“স্বাস্থ্যকর সেহরী”
প্রথমত, প্রত্যেক কে অবশ্যই সেহরি খাওয়া
উচিত। ধর্মীয় গুরত্ব থাকার পাশাপাশি সেহরির
স্বাস্থ্য সংক্রান্ত গুরত্ব ও অসীম। সেহরি না
খেয়ে রোজা রাখলে দিন শেষে বুকজ্বলার
সমস্যা বাড়বে, তাছাড়া দূর্বল ও বোধ করবেন
অনেক বেশী। অনেকে বলেন যে এই
সময় ক্ষিদে থাকেনা, তাই সেহরী খাইনা। ক্ষুদা
বৃদ্ধির জন্য চেষ্টা করুন ইফতারে ভাত খেতে
(বিশ্বাস করুন, ভাজা পোড়া খাওয়ার চাইতে
ইফতারে ভাত খেলে আপনি অনেক সুস্থ্য
বোধ করবেন) এবং এরপর তারাবীর পরে
হালকা খাবার খেতে। তাহলে এমনিতেই আপনার
সেহরীর সময় ক্ষিদে থাকবে। মূলত, রাতে
ভারী ডিনার এর কারণেই সেহরীর সময় ক্ষুধা
নষ্ট হয়।
>কতটুকু খাবেন?
অনেকে ভাবেন যে, সেহরীতে
বেশী করে খেয়ে নেই, তাহলে সারাদিন
ক্ষিদে লাগবে না। কথাটা আসলে ভূল। আপনি
যতই খান না কেন, ইফতারের আগ পর্যন্ত তা
পেটে থাকবে না। এই অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণ
আপনার পাকস্থলীর উপর অতিরিক্ত চাপ
প্রয়োগ করবে এবং সারাদিন আপনি বদহজম,
পেট ফাপা, গ্যাস এর সমস্যায় ভুগবেন। আর এই
রোজার মাস শেষে দেখবেন এই অতিরিক্ত
খাদ্য আপনার পেটে চর্বি হিসেবে জমা
হয়েছে।
>কখন খাবেন?
সেহরীতে ফজরের নামাজের বেশ
আগে উঠুন (অন্তত ১ ঘন্টা), এমন ভাবে উঠুন
যেন, খাবার খেয়ে একটু হাটা চলা করার সময় পান।
এরপর ফজরের নামাজ শেষে শুতে যান।
কেননা, খেয়ে সাথে সাথে শুয়ে পড়লে
সারাদিন গন্ধ ঢেকুর এর সমস্যায় পরতে পারেন।
>কি খাবেন?
সেহরীতে খাবেন শস্য জাতীয় খাবার (চাল,
গম, ওট, ভুট্টা জাত খাবার যেমন ভাত, খিচুরী, রুটি
প্রচুর সব্জী। সব্জী একেতো
শরীরের পানির চাহিদা পূরণ কোরে তৃষ্ণা কমায়
পাশাপাশি কোষ্ঠ্যকাঠিন্য দূর করে। মূল খাদ্য
ছাড়াও খেতে পারেন দুধ, বাদাম, মধু ও ফল
(যেমন খেজুর, আম, তরমুজ, কলা, আঙ্গুর),
তরমুজ শরীরের পানির চাহিদা পূরণ করে আর
আম, কলা, আঙ্গুর শক্তিতে ভরপুর। বিশেষ
করে যারা দিনে বেলায় রোজা রাখা অবস্থায়
প্রায়ই হাইপো হয়ে যান বা চিনি স্বল্পতায় ভুগে
দূর্বল বোধ করেন, তারা আঙ্গুরের রস
খেতে পারেন। এতে থাকা বিশেষ ধরণের
চিনি অনেক ক্ষন রক্তে থেকে হাইপো
হওয়া রোধ করে। বাদামের মধ্যে সবচেয়ে
ভালো হলো আমন্ড বা ওয়ালনাট। তাছাড়া চিনা বাদাম
ও খেতে পারেন। মধু শুধু শুধু বা দুধে মিশিয়ে
খেতে পারেন। (ডায়বেটিস রোগীর জন্য
এগুলো প্রযোজ্য নয়)
>কি খাবেন না?
