(= আসসামুআলাইকুম =)
সূপ্রিয়, Trickbd’s – Administrator, Editor, Modaretor, Author, Contributor এবং পাঠক ও দর্শক সবাইকে শুবেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি আমার ধারাবাহিক POST “পবিত্র কোরআন শরিফের (সূরা) আয়াত – আরবি, বাংলা ইংরেজী অনুবাদে…
((আমি এভাবে একটি ধারাবাহিক – পবিত্র কোরআন শরিফের সব সূরা দিতে চাচ্ছি|যদি আপনাদের কোন মতবিনিবেদ থাকে তবে বলবেন))
#AlFatiha
===================================
সূরা আল ফাতিহা
|
|
শ্রেণী | মক্কী সূরা |
---|---|
নামের অর্থ | শুরু |
অন্য নাম | উম্মুল কিতাব, চাবি, উম্মুল কুরআন, সূরা আল হামদ্ |
অবতীর্ণ হওয়ার সময় | নবী মোহাম্মদ-এর নবুয়্যত প্রাপ্তির শুরুর দিকে |
পরিসংখ্যান | |
সূরার ক্রম | ১ |
আয়াতের সংখ্যা | ৭ |
পারার ক্রম | ১ |
রুকুর সংখ্যা | ১ |
সিজদাহ্র সংখ্যা | নেই |
বিশেষ বিষয় সম্পর্কে আয়াতের সংখ্যা | আল্লাহ্র প্রশংসাঃ ৩ স্রষ্টা ও সৃষ্টির মধ্যে সম্পর্কঃ ১ মানবজাতির প্রার্থনাঃ ৩ |
= নামকরণ
এ সূরার বিষয়বস্তুর সাথে সামঞ্জস্য রেখেই এর এই নামকরণ করা হয়েছে। যার সাহায্যে কোন বিষয়, গ্রন্থ বা জিনিসের উদ্বোধন করা হয় তাকে ‘ফাতিহা’ বলা হয়। অন্য কথায় বলা যায়, এ শব্দটি ভূমিকা এবং বক্তব্য শুরু করার অর্থ প্রকাশ করে।
= নাযিল হওয়ার সময়-কাল
এটি হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুওয়াত লাভের একেবারেই প্রথম যুগের সূরা। বরং হাদীসের নির্ভরযোগ্য বর্ণনা থেকে জানা যায়, এটিই মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর নাযিলকৃত প্রথম পূর্ণাঙ্গ সূরা। এর আগে মাত্র বিচ্ছিন্ন কিছু আয়াত নাযিল হয়েছিল। সেগুলো সূরা ‘আলাক্ব’, ‘মুয্যাম্মিল’ ও ‘মুদ্দাস্সির’ ইত্যাদিতে সন্নিবেশিত হয়েছে।
= বৈশিষ্ট্য
এই সূরাটি কোরআনের একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ সূরা। প্রথমতঃ এ সূরা দ্বারাই পবিত্র কোরাআন আরম্ভ হয়েছে এবং এ সূরা দিয়েই সর্বশ্রেষ্ঠ এবাদত স্বলাত আরম্ভ হয়। অবতরণের দিক দিয়েও পূর্ণাঙ্গ সূরারূপে এটিই প্রথম নাযিল হয়। সূরা ‘ইকরা’, ‘আল-মুজাম্মিল’ ও ‘আল-মুদ্দাসসির’ এর ক’টি আয়াত অবশ্য সূরা আল-ফাতিহার পূর্বে অবতীর্ণ হয়েছে। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ সূরারূপে এ সূরার অবতরণই সর্বপ্রথম। যে সকল সাহাবী (রাঃ) সূরা আল-ফাতিহা সর্বপ্রথম নাযিল হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন, তাঁদের সে বক্তব্যের অর্থ বোধহয় এই যে, পরিপূর্ণ সূরারূপে এর আগে আর কোন সূরা নাযিল হয়নি। এ জন্যই এ সূরার নাম ‘ফাতিহাতুল-কিতাব’ বা কোরআনের উপক্রমণিকা রাখা হয়েছে।
