Site icon Trickbd.com

পবিত্র হজে হাজরে আসওয়াদ বা কালো পাথরে চুমু খেতে হয় যে কারনে?

Unnamed

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
আসসালামুআলাইকুম।

হাজরে আসওয়াদ বা কালো পাথর- ইসলামের ইতিহাসের একটি অনন্য নিদর্শন। পবিত্র হজব্রত পালনের সময় এলেই বিশেষভাবে আলোচনায় আসে এই পাথরটির নাম। পবিত্র হজব্রত বা ওমরাহ পালনের উদ্দেশ্যে সৌদি আরবে গমনকারী হাজীগণ কমবেশি সবাই-ই বিশেষ এই পাথরটির সাথে পরিচিত। হাজরে আসওয়াদ শব্দ দুটি আরবি। হাজরুন অর্থ হচ্ছে পাথর আর আসওয়াদুন শব্দের অর্থ হচ্ছে কালো। অর্থ্যাৎ হাজরে আসওয়াদ অর্থ হলো কালো পাথর।
পবিত্র এই পাথরে চুমু খাওয়ার শরয়ী বিধান বা হুকুম কী? এটা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ বিভিন্ন দেশের হাজীগণ হজব্রত পালন করতে গিয়ে এই পাথরটিতে সরাসরি বা ইশারা করে চুমু দিয়ে থাকেন। অনেক সময় অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে পাথরটিতে চুমু খেতে গিয়ে অনেক সময় অনেক সমস্যায়ও পড়তে হয়। হাদিসের বিভিন্ন গ্রহণযোগ্য গ্রন্থে হাজরে আসওয়াদ বা কালো পাথরে চুমু খাওয়া সম্পর্কে রাসূল (সা.) -এর নির্ভরযোগ্য বাণী এবং সাহাবাগণের আমলের বর্ণনা পাওয়া যায়।
বিখ্যাত সাহাবী হজরত আব্দুল্লাহ বিন ওমরকে (রা.) হাজরে আসওয়াদ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে, তিনি বললেন, ‘আমি রাসূলকে (সা.) পাথরটি স্পর্শ ও চুম্বন করতে দেখেছি।’ [সহিহ মুসলিম : হা. ১২৬৭]

এছাড়া রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন হাজরে আসওয়াদ পাথরটি ‘আবু কুবাইস’ পাহাড় থেকে বড় আকার ধারণ করে উপস্থিত হবে। তখন পাথরটির একটি জিহবা ও দুটি ঠোঁট থাকবে, হজ পালনের সময় কোন হাজী কোন নিয়তে তাকে চুম্বন করেছে, সে সম্পর্কে পাথরটি তখন বক্তব্য দেবে। [সহিহ ইবনে খুযায়মা : ৪/২২১, মুসতাদরাকে হাকেম : ১/৪৫৭]

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) আরো বলেন যে, রাসূল (সা.) বিদায় হজের সময় একটি উটের ওপর সওয়ার হয়ে তাওয়াফ করছিলেন এবং সে সময় তিনি একটি বাঁকা মাথাওয়ালা লাঠির মাধ্যমে ইশারা করে হাজরে আসওয়াদকে চুম্বন করেছেন। [ফাতহুলবারী : ৩/৫৩৬ হা. ১৬০৭]

হজরত ওমর বিন খাত্তাব (রা.) একবার হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করার পর বললেন, ‘আমি জানি তুমি কেবলই একটি পাথর মাত্র। উপকার বা ক্ষতি করার ক্ষমতা তোমার নেই। আমি যদি প্রিয়নবী রাসূলকে (সা.) তোমাকে চুম্বন করতে না দেখতাম, তবে আমিও তোমাকে চুম্বন করতাম না। এরপর তিনি এই আয়াত পাঠ করলেন- “নিশ্চয় আল্লাহর রাসূলের মাঝে তোমাদের জন্য উত্তম আদর্শ রয়েছে।” [আল-আহযাব : ২১]

