আসসালামু আলাইকুম । আল্লাহর রহমতে সকলেই ভালো আছেন ।আজ আপনাদের মাঝে গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট নিয়ে হাজির হলাম ।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
জান্নাত কি?
জান্নাত অর্থ ঘন সন্নিবেশিত বাগান, বাগ-বাগিচা। আরবীতে বাগানকে روضة (রওদ্বাতুন) এবং حديقة (হাদীকাতুন) ও বলা হয়। কিন্তু جنات (জান্নাত) শব্দটি আল্লাহ রব্বুল ‘আলামীনের নিজস্ব একটি পরিভাষা। পারিভাষিক অর্থে জান্নাত বলতে এমন স্থানকে বোঝায়, যা আল্লাহ রব্বুল ‘আলামীন তাঁর অনুগত বান্দাদের জন্য নির্দিষ্ট করে রেখেছেন। যা দিগন্ত বিস্তৃত নানা রকম ফুলে ফুলে সুশোভিত সুরম্য অট্টালিকা সম্বলিত মনোমুগ্ধকর বাগান; যার পাশ দিয়ে প্রবাহমান বিভিন্ন ধরনের নদী-নালা ও ঝর্ণাধারা। যেখানে চির বসন্ত বিরাজমান।
আমরা জান্নাতকে জান্নাতও বলে থাকি। জান্নাত ফার্সী শব্দ। এখানে আমরা আরবী শব্দটিই ব্যবহার করবো।
জান্নাত চিরশান্তির জায়গা। সেখানে আরাম- আয়েশ, সুখ-শান্তি, আমোদ-প্রমোদ, চিত্ত বিনোদন ও আনন্দ-আহলাদের চরম ও পরম ব্যবস্থা রয়েছে। সেখানে ভোগ-বিলাস ও পানাহারের আতিশয্য। জান্নাতীরা যা কামনা করবে কিংবা কোনো কিছু পাওয়ার আহবান জানাবে, সকল কিছু পাবে। সেখানে সবাই যুবক হয়ে বাস করবে। শরীরে কোনো রোগ-শোক, জরাজীর্ণতা, মন্দা, বার্ধক্য, দুর্বলতা ও অপারগতা থাকবে না। যত ধরনের ফল-ফলাদি, খাদ্য-খাবার, পানীয়, দুধ, মধু সুস্বাদু খাবার সব খেতে পারবে। ভোগ-বিলাসের সকল উপায়-উপকরণ বিদ্যমান। সেগুলো স্বাদ ও গন্ধে অপূর্ব। আমোদ-প্রমোদ, ভ্রমন-বিহার, খেলা-ধুলা, বেড়ানো, বাজার করা ও শুভেচ্ছা-স্বাগত জানাতে পারবে। প্রাচুর্যের কোনো অভাব হবে না। দ্রুতগামী যানবাহনসহ মনের ইচ্ছা চোখের নিমির্ষে পূরণ করতে পারবে।
নারীদের জন্য থাকবে নয়নাভিরাম স্বামী এবং স্বামীদের জন্য থাকবে নয়নাভিরাম স্ত্রী ও রূপবতী লাবণ্যময়ী হুর। তারা সেখানে সুখী-সুন্দর দাম্পত্য জীবন-যাপন করবে। মানুষ সেখানে পেশাব-পায়খানা, নাকের শ্লেষ্মা থেকে মুক্ত এবং নারীরা ঋতুমুক্ত হবে।
এক কথায়, পরম ও চরম শান্তি বলতে যা বুঝায়, তা সবই জান্নাতে পাওয়া যাবে। দুনিয়ার সুখ-শান্তির যত ব্যবস্থা আছে, জান্নাতের সুখ-শান্তির তুলনায় তা কিছুই না। বরং তা দুনিয়ার সকল আরাম-আয়েশকে হার মানাবে। মানুষ সুখ পেতে চায়। তাই পরম সুখ লাভের প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হওয়া উচিত।
জান্নাতের ব্যাপক পরিচিতি সম্পর্কে সংক্ষেপে এক বর্ণনায় মহান আল্লাহ বলেন:
﴿فَلَا تَعۡلَمُ نَفۡسٞ مَّآ أُخۡفِيَ لَهُم مِّن قُرَّةِ أَعۡيُنٖ جَزَآءَۢ بِمَا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ ١٧﴾ [السجدة: ١٧]
‘কেউ জানে না তার জন্য কৃতকর্মের কি কি নয়নাভিরাম বিনিময় লুকায়িত আছে।’’ (সূরা সাজদাহ: ১৭)
আবু হোরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: মহান আল্লাহ রাববুল আলামীন এরশাদ করেন,
«أَعْدَدْتُ لِعِبَادِي الصَّالِحِينَ مَا لاَ عَيْنٌ رَأَتْ، وَلاَ أُذُنٌ سَمِعَتْ، وَلاَ خَطَرَ عَلَى قَلْبِ بَشَرٍ، فَاقْرَءُوا إِنْ شِئْتُمْ فَلاَ تَعْلَمُ نَفْسٌ مَا أُخْفِيَ لَهُمْ مِنْ قُرَّةِ أَعْيُنٍ»
“আমি আমার নেক বান্দাদের জন্য এমন নেয়ামত তৈরি করে রেখেছি, যা কোনো চক্ষু দেখে নি, কোনো কান শোনে নি এবং এমনকি কোনো মানুষ তা কল্পনাও করতে পারে না। এরপর তিনি বলেন, যদি তোমরা চাও, তাহলে নিম্নোক্ত আয়াতটি পড়ো। যার অর্থ হলো: “কেউ জানে না, তার জন্য কি কি নয়নাভিরাম বিনিময় লুকায়িত আছে।” (বুখারী, ৩২৪৪; মুসলিম, ২৮২৪)
জান্নাত মোট আট প্রকারঃ
আট প্রকার জান্নাতের কথাই আল-কুরআন ও সহীহ হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রকারগুলো হচ্ছে :
১.জান্নাতুল ফিরদাউস।
২.জান্নাতুন্ নায়ীম।
৩.জান্নাতুল মাওয়া।
৪.জান্নাতুল আদন।
৫.জান্নাতু দারুস সালাম।
৬.জান্নাতুদ দারুল খুলদ।
৭.জান্নাতু দারুল মাকাম।
৮.জান্নাতু দারুল কারার।
সম্পূর্ণ জান্নাত হবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত (Air condition)
জান্নাতে সর্বদা বসন্তকাল বিরাজ করবে। ফুল-ফলের সমাহার এবং সৌন্দর্য্য শ্যামলতা কখনো ম্লান হবে না। এমন কি গোটা জান্নাত শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বা Air condition হবে। মহান আল্লাহ বলেন,
﴿ لَا يَرَوۡنَ فِيهَا شَمۡسٗا وَلَا زَمۡهَرِيرٗا ١٣ ﴾ [الانسان: ١٣]
অর্থ্যাৎ- ‘তাদেরকে সেখানে (জান্নাতে) না সূর্যতাপ জ্বালাতন করবে না শৈত্য প্রবাহ।’ (সূরা দাহর: ১৩)
জান্নাতে কোন দুঃখ-কষ্ট থাকবে না
পৃথিবীতে মানুষ যতো বিত্তশালী হোক এবং যতো সুখ-শান্তিই ভোগ করুক না কেন তবু কোনো না কোনো দুঃখ বা অশান্তি থাকেই, কোনো মানুষের পক্ষেই সম্পূর্ণ সুখী হওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু জান্নাতে কোনো দুঃখই থাকবে না, এমন কি পৃথিবীতে মাল্টি বিলিয়ন হয়েও আরো বেশী পাওয়ার জন্য এবং ভোগ করার জন্য দুঃখের শেষ থাকে না। পক্ষান্তরে জান্নাতীগণ- যাকে সবচেয়ে ছোট জান্নাত দেয়া হবে তারও কোন অনুতাপ বা দুঃখ থাকবে না। আল্লাহ নিজেই এ ব্যাপারে সাক্ষ্য দিচ্ছেন,
﴿ لَا يَمَسُّهُمۡ فِيهَا نَصَبٞ وَمَا هُم مِّنۡهَا بِمُخۡرَجِينَ ٤٨ ﴾ [الحجر: ٤٨]
অর্থঃ ‘তারা সেখানে কখনও কোন দুঃখ-কষ্টের সম্মুখীন হবে না এবং কোনদিন সেখান থেকে তাদেরকে বের করে দেয়া হবে না।’ (সূরা হিজর: ৪৮)
অন্যত্র বলা হয়েছে,
﴿ ٱلَّذِيٓ أَحَلَّنَا دَارَ ٱلۡمُقَامَةِ مِن فَضۡلِهِۦ لَا يَمَسُّنَا فِيهَا نَصَبٞ وَلَا يَمَسُّنَا فِيهَا لُغُوبٞ ٣٥ ﴾ [فاطر: ٣٥]
অর্থঃ ‘(জান্নাতীগণ বলবে) তিনি আমাদেরকে নিজের অনুগ্রহে চিরন্তনী আবাস্থল দান করেছেন এবং আমাদের কোন দুঃখ এবং ক্লান্তি নেই।’ (সূরা ফাতির: ৩৫)
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ يَنْعَمُ لَا يَبْأَسُ، لَا تَبْلَى ثِيَابُهُ وَلَا يَفْنَى شَبَابُهُ»
অর্থঃ ‘যারা জান্নাতে যাবে তারা সর্বদা স্বচ্ছল অবস্থায় থাকবে, দারিদ্র ও অনাহারে কষ্ট পাবে না। তাদের পোশাক পুরাতন হবে না এবং তাদের যৌবনও কোনদিন শেষ হবে না।’ (মুসলিম: ২৮৩৬)
জান্নাতে অশ্লীল কথা শুনা যাবে না
পৃথিবীতে যতো ঝগড়া-ফাসাদ সমস্তই স্বার্থপরতা, অহংকার ও হিংসার কারণে সংঘটিত হয়ে থাকে। জান্নাতে স্বার্থপরতা, অহংকার, হিংসা ইত্যাদি থাকবে না, তাই সেখানে গীবত, পরনিন্দা, পরচর্চা, ঝগড়া-বিবাদ, অশ্লীল কথাবার্তা ইত্যাদি থাকবে না। সেখানে শুধু সম্প্রীতি ও সৌন্দর্যপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করবে।
মহান আল্লাহ বলেন,
﴿ لَا يَسۡمَعُونَ فِيهَا لَغۡوٗا وَلَا تَأۡثِيمًا ٢٥ إِلَّا قِيلٗا سَلَٰمٗا سَلَٰمٗا ٢٦ ﴾ [الواقعة: ٢٥، ٢٦]
অর্থঃ ‘সেখানে তারা বেহুদা ও অশ্লীল কথাবার্তা শুনতে পাবে না। যে কথাবার্তা হবে তা ঠিকঠাক ও যথাযথ (সম্প্রীতি পূর্ণ) হবে।’ (সূরা ওয়াকি‘আহ্: ২৫-২৬)
অন্যত্র বলা হয়েছে,
﴿ لَّا يَسۡمَعُونَ فِيهَا لَغۡوٗا وَلَا كِذَّٰبٗا ٣٥ ﴾ [النبا: ٣٥]
অর্থঃ ‘সেখানে তারা কোন অপ্রয়োজনীয় তাৎপর্যহীন ও মিথ্যা কথা শুনবে না।’ (সূরা নাবা: ৩৫)
অবশ্য এ ব্যাপারে জান্নাতবাসীদেরকে জান্নাতের দ্বাররক্ষীগণই সুসংবাদ প্রদান করবে। ইরশাদ হচ্ছে,
﴿حَتَّىٰٓ إِذَا جَآءُوهَا وَفُتِحَتۡ أَبۡوَٰبُهَا وَقَالَ لَهُمۡ خَزَنَتُهَا سَلَٰمٌ عَلَيۡكُمۡ طِبۡتُمۡ فَٱدۡخُلُوهَا خَٰلِدِينَ ٧٣ ﴾ [الزمر: ٧٣]
অর্থঃ ‘অতঃপর যখন তারা সেখানে (প্রবেশ করার জন্যে) আসবে, তখন দ্বাররক্ষীগণ তাদের জন্য দরজাসমূহ খুলে রাখবে এবং জান্নাতীদেরকে সম্বোধন করে বলবে, আপনাদের প্রতি অবারিত শান্তি বর্ষিত হোক। অনন্তকালের জন্য এখানে প্রবেশ করুন।’ (সূরা যুমার: ৭৩)।
জান্নাতীদের আর মৃত্যু হবে না
