিকতা দূর করে
ফেরেশতাসুলভ নিষ্পাপত্বের প্রেরণা
সৃষ্টি করে। সেজন্যই সিয়াম সাধনা বা
রোজা পালনে যথার্থ নিয়ম ও
কর্মপন্থা আমাদের অনুসরণ করতে হবে।
শুধুই ক্ষুধা ও পিপাসা বর্জনকে যথেষ্ট
মনে না করে সব মন্দ কাজ থেকে বিরত
থাকতে হবে। অন্তরকে আল্লাহর ভয় ও
ভালোবাসায় করতে হবে সমৃদ্ধ।
তাহলেই আমরা রমজানের ফজিলত এবং
রোজার সুফল লাভ করতে পারব।