১) সেহরীতে কখনোই সরাসরি প্রচুর চিনি
যুক্ত ডেজার্ট খাবেন না (যেমন পায়েশ, মিষ্টি
ইত্যাদি), চিনি রক্তে দ্রুত পৌছে আপনার ক্ষিদে
কমিয়ে দিবে, ফলে আপনি সেহরীতে কম
খাবেন। আবার ক্ষুব দ্রুত এটি রক্ত থেকে
সরেও যাবে। ফলে এটি রক্তে অনেকক্ষন
থেকে আপনার ক্ষিদে সারাদিন কমিয়ে রাখাতে
কোন ভুমিকা তো রাখবেই না, বরং দ্রুত
মেটাবলাইজড হয়ে ফ্যাট এ পরিণত হবে।
সেহরীতে সবসময় এমন খাবার খাওয়া উচিত যা
রক্তে অনেকক্ষন থাকে যেমন
কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট ( ভাত, রুটি, আলু
ইত্যাদি)।
২) সেহরীতে চা, কফি খাওয়া উচিত না। কেননা
এতে থাকা ক্যাফেইন মূত্রের পরিমাণ বাড়ায়।
ফলে শরীর থেকে পানি ও মিনারেল বের
হয়ে তৃষ্ণা বেড়ে যায়। যদি চা না খেলে খুব
কষ্ট হয়। তাহলে পাতলা বা কম লিকারের চা সামান্য
লেবুর রস দিয়ে খান।
৩) সেহরীতে অতি লবনযুক্ত খাবার (যেমন
পনির, লবনযুক্ত শুটকী, আচার, সালাদ ড্রেসিং
ইত্যাদি) একদম খাবেন না। শরীরে পানির পরিমাণ
শরীরে লবনের পরিমানের সঙ্গে সরাসরি
পানির চাহিদা ও তৃষ্ণা বাড়ে। সুতরাং সেহরীতে
লবনযুক্ত খাবার খেলে দিনের বেলায় আপনার
তৃষ্ণা বেশী পাবে।
৪) সেহরীতে অতিরিক্ত পানি খেয়ে পেট
ভরে ফেলার অর্থ হয়না। বেশী পানি আপনার
সারাদিনের তৃষ্ণা মেটাতে পারবে না। সব পানি
একেবারে সেহরীতে না খেয়ে ইফতার
থেকে সেহরী পর্যন্ত ভেঙ্গে
ভেঙ্গে ৮ গ্লাস পানি খাওয়া বেশী
স্বাস্থ্যকর। সেহরীতে ফল বা সব্জী খাওয়া
পানির বিকল্প হিসেবে কাজ করবে।
>বিকল্প খাবারঃ
অনেকে সেহরীতে ঘুম থেকে উঠে
কিছুতেই ভাত খেতে পারেন না। যদিও
সেহরীতে প্রচুর সব্জী ও ফল খেতে
বলা হয়, কিন্তু শুধু এগুলো খেয়েও রোজ রাখা
সম্ভব না। বিকল্প হিসেবে ভাত না খেয়ে
কয়েকটি শক্তিদায়ক খাবার অল্প অল্প করে
খেতে পারেন। যারা ভাত খেতে পারেন না
তারা রূটি যে কোন তরকারী দিয়ে। পিনাট বাটার
ও প্রচন্ড শক্তি প্রদান কারী খাবার। টোস্ট
দিয়ে পিনাট বাটার খেতে পারেন (পরিমিত
পরিমানে), আমাদের দেশে শুধু আলুর রেসিপি
কম থাকলেও অনেক দেশেও আলু মূল খাদ্য।
আলুর তৈরী কোন ডিশ সেহরীতে ভাতের
বিকল্প হতে পারে। দেশী রেসিপির মধ্যে
হালিম ও শক্তিদায়ক খাবার। এতে আছে
কার্বোহাইড্রেট ও আমিষ। বাসায় তৈরী কম
তেলের এক হালিমও হতে পারে আপনার
সেহরী।