ইসলামি শরিয়ত নির্ধারিত পশু দিয়েই কুরবানি আদায় করতে হবে। এ সবের মধ্যে রয়েছে উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা। কুরআনুল কারিমের ভাষায় এ সব পশুকে বাহিমাতুল আনআ’ম বলা হয়। যা এগুলো আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য উৎসর্গীকৃত পশু।
হাদিসের ভাষায় এগুলোকে বলা উযহিয়্যাহ। যা কুরবানির দিনগুলোতে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে জবাই করা হয়। চাই তা উট-উষ্ট্রী হোক; গরু-গাভী হোক কিংবা ছাগল-দুম্বা হোক।
কুরবানির পশুর গুণাগুণ
কুরবানির পশু সব ধরনের শারীরিক ত্রুটিমুক্ত হতে হবে। গুণগত দিক থেকে সর্বোত্তম হল কুরবানির পশু হবে সুন্দর, নিখুঁত, অধিক গোশত সম্পন্ন এবং হৃষ্টপুষ্ট। এক কথায় প্রথম দেখায় যাতে পছন্দ হয়ে যায়।
কুরবানির পশু দোষ-ত্রুটিমুক্ত হওয়ার জন্য প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশনা রয়েছে। হাদিসে এসেছে, ‘হজরত বারা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের মাঝে দাঁড়ালেন আর আমার হাত তাঁর হাতের চেয়েও ছোট, তারপর বললেন, চার ধরনের পশু, যা দিয়ে কুরবানি করে তা জায়েজ হবে না। আর তাহলো-
>> অন্ধ। যে গরু চোখে দেখতে পায় তা স্পষ্ট।
>> রোগাগ্রস্ত। রোগ-বালাইয়ে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি স্পষ্ট।
>> পঙ্গু। যে পশু হাটাচলা করতে পারে না। এবং
হাদিস গ্রন্থ নাসাঈতে ‘আহত পশুর স্থলে ‘পাগল’উল্লেখ করা হয়েছে। (তিরমিজি, নাসাঈ) হাদিসের অন্য বর্ণনায় এসেছে যে, এ সব পশু দ্বারা কুরবানি করলে তার কুরবানি পরিপূর্ণ হবে না।
এ কুরবানি কোনো লোক দেখানো ইবাদাতের নাম নয়। কুরআন ও হাদিসে কুরবানির বিষয়টি সুস্পষ্ট এবং প্রমাণিত যে, কোনো নেক আমলই আল্লাহ তাআলার নিকট ততক্ষণ পর্যন্ত গৃহীত হয় না যতক্ষণ পর্যন্ত না তাতে দুটি শর্ত পূরণ করা হয়। কুরবানিও তার ব্যতিক্রম নয়। যা তুলে ধরা হলো-
প্রথমত
কুরবানির জন্য প্রয়োজন ইখলাস তথা একনিষ্ঠতা। কুরবানি হবে শুধুমাত্র আল্লাহ তাআলার উদ্দেশ্যে। নিয়তে পরিশুদ্ধতা না থাকলে কুরবানি কবুল হবে না। দুনিয়ায় প্রথম কুরবানি হাবিল ও কাবিলের মধ্যে অনুষ্ঠিত কুরবানি। এতে কাবিলের কুরবানি কবুল হয়নি। কাবিলের কুরবানি কবুল না হওয়া প্রসঙ্গে হাবিল বলেছিলেন, ‘ আল্লাহ তাআলা মুত্তাক্বিদের (পরহেযগার ও সংযমী) কুরবানিই কবুল করে থাকেন। (সুরা মায়িদা : আয়াত ২৭)
কুরবানির একনিষ্ঠতা প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আল্লাহর কাছে কখনো ওগুলির (কুরবানির জন্তুর) গোশত পৌঁছে না এবং রক্তও না; বরং তাঁর কাছে পৌঁছে তোমাদের তাকওয়া (সংযমশীলতা); এভাবে তিনি ওগুলিকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন যাতে তোমরা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা কর এই জন্য যে, তিনি তোমাদেরকে পথ প্রদর্শন করেছেন। আর তুমি সুসংবাদ দাও সৎকর্মশীলদেরকে। (সুরা হজ : আয়াত ৩৭)
দ্বিতীয়ত
আল্লাহ তাআলা ও তাঁর রাসুলের নির্দেশিত বিধান অনুযায়ীই কুরবানি করতে হবে। এ কুরবানিসহ কোনো ইবাদাতেই তাঁর অংশীদার স্থাপন করা যাবে না। তবেই তাঁর কুরবানিসহ যাবতীয় ইবাদাত কবুল হওয়ার আশা করা যায়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যে তার প্রতিপালকের সাক্ষাৎ কামনা করে, সে যেন সৎকর্ম করে এবং তার প্রতিপালকের ইবাদাতে কাউকে শরিক না করে। (সুরা কাহফ : আয়াত ১১০)
পরিশেষে…
যারা শুধুমাত্র বেশি করে গোশত খাওয়ার উদ্দেশ্যে কুরবানি দেয় অথবা লোক সমাজে সুনাম অর্জনের উদ্দেশ্যে মোটা-তাজা দেখে উচ্চ মূল্যের পশু ক্রয় করে এবং তা প্রদর্শন ও প্রচার করে থাকে; তাদের কুরবানি যে ইবাদত নয়, তা সবারই জানা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সকল কুরবানিদাতার মানসিকতার পরিশুদ্ধতা দান করুন। কুরবানিসহ সকল ইবাদাত-বন্দেগি গ্রহণযোগ্য করতে উপরোক্ত দুটি বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখা একান্ত আবশ্যক। সুতরাং কুরবানি হোক শুধুমাত্র আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে। তিনি সবার কুরবানি কবুল করুন।
হাদিসে এসেছে-
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও ভালবাসা অর্জনে ইসলামি শরিয়ত নির্ধারিত সুন্দর, উত্তম ও নির্ধারিত বয়সের পশু কুরবানি করার তাওফিক দান করুন। আমানি।