পৃথিবীতে যতোগুলো বাস্তব ও চাক্ষুষ বস্তু আছে তার মধ্যে মৃত্যু একটি। সত্যি কথা বলতে কি, মানুষ পার্থিব কোনো বস্তু থেকেই অমনোযোগী ও গাফেল নয় একমাত্র মৃত্যু ছাড়া। যদিও আমাদের প্রত্যেককেই মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হবে। তবুও মৃত্যুকে আমরা ভীতির চোখে দেখি এবং মৃত্যু থেকে পালিয়ে বেড়াবার ব্যর্থ প্রয়াস পাই। এ ভীতিকর অবস্থা থেকে মুক্তির একমাত্র গ্যারান্টি থাকবে জান্নাতীদের জন্য। মহান আল্লাহ বলেন,
﴿ لَا يَذُوقُونَ فِيهَا ٱلۡمَوۡتَ إِلَّا ٱلۡمَوۡتَةَ ٱلۡأُولَىٰۖ وَوَقَىٰهُمۡ عَذَابَ ٱلۡجَحِيمِ ٥٦ ﴾ [الدخان: ٥٦]
অর্থঃ ‘সেখানে তারা আর কখনো মৃত্যুর মুখোমুখি হবে না। পৃথিবীতে একবার যে মৃত্যু হয়েছে সেটাই তাদের জন্য যথেষ্ট। আর আল্লাহ তাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি থেকে বাঁচিয়ে দেবেন।’ (সূরা দোখান: ৫৬)
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
»يُنَادِي مُنَادٍ: إِنَّ لَكُمْ أَنْ تَصِحُّوا فَلَا تَسْقَمُوا أَبَدًا، وَإِنَّ لَكُمْ أَنْ تَحْيَوْا فَلَا تَمُوتُوا أَبَدًا، وَإِنَّ لَكُمْ أَنْ تَشِبُّوا فَلَا تَهْرَمُوا أَبَدًا، وَإِنَّ لَكُمْ أَنْ تَنْعَمُوا فَلَا تَبْأَسُوا أَبَدًا«
‘যখন জান্নাতীগণ জান্নাতে প্রবেশ করবে তখন এক ঘোষক ঘোষণা করবে- ‘‘হে জান্নাতীগণ! এখন আর তোমরা কোনোদিন অসুস্থ হয়ে পড়বে না। সর্বদা সুস্থ ও স্বাস্থ্যবান থাকবে। কোনোদিন আর তোমাদের মৃত্যু হবে না, অনন্তকাল জীবিত থাকবে। সর্বদা যুবক হয়ে থাকবে কখনো বুড়ো হবে না। সর্বদা অফুরন্ত নেয়ামত ভোগ করবে কোনোদিন তা শেষ হবে না এবং কখনো দুঃখ ও অনাহারে থাকবে না।’ (মুসলিম, ২৮৩৭; তিরমিযী, ৩২৪৬)
জান্নাতের প্রশস্ততা হবে আসমান-যমীনের সমান
আল্লাহ বলেন,
﴿ ۞وَسَارِعُوٓاْ إِلَىٰ مَغۡفِرَةٖ مِّن رَّبِّكُمۡ وَجَنَّةٍ عَرۡضُهَا ٱلسَّمَٰوَٰتُ وَٱلۡأَرۡضُ أُعِدَّتۡ لِلۡمُتَّقِينَ ١٣٣ ﴾ [ال عمران: ١٣٣]
“তোমরা তোমাদের প্রভুর ক্ষমা ও জান্নাতের দিকে দ্রুত ধাবিত হও, যার প্রশস্ততা হবে আসমান-যমীনের সমান। যা মোত্তাকীদের জন্য তৈরি করা হয়েছে”। (সূরা আলে-ইমরান: ১৩৩)
জান্নাতের দরজাসমূহ
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ جَنَّٰتُ عَدۡنٖ يَدۡخُلُونَهَا وَمَن صَلَحَ مِنۡ ءَابَآئِهِمۡ وَأَزۡوَٰجِهِمۡ وَذُرِّيَّٰتِهِمۡۖ وَٱلۡمَلَٰٓئِكَةُ يَدۡخُلُونَ عَلَيۡهِم مِّن كُلِّ بَابٖ ٢٣ سَلَٰمٌ عَلَيۡكُم بِمَا صَبَرۡتُمۡۚ فَنِعۡمَ عُقۡبَى ٱلدَّارِ ٢٤ ﴾ [الرعد: ٢٣، ٢٤]
“স্থায়ী জান্নাত, তাতে তারা প্রবেশ করবে এবং তাদের পিতা-মাতা, পতি-পত্নী ও সন্তান-সন্ততিদের মধ্যে যারা সৎকাজ করেছে তারাও। আর ফেরেশ্তাগণ তাদের কাছে উপস্থিত হবে প্রত্যেক দরজা দিয়ে এবং বলবে, তোমরা ধৈর্য ধারণ করেছ বলে তোমাদের প্রতি শান্তি; আর আখেরাতের এ পরিণাম কতই না উত্তম।”(সূরা আর-রাদ: ২৩ – ২৪)
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা আরও বলেন:
﴿هَٰذَا ذِكۡرٞۚ وَإِنَّ لِلۡمُتَّقِينَ لَحُسۡنَ مََٔابٖ ٤٩ جَنَّٰتِ عَدۡنٖ مُّفَتَّحَةٗ لَّهُمُ ٱلۡأَبۡوَٰبُ ٥٠﴾ [ص: ٤٩، ٥٠]
“এ এক স্মরণ। মুত্তাকীদের জন্য রয়েছে উত্তম আবাস— চিরস্থায়ী জান্নাত, যার দরজাসমূহ তাদের জন্য উন্মুক্ত।”(সূরা সদ: ৪৯ – ৫০)
জান্নাতীদের চেহারা হবে ধবধবে সাদা এবং তারা ৬০ হাত লম্বা হবে
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«خلق الله عز و جل آدم على صورته , طوله ستون ذراعا , فلما خلقه ؛ قال : اذهب فسلم على أولئك النفر من الملائكة جلوس , فاستمع ما يحيونك ؛ فإنها تحيتك وتحية ذريتك » . فقال : السلام عليكم . فقالوا : السلام عليك ورحمة الله . فزادوه : ورحمة الله . فكل من يدخل الجنة على صورة آدم , فلم يزل الخلق ينقص بعد حتى الآن » . (رواه البخاري و مسلم) .
জান্নাতে প্রবেশকারী ১ম দলটির চেহারা হবে পূর্ণিমার রাতের উজ্জ্বল চাঁদের আলোর মতো। পরবর্তী দলগুলোর চেহারা হবে উজ্জ্বল জ্যোতিস্কের মতো। তাদের পেশাব-পায়খানা নাকের শ্লেষ্মা ও থুথু হবে না। চিরুনী হবে সোনার, ঘাম হবে মেশকের মতো সুঘ্রাণ, আগর কাঠের সুঘ্রাণযুক্ত ধোঁয়া বিতরণ করা হবে, স্ত্রীরা হবে আয়াতলোচনা, সবার চরিত্র এক ও অভিন্ন এবং আকৃতি হবে তাদের পিতা আদমের মতো ৬০ হাত লম্বা। (বুখারী, ৬২২৭; ও মুসলিম, ২৮৪১)
নিম্নতম জান্নাতীর মর্যাদা
মুগীরা ইবন শো‘বা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« سَأَلَ مُوسَى رَبَّهُ مَا أَدْنَى أَهْلِ الْجَنَّةِ مَنْزِلَةً قَالَ هُوَ رَجُلٌ يَجِىءُ بَعْدَ مَا أُدْخِلَ أَهْلُ الْجَنَّةِ الْجَنَّةَ فَيُقَالُ لَهُ ادْخُلِ الْجَنَّةَ. فَيَقُولُ أَىْ رَبِّ كَيْفَ وَقَدْ نَزَلَ النَّاسُ مَنَازِلَهُمْ وَأَخَذُوا أَخَذَاتِهِمْ فَيُقَالُ لَهُ أَتَرْضَى أَنْ يَكُونَ لَكَ مِثْلُ مُلْكِ مَلِكٍ مِنْ مُلُوكِ الدُّنْيَا فَيَقُولُ رَضِيتُ رَبِّ. فَيَقُولُ لَكَ ذَلِكَ وَمِثْلُهُ وَمِثْلُهُ وَمِثْلُهُ وَمِثْلُهُ. فَقَالَ فِى الْخَامِسَةِ رَضِيتُ رَبِّ. فَيَقُولُ هَذَا لَكَ وَعَشَرَةُ أَمْثَالِهِ وَلَكَ مَا اشْتَهَتْ نَفْسُكَ وَلَذَّتْ عَيْنُكَ . فَيَقُولُ رَضِيتُ رَبِّ. قَالَ رَبِّ فَأَعْلاَهُمْ مَنْزِلَةً قَالَ أُولَئِكَ الَّذِينَ أَرَدْتُ غَرَسْتُ كَرَامَتَهُمْ بِيَدِى وَخَتَمْتُ عَلَيْهَا فَلَمْ تَرَ عَيْنٌ وَلَمْ تَسْمَعْ أُذُنٌ وَلَمْ يَخْطُرْ عَلَى قَلْبِ بَشَرٍ » . (رواه مسلم) .
“একবার মূসা আলাইহিস সালাম তাঁর প্রতিপালককে জিজ্ঞেস করেছিলেন, জান্নাতে সবচেয়ে নিম্নস্তরের লোকটি কে হবে? আল্লাহ বললেন: সে হল এমন এক ব্যক্তি, যে জান্নাতবাসীদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করানোর পর আসবে। তাকে বলা হবে, জান্নাতে প্রবেশ কর। সে বলবে: হে প্রতিপালক! তা কিরূপে হবে? জান্নাতীগণ তো নিজ নিজ আবাসের অধিকারী হয়ে গেছেন। তারা তাদের প্রাপ্য নিয়েছেন। তাকে বলা হবে: পৃথিবীর কোনো সম্রাটের সাম্রাজ্যের সমপরিমাণ সম্পদ নিয়ে কি তুমি সন্তুষ্ট হবে? সে বলবে: হে প্রভু! আমি এতে খুশি। আল্লাহ বলবেন: তোমাকে উক্ত পরিমাণ সম্পদ দেয়া হল, সাথে দেয়া হল আরও সমপরিমাণ, আরও সমপরিমাণ, আরও সমপরিমাণ, আরও সমপরিমাণ, আরও সমপরিমাণ ; পঞ্চমবারে সে বলে উঠবে, আমি পরিতৃপ্ত, হে আমার রব! আল্লাহ বলবেন: আরও দশগুণ দেয়া হল। এ সবই তোমার জন্য। তাছাড়া তোমার জন্য রয়েছে এমন জিনিস, যার দ্বারা মন তৃপ্ত হয়, চোখ জুড়ায়। লোকটি বলবে: হে আমার প্রভু! আমি পরিতৃপ্ত। মূসা আলাইহিস সালাম বললেন: হে আমার রব! তাঁদের মধ্যে সর্বোচ্চ কে? আল্লাহ তা‘আলা বলবেন: এরা তারাই, যাদের মর্যাদা আমি নিজহাতে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছি এবং তার উপর মোহর করে দিয়েছি; এমন জিনিস তাদের জন্য রেখেছি, যা কোন চক্ষু কখনও দেখেনি, কোন কান কখনও শুনে নি এবং কারও অন্তরে কখনও কল্পনারও উদয় হয় নি।”[1]
জান্নাতের স্তরসমূহ
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ وَمَن يَأۡتِهِۦ مُؤۡمِنٗا قَدۡ عَمِلَ ٱلصَّٰلِحَٰتِ فَأُوْلَٰٓئِكَ لَهُمُ ٱلدَّرَجَٰتُ ٱلۡعُلَىٰ ٧٥ ﴾ [طه: ٧٥]
“আর যারা তাঁর (আল্লাহর) কাছে আসবে সৎকর্ম করে, তাদের জন্যই থাকবে উচ্চতম মর্যাদা।” [সূরা ত্বা-হা: ৭৫]
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ كُلّٗا نُّمِدُّ هَٰٓؤُلَآءِ وَهَٰٓؤُلَآءِ مِنۡ عَطَآءِ رَبِّكَۚ وَمَا كَانَ عَطَآءُ رَبِّكَ مَحۡظُورًا ٢٠ ٱنظُرۡ كَيۡفَ فَضَّلۡنَا بَعۡضَهُمۡ عَلَىٰ بَعۡضٖۚ وَلَلۡأٓخِرَةُ أَكۡبَرُ دَرَجَٰتٖ وَأَكۡبَرُ تَفۡضِيلٗا ٢١ ﴾ [الاسراء: ٢٠، ٢١]
“তোমার প্রতিপালক তাঁর দান দ্বারা এদেরকে এবং ওদেরকে সাহায্য করেন; আর তোমার প্রতিপালকের দান অবারিত। লক্ষ্য কর, আমি কিভাবে ওদের এক দলকে অপরের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি, আর আখেরাত তো নিশ্চয়ই মর্যাদায় মহত্তর ও গুণে শ্রেষ্ঠতর।” (সূরা আল-ইসরা: ২০-২১)