‘সূরা আল্-ফাতিহা’ এদিক দিয়ে সমগ্র কোরআনের সার-সংহ্মেপ। এ সূরায় সমগ্র কোরআনের সারমর্ম সংহ্মিপ্তকারে বলে দেয়া হয়েছে। কোরআনের অবশিষ্ট সূরাগুলো প্রকারান্তরে সূরা ফাতিহারই বিস্তৃত ব্যাখ্যা। তাই এ সূরাকে সহীহ হাদীসে ‘উম্মুল কিতাব’, ‘উম্মুল কুরআন’, ‘কোরানে আযীম’ বলেও অভিহিত করা হয়েছে। হযরত রসূলে কারীম (সাঃ) এরশাদ করেছেন যে –
“ | যার হাতে আমার জীবন-মরণ, আমি তাঁর শপথ করে বলছি, সূরা আল-ফাতিহার দৃষ্টান্ত তাওরাত, ইনজীল, যাবুর প্রভৃতি অন্য আসমানী কিতাবেতো নেই-ই, এমনকি পবিত্র কোরআনেও এর দ্বিতীয় নেই। | ” |
ইমাম তিরমিযী আবু হোরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, রসূলে কারীম (সাঃ) আরো বলেছেন যে –
“ | সূরায়ে ফাতিহা প্রত্যেক রোগের ঔষধবিশেষ। | ” |
= সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা
সূরা আল-ফাতিহার প্রথমে বর্ণনা করা হয়েছে যে, এ সূরার প্রথম তিনটি আয়াতে আল্লাহ্র প্রশংসা ও তারীফের বর্ণনা করা হয়েছে এবং এর তফসীরে একথা সুস্পষ্ট হয়েছে যে, তা’রীফ ও প্রশংসার সাথে সাথে ঈমানের মৌলিক নীতি ও আল্লাহ্র একত্ববাদের বর্ণনাও সূহ্মভাবে দেয়া হয়েছে। তৃতীয় আয়াতে এর দু’টি শব্দে তারীফ ও প্রশংসার সাথে সাথে ইসলামের বিপ্লবাত্মক মহোত্তম আকীদা যথা কিয়ামত ও পরকালের বর্ণনা প্রমাণসহ উপস্থিত করা হয়েছে। চতুর্থ আয়াতের এক অংশে তা’রীফ ও প্রশংসা এবং অপর অংশে দোয়া ও প্রার্থনা করা হয়েছে।
মানবজীবন তিনটি অবস্থায় অতিবাহিত হয় – অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত। পূর্বের তিনটি আয়াতের মধ্যে الْحَمْدُ للّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ এবং الرَّحْمـنِ الرَّحِيمِ – এ দু’টি আয়াতে মানুষকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে যে, অতীতে সে কেবল মাত্র আল্লাহ্র মুখাপেক্ষী ছিল, বর্তমানেও সে একমাত্র তারই মুখাপেক্ষী। অস্তিত্বহীন এক অবস্থা থেকে তিনি তাকে অস্তিত্ব দান করেছেন। পরবর্তী আয়াতে مَـالِكِ يَوْمِ الدِّينِ – এর মধ্যে জানিয়ে দেয়া হয়েছে যে, ভবিষ্যতেও সে আল্লাহ্র মুখাপেক্ষী। প্রতিদান দিবসে আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কারো সাহায্য পাওয়া যাবে না। একজন বুদ্ধিমান ও বিবেকবান ব্যক্তি মনের গভীরতা থেকেই এ স্বতঃস্ফুর্ত স্বীকৃতি উচ্চারণ করছে যে, আমরা তোমাকে ব্যতীত অন্য কারো ইবাদত করি না। এ মৌলিক চাহিদাই إِيَّاكَ نَعْبُدُ তে বর্ণনা করা হয়েছে। অভাব পূরণকারী একক সত্তা আল্লাহ্, সুতরাং নিজের যাবতীয় কাজে সাহায্যও তার নিকট প্রার্থনা করবে।