এ সময় হজরত উবাই বিন কাব (রা.) বলে উঠলেন, ‘নিশ্চয় এই পাথরটির উপকার ও ক্ষতি করার ক্ষমতা আছে। আর কিয়ামতের দিন পাথরটি বাকপটু জিহবা নিয়ে উঠবে এবং তাকে যারা চুম্বন ও স্পর্শ করেছে, তাদের ব্যাপারে সে সাক্ষ্য দেবে।’ ঠিক সে মুহূর্তে হজরত আলী বিন আবি তালিব (রা.) তাঁকে সমর্থন জানিয়ে বললেন, ‘হ্যাঁ, আমীরুল মুমিনীন! নিশ্চয় পাথরটি উপকার ও ক্ষতি সাধন করতে পারে। এ ছাড়াও আমি রাসূলকে (সা.) বলতে শুনেছি- কিয়ামতের দিন হাজরে আসওয়াদকে জিহবা ও কথা বলার ক্ষমতাসহ উপস্থিত করা হবে। আর তখন সে চুম্বনকারী সকল মুসলমানদের পক্ষে সাক্ষ্য দেবে।’ এসব কথা শোনার পর হজরত ওমর (রা.) বললেন, ‘সে জাতির জীবন যাত্রার মাঝে কল্যাণ নেই। যাদের মাঝে আবুল হাসান তথা আলীর (রা.) উপস্থিতি নেই।’ [আল-জামে আল-লতিফ ফী ফাযলে মক্কা ওয়া আহলুহা ওয়া বিনাউল বাইতিশ শরীফ : পৃ. ৩৫]
হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন- তোমরা এই পাথরটিকে বেশি বেশি চুম্বন করো। কারণ তোমরা হয়তো অচিরেই তাকে হারিয়ে ফেলবে। এমন একটি সময় আসবে যখন লোকেরা রাতের বেলায় পাথরটিকে চুম্বন করে সকাল উঠে তাকে আর দেখতে পাবে না। কারণ, আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের পূর্ব মুহূর্তে দুনিয়াতে অবস্থিত জান্নাতি সকল বস্তু স্ব-স্থানে ফিরিয়ে দিবেন। [আখবারু মক্কা, আযরুকী : ১/৩৪২-৩৪৩]

আলোচ্য হাদিসের মাধ্যমে ইসলামী শরিয়তের এই বিধান সাব্যস্ত হয় যে, হাজরে আসওয়াদ বা কালো পাথরকে চুমু দেয়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহর রাসুলের আনুগত্য করা। আর ইসলামী শরিয়ত মোতাবেক এই চুমু খাওয়া সুন্নাত। তবে কেউ যদি সরাসরি হাজরে আসওয়াদকে চুম্বন করতে সক্ষম না হয়, হাত দ্বারা তাকে স্পর্শ করবে বা ইরাশার মাধ্যমে চুমু খাবে।
তবে হাজরে আসওয়াদকে চুমু খাওয়ার ব্যাপারে একটি বিষয় মাথায় রাখাতে হবে। আর সেটা হলো- এটি একটি নিছক পাথর। গুনাহ মাফ করা বা মানুষের উপকার বা ক্ষতি করার কোনো বহ্যিক ক্ষমতা নেই এই পাথরের। রাসূল (সা.)-এর সুন্নাত হিসেবে এতে চুমু খাওয়া উচিত।
এছাড়া রাসূল (সা.) বলেছেন ‘হাজরে আসওয়াদ’ জান্নাতি একটি পাথর, এর রঙ দুধের চেয়ে বেশি সাদা ছিল। এরপর আদম সন্তানদের পাপরাশি তাকে কালো বানিয়ে দিয়েছে।’ [জামে তিরমিযী : ৮৭৭, মুসনাদে আহমাদ : ১/৩০৭, ৩২৯]

আল্লামা আবু আবদুল্লাহ আল-ফাকেহি তাঁর ‘আখবারে মক্কা’ গ্রন্থে হজরত আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (রা.) থেকে একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন। রাসূল (সা.) বলেছেন- ‘ জাহিলিয়াতের নাপাকি বা অপবিত্রতা যদি হাজরে আসওয়াদকে স্পর্শ না করতো। তবে যে কোনো পাগল-প্রতিবন্ধী বা পঙ্গু তা স্পর্শ করা মাত্রই সুস্থতা লাভ করতো এবং আল্লাহ তাআলা তাকে যে জ্যোতি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন, মানুষ তার সেই আসল আকৃতিতে দেখতে পেত। তবে কালো রঙ দ্বারা তাকে পরিবর্তন করে দেয়া হয়েছে। যাতে দুনিয়াবাসী দুনিয়াতেই জান্নাতের সৌন্দর্য্য দেখে না ফেলে। আর নিশ্চয় এটি জান্নাতের শুভ্র পাথরসমূহের একটি।’ [আখবারু মক্কা, আজরুকী : ১/৩২৩, আল-কুবরা, তাবারী : পৃ. ২৯৩]

আমার সাইট থেকে একবার ঘুরে আসার অনুরোধরইল।
আমার সাইট:- TricksJan.ML

কোন প্রকার ভুল হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন এবং বলবেন আমি সংশোধন করে নিব।
সবাই ভাল থাকবেন এবং নিয়মিত নামাজ আদায় করবেন।
আল্লাহ হাফেজ।।