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ لَّا يَسۡتَوِي ٱلۡقَٰعِدُونَ مِنَ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ غَيۡرُ أُوْلِي ٱلضَّرَرِ وَٱلۡمُجَٰهِدُونَ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ بِأَمۡوَٰلِهِمۡ وَأَنفُسِهِمۡۚ فَضَّلَ ٱللَّهُ ٱلۡمُجَٰهِدِينَ بِأَمۡوَٰلِهِمۡ وَأَنفُسِهِمۡ عَلَى ٱلۡقَٰعِدِينَ دَرَجَةٗۚ وَكُلّٗا وَعَدَ ٱللَّهُ ٱلۡحُسۡنَىٰۚ وَفَضَّلَ ٱللَّهُ ٱلۡمُجَٰهِدِينَ عَلَى ٱلۡقَٰعِدِينَ أَجۡرًا عَظِيمٗا ٩٥ دَرَجَٰتٖ مِّنۡهُ وَمَغۡفِرَةٗ وَرَحۡمَةٗۚ وَكَانَ ٱللَّهُ غَفُورٗا رَّحِيمًا ٩٦ ﴾ [النساء: ٩٥، ٩٦]
“মুমিনদের মধ্যে যারা অক্ষম নয় অথচ ঘরে বসে থাকে এবং যারা আল্লাহর পথে স্বীয় ধন-প্রাণ দ্বারা জিহাদ করে, তারা সমান নয়। যারা স্বীয় ধন-প্রাণ দ্বারা জিহাদ করে আল্লাহ তাদেরকে, যারা ঘরে বসে থাকে তাদের উপর মর্যাদা দিয়েছেন; তাদের প্রত্যেকের জন্য আল্লাহ জান্নাতের ওয়াদা করেছেন। যারা ঘরে বসে থাকে তাদের উপর যারা জিহাদ করে তাদেরকে আল্লাহ মহাপুরস্কারের ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। এসব তাঁর কাছ থেকে মর্যাদা, ক্ষমা ও দয়া; আর আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।”(সূরা আন-নিসা: ৯৫ – ৯৬)
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ يَرۡفَعِ ٱللَّهُ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ مِنكُمۡ وَٱلَّذِينَ أُوتُواْ ٱلۡعِلۡمَ دَرَجَٰتٖۚ وَٱللَّهُ بِمَا تَعۡمَلُونَ خَبِيرٞ ١١ ﴾ [المجادلة: ١١]
“তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে এবং যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছে আল্লাহ তাদেরকে মর্যাদায় উন্নত করবেন; আর তোমরা যা কর, আল্লাহ সে সম্পর্কে সবিশেষ অবহিত।”(সূরা আল-মুজাদালা: ১১)
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿أَفَمَنِ ٱتَّبَعَ رِضۡوَٰنَ ٱللَّهِ كَمَنۢ بَآءَ بِسَخَطٖ مِّنَ ٱللَّهِ وَمَأۡوَىٰهُ جَهَنَّمُۖ وَبِئۡسَ ٱلۡمَصِيرُ ١٦٢ هُمۡ دَرَجَٰتٌ عِندَ ٱللَّهِۗ وَٱللَّهُ بَصِيرُۢ بِمَا يَعۡمَلُونَ ١٦٣ ﴾ [ال عمران: ١٦٢، ١٦٣]
“আল্লাহ যেটাতে সন্তুষ্ট, যে তারই অনুসরণ করে, সে কি ওর মত, যে আল্লাহর ক্রোধের পাত্র হয়েছে এবং জাহান্নামই যার আবাস? আর সেটা কত নিকৃষ্ট প্রত্যাবর্তনস্থল! আল্লাহর কাছে তারা বিভিন্ন স্তরের; তারা যা করে, আল্লাহ সেসব ভালভাবে দেখেন।”(সূরা আলে ইমরান: ১৬২ – ১৬৩)
জান্নাতীদের মর্যাদাভেদে জান্নাতের প্রকারভেদ
পবিত্র কালামে জান্নাতীদেরকে দু’ভাগ করা হয়েছে। যথা:
১) ডান দিকের লোক (২) অগ্রবর্তী লোক।
ইরশাদ হচ্ছে:
﴿ فَأَصۡحَٰبُ ٱلۡمَيۡمَنَةِ مَآ أَصۡحَٰبُ ٱلۡمَيۡمَنَةِ ٨ ﴾ [الواقعة: ٨]
‘‘অতঃপর ডান দিকের লোক। ডান দিকের লোকের (সৌভাগ্যের কথা) কি বলা যায়?’’ (সূরা ওয়াকি‘আহ্: ৮)
আরও বলা হয়েছে,
﴿ وَٱلسَّٰبِقُونَ ٱلسَّٰبِقُونَ ١٠ أُوْلَٰٓئِكَ ٱلۡمُقَرَّبُونَ ١١ ﴾ [الواقعة: ١٠، ١١]
‘‘আর অগ্রবর্তী লোকেরা তো (সকল ব্যাপারে) অগ্রবর্তীই। তারাই তো সান্নিধ্যশালী লোক।’’ (সূরা ওয়াকি‘আহ্: ১০-১১)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন:
«إِنَّ أَهْلَ الجَنَّةِ يَتَرَاءَوْنَ أَهْلَ الغُرَفِ مِنْ فَوْقِهِمْ، كَمَا يَتَرَاءَوْنَ الكَوْكَبَ الدُّرِّيَّ الغَابِرَ فِي الأُفُقِ، مِنَ المَشْرِقِ أَوِ المَغْرِبِ، لِتَفَاضُلِ مَا بَيْنَهُمْ» قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ تِلْكَ مَنَازِلُ الأَنْبِيَاءِ لاَ يَبْلُغُهَا غَيْرُهُمْ، قَالَ: «بَلَى وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ، رِجَالٌ آمَنُوا بِاللَّهِ وَصَدَّقُوا المُرْسَلِينَ»
‘‘জান্নাতীরা তাদের উপরতলার লোকদেরকে এমনভাবে দেখতে পাবে, যেমন করে তোমরা পূর্ব অথবা পশ্চিম দিগন্তে উজ্জ্বল তারকাগুলো দেখতে পাও। তাদের পরস্পর মর্যাদা পার্থক্যের কারণে এরূপ হবে।’’ সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন: ‘‘ইয়া রাসূলুল্লাহ! ঐ স্তরগুলো কি নবীদের যা অন্য কেউ লাভ করতে পারবে না? তিনি বললেন: ‘‘কেন পারবে না! সেই সত্তার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ। যারা আল্লাহর উপর ঈমান এনেছে এবং নবীদেরকে সত্য বলে মেনে নিয়েছে, তারা ঐ স্তরে যেতে সক্ষম হবে।’’ (বুখারী, ৩২৫৬, মুসলিম, ২৮৩১)
অত্র হাদীস থেকে স্পষ্ট জানা যায় যে, জান্নাতীদের আমলের তারতম্যের কারণে সেখানে তাদের মর্যাদাও বিভিন্ন রকম হবে। অনেক হাদীসে জান্নাতীদের নেয়ামতের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলা হয়েছে নিম্নমানের এক জান্নাতীকে অমুক অমুক বস্তু দেয়া হবে। এতে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে জান্নাতীদেরকে আল্লাহ তাদের আমল ও মর্যাদা অনুযায়ী বিভিন্ন মানের জান্নাত দেবেন।
এ থেকে আরও বুঝা যায় যে, কুরআন ও হাদীসে জান্নাতের যে আলোচনা করা হয়েছে তা সাধাণভাবে সকল জান্নাতীদের জন্য প্রযোজ্য। কিন্তু যারা আল্লাহর প্রিয় ও সালেহ বান্দাহ তাদেরকে এর অতিরিক্ত আরও কিছু দেবেন তার বর্ণনা আল্লাহ কোথাও করেন নি। শুধু ইঙ্গিত দেয়াই যথেষ্ট মনে করেছেন।
জান্নাতীদের উষ্ণ সম্বর্ধনা
আল্লাহ বলেন,
﴿وَسِيقَ ٱلَّذِينَ ٱتَّقَوۡاْ رَبَّهُمۡ إِلَى ٱلۡجَنَّةِ زُمَرًاۖ حَتَّىٰٓ إِذَا جَآءُوهَا وَفُتِحَتۡ أَبۡوَٰبُهَا وَقَالَ لَهُمۡ خَزَنَتُهَا سَلَٰمٌ عَلَيۡكُمۡ طِبۡتُمۡ فَٱدۡخُلُوهَا خَٰلِدِينَ ٧٣ وَقَالُواْ ٱلۡحَمۡدُ لِلَّهِ ٱلَّذِي صَدَقَنَا وَعۡدَهُۥ وَأَوۡرَثَنَا ٱلۡأَرۡضَ نَتَبَوَّأُ مِنَ ٱلۡجَنَّةِ حَيۡثُ نَشَآءُۖ فَنِعۡمَ أَجۡرُ ٱلۡعَٰمِلِينَ ٧٤﴾ [الزمر: ٧٣، ٧٤]
“মোত্তাকীদেরকে দলে দলে জান্নাতের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। যখন তারা মুক্ত দরজা দিয়ে জান্নাতে পৌছাবে, জান্নাতের রক্ষীরা তাদেরকে এ বলে অভ্যর্থনা জানাবে, তোমাদের প্রতি সালাম, শুভেচ্ছা, তোমরা সুখে থাকো এবং সর্বদা বসবাসের জন্য তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করো। তারা বলবে, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর যিনি আমাদের প্রতি তাঁর ওয়াদা পূর্ণ করেছেন এবং আমাদেরকে এ ভূমির উত্তরাধিকারী বানিয়েছেন। আমরা জান্নাতের যেখানে ইচ্ছা বসবাস করবো। মেহনতকারীদের পুরস্কার কতই না চমৎকার।” (সূরা যুমার: ৭৩-৭৪)
বহুতল ভবন ও নির্ঝরিণী
জান্নাতীদের বাসস্থান সম্পর্কে আল্লাহ বলেন:
﴿لَٰكِنِ ٱلَّذِينَ ٱتَّقَوۡاْ رَبَّهُمۡ لَهُمۡ غُرَفٞ مِّن فَوۡقِهَا غُرَف مَّبۡنِيَّةٞ تَجۡرِي مِن تَحۡتِهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُۖ وَعۡدَ ٱللَّهِ لَا يُخۡلِفُ ٱللَّهُ ٱلۡمِيعَادَ ٢٠﴾ [الزمر: ٢٠]ٞ
“যারা মোত্তাকী, তাদের জন্য রয়েছে কক্ষের উপর কক্ষ (বহুতল ভবন) এবং এর নীচে নির্ঝরিণী প্রবাহিত। আল্লাহ নিজ ওয়াদা কখনও ভঙ্গ করেন না।” (সূরা যুমার: ২০)
সকল প্রকার মজাদার খাবার ও ফল-ফলাদি
আল্লাহ বলেন,
﴿يَٰعِبَادِ لَا خَوۡفٌ عَلَيۡكُمُ ٱلۡيَوۡمَ وَلَآ أَنتُمۡ تَحۡزَنُونَ ٦٨ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ بَِٔايَٰتِنَا وَكَانُواْ مُسۡلِمِينَ ٦٩ ٱدۡخُلُواْ ٱلۡجَنَّةَ أَنتُمۡ وَأَزۡوَٰجُكُمۡ تُحۡبَرُونَ ٧٠ يُطَافُ عَلَيۡهِم بِصِحَافٖ مِّن ذَهَبٖ وَأَكۡوَابٖۖ وَفِيهَا مَا تَشۡتَهِيهِ ٱلۡأَنفُسُ وَتَلَذُّ ٱلۡأَعۡيُنُۖ وَأَنتُمۡ فِيهَا خَٰلِدُونَ ٧١ وَتِلۡكَ ٱلۡجَنَّةُ ٱلَّتِيٓ أُورِثۡتُمُوهَا بِمَا كُنتُمۡ تَعۡمَلُونَ ٧٢ لَكُمۡ فِيهَا فَٰكِهَةٞ كَثِيرَةٞ مِّنۡهَا تَأۡكُلُونَ ٧٣ ﴾ [الزخرف: ٦٨، ٧٣]
“হে আমার বান্দাগণ, তোমাদের আজ কোনো ভয় নেই এবং তোমরা দুঃখিত ও পেরেশান হবে না। তোমরা আমার আয়াতসমূহের বিশ্বাস স্থাপন করেছিলে এবং তোমরা আমার আজ্ঞাবহ ছিল। জান্নাতে প্রবেশ করো তোমরা এবং তোমাদের বিবিগণ সানন্দে। তাদের কাছে সোনার তৈরি ডিশ ও পানপাত্র পেশ করা হবে এবং সেখানে রয়েছে মন যা চায় এবং নয়ন যাতে তৃপ্ত হয়। তোমরা সেখানে চিরকাল থাকবে। এই যে জান্নাতের তোমরা উত্তরাধিকারী হয়েছো, এটা তোমাদের কর্মের ফল। সেখানে তোমাদের জন্য আছে প্রচুর ফল-মূল, তা থেকে তোমরা খাবে।” (সূরা যুমার: ৬৮-৭৩)
