Site icon Trickbd.com

নামাজে মনোযোগী হওয়ার এবং নামাজ সুন্দর করার উপায়.. দেখুন কাজে লাগতে পারে.. [Part-2]

Unnamed

সসালমুআলাইকুম,

অত্যন্ত দুঃখিত দ্বিতীয় পর্ব দিতে দেরি হয়ে গেলো.. আমি প্রথম পর্বে কিভাবে নামাজে মনোযোগী হওয়া যায় সে সম্পর্কে কিছুটা আলোচনা করেছিলাম.. আজকে নামাজে মনোযোগী হওয়ার আরও বেশ কয়েকটি উপায় নিয়ে আলোচনা করবো.. আশা করি আপনাদের উপকারে আসবে..

যারা প্রথম পর্ব দেখেননি তারা নিচের লিংক থেকে দেখে নিতে পারেন..
নামাজে মনোযোগী হওয়ার উপায় প্রথম পর্ব..
তো চলুন আলোচনায় যাওয়া যাকঃ

পঞ্চইন্দ্রীয় কে কাজে লাগান..

আপনারা সবাই জানেন আমাদের পঞ্চইন্দ্রীয়গুলো হলোঃ চোখ, কান, নাক, জিহ্বা এবং ত্বক.. যেকোনো কাজে এই পাঁচটি ইন্দ্রীয়ের যথাযথ ব্যবহার করলে সেই কাজ সবচেয়ে ভালো হয়.. নামাজে আমাদের এই পঞ্চইন্দ্রীয়ের কম-বেশি ব্যবহার হয়.. কিন্তু আমরা অনেকেই এর যথাযথ ব্যবহার করতে পারিনা.. বিশেষ করে চোখ এবং কানের..

আমরা যখন চোখ এবং কান দ্বারা কিছু করি না তখন চোখ ও কানের সাথে সংযুক্ত স্নায়ুগুলো মস্তিষ্ককে অন্য কোন কাজে ব্যস্ত রাখে.. তাই আমাদের উচিত সুরাগুলো একটু উচুস্বরে পড়া যাতে তা আমাদের কানে পৌঁছায়.. তবে খুব বেশি জোরে উচ্চারণ করা যাবে না..
এবং আমাদের চোখের ব্যবহার করতে হবে সিজদার দিকে তাকিয়ে থেকে..

আল্লাহ সালাত আদায়কারীর সাথে কথা বলেন..

বর্তমানে নামাজ একটি যান্ত্রিক ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে.. নামাজে দাড়ালাম, মুখস্থ সূরা গড়গড় করে পড়লাম, রুকু সিজদা করে মসজিদ থেকে বের হয়ে গেলাম.. মন থেকে আল্লাহকে ভালোবেসে, আল্লাহর তাকওয়া অন্তরে নিয়ে খুব কম মানুষই সালাত আদায় করে..

হাদীসে আছে যে সূরা ফাতিহার এক এক অংশ তিলাওয়াত করার সাথে সাথে আল্লাহ এর জওয়াব দেন। এ হাদীসের কথাগুলো এমন আবেগময় ভাষায় বলা হয়েছে যা বান্দাহর মনে গভীর দোলা দেয়। হাদীসটি নিম্নরূপ :

প্রায় সকল হাদিসগ্রন্থে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হাদুস রয়েছে.. যা জানলে যেকোনো মুসলমান নামাজে মনোযোগী হবে এবং নামাজ সুন্দর করার চেষ্টা করবে.. হাদিস এরুপঃ

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তা’আলা বলেন, আমি সালাতকে আমার ও আমার বান্দার মধ্যে অর্ধেক করে ভাগ করেছি.. আর বান্দা যা চাইবে- তা সে পাবে..

অতঃপর বান্দা যখন বলে, (আলহামদুলিল্লাহি রব্বিল আলামিন); আল্লাহ তা’আলা এর জবাবে বলেন- আমার বান্দা আমার প্রশংসা করেছে..

সে যখন বলে, ‘আর রহমানির রহীম’ (তিনি অতিশয় দয়ালু এবং করুণাময়); আল্লাহ তাআলা বলেন- বান্দা আমার তা‘রিফ করেছে, গুণগান করেছে..

সে যখন বলে, ‘মালিকি ইয়াওমিদ্দ্বীন; (তিনি বিচার দিনের মালিক); তখন আল্লাহ বলেন- আমার বান্দা আমার মাহাত্ম্য বর্ণনা করেছে..তিনি এও বলেন, বান্দা সমস্ত কাজ আমার উপর সোপর্দ করেছে..

সে যখন বলে, ‘ইয়্যাকানা‘বুদু ওয়া ইয়্যাকা নাসতাঈন’ (আমরা কেবল তোমারই ইবাদত করি এবং তোমারই কাছে সাহায্য প্রার্থনা করি); তখন আল্লাহ বলেন- এটা আমার এবং আমার বান্দার মধ্যকার ব্যাপার.. আমার বান্দা যা চায় তাই দেয়া হবে..

যখন সে বলে, ‘ইহ্দিনাস সিরাতাল মুস্তাকীম, সিরাতাল্লাযীনা আন‘আমতা আলাইহিম, গাইরিল মাগদূবি আলাইহিম অলাদ-দোয়াল্লীন’ (আমাদের সরল-সঠিক ও স্থায়ী পথে পরিচালনা করুন.. যে সব লোকদের আপনি নিয়ামত দান করেছেন, যারা অভিশপ্তও নয় এবং পথভ্রষ্টও নয়- তাদের পথেই আমাদের পরিচালনা করুন); তখন আল্লাহ বলেন- এসবই আমার বান্দার জন্য.. আমার বান্দা যা চায় তা তাকে দেয়া হবে..

সুতরাং বোঝা গেলো স্বয়ং আল্লাহ আমাদের কথার জবাব দেন.. সুতরাং আমাদের সুন্দর করে, মনোযোগ সহকারে এবং বিনয় ও নম্রতার সাথে সালাত আদায় করতে হবে..

আল্লাহ্পাক বলেনঃ
“তোমরা সলাতের প্রতি যত্নবান হও, বিশেষ করে মধ্যবর্তী সলাতের প্রতি এবং আল্লাহর সামনে বিনীতভাবে দন্ডায়মান হও.. (সূরা আল-বাকারা. আয়াতঃ২৩৮)

আল্লাহর মহত্ব ও সম্মানের দিকে খেয়াল রাখতে হবে..

আল্লাহর সম্মান ও মহত্ব লাভে দু’টি জিনিস বেশি বেশি খেয়াল রাখা জরুরি.. প্রথমত- আল্লাহ মহান পবিত্র ও সুউচ্চ। তার মর্যাদার সমকক্ষ কেউ নেই.. এ বিশ্বাস অন্তরে রেখে নামাজ আদায় করা।

দ্বিতীয়ত- আল্লাহর মহত্ব বড়ত্ব ও মর্যাদা যত বেশি; অন্যদিকে নামাজ আদায়কারীর যোগ্যতা তত কম..  নামাজ আদায়কারীর যোগ্যতা এত কম যে, নামাজের আরকান-আহকামগুলো যথাযথ পালন করার কোনো ক্ষমতা তার নেই.. নামাজে নিজেকে যত ছোট করা সম্ভব হবে, নামাজে তত একাগ্রতা সৃষ্টি হবে..

অন্তরে আল্লাহর ভয় পোষণ করতে হবে..

নামাজে একাগ্রতা তৈরির অন্যতম হলো আল্লাহর ভয় অর্জন করা.. আল্লাহর আদেশ-নিষেধ যথাযথ পালন অক্ষমতার কারণেই বান্দার এ ভয় সৃষ্টি হয়.. নামাজে তা বাস্তবায়ন করতে পারলেই একাগ্রতা তৈরি হবে..

নামাজে ধীরস্থির হতে হবে..

নামাজ আদায়ের আগে নিজের মনকে পরিশুদ্ধ করে দুনিয়ার সব কথা ও কাজ থেকে বিরত থাকার মানসিকতা তৈরি করা.. আরকান ও আহকামের বাইরে নামাজে আর কোনো আমল না করা.. ধীরস্থিরভাবে নামাজের রুকু, তাসহিব, তাকবির, তাশাহহুদসহ ওঠা-বসায় তাড়াহুড়ো না করা..

নিজের ঈমান বৃদ্ধি করুন..

আজকের আমাদের এই ইসলাম এমনি এমনি প্রতিষ্ঠিত হয়নি.. এর জন্য করতে হয়েছে অনেক সংগ্রাম.. শহীদ হতে হয়েছে অনেক মুসল্লি এবং সাহাবিদের.. মহানবী (সাঃ) কে সহ্য করতে হয়েছে অসহ্য যন্ত্রণা.. শহীদ হয়েছে তার দন্ত্য মোবারক..

অনেক সাহাবিকে হতে হয়েছে কুরবান.. সহ্য করতে হয়েছে কাফিরদের অত্যাচার..

আগের সেই ইসলাম এখনও আছে.. সাহাবীগণ যে নবীর উম্মত ছিলেন আমরাও সে নবীরই উম্মত.. কিন্তু তারা যেভাবে সালাত আদায় করতো আমরা কি সেভাবে সালাত আদায় করতে পারি?? আমরা কি সালাতে তাদের মতো তৃপ্তি পাই?? না, পাইনা.. এর কারণ আমাদের ঈমানের অভাব..

আমাদের ঈমান বৃদ্ধি করতে হবে.. আমাদের মনে রাখতে হবে সালাতই আমাদের আল্লাহ ও তার রাসুলের সাথে যোগাযোগের মাধ্যম..  সালাতের মাধ্যমেই আমরা জান্নাত লাভ করতে পারি.. আল্লাহর ওপর ঈমান না এনে যান্ত্রিক সালাত আদায় করলে কখনই জান্নাত লাভ করা যাবে না..তাই আমাদের যথাসম্ভব আল্লাহর ওপর ঈমান বৃদ্ধি করতে হবে..


পরিশেষে..

মানুষ যখনই নামাজে মনোযোগী হবে তখনই নামাজে একাগ্রতা তৈরি সক্ষম হবে এবং তখনই বান্দার নামাজ সফলতা পাবে.. এ নামাজই মানুষকে দুনিয়ার যাবতীয় অন্যায়-অশ্লীল কাজ থেকে মুক্ত রাখবে.. আল্লাহ তাআলার ঘোষণাও এমন যে, নিশ্চয় নামাজ মানুষকে অন্যায়-অশ্লীল কাজ থেকে বিরত রাখে..

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে নামাজে উল্লেখিত বিষয়গুলো যথাযথ পালনের মাধ্যমে একনিষ্ঠ বা একাগ্রতা তৈরি করার তাওফিক দান করুন.. নামাজের মাধ্যমে দুনিয়ার যাবতীয় অনিষ্টতা থেকে মুক্ত থাকার তাওফিক দান করুন.. আমিন

এখন এ পর্যন্তই..কষ্ট করে পোস্টটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ..
কোনো ভুল হলে ক্ষমা করে দিবেন..

যেকোন প্রয়োজনে ফেসবুকে আমিঃ