আসসালামু আলাইকুম।পোষ্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।আশাকরি কাজে লাগবে
→পাপ মোচন বা প্রায়শ্চিত্তের উপায়→
১. তওবা করা
বান্দার তওবার কারণে আল্লাহ তায়ালা পাপ ক্ষমা করে দেন। আর তওবা কবুল হওয়া নির্ভর করবে বান্দার সিন্সিয়ারিটি বা ইখলাসের উপর।
২. ক্ষমা প্রার্থনা করা
ইস্তিগফার করলে আল্লাহ তায়ালা গুনাহ মাফ করে দেন। হাদীসে এসেছে, ‘যখন পাপ করে বান্দা বলে, ‘হে আমার রব! আমাকে ক্ষমা করে দিন’। আল্লাহ তায়ালা বলেন: ‘আমার দাস জানে যে তার একজন প্রভু আছে যিনি ক্ষমা করতে পারেন আবার শাস্তিও দিতে পারেন। আমি আমার দাসকে ক্ষমা করে দিলাম…’
বুখারী ও মুসলিম)
৩. এমন ধরনের নেক কাজ বেশি বেশি করা যেগুলো পাপকে মুছে দেয়
রাসুলুল্লাহ (সা.)এর বিভিন্ন হাদীসে এমন সব নেক আমলের কথা বলা হয়েছে যেগুলো পাপকে মোচন করে। যেমন, রাসুল (সা.) বলেন, ‘দৈনন্দিন পাঁচ ওয়াক্ত সালাত, জুময়া এবং রমাদান এক বছর থেকে পরবর্তী বছর পর্যন্ত সমস্ত সগিরাহ গুনাহকে মুছে দেয়।’
(মুসলিম)
৪. আপতিত বিপদ-আপদ
মুমিনের উপর আপতিত বিপদে তার গুনাহ মাফ হয়। রাসুলুল্লাহ বলেন, ‘মুসলিম বান্দার যে কোন ক্লান্তি, রোগ, দুশ্চিন্তা, উদ্বিগ্নটা ও অস্থিরতা হোক না কেন, এমনকি কোন কাঁটা বিঁধলেও, তার কারনে আল্লাহ্ তার গুনাহ মাফ করে দেন। (বুখারী ও মুসলিম)
৫. মুমিনের জন্য মুমিনের দুআ: যেমন, জানাজার নামাজের সময় যে দুআ পাঠ করা হয়।
৬. মৃতের পক্ষ থেকে কৃত নেক কাজ। যেমন; মৃতের পক্ষ হয়ে দান-সাদাকাহ করা, হজ্ব করা ইত্যাদি।
৭. কবরের শাস্তির ফলে গুনাহ মোচন হবে।
৮. নবী (সা.)এর শাফায়াৎ: নবী (সা.) বলেন, ‘আমার উম্মতের মধ্যে যারা কবিরা গুনাহ করেছে, তাদের জন্য আমি শাফায়াৎ করব।’
(সহীহ সুনান,আবু দাউদ, ৩৯৬৫)
৯. বান্দার জন্য আল্লাহ তায়ালার দয়া
মাজমু ফতওয়া ইবনে তাইমিয়্যাহ, খণ্ড ৭, পৃষ্ঠা-৪৮৭-৫০১)
→সালাতকে সুন্দর করা→→
প্রকৃত মুমিনের জন্য সলাত এমন, মাছের জন্য পানি যেমন। মাছ পানি ছাড়া বাঁচতেই পারে না। অপর দিকে মুনাফেক দুর্বল ইমানদার সে সালাতে খাঁচায় আবদ্ধ পাখির মত, যে কোন উপায়ে সে তা হতে মুক্তি চায়। একাগ্রতা সহকারে সলাত আদায় করা তাহলেই সলাত কবুল হওয়ার সম্ভাবনা অনেকগুন বেড়ে যাবে এবং সলাতের মধ্যে লুকিয়ে থাকা রহমত, বরকত ও প্রশান্তি পাওয়া যাবে।
আল্লাহ্ এ ব্যাপারে বলেন,
“মুমিনগণ সফলকাম, যারা তাদের সলাতে নম্রতা ও ভীতির সাথে দণ্ডায়মান হয়।
(সূরা মু’মিনুনঃ ১-২)
অতঃপর বলেন,
“আর যারা তাদের সলাতে যত্নবান, তারাই জান্নাতের ওয়ারিশ-যারা ফিরদাউসের ওয়ারিশ হবে এবং তথায় তারা চিরকাল থাকবে।
(সূরা মু’মিনুনঃ ৯, ১০, ১১)
রসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