জান্নাতে সকল প্রকার ফল-মূল পাওয়া যাবে তারা দাঁড়িয়ে, বসে ও শুয়ে যখনই ইচ্ছা করবে, তখনই খেতে পারবে।
যা পেতে ইচ্ছে করবে তাই পাবে
পৃথিবীতে কোন জিনিস পেতে হলে বা ভোগ করতে চাইলে সে জিনিসের জন্য চেষ্টা শ্রম ও কোন কোন ক্ষেত্রে টাকা বা সম্পদের প্রয়োজন হয়। কিন্তু জান্নাতে ইচ্ছে হওয়া মাত্রই সে জিনিস তার সামনে উপস্থিত পাবে। এ ব্যাপারে আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেনঃ
﴿وَلَكُمۡ فِيهَا مَا تَشۡتَهِيٓ أَنفُسُكُمۡ وَلَكُمۡ فِيهَا مَا تَدَّعُونَ ٣١ نُزُلٗا مِّنۡ غَفُورٖ رَّحِيمٖ ٣٢ ﴾ [فصلت: ٣١، ٣٢]
অর্থঃ ‘সেখানে তোমরা যা কিছু চাও এবং যা ইচ্ছে করবে সাথে সাথে তাই হবে। এটা হচ্ছে ক্ষমাশীল ও দয়াবান আল্লাহর তরফ হতে মেহমানদারী।’ (সূরা হা-মীম আস-সিজদা: ৩০-৩১)
অন্যত্র বলা হয়েছেঃ
﴿ وَأَمۡدَدۡنَٰهُم بِفَٰكِهَةٖ وَلَحۡمٖ مِّمَّا يَشۡتَهُونَ ٢٢ ﴾ [الطور: ٢٢]
“এবং আমি জান্নাতীদেরকে তাদের ইচ্ছানুযায়ী ফল ও গোশত প্রদান করতে থাকবো।’ (সূরা আত-তূর: ২২)
এ দান স্থান ও কালের সাথে সীমাবদ্ধ হবে না, নিয়মিতভাবে চিরদিন প্রদান করা হবে। যেমন আল্লাহ বলেনঃ
﴿ وَلَهُمۡ رِزۡقُهُمۡ فِيهَا بُكۡرَةٗ وَعَشِيّٗا ٦٢ ﴾ [مريم: ٦٢]
অর্থঃ ‘এবং সেখানে তাদেরকে (নিয়মিতভাবে) সকাল সন্ধ্যা খাদ্য পরিবেশন করা হবে।’ (সূরা মারইয়াম: ৬২)
অসীম সুখ-সম্ভার কোনোদিন শেষ হবে না
পৃথিবীতে যদিও কোনো ব্যাক্তি সম্পূর্ণ সুখ-সম্ভোগ লাভ করতে পারে না; তবুও যতোটুকু পায় তার মধ্যে প্রতিটি মুহূর্ত ভীত সন্ত্রস্ত থাকে চোর-ডাকাত, প্রতারক এবং মৃত্যুর ভয়ে। কিন্তু জান্নাতের নিয়ামত এবং সুখ ভোগ কোনো দিনই কমতি বা শেষ হবে না।
আল্লাহ বলেনঃ
﴿فِي سِدۡرٖ مَّخۡضُودٖ ٢٨ وَطَلۡحٖ مَّنضُودٖ ٢٩ وَظِلّٖ مَّمۡدُودٖ ٣٠﴾ [الواقعة: ٢٨، ٣٠]
অর্থঃ ‘তাদের জন্য কাটাবৃক্ষসমূহ, থরে থরে সাজানো কলা, বিস্তীর্ণ অঞ্চলব্যাপী ছায়া, সর্বদা প্রবাহমান পানি, আর খুব প্রচুর পরিমাণ ফল থাকবে। যা কোনদিন শেষ হবে না এবং ভোগ করতে কোন বাঁধা-বিপত্তিও থাকবে না।’ (সূরা ওয়াকি‘আহ্: ২৮-৩০)
অন্যত্র বলা হয়েছেঃ
﴿ جَنَّٰتِ عَدۡنٖ مُّفَتَّحَةٗ لَّهُمُ ٱلۡأَبۡوَٰبُ ٥٠ مُتَّكِِٔينَ فِيهَا يَدۡعُونَ فِيهَا بِفَٰكِهَةٖ كَثِيرَةٖ وَشَرَابٖ ٥١ ۞وَعِندَهُمۡ قَٰصِرَٰتُ ٱلطَّرۡفِ أَتۡرَابٌ ٥٢ هَٰذَا مَا تُوعَدُونَ لِيَوۡمِ ٱلۡحِسَابِ ٥٣ إِنَّ هَٰذَا لَرِزۡقُنَا مَا لَهُۥ مِن نَّفَادٍ ٥٤ ﴾ [ص: ٥٠، ٥٤]
অর্থঃ ‘চিরস্থায়ী জান্নাতসমূহ যার দ্বারগুলো তাদের জন্য উন্মুক্ত হয়ে থাকবে। সেখানে তারা ঠেস দিয়ে বসবে এবং প্রচুর ফল ও পানীয় চেয়ে পাঠাবে, আর তাদের নিকট লজ্জাবনত সমবয়স্কা স্ত্রী থাকবে। এ জিনিসগুলো এমন যা হিসেবের দিন দান করার জন্য তোমাদের নিকট ওয়াদা করা হয়েছে। এটা আমাদের দেয়া রিযিক, কোনো দিন শেষ হয়ে যাবে না।’ (সূরা সদ: ৫০-৫৪)
জান্নাতীদেরকে আল্লাহ তায়ালা হুরদের সাথে বিয়ে দেবেন
মহান আল্লাহ বলেনঃ
﴿ مُتَّكِِٔينَ عَلَىٰ سُرُرٖ مَّصۡفُوفَةٖۖ وَزَوَّجۡنَٰهُم بِحُورٍ عِينٖ ٢٠ ﴾ [الطور: ٢٠]
অর্থঃ ‘তারা সামনা-সামনিভাবে সাজানো সারি সারি আসনের উপর ঠেস দিয়ে বসে থাকবে এবং আমি তাদের সাথে সুনয়না হুরদের বিবাহ দেবো।’ (সূরা তুর: ২০)
حور বহুবচনের শব্দ। একবচনে حوراء অর্থ অত্যন্ত সুশ্রী, অনিন্দ্য সুন্দর। عين শব্দটিও বহুবচন। একবচনে عيناء অর্থ ভাসা ভাসা ডাগর চক্ষুওয়ালা নারী। যাদেরকে বাংলা সাহিত্যের ভাষায় হরিণ নয়না বলা হয়। হুর সম্বন্ধে ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে মুফাচ্ছিরগণ দু’ভাগে ভাগ করেছেন, এক দলের মতেঃ সম্ভবত এরা হবে সেসব মেয়ে যারা বালেগা হওয়ার পূর্বেই মৃত্যুবরণ করেছিলো এবং যাদের পিতা-মাতা জান্নাতে যাওয়ার যোগ্য হয় নি। সে সব মেয়েদেরকে ষোড়শী যুবতী করে হুরে রূপান্তর করা হবে। আর তারা চিরদিন নব্য যুবতীই থেকে যাবে।
অন্যদের মতেঃ হুরগণ প্রকৃতপক্ষে স্ত্রী জাতি কিন্তু তাদের সৃষ্টি মানব সৃষ্টির চেয়ে আলাদা এবং আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন আপন মহিমায় তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন।
অন্যত্র বলা হয়েছেঃ
﴿ فِيهِنَّ خَيۡرَٰتٌ حِسَانٞ ٧٠ ﴾ [الرحمن: ٧٠]
অর্থঃ ‘(এসব নিয়ামতের মধ্যে থাকবে) তাদের জন্য সচ্চরিত্রবান ও সুদর্শন স্ত্রীগণ।’ (সূরা আর-রাহমান: ৭০)
সূরা আল-ইমরানে বলা হয়েছেঃ
﴿ لِلَّذِينَ ٱتَّقَوۡاْ عِندَ رَبِّهِمۡ جَنَّٰتٞ تَجۡرِي مِن تَحۡتِهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُ خَٰلِدِينَ فِيهَا وَأَزۡوَٰجٞ مُّطَهَّرَةٞ وَرِضۡوَٰنٞ مِّنَ ٱللَّهِۗ وَٱللَّهُ بَصِيرُۢ بِٱلۡعِبَادِ ١٥ ﴾ [ال عمران: ١٥]
অর্থঃ ‘যারা আল্লাহকে ভয় করে তাদের প্রতিপালকের নিকট তাদের জন্য এমন উদ্যান সমূহ রয়েছে যার নীচ দিয়ে ঝর্ণাধারা প্রবাহমান। আর সেখানে তারা চিরকাল অবস্থান করবে। সেখানে তাদের জন্য আরও আছে পবিত্রা স্ত্রীগণ ও আল্লাহর সন্তুষ্টি।
জান্নাতী হুরেরা হবে কুমারী
আল্লাহ বলেন,
﴿إِنَّآ أَنشَأۡنَٰهُنَّ إِنشَآءٗ ٣٥ فَجَعَلۡنَٰهُنَّ أَبۡكَارًا ٣٦ عُرُبًا أَتۡرَابٗا ٣٧﴾ [الواقعة: ٣٥، ٣٧]
“আমি জান্নাতী নারীদেরকে বিশেষরূপে সৃষ্টি করেছি। তারপর তাদেরকে চিরকুমারী, কামিনী ও সমবয়স্কা বানিয়েছি।” (সূরা ওয়াকি‘আহ্: ৩৫-৩৮)
ঐ সমস্ত হুর এবং স্ত্রীগণ শুধু কুমারীই হবে না বরং এমন অবস্থায় থাকবে যে, জান্নাতীদের স্পর্শের পূর্বে কোনো মানুষ অথবা জ্বীন তাদেরকে স্পর্শ করে নি বা দেখেও নি। কেননা বিচারের পূর্বে কোনো ব্যক্তিই জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না তাই তাদেরকে দেখা বা স্পর্শ করাও সম্ভব নয়।
আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন নিজেই বলেনঃ
﴿ لَمۡ يَطۡمِثۡهُنَّ إِنسٞ قَبۡلَهُمۡ وَلَا جَآنّٞ ٧٤ ﴾ [الرحمن: ٧٤]
অর্থঃ তাদেরকে (জান্নাতীদের) পূর্বে কোনো মানুষ অথবা জ্বীন স্পর্শ করে নি।’ (সূরা আর-রাহমান: ৫৬)
হুরেরা হবে আবরণে রক্ষিত উজ্জ্বল মণি-মুক্তার মতো সুন্দরী
আল্লাহ বলেন:
﴿ وَحُورٌ عِينٞ ٢٢ كَأَمۡثَٰلِ ٱللُّؤۡلُوِٕ ٱلۡمَكۡنُونِ ٢٣ ﴾ [الواقعة: ٢٢، ٢٣]
“হুরের উদাহরণ হলো, আবরণে রক্ষিত মুক্তার মতো সুন্দর ও উজ্জ্বল এবং আয়তলোচনা। ”(সূরা ওয়াকি‘আহ্: ২৩)
আল্লাহ আরো বলেন,
﴿وَعِندَهُمۡ قَٰصِرَٰتُ ٱلطَّرۡفِ عِينٞ ٤٨ كَأَنَّهُنَّ بَيۡضٞ مَّكۡنُونٞ ٤٩﴾ [الصافات: ٤٨، ٤٩]
“তাদের চোখ সর্বদাই অবনত (পবিত্রা যারা অন্যের দিকে তাকায় না), সুন্দর চোখ বিশিষ্ট এবং তারা যেন ডিমের আবরণের ভেতর সুপ্ত উজ্জ্বল।” (সূরা সাফ্ফাত:৪৮- ৪৯)
আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন
«وَلَوْ أَنَّ امْرَأَةً مِنْ أَهْلِ الجَنَّةِ اطَّلَعَتْ إِلَى أَهْلِ الأَرْضِ لَأَضَاءَتْ مَا بَيْنَهُمَا، وَلَمَلَأَتْهُ رِيحًا، وَلَنَصِيفُهَا عَلَى رَأْسِهَا خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيهَا»
‘জান্নাতীগণের স্ত্রীদের মধ্যে থেকে কোনো একজন স্ত্রী যদি পৃথিবীর দিকে উঁকি মেরো দেখতো তবে আসমান ও জমিনের মধ্যবর্তী সবকিছু আলোকিত হয়ে যেতো এবং গোটা পৃথিবী সুগন্ধে ভরে যেতো। তার মাথার উড়নাটিও পৃথিবী এবং পৃথিবীর সমস্ত বস্তুর চেয়ে দামী।’ (বুখারী, ২৭৯৬)
অন্য বর্ণনায় এসেছে, হুরেরা অত্যন্ত উজ্জ্বল সুন্দরী, রূপবতী, লাবণ্যময়ী, সুন্দর ও বড় বড় চোখের অধিকারিণী হবে, কাপড়ের মধ্য দিয়ে তাদের হাড়ের ভেতরের মজ্জা দেখা যাবে, তাদের দেহ আয়নার মতো স্বচ্ছ হবে এবং যে কেউ নিজের চেহারা তাতে দেখতে পাবে।
আনাস ইবন মালেক থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: মোমিনকে জান্নাতে ১শত নারীর সাথে যৌনমিলনের শক্তি দেয়া হবে। (মুসনাদে আহমাদ, ৪/৩৭১)