এ মৌলিক চাহিদাই বর্ণনা وإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ -এ করা হয়েছে। মোটকথা, এ চতুর্থ আয়াতে একদিকে আল্লাহ্র তা’রীফ ও প্রশংসার সাথে একথারও স্বীকৃতি রয়েছে যে, ইবাদত ও শ্রদ্ধা পাওয়ার একমাত্র তিনিই যোগ্য। অপরদিকে তার নিকট সাহায্য ও সহ্যয়তার প্রার্থনা করা এবং তৃতীয়তঃ আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কারো ইবাদত না করার শিক্ষাও দেয়া হয়েছে। শেষ তিনটি আয়াতে মানুষের দোয়া ও আবেদনের বিষয়বস্তু এবং এক বিশেষ প্রার্থনা পদ্ধতি শিক্ষা দেয়া হয়েছে। তা হচ্ছে –
(আরবি)« اهدِنَــــا الصِّرَاطَ المُستَقِيمَ صِرَاطَ الَّذِينَ أَنعَمتَ عَلَيهِمْ غَيرِ المَغضُوبِ عَلَيهِمْ وَلاَ الضَّالِّينَ » | (বাংলা)« আমাদেরকে সরল পথ দেখাও, সে সমস্ত লোকের পথ, যাদেরকে তুমি নেয়ামত দান করেছ। তাদের পথ নয়, যাদের প্রতি তোমার গজব নাযিল হয়েছে এবং যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে। » |
(আল ফাতিহা) |
এই তিনটি আয়াতে কয়েকটি বিষয় বিশেষভাবে লক্ষণীয়। যেমন, সরল পথের হেদায়াতের জন্য যে আবেদন এ আয়াতে শিক্ষা দেয়া হয়েছে, এর আবেদনকারী যেমনিভাবে সাধারণ মানুষ, সাধারণ মুমিনগণ, তেমনি আওলিয়া, গাউস-কুতুব এবং নবী-রাসূলগণও বটে। কোরআনের শিক্ষায় স্পষ্টতঃই এ তথ্য ব্যক্ত হয়েছে যে, সৃষ্টির প্রতিটি স্তর, এমনকি প্রতিটি অণু-পরমাণু পর্যন্ত নিজ নিজ অবস্থানু্যায়ী প্রাণ ও অনুভূতির অধিকারী।
স্ব-স্ব পরিমন্ডলে প্রতিটি বস্তুর বুদ্ধি-বিবেচনা রয়েছে। অবশ্য এ বুদ্ধি ও অনুভূতির তারতম্য রয়েছে। কোনটাতে তা স্পষ্ট এবং কোনটাতে নিতাস্তই অনুল্লেখ্য। বুদ্ধি ও অনুভূতির ক্ষেত্রে এ তারতম্যের জন্যই সমগ্র সৃষ্টিজগতের মধ্যে একমাত্র মানুষ ও জ্বিন জাতিকেই শরীয়তের হুকুম-আহকামের আওতাভুক্ত। কারণ, সৃষ্টির এ দু’টি স্তরের মধ্যেই বুদ্ধি ও অনুভূতি পূর্ণ মাত্রায় দেয়া হয়েছে। কিন্তু, তাই বলে একথা বলা যাবে না যে, একমাত্র মানুষ ও জ্বিন জাতি ছাড়া সৃষ্টির অন্য কোন কিছুর মধ্যে বুদ্ধি ও অনুভূতির অস্তিত্ব নেই। কেননা, আল্লাহ্ সূরা বনী-ইসরাঈলে এরশাদ করেছেনঃ
“ | এমন কোন বস্তু নেই যা আল্লাহ্র প্রশংসার তসবীহ্ পাঠ করে না, কিন্তু তোমরা তাদের তসবীহ্ বুঝতে পার না। | ” |
আল্লাহ্ সূরা “আন নূরে” এরশাদ করেছেনঃ
“ | তোমরা কি জান না যে, আস্মান-জমিনের যা কিছু রয়েছে, সকলেই আল্লাহ্র পবিত্রতা বর্ণনা ও গুণগান করে? বিশেষতঃ পাখীকুল যারা দু’পাখা বিস্তার করে শূন্যে উড়ে বেড়ায়, তাদের সকলেই স্ব-স্ব দোয়া তসবীহ্ সম্পর্কে জ্ঞাত এবং আল্লাহ্ তা’আলাও ওদের তসবীহ্ সম্পর্কে খবর রাখেন। | ” |
(( তথ্য সূত্র ঃ (১) কুরতুবী (২) মারেফুল কোরআন. © Some right reserved – Wikipedia ® Writer – SELF. ))
সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন আর TrickBD এর সাথেই থাকবেন ~ ধন্যবাদ
===============Thank You=================