“যে কোন মুসলমানের জন্য যখন ফরজ সালাতের সময় উপস্থিত হয়, অতঃপর সে সুন্দরভাবে ওজু করে এবং সুন্দরভাবে রুকু সেজদা করে, এতে তার অতীতের সকল গুনাহ মাফ হয়ে যায়। যদি সে কোন কবিরা গুনাহ না করে, আর এভাবে সর্বদা চলতে থাকে।
(মুসলিমঃ ৩৩৫)
নবী (সাঃ) বলেন,
“মুসলিম বান্দা যখন একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে সলাত আদায় করে তখন তার গুনাহ এমনভাবে ঝরে পড়তে থাকে যেমন এই বৃক্ষের পাতা ঝরে পড়ে।
(আহমদঃ ২০৫৭৬)
নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামবলেন,
“কেয়ামতের দিন সর্বপ্রথম বান্দার সলাতের হিসাব হবে। যদি সলাত ঠিক হয় তবে তার সকল আমল সঠিক বিবেচিত হবে। আর যদি সলাত বিনষ্ট হয় তবে তার সকল আমলই বিনষ্ট বিবেচিত হবে।
(তিরমিযিঃ ২৭৮)
ইমাম ইবনুল কাইইয়্যিম (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,
“বান্দা আল্লাহর সামনে দু’বার হাজির হয়ঃ প্রথমবার, যখন সে সালাতে দাঁড়ায়। আর দ্বিতীয়বার, যখন কিয়ামতে হাশরের ময়দানে দাঁড়াবে। যে ব্যক্তি প্রথমবার দাঁড়ানোর হক যথাযথভাবে আদায় করতে পারবে, তার জন্য দ্বিতীয়বার দাঁড়ানো সহজ হবে । আর যে ব্যক্তি প্রথমবারেরটা সহজ ভেবে পূর্ণ গুরুত্ব দিবে না, তার জন্য দ্বিতীয়বারের দাঁড়ানোটা কঠিন।
(আল ফাওয়া’ঈদ)
মনে রাখতে হবে, সলাত যেহেতু আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় আমল আল্লাহর নৈকট্য লাভের ও মর্যাদা বৃদ্ধির কারণ; সালাতের হেফাজত করলে মুক্তি, অন্যথায় ধ্বংস ইত্যাদি। তাই নিঃসন্দেহে বলা যায় যে সলাত একটি মহান কাজ যার গুরুত্ব দেয়া অতীব জরুরি। আর তা বাস্তবায়িত হয় সলাত, তার বিধানাবলী তথা রুকন ও ওয়াজিবসমূহ শিক্ষা, সালাতে একাগ্রতা ও পবিত্রতা অর্জনের মাধ্যমেই।
→ধৈর্যের চর্চা করা→→
যে ধৈর্যের চর্চা করে সে-ই ধৈর্যশালী হয়। মানুষকে যত ধরনের গুন দেওয়া হয়েছে এর মধ্যে অন্যতম ও উত্তম হচ্ছে ধৈর্য। সুতরাং, এর চর্চা করতে হবে – নিজেকে সংযত রাখা, অন্যকে গালি না দেয়া, মার না দেয়া, সহিষ্ণুতা অর্জন ইত্যাদির মাধ্যমে।
আলী ইবনে আবু তালিব (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বলেন,
“যে ব্যক্তি ধৈর্যধারণ করতে পারবে, সে কখনো সফলতা থেকে বঞ্চিত হবেনা। হয়তবা সফল হবার জন্য তার একটু বেশি সময় লাগতে পারে।”
ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহিমাহুল্লাহ) বলেন,
“জ্ঞানার্জন ছাড়া দিক-নির্দেশনা অর্জন করা যায় না। আর ধৈর্যধারণ ছাড়া সঠিক পথের দিশা অর্জন করা যায়না।
”(মাজমু’আল ফাতাওয়া : ভলিউম ১০/৪০)
ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,
“দু’টি অংশের সমন্বয়ে ঈমান; একটি অংশ ধৈর্য (সবর) এবং অপরটি কৃতজ্ঞ হওয়া (শোকর)।”
তিনি আরো বলেন,
“সবর (ধৈর্য) তো সেটাই যখন কারো তাকদীরে যা নির্ধারিত হয়েছে তাতে অন্তর কোন রাগ অনুভব করেনা এবং মুখ সে ব্যাপারে কোন অভিযোগ করে না।
আল্লাহ আমাদের হেদায়দ দান করুন।