অন্য বর্ণনায় আছেঃ
«إِنَّ أَوَّلَ زُمْرَةٍ يَدْخُلُونَ الجَنَّةَ يَوْمَ القِيَامَةِ ضَوْءُ وُجُوهِهِمْ عَلَى مِثْلِ ضَوْءِ القَمَرِ لَيْلَةَ البَدْرِ، وَالزُّمْرَةُ الثَّانِيَةُ عَلَى مِثْلِ أَحْسَنِ كَوْكَبٍ دُرِّيٍّ فِي السَّمَاءِ، لِكُلِّ رَجُلٍ مِنْهُمْ زَوْجَتَانِ عَلَى كُلِّ زَوْجَةٍ سَبْعُونَ حُلَّةً يُرَى مُخُّ سَاقِهَا مِنْ وَرَائِهَا»
“প্রথম যারা কিয়ামতের দিন জান্নাতে যাবে, তাদের চেহারা পূর্ণিমার চাঁদের মত উজ্জ্বল দেখা যাবে, আর দ্বিতীয় দল, তারা যেন সৌন্দর্যে আকাশের ধ্রুব তারা, তাদের প্রত্যেকের জন্য থাকবে দু’জন স্ত্রী, প্রত্যেক স্ত্রীর উপর থাকবে সত্তরটি কাপড়, তথাপি তার ভেতর থেকেও পায়ের নলার ভিতরের মগজ দৃষ্টিগোচর হবে।” (তিরমিযী, ২৫৩৫)
সোনার খাটে মুখোমুখি হয়ে হেলান দিয়ে বসবে
﴿عَلَىٰ سُرُرٖ مَّوۡضُونَةٖ ١٥ مُّتَّكِِٔينَ عَلَيۡهَا مُتَقَٰبِلِينَ ١٦﴾ [الواقعة:١٥، ١٦]
“জান্নাতীরা সোনার খাটে পরস্পর মুখোমুখি হয়ে হেলান দিয়ে আরামের সাথে আলাপচারিতা করবে।” (সূরা ওয়াকি‘আহ্ : ১৫-১৬)
আল্লাহ বলেন:
﴿هُمۡ وَأَزۡوَٰجُهُمۡ فِي ظِلَٰلٍ عَلَى ٱلۡأَرَآئِكِ مُتَّكُِٔونَ ٥٦ ﴾ [يس: ٥٦]
“তারা এবং তাদের স্ত্রীরা ছায়ার মধ্যে খাটে হেলান দিয়ে বসবে। সেখানে তাদের জন্য রয়েছে ফল-মুল এবং তারা যা চাবে সবই ।” সূরা ইয়াসিন-৫৬)
হুরদের প্রাণ মাতানো সংগীত
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, জান্নাতের মধ্যে হুরদের একটি সমষ্টি থাকবে, যারা এমন মধুর সুরে গান গাবে, আল্লাহর কোন সৃষ্টি এত সুন্দর কণ্ঠের গান আর কোনো দিন শোনে নি। তারা এ বলে গাইবে:
‘আমরা চিরস্থায়ী, কোন দিন খতম হবো না,
আমরা চিরসুখী, কোনদিন দুঃখী হবো না।
আমরা চিরসন্তুষ্ট, কোন দিন অসন্তুষ্ট হবো না,
সুসংবাদ, আমরা যাদের জন্য এবং যারা আমাদের জন্য। (তিরমিযী, ২৫৬৪)[2]
আবু হোরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহুকে জান্নাতী গানের ধরণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করায় তিনি উত্তর দেন: সে সকল গান হবে আল্লাহর হামদ ও গুণ-কীর্তন, প্রশংসা ও স্তুতি।
জান্নাতীদের খেদমতের জন্য অসংখ্য গিলমান থাকবে
জান্নাতীদের জন্য হুরের পাশাপাশি গিলমান (غلمان) থাকবে। غلمان বহুবচন, এক বচনে غلام অর্থ দাস, সেবক ইত্যাদি।
মহান আল্লাহ বলেনঃ
﴿ ۞وَيَطُوفُ عَلَيۡهِمۡ غِلۡمَانٞ لَّهُمۡ كَأَنَّهُمۡ لُؤۡلُؤٞ مَّكۡنُونٞ ٢٤ ﴾ [الطور: ٢٤]
“আর তাদের (সেবা যত্নে) কাজে নিযুক্ত থাকবে এমন সুন্দর সুশ্রী বালক, তারা যেন (ঝিনুকে) লুকিয়ে থাকা মুক্ত।” (সূরা তুর: ২৪)
غلمان বা সেবকগণ হবে চিরন্তন বালক। এদের বয়স কোনোদিনই বাড়বে না। এই সেইসব বালক যারা বালেগ হওয়ার আগেই মৃত্যুবরণ করেছে এবং তাদের বাবা-মা চিরস্থায়ী জাহান্নামী হবে। অথবা তারা হবে এক নতুন সৃষ্টি যাদেরকে আল্লাহ আপন মহিমায় জান্নাতীদের পরিচর্যা ও সেবার জন্য সৃষ্টি করবেন। (আল্লাহই সর্বজ্ঞ)। ঐ বালকগণ জান্নাতীদেরকে বাসন-কোসন, খাদ্য-পানীয় ইত্যাদি পরিবেশনের দায়িত্ব নিয়োজিত থাকবে এবং তারা পুরুষ ও মহিলা উভয় ধরনের জান্নাতীদের নিকট অবাধে যাতায়াত করবে।
অন্যত্র বলা হয়েছে:
﴿ ۞وَيَطُوفُ عَلَيۡهِمۡ وِلۡدَٰنٞ مُّخَلَّدُونَ إِذَا رَأَيۡتَهُمۡ حَسِبۡتَهُمۡ لُؤۡلُؤٗا مَّنثُورٗا ١٩ ﴾ [الانسان: ١٩]
‘‘আর তাদের (সেবার জন্য) নির্ধারিত থাকবে এমন সব বালক যারা চিরদিনই বালক থাকবে। আপনি তাদেরকে দেখলে মনে করবেন এরা যেন ছড়িয়ে দেয়া মুক্তা।’’ (সূরা দাহর: ১৯)
কচিকাঁচা ছোট শিশুদের আপ্যায়ন
শিশুরা আনন্দের খোরাক। তাদের কচিকাঁচা চালন-চলন মনোহর। যদি তারাই আপ্যায়ন করায় তাহলে তা আরো কত বেশি আনন্দঘন হবে! আল্লাহ বলেন:
﴿ يَطُوفُ عَلَيۡهِمۡ وِلۡدَٰنٞ مُّخَلَّدُونَ ١٧ بِأَكۡوَابٖ وَأَبَارِيقَ وَكَأۡسٖ مِّن مَّعِينٖ ١٨ لَّا يُصَدَّعُونَ عَنۡهَا وَلَا يُنزِفُونَ ١٩ وَفَٰكِهَةٖ مِّمَّا يَتَخَيَّرُونَ ٢٠ وَلَحۡمِ طَيۡرٖ مِّمَّا يَشۡتَهُونَ ٢١ ﴾ [الواقعة: ١٧، ٢١]
“তাদের কাছে পানপাত্র ও সূরাপূর্ণ পেয়ালা হাতে কচি-কোমল শিশুরা ঘোরাফেরা করবে। আর যা পান করলে মাথা ব্যাথা হবে না এবং বিকারগ্রস্থ হবে না। আর তাদের পছন্দসই ফল-মুল ও রুচিসম্মত পাখীর গোশত নিয়ে আপ্যায়নের জন্য ঘোরাফেরা করবে।” (সূরা ওয়াকি‘আহ্: ১৭-২১)
জান্নাতীদের দৈহিক গঠন
রাসূল আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«يَدْخُلُ أَهْلُ الجَنَّةِ الجَنَّةَ جُرْدًا مُرْدًا مُكَحَّلِينَ أَبْنَاءَ ثَلَاثِينَ أَوْ ثَلَاثٍ وَثَلَاثِينَ سَنَةً»
‘‘জান্নাতীরা জান্নাতে প্রবেশ করবে, তারা থাকবে লোম ও দাড়ি গোঁফ বিহীন, খৎনাবিহীন, সুরমা লাগানো, ত্রিশ অথবা তেত্রিশ বছরের বয়সের।’’ (তিরমিযী, ২৫৪৫)
অন্য হাদীসে বলা হয়েছে:
«أهل الجنة جرد مرد كحل لايفنى شبابهم ولا يبلى ثيابهم»
‘‘জান্নাতীগণ লোম ও দাড়ি গোঁফ বিহীন হবে, তাদের চোখ থাকবে সুরমায়িত। তাদের যৌবন কোনদিনই বিলুপ্ত হবে না এবং তাদের কাপড় চোপড়ও পুরানো হবে না।’’ (তিরমিযী, ২৫৩৯)
হাসান বসরী রহ. বলেন,
أَتَتْ عَجُوزٌ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم َ فَقَالَتْ: يَا رَسُولَ اللَّهِ ادْعُ اللَّهَ أَنْ يُدْخِلَنِي الْجَنَّةَ. فَقَالَ: (يَا أُمَّ فُلَانٍ إِنَّ الْجَنَّةَ لَا تَدْخُلُهَا عَجُوزٌ) . قَالَ: فَوَلَّتْ تَبْكِي. فَقَالَ: (أَخْبِرُوهَا أَنَّهَا لَا تَدْخُلُهَا وَهِيَ عَجُوزٌ إِنَّ اللَّهَ تَعَالَى يَقُولُ: إِنَّا أَنْشَأْنَاهُنَّ إِنْشَاءً. فَجَعَلْنَاهُنَّ أبكارا. عربا أترابا)
একবার রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট এক বৃদ্ধা আবেদন করলেন: ‘‘হে আল্লাহর রাসূল! আপনি দু’আ করে দিন আমি যেনো জান্নাতে যেতে পারি।’’ রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: কোন বৃদ্ধা জান্নাতে যাবে না। একথা শুনে বৃদ্ধা কাঁদতে লাগলেন। তখন তিনি তাকে ডেকে বললেন: বুড়ি শোনো, তুমি যখন জান্নাতে যাবে তখন আর বুড়ি থাকবে না। ষোড়ষী যুবতী হয়েই জান্নাতে প্রবেশ করবে। একথা শুনে বৃদ্ধা খুশী হয়ে চলে গেলো। [শামায়েলে তিরমিযী, বর্ণনা নং ২০৫, শাইখ আল-আলবানী বর্ণনাটিকে হাসান বলেছেন]
জান্নাতের নদী ও ঝর্ণাসমূহ
জান্নাতে মোট চার ধরনের নদী প্রবাহিত হবে।
(১) পানি (২) দু্ধ (৩) মধু (৪) শরাব। তন্মধ্যে পানি, তার ঝর্ণাসমূহ হচ্ছে,
‘কাফুর’ নামক ঝর্ণা। এর পানি সুঘ্রাণ এবং সুশীতল।
সালসাবিল ঝর্ণা। এর পানি ফুটন্ত চা ও কপির ন্যায় সুগন্ধি ও উত্তপ্ত থাকবে।
তাছনীম নাম ঝর্ণা। এর পানি থাকবে নাতিশীতোষ্ণ।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ وَبَشِّرِ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَعَمِلُواْ ٱلصَّٰلِحَٰتِ أَنَّ لَهُمۡ جَنَّٰتٖ تَجۡرِي مِن تَحۡتِهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُۖ ﴾ [البقرة: ٢٥]
“আর যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে তাদেরকে শুভ সংবাদ দিন যে, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত।” (আল বাকারা:২৫)
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ مَّثَلُ ٱلۡجَنَّةِ ٱلَّتِي وُعِدَ ٱلۡمُتَّقُونَۖ فِيهَآ أَنۡهَٰرٞ مّن مَّآءٍ غَيۡرِ ءَاسِنٖ وَأَنۡهَٰرٞ مِّن لَّبَنٖ لَّمۡ يَتَغَيَّرۡ طَعۡمُهُۥ وَأَنۡهَٰرٞ مِّنۡ خَمۡرٖ لَّذَّةٖ لِّلشَّٰرِبِينَ وَأَنۡهَٰرٞ مِّنۡ عَسَلٖ مُّصَفّٗىۖ وَلَهُمۡ فِيهَا مِن كُلِّ ٱلثَّمَرَٰتِ ﴾ [محمد: ١٥]
“মুত্তাকীদেরকে যে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে তার দৃষ্টান্ত: তাতে আছে নির্মল পানির নহরসমূহ, আছে দুধের নহরসমূহ যার স্বাদ অপরিবর্তনীয়, আছে পানকারীদের জন্য সুস্বাদু সুরার নহরসমূহ, আছে পরিশোধিত মধুর নহরসমূহ এবং সেখানে তাদের জন্য থাকবে প্রত্যেক প্রকারের ফলমূল।”(মুহাম্মদ:১৫)
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ إِنَّ ٱلۡمُتَّقِينَ فِي مَقَامٍ أَمِينٖ ٥١ فِي جَنَّٰتٖ وَعُيُونٖ ٥٢ ﴾ [الدخان: ٥١، ٥٢]
“নিশ্চয় মুত্তাকীরা থাকবে নিরাপদ স্থানে— উদ্যান ও ঝর্ণার মাঝে।”(আদ দুখান:৫১-৫২)
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ فِيهِمَا عَيۡنَانِ تَجۡرِيَانِ ٥٠ ﴾ [الرحمن: ٥٠]
“উভয় উদ্যানে রয়েছে প্রবাহমান দুই প্রস্রবণ।”(আর রাহমান:৫০)
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ فِيهِمَا عَيۡنَانِ نَضَّاخَتَانِ ٦٦ ﴾ [الرحمن: ٦٦]
“উভয় উদ্যানে আছে উচ্ছলিত দুই প্রস্রবণ।” (আর রাহমান:২২)
সূরা যারিয়াতে বলা হয়েছে:
﴿ إِنَّ ٱلۡمُتَّقِينَ فِي جَنَّٰتٖ وَعُيُونٍ ١٥ ءَاخِذِينَ مَآ ءَاتَىٰهُمۡ رَبُّهُمۡۚ إِنَّهُمۡ كَانُواْ قَبۡلَ ذَٰلِكَ مُحۡسِنِينَ ١٦ ﴾ [الذاريات: ١٥، ١٦]
‘‘অবশ্য মুক্তাকী লোকেরা সেদিন বাগ-বাগিচা ও ঝর্ণাধারাসমূহের পরিবেষ্টনে অবস্থান থাকবে। তাদের রব তাদেরকে যা দেবে সানন্দে তারা তা গ্রহণ করতে থাকবে। (এটা এজন্য যে) তারা এর আগে মুহসিন (সদাচারী) বান্দা হিসেবে পরিচিত ছিলো।’’ (সূরা যারিয়াত: ১৫-১৬)
বাগানসমূহের নিচ দিয়ে প্রবাহের অর্থ হচ্ছে, বাগানসমূহের পাশ দিয়ে নদী নালা প্রবাহমান থাকবে। কেননা- বাগ-বাগিচা যদিও নদীর কিনারে হয় তবু তা নদী থেকে একটু উচু জায়গাই হয়ে থাকে এবং নদী ও বাগান থেকে সামান্য নিচু নিয়েই প্রবাহিত হয়।
পক্ষান্তরে যে সমস্ত জায়গায় ঝর্ণার কথা বলা হয়েছে সেখানে বাগান এবং ঝর্ণা একত্রে থাকবে একথাই বলা হয়েছে। আমরা জানি বাগানের মধ্যে বা একই সমতলে ঝর্ণা থাকা সম্ভব। শুধু সম্ভবই নয় বাগানের শোভা বর্ধনের একটি অন্যতম উৎসও বটে। তাই কুরআনের ভাষায় হচ্ছে:
﴿ فِي جَنَّٰتٖ وَعُيُونٖ ٥٢ ﴾ [الدخان: ٥٢]
“সেদিন তারা বাগ-বাগিচা ও ঝর্ণাসমূহের পরিবেষ্টনে অবস্থান করবে।”
আরো বলা হয়েছে:
﴿ وَدَانِيَةً عَلَيۡهِمۡ ظِلَٰلُهَا وَذُلِّلَتۡ قُطُوفُهَا تَذۡلِيلٗا ١٤ ﴾ [الانسان: ١٤]
‘‘জান্নাতের ছায়া তাদের উপর বিস্তৃত হয়ে থাকবে এবং তার ফলসমূহ সর্বদা আয়ত্বের মধ্যে থাকবে।’’ (সূরা দাহর: ১৪)
একই জায়গায় নানা ধরনের ফুল ফলের বাগান, বড় বড় ছায়াদার বৃক্ষরাজি, ঝর্ণাসমূহ, সাথে বিশাল আয়তনের অট্টালিকাসমূহ, পাশ দিয়ে প্রবাহমান নদী, একত্রে এগুলোর সমাবেশ ঘটলে পরিবেশ কত মোহিনী মনোমুগ্ধকার হতে পারে তা লিখে বা বর্ণনা করে বুঝানো কোনক্রমেই সম্ভব নয় শুধুমাত্র মনের চোখে কল্পনার ছবি দেখলে কিছুমাত্র অনুমান করা সম্ভব।
মু‘আবিয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« إن في الجنة بحر الماء , وبحر العسل , وبحر اللبن , وبحر الخمر , ثم تشقق الأنهار بعد » . ( رواه الترمذي ) .
“নিশ্চয়ই জান্নাতের মধ্যে থাকবে পানির সমুদ্র, মধুর সমুদ্র, দুধের সমুদ্র এবং মদের সমুদ্র; অতঃপর নদী-নালার ব্যবস্থা করা হবে।” [তিরিমিযী, ২৫৭১]
জান্নাতের প্রাসাদ, কক্ষ ও তাঁবুসমূহ
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ وَمَسَٰكِنَ طَيِّبَةٗ فِي جَنَّٰتِ عَدۡنٖۚ ﴾ [التوبة: ٧٢]
“আরও ওয়াদা দিচ্ছেন, উত্তম বাসস্থানের, স্থায়ী জান্নাতসমূহে।” [সূরা আত-তাওবাহ: ৭২]
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ وَهُمۡ فِي ٱلۡغُرُفَٰتِ ءَامِنُونَ ٣٧ ﴾ [سبا: ٣٧]
“আর তারা সুউচ্চ প্রাসাদে নিরাপদে থাকবে।”(সূরা সাবা: ৩৭)
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿أُوْلَٰٓئِكَ يُجۡزَوۡنَ ٱلۡغُرۡفَةَ بِمَا صَبَرُواْ وَيُلَقَّوۡنَ فِيهَا تَحِيَّةٗ وَسَلَٰمًا ٧٥ ﴾ [الفرقان: ٧٤]
“তারাই, যাদেরকে প্রতিদান দেয়া হবে জান্নাতের সুউচ্চ কক্ষ, যেহেতু তারা ছিল ধৈর্যশীল। আর তারা প্রাপ্ত হবে সেখানে অভিবাদন ও সালাম।”(সূরা আল-ফুরকান: ৭৫)
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ لَٰكِنِ ٱلَّذِينَ ٱتَّقَوۡاْ رَبَّهُمۡ لَهُمۡ غُرَفٞ مِّن فَوۡقِهَا غُرَفٞ مَّبۡنِيَّةٞ تَجۡرِي مِن تَحۡتِهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُۖ وَعۡدَ ٱللَّهِ لَا يُخۡلِفُ ٱللَّهُ ٱلۡمِيعَادَ ٢٠ ﴾ [الزمر: ٢٠]
“তবে যারা তাদের রবের তাকওয়া অবলম্বন করে, তাদের জন্য আছে বহু প্রাসাদ যার উপর নির্মিত আরো প্রাসাদ, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত; এটা আল্লাহ্র প্রতিশ্রুতি, আল্লাহ্ প্রতিশ্রুতির বিপরীত করেন না।”(সূরা যুমার: ২০)
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ حُورٞ مَّقۡصُورَٰتٞ فِي ٱلۡخِيَامِ ٧٢ ﴾ [الرحمن: ٧٢]
“তারা হূর, তাঁবুতে সুরক্ষিতা।” (সূরা আর-রাহমান: ৭২)
আবু মূসা আশ’আরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: জান্নাতে মোমিনের জন্য মুক্তার তৈরি তাঁবু থাকবে। এর দৈর্ঘ্য হবে ৬০ মাইল। সেখানে মোমিনদের পরিবার থাকবে। তারা তাদের কাছে আসা-যাওয়া করবে, একে অপরকে দেখতে পারবে না। (বুখারী, ৪৮৭৯; মুসলিম, ১৮০)
তাঁবু দীর্ঘ হওয়ার কারণে সাধারণভাবে একে অপরকে দূরত্বের কারণে দেখতে পাবে না।
আনাস ইবন মালেক থেকে বর্ণিত, তিনি মিরাজের হাদীস বর্ণনা করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বরাত দিয়ে বলেন: জিবরীল আমাকে সিদরাতুল মোনতাহা পর্যন্ত নিয়ে গেলো। এরপর অজ্ঞাত রং দ্বারা চতুর্দিক আবৃত হয়ে গেলো। পরে আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হলো। সেখানে মুক্তার তৈরি তাঁবুসমূহ রয়েছে। এগুলোর মাটি হচ্ছে মেশক।’ (বুখারী, ৩৪৯; মুসলিম, ১৬৩)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: জান্নাতের ইট হলো সোনা ও রূপার, মাটি হলো মেশক, কংকর হলো মুক্তা ও ইয়াকুত, মাটি হলো যাফরান। যে প্রবেশ করবে সে সুখে থাকবে, দুঃখী হবে না, চিরস্থায়ী হবে, মৃত্যু বরণ করবে না, পোশাক পুরাতন হবে না এবং যৌবন শেষ হবে না। [তিরমিযী, ২৫২৬; মুসনাদে আহমাদ ২/৩০৪]
জান্নাতের বৃক্ষ ও বিহঙ্গকুল
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ وَأَصۡحَٰبُ ٱلۡيَمِينِ مَآ أَصۡحَٰبُ ٱلۡيَمِينِ ٢٧ فِي سِدۡرٖ مَّخۡضُودٖ ٢٨ وَطَلۡحٖ مَّنضُودٖ ٢٩ وَظِلّٖ مَّمۡدُودٖ ٣٠ وَمَآءٖ مَّسۡكُوبٖ ٣١ وَفَٰكِهَةٖ كَثِيرَةٖ ٣٢ ﴾ [الواقعة: ٢٧، ٣٢]
“আর ডান দিকের দল, কত ভাগ্যবান ডান দিকের দল! তারা থাকবে এমন উদ্যানে, যাতে আছে কাঁটাহীন কুলগাছ এবং কাঁদি ভরা কলা গাছ; আর সম্প্রসারিত ছায়া; আর সদা প্রবাহমান পানি এবং প্রচুর ফলমূল।”(সূরা আল-ওয়াকি‘আহ্: ২৭ – ৩২)
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ وَلِمَنۡ خَافَ مَقَامَ رَبِّهِۦ جَنَّتَانِ ٤٦ فَبِأَيِّ ءَالَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ ٤٧ ذَوَاتَآ أَفۡنَانٖ ٤٨ ﴾ [الرحمن: ٤٦، ٤٨]
“আর যে তার রবের সম্মুখে উপস্থিত হওয়ার ভয় রাখে, তার জন্য রয়েছে দুটি উদ্যান। কাজেই তোমরা উভয়ে তোমাদের রবের কোন অনুগ্রহে মিথ্যারোপ করবে? উভয়ই বহু শাখা-পল্লববিশিষ্ট।”(সূরা আর-রাহমান: ৪৬ – ৪৮)
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ وَمِن دُونِهِمَا جَنَّتَانِ ٦٢ فَبِأَيِّ ءَالَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ ٦٣ مُدۡهَآمَّتَانِ ٦٤ ﴾ [الرحمن: ٦٢، ٦٤]
“এ উদ্যান দুটি ছাড়া আরো দুটি উদ্যান রয়েছে। কাজেই তোমরা উভয়ে তোমাদের রবের কোন অনুগ্রহে মিথ্যারোপ করবে? ঘন সবুজ এ উদ্যান দু’টি।”(সূরা আর-রাহমান: ৬২ – ৬৪)
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ إِنَّ ٱلۡمُتَّقِينَ فِي ظِلَٰلٖ وَعُيُونٖ ٤١ ﴾ [المرسلات: ٤١]
“নিশ্চয় মুত্তাকীরা থাকবে ছায়ায় ও প্রস্রবণ বহুল স্থানে।”(সূরা আল-মুরসালাত: ৪১)
আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« إن في الجنة شجرة , يسير الراكب في ظلها مائة عام لا يقطعها » . إن شئتم فاقرؤوا : ﴿ وَظِلّٖ مَّمۡدُودٖ ٣٠ وَمَآءٖ مَّسۡكُوبٖ ٣١ ﴾ (رواه البخاري) .
“নিশ্চয়ই জান্নাতের মাঝে এমন একটি বৃক্ষ হবে, যার ছায়ার মাঝে একজন আরোহী একশ বছর পর্যন্ত ভ্রমণ করতে পারবে, তবুও বৃক্ষের ছায়াকে অতিক্রম করতে পারবে না। যদি তোমরা চাও, তাহলে তোমরা পাঠ কর: (আর সম্প্রসারিত ছায়া এবং সদা প্রবাহমান পানি)।”[3]’
অন্য হাদীসে বলা হয়েছে:
«ما في الجنة شجر إلا وساقها من ذهب»
‘‘জান্নাতে এমন কোন বৃক্ষ নেই যার শাখা প্রশাখা স্বর্ণের নয়।’’ (তিরমিযি, ২৫২৫)
জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন: একদিন আমি সালমান ফারেসীর নিকট গেলাম। তিনি আলাপ আলোচনার এক পর্যায়ে ছোট একটি কাঠের টুকরো নিলেন, যা তার দু’ আঙ্গুলের মাঝে থাকার কারণে ভালোভাবে দেখা যাচ্ছিল না। তিনি বললেন: যদি তুমি জান্নাতে এতটুকু কাঠ সংগ্রহ করতে চাও তা পারবে না। আমি বললাম: তাহলে খেজুর গাছও অন্যান্য গাছপালা কোথায় যাবে। (যার কথা কুরআন ও হাদীসে উল্লেখ আছে?) তিনি বললেন: অবশ্য খেজুর ও অন্যান্য গাছপালা সেখানে থাকবে তবে তা কাঠের হবে না। বরং তা শাখা প্রশাখাগুলো মোমি ও স্বর্ণের তৈরী হবে। আর তাতে থাকবে কাঁদি কাঁদি খেজুর। (বাইহাকী; আল-বা‘ছে ওয়ান নুশূর, ১/১৯১; শু‘আবুল ঈমান, ৭৭৯৭; শাইখ আল-আলবানী সহীহুত তারগীবে সেটাকে হাসান বলেছেন)
জান্নাতে শুধু গাছ-পালা, নদী-নালা ও ঝর্ণাধারাই থাকবে না। সেখানে রং বেরং এর নানা প্রজাতির পাখীও থাকবে। তারা সারাক্ষণ কুজন কাকলীতে মুখরিত করে রাখবে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
‘‘জান্নাতে লম্বা ঘাড় বিশিষ্ট উটের ন্যায় পাখীও আছে। যারা সর্বদা জান্নাতের বৃক্ষারাজীর মধ্যে বিচরণ করে বেড়াবে।’’ আবুবকর রাদিয়াল্লাহু আনহু শোনে আরজ করলেন: ‘‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! তারা তো খুব আনন্দময় ও সুখময় জীবন যাপন রত।’’ রাসূলুল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: ‘‘সেগুলো ভক্ষণকারীরা সেখানে আরো উত্তম জীবন যাপন করবে।’’ একথা তিনি তিনবার বললেন। (মুসনাদে আহমদ ৩/২৩৬)
জান্নাতীদের আসবাবপত্র
﴿ وَيُطَافُ عَلَيۡهِم بَِٔانِيَةٖ مِّن فِضَّةٖ وَأَكۡوَابٖ كَانَتۡ قَوَارِيرَا۠ ١٥ قَوَارِيرَاْ مِن فِضَّةٖ قَدَّرُوهَا تَقۡدِيرٗا ١٦ ﴾ [الانسان: ١٥، ١٦]
‘‘তাদের সম্মুখে রৌপ্য নির্মিত পাত্র ও কাঁচের পেয়ালা আবর্তিত করানো হবে। সে কাঁচ যা রৌপ্য জাতীয় হবে এবং সেগুলোকে পরিমাণ মতো ভরতি করে রাখা হবে।’’ (সূরা দাহর: ১৫-১৬)
অন্যত্র বলা হয়েছে:
﴿ يُطَافُ عَلَيۡهِم بِصِحَافٖ مِّن ذَهَبٖ وَأَكۡوَابٖۖ وَفِيهَا مَا تَشۡتَهِيهِ ٱلۡأَنفُسُ وَتَلَذُّ ٱلۡأَعۡيُنُۖ وَأَنتُمۡ فِيهَا خَٰلِدُونَ ٧١ ﴾ [الزخرف: ٧١]
‘‘তাদের সামনে সোনার থালা ও পান পাত্র আবর্তিত হবে এবং মন ভুলানো ও চোখ জুড়ানো জিনিসসমূহ সেখানে বর্তমান থাকবে। তাদেরকে বলা হবে এখন তোমরা চিরদিন এখানে থাকবে।’’ (সূরা যুখরুফ: ৭০)
এখানেও দেখা যাচ্ছে কোথাও স্বর্ণের এবং কোথাও রৌপ্যের পাত্রের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ সেখানে স্বর্ণের অথবা রৌপের পান পাত্র একত্রে অথবা পৃথক পৃথক ব্যবহার করা হবে। তবে রৌপ্য পাত্রের আরেকটি বৈশিষ্ট্যের কথা বলা হয়েছে যে, সে পাত্রগুলো যদিও রৌপ্যের তৈরী হয় কিন্তু কাঁচের মতো স্বচ্ছ দেখা যাবে। যা দেখলে কাঁচের মতোই মনে হবে কিন্তু কাঁচের মতো ভঙ্গুর হবে না। ঠিক তদ্রুপ স্বচ্ছ বালাখানার কথাও হাদীসে উল্লেখ আছে। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«إن في الجنة غر فا يرى ظاهرها من باطنها وباطنها من ظاهرها»
‘‘জান্নাতের মধ্যে এমন বালাখানা আছে (স্বচ্ছতার কারণে) যার ভেতরের অংশ বাইরে থেকে এবং বাইরের অংশ ভেতর থেকে দেখা যায়।’’ (মুসনাদে আহমাদ ২/১৭৩)
«أمشاطهم الذهب —— ومجامرهم الألوة»
‘‘তাদের চিরুনী হবে স্বর্ণের তৈরি — তাদের ধুপদানী সুগন্ধী কাঠ দিয়ে জ্বালানো হবে।’’ (বুখারী, ৩২৪৫; মুসলিম, ২৮৩৪)
সোনা-রূপার জান্নাত
আবু মূসা আশ‘আরী থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “দুটো জান্নাত রূপার এবং পানপাত্র ও আসবাপত্রও রূপার। আর দুটো জান্নাত সোনার এবং পানপাত্র ও আসবাবপত্র সোনার। জান্নাতে আদনে তাদের ও আল্লাহর মধ্যে দৃষ্টির আড়াল হলো আল্লাহর অহংকারের চাদর।” (বুখারী, ৪৮৭৮; মুসলিম, ১৮০)।
জান্নাতের ইটগুলো সোনা ও রূপার, সিমেন্ট হচ্ছে মেশক, কংকর হচ্ছে মণি-মুক্তা ও ইয়াকুত পাথর এবং মাটি হচ্ছে যাফরান।
জান্নাতের বাজারের বর্ণনা
আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “জান্নাতে একজন আওয়াজ দানকারী আওয়াজ দিয়ে বলবে: তোমরা এখন থেকে চিরসু্স্থ, কখনও অসুস্থ হবে না; তোমরা এখন থেকে চিরদিন জীবিত, আর মৃত্যু বরণ করবে না, তোমরা এখন থেকে চিরযুবক, আর কোনদিন বৃদ্ধ হবে না, তোমরা এখন থেকে চিরস্থায়ী নিয়ামত ও সুখ-শান্তিতে থাকবে, কখনও দুঃখ-বেদনার সম্মুখীন হবে না।” একথাই আল্লাহ নিম্নোক্ত আয়াতে বলেন: তাদেরকে ডেকে বলা হবে, তোমাদের আমলের বিনিময়ে তোমরা এ জান্নাত লাভ করেছো।’ (মুসলিম, ২৮৩৭)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন:
‘‘জান্নাতে একটি বাজার আছে। সেখানে জান্নাতীগণ প্রতি শুক্রবার যাবে। সেখানে উত্তর দিকে হতে মৃদুমন্দ বাতাস প্রবাহিত হয়ে জান্নাতীদের মুখমন্ডল ও পরিধের বস্ত্রাদি সুগন্ধিতে ভরিয়ে দেবে। আর তাদের সৌন্দর্য ও রূপ লাবণ্য পর্যায়ক্রমে বাড়তে থাকবে। সুতরাং তারা অত্যন্ত সুন্দর ও লাবণ্যময় হয়ে নিজেদের স্ত্রী নিকট ফিরে আসবে। স্ত্রীগণ তাদেরকে দেখে বলবে, আল্লাহর শপথ‘‘ তোমার যে সৌন্দর্য্য ও লাবণ্যের অধিকারী হয়েছো। আবার পুরুষগণও বলবে, আল্লাহর কসম! আমরা তোমাদের কাছ হতে যাবার পর তোমাদের রূপলাবণ্য ও সৌন্দর্যও অনেক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। (মুসলিম, ২৮৩৩)
জান্নাতবাসীদের খাদ্য ও পানীয়
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ وَفَٰكِهَةٖ مِّمَّا يَتَخَيَّرُونَ ٢٠ وَلَحۡمِ طَيۡرٖ مِّمَّا يَشۡتَهُونَ ٢١ ﴾ [الواقعة: ٢٠، ٢١]
“আর (ঘোরাফেরা করবে) তাদের পছন্দমত ফলমূল নিয়ে, আর তাদের ঈপ্সিত পাখীর গোশ্ত নিয়ে। [সূরা আল-ওয়াকি‘আহ: ২০-২১]
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ هَٰذَا ذِكۡرٞۚ وَإِنَّ لِلۡمُتَّقِينَ لَحُسۡنَ مََٔابٖ ٤٩ جَنَّٰتِ عَدۡنٖ مُّفَتَّحَةٗ لَّهُمُ ٱلۡأَبۡوَٰبُ ٥٠ مُتَّكِِٔينَ فِيهَا يَدۡعُونَ فِيهَا بِفَٰكِهَةٖ كَثِيرَةٖ وَشَرَابٖ ٥١ ﴾ [ص: ٤٩، ٥١]
“এ এক স্মরণ, আর মুত্তাকীদের জন্য রয়েছে উত্তম আবাস, জান্নাত, যার দরজাসমূহ তাদের জন্য উন্মুক্ত। সেখানে তারা আসীন হবে হেলান দিয়ে, সেখানে তারা বহুবিধ ফলমূল ও পানীয় চাইবে।” [সূরা সদ, ৪৯-৫১]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ إِنَّ ٱلۡأَبۡرَارَ يَشۡرَبُونَ مِن كَأۡسٖ كَانَ مِزَاجُهَا كَافُورًا ٥ عَيۡنٗا يَشۡرَبُ بِهَا عِبَادُ ٱللَّهِ يُفَجِّرُونَهَا تَفۡجِيرٗا ٦ ﴾ [الانسان: ٥، ٦]
“নিশ্চয় সৎকর্মশীলেরা পান করবে এমন পূর্ণপাত্র-পানীয় থেকে যার মিশ্রণ হবে কাফূর — এমন একটি প্রস্রবণ যা থেকে আল্লাহ্র বান্দাগণ পান করবে, তারা এ প্রস্রবণকে যথেচ্ছা প্রবাহিত করবে।” [সূরা আল-ইনসান, ৫-৬]
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা আরও বলেন:
﴿مَنۡ عَمِلَ سَيِّئَةٗ فَلَا يُجۡزَىٰٓ إِلَّا مِثۡلَهَاۖ وَمَنۡ عَمِلَ صَٰلِحٗا مِّن ذَكَرٍ أَوۡ أُنثَىٰ وَهُوَ مُؤۡمِنٞ فَأُوْلَٰٓئِكَ يَدۡخُلُونَ ٱلۡجَنَّةَ يُرۡزَقُونَ فِيهَا بِغَيۡرِ حِسَابٖ ٤٠﴾ [غافر: ٤٠]
“কেউ মন্দ কাজ করলে সে শুধু তার কাজের অনুরূপ শাস্তিই প্রাপ্ত হবে। আর যে পুরুষ কিংবা নারী মুমিন হয়ে সৎকাজ করবে তবে তারা প্রবেশ করবে জান্নাতে, সেখানে তাদেরকে দেয়া হবে অগণিত রিযিক।”(সূরা গাফের: ৪০)
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ يُطَافُ عَلَيۡهِم بِصِحَافٖ مِّن ذَهَبٖ وَأَكۡوَابٖۖ وَفِيهَا مَا تَشۡتَهِيهِ ٱلۡأَنفُسُ وَتَلَذُّ ٱلۡأَعۡيُنُۖ وَأَنتُمۡ فِيهَا خَٰلِدُونَ ٧١ ﴾ [الزخرف: ٧١]
“স্বর্ণের থালা ও পানপাত্র নিয়ে তাদেরকে প্রদক্ষিণ করা হবে; সেখানে মন যা চায় এবং যাতে নয়ন তৃপ্ত হয় তাই থাকবে। আর সেখানে তোমরা স্থায়ী হবে।” (সূরা যুখরুফ: ৭১)
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿إِنَّ ٱلۡمُتَّقِينَ فِي جَنَّٰتٖ وَنَعِيمٖ ١٧ فَٰكِهِينَ بِمَآ ءَاتَىٰهُمۡ رَبُّهُمۡ وَوَقَىٰهُمۡ رَبُّهُمۡ عَذَابَ ٱلۡجَحِيمِ ١٨ كُلُواْ وَٱشۡرَبُواْ هَنِيَٓٔۢا بِمَا كُنتُمۡ تَعۡمَلُونَ ١٩﴾ [الطور: ١٧، ١٩]
‘‘মুত্তাকী লোকেরা সেখানে বাগানসমূহে ও নিয়ামত সম্ভারের মধ্যে অবস্থান করবে। মজা ও স্বাদ আস্বাদন করতে থাকবে সে সব জিনিসের যা তাদের রব তাদেরকে দেবেন। আর তাদের রব তাদেরকে জাহান্নামের আজাব হতে রক্ষা করবেন। (তাদেরকে বলা হবে) খাও এবং পান কর মজা ও তৃপ্তির সাথে। এটা তো তোমাদের সে সব কাজের প্রতিফলন যা তোমরা (পৃথিবীতে) করছিলে।’’ (সূরা তুর: ১৭-১৯)
অন্যত্র বলা হয়েছে:
﴿ فَهُوَ فِي عِيشَةٖ رَّاضِيَةٖ ٢١ فِي جَنَّةٍ عَالِيَةٖ ٢٢ قُطُوفُهَا دَانِيَةٞ ٢٣ كُلُواْ وَٱشۡرَبُواْ هَنِيَٓٔۢا بِمَآ أَسۡلَفۡتُمۡ فِي ٱلۡأَيَّامِ ٱلۡخَالِيَةِ ٢٤ ﴾ [الحاقة: ٢١، ٢٤]
‘‘সেখানে তারা বাঞ্ছিত সুখভোগ লিপ্ত থাকবে। (তাদের অবস্থান হবে) জান্নাতের উচ্চতম স্থানে। যা ফলসমূহের গুচ্ছ ঝুলতে থাকবে। (বলা হবে) খাও এবং পান করো, তৃপ্তি সহকারে। সে সব আমলের বিনিময়ে যা তোমরা অতীত দিনে করেছো। ’’ (সূরা আল হাক্কাহ: ২১-২৪)
আরো বলা হয়েছে:
﴿ ۖ كُلَّمَا رُزِقُواْ مِنۡهَا مِن ثَمَرَةٖ رِّزۡقٗا قَالُواْ هَٰذَا ٱلَّذِي رُزِقۡنَا مِن قَبۡلُۖ وَأُتُواْ بِهِۦ مُتَشَٰبِهٗاۖ ﴾ [البقرة: ٢٥]
‘‘জান্নাতের ফল দেখতে পৃথিবীর ফলের মতোই হবে। যখন কোন ফল তাদের দেয়া হবে খাবার জন্য, তারা বলবে: এ ধরনের ফল তো আমরা পৃথিবীতেই খেয়েছি।’’ (সূরা বাকারা: ২৫)
ফলগুলো যদিও পৃথিবীর মতো মনে হবে কিন্তু স্বাদ ও গন্ধে সম্পূর্ণ উন্নত ও ভিন্ন ধরনের হবে। প্রতিবার খাওয়ার সময়ই তার স্বাদ গন্ধ শেনৈ: শেনৈ: বৃদ্ধি পাবে।
এখানে প্রশ্ন হতে পারে যে, পৃথিবীতে দুঃখ আছে বলেই সুখকে আমরা উপভোগ করতে পারি। কিন্তু জান্নাতে যদি দুঃখ না থাকে তবে শুধু সুখ উপভোগ করা যাবে কি? বা সুখ ভোগ করতে করতে একঘেয়েমী লাগবে না?
এ দুটি উত্তর হতে পারে
প্রথমত: জান্নাতীগণ জাহান্নামীদের অবস্থা অবলোকন করতে পারবে এবং কথপোকথনও হবে। তাই তাদের সুখকে জাহান্নামীদের সাথে তুলনা করতে কষ্ট হবে না এবং সে সুখে এক ঘেয়েমিও আসবে না।
দ্বিতীয়ত: দুঃখ না থাকলেও সুখের মাত্রা স্থিতিশীল হবে না, পর্যায়ক্রমে বৃদ্ধি পেতে থাকবে। কাজেই সে সুখভোগ কখনো ক্লান্তি আনে না বরং সুখভোগের অনুভুতি তীব্র হতে তীব্রতর হবে।
জান্নাতীদের প্রস্রাব পায়খানার প্রয়োজন হবে না
জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেছেন:
«يأكل أهل الجنة فيها ويشربون لا يتغوطون ولا يمتخطون ولا يبو لون ولكن طعامهم ذلك جشاء كرشح المسك يلهمون التسبيح والتكبير كما يلهمون النفس»
‘‘জান্নাতীগণ জান্নাতের খাবার খাবে এবং পানীয় বস্তু পান করবে কিন্তু সেখানে তাদের পায়খানা প্রস্রাবের প্রয়োজন হবে না, এমনকি তাদের নাকে ময়লাও জমবে না। ঢেকুরের মাধ্যমে তাদের পেটের খাদ্র্যদ্রব্য হজম হয়ে মিশকের সুগন্ধির মতো বেরিয়ে যাবে। স্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণের মতোই তারা তাসবীহ তাকবীরে অভ্যস্ত হয়ে যাবে।’’ (মুসলিম, ২৮৩৫)
অন্যত্র বলা হয়েছে:
«لايبولون ولا يتغطون ولا يتفلون ولا يمتخطون»
‘‘তাদেরকে পেশাব পায়খানা করতে হবে না, মুখে থুথু আসবে না, আর নাকে কোনরূপ ময়লা জমবে না।’’ (বুখারী, ৩৩২৭; মুসলিম, ২৮৩৪)
জান্নাতবাসীদের পোষাক-পরিচ্ছদ
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿يُحَلَّوۡنَ فِيهَا مِنۡ أَسَاوِرَ مِن ذَهَبٖ وَلُؤۡلُؤٗاۖ وَلِبَاسُهُمۡ فِيهَا حَرِيرٞ ٢٣ ﴾ [الحج: ٢٣]
“সেখানে তাদেরকে অলংকৃত করা হবে সোনার কাঁকন ও মুক্তা দ্বারা এবং সেখানে তাদের পোষাক-পরিচ্ছদ হবে রেশমের।”(সূরা আল-হাজ্জ: ২৩)
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ يُحَلَّوۡنَ فِيهَا مِنۡ أَسَاوِرَ مِن ذَهَبٖ وَيَلۡبَسُونَ ثِيَابًا خُضۡرٗا مِّن سُندُسٖ وَإِسۡتَبۡرَقٖ مُّتَّكِِٔينَ فِيهَا عَلَى ٱلۡأَرَآئِكِۚ نِعۡمَ ٱلثَّوَابُ وحَسُنَتۡ مُرۡتَفَقٗا ٣١ ﴾ [الكهف: ٣١]
“সেখানে তাদেরকে স্বর্ণ কংকনে অলংকৃত করা হবে, তারা পরবে সূক্ষ্ম ও পুরু রেশমের সবুজ বস্ত্র, আর তারা সেখানে থাকবে হেলান দিয়ে সুসজ্জিত আসনে; কত সুন্দর পুরস্কার ও উত্তম বিশ্রামস্থল!” (সূরা আল-কাহাফ: ৩১)
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
عَٰلِيَهُمۡ ثِيَابُ سُندُسٍ خُضۡرٞ وَإِسۡتَبۡرَقٞۖ وَحُلُّوٓاْ أَسَاوِرَ مِن فِضَّةٖ وَسَقَىٰهُمۡ رَبُّهُمۡ شَرَابٗا طَهُورًا ٢١ ﴾ [الانسان: ٢١]
“তাদের আবরণ হবে সূক্ষ্ম সবুজ রেশম ও স্থূল রেশম, আর তারা অলংকৃত হবে রৌপ্য নির্মিত কংকনে, আর তাদের রব তাদেরকে পান করাবেন পবিত্র পানীয়।” (সূরা আল-ইনসান: ২১)
সূরা আর রাহমানে বলা হয়েছে:
﴿ مُتَّكِِٔينَ عَلَىٰ رَفۡرَفٍ خُضۡرٖ وَعَبۡقَرِيٍّ حِسَانٖ ٧٦ ﴾ [الرحمن: ٧٦]
‘‘তারা সবুজ গালিচা ও সুন্দর সুরঞ্জিত শয্যায় এলায়িতভাবে অবস্থান করবে।’’ (সূরা আর রহমান: ৭৬)
উপরোক্ত আয়াতসমূহের আলোকে বুঝা যায় যে, উক্ত পোশাক এবং অলংকার পুরুষ ও মহিলা উভয়কেই পরানো হবে অলংকার সাধারণত: মহিলাগণই পরে থাকে। কিন্তু পুরুষদেরকে পরানো হবে, কথাটি আমাদের নিকট একটু খটকা লাগে। তবে গভীরভাবে চিন্তা করলেই বুঝা যায় যে, প্রাচীনকালে এমন কি কুরআন যখন অবতীর্ণ হয়েছে তখনো রাজা-বাদশাগণ, সমাজপতি ও সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিবর্গ হাতে, কানে, গলায় পোষাক পরিচ্ছদের অলংকার ও মুকুট ব্যবহার করতেন। এককালে আমাদের দেশের রাজা বাদশা ও জমিদারগণ বিভিন্ন প্রকার অলংকার পরতেন সত্যি করা বলতে কি, তখন পুরুষদের অলংকারদি ছিলো কৌলিন্যের প্রতীক। এ কথাটি সূরা যুখরুফের একটি আয়াতেও প্রমাণিত হয়। যখন মূসা (আলাইহিস সালাম) জাকজমকহীন পোষাকে শুধুমাত্র একটি লাঠি হাতে ফিরআউনের দরবারে গেলেন, ফিরআউনকে দাওয়াত দেয়ার জন্য, তখন সে সভাসদকে লক্ষ্য করে বলে উঠলো:
‘‘এ যদি আসমান জমিনের বাদশাহর নিকট হতে প্রেরিতই হতো তবে তাকে স্বর্ণের কংকন পরিয়ে দেয়া হলো না কেনো? কিংবা ফেরেশতাদের একটা বাহিনীই না হয় তার আর্দালী হয়ে আসতো।’’ (সূরা যখরুফ: ৫৩)
কোথাও স্বর্ণের কংকন আবার কোথাও রৌপের কংকন পরানোর কথা বলা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে কোনো কোনো আলেম বলেন:
‘‘এ সব কটি আয়াত একত্র করে পাঠ করলে তিনটি অবস্থা সম্ভব বলে মনে হয়।
প্রথমত: তারা কখনো স্বর্ণের এবং কখনো রৌপের কংকন পরতে চাবে, আর উভয় জিনিসই তাদের ইচ্ছানুযায়ী থাকবে।
দ্বিতীয়ত: স্বর্ণ ও রৌপ্যের কংকন তারা একসঙ্গে পরবে। কেননা, তাতে সৌন্দর্য্যের মাত্রা অনেকগুণ বৃদ্ধি পেয়ে যাবে।
তৃতীয়ত: যার ইচ্ছা হবে স্বর্ণের কংকন পরবে এবং যার ইচ্ছা হবে রৌপ্যের কংকন পরবে।”
জান্নাতের বিছানা
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ فِيهَا سُرُرٞ مَّرۡفُوعَةٞ ١٣ وَأَكۡوَابٞ مَّوۡضُوعَةٞ ١٤ وَنَمَارِقُ مَصۡفُوفَةٞ ١٥ وَزَرَابِيُّ مَبۡثُوثَةٌ ١٦ ﴾ [الغاشية: ١٣، ١٦]
“সেখানে থাকবে উন্নত শয্যাসমূহ, আর প্রস্তুত থাকবে পানপাত্র, সারি সারি উপাধান এবং বিছানা গালিচা।” (সূরা আল-গাশিয়া: ১৩ – ১৬)
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ مُتَّكِِٔينَ عَلَىٰ فُرُشِۢ بَطَآئِنُهَا مِنۡ إِسۡتَبۡرَقٖۚ وَجَنَى ٱلۡجَنَّتَيۡنِ دَانٖ ٥٤ ﴾ [الرحمن: ٥٤]
“সেখানে তারা হেলান দিয়ে বসবে এমন ফরাশে যার অভ্যন্তরভাগ হবে পুরু রেশমের। আর দুই উদ্যানের ফল হবে কাছাকাছি।” (সূরা আর-রাহমান: ৫৪)
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ مُتَّكِِٔينَ عَلَىٰ رَفۡرَفٍ خُضۡرٖ وَعَبۡقَرِيٍّ حِسَانٖ ٧٦ ﴾ [الرحمن: ٧٦]
“তারা হেলান দিয়ে বসবে সবুজ তাকিয়ায় ও সুন্দর গালিচার উপরে।” (সূরা আর-রাহমান: ৭৬)
জান্নাতবাসীদের অলঙ্কার
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ يُحَلَّوۡنَ فِيهَا مِنۡ أَسَاوِرَ مِن ذَهَبٖ وَلُؤۡلُؤٗاۖ وَلِبَاسُهُمۡ فِيهَا حَرِيرٞ ٢٣ ﴾ [الحج: ٢٣]
“সেখানে তাদেরকে অলংকৃত করা হবে সোনার কাঁকন ও মুক্তা দ্বারা এবং সেখানে তাদের পোষাক-পরিচ্ছদ হবে রেশমের।”(সূরা আল-হাজ্জ: ২৩)
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ عَٰلِيَهُمۡ ثِيَابُ سُندُسٍ خُضۡرٞ وَإِسۡتَبۡرَقٞۖ وَحُلُّوٓاْ أَسَاوِرَ مِن فِضَّةٖ وَسَقَىٰهُمۡ رَبُّهُمۡ شَرَابٗا طَهُورًا ٢١ ﴾ [الانسان: ٢١]
“তাদের আবরণ হবে সূক্ষ্ম সবুজ রেশম ও স্থূল রেশম, আর তারা অলংকৃত হবে রৌপ্য নির্মিত কংকনে, আর তাদের রব তাদেরকে পান করাবেন পবিত্র পানীয়।”(সূরা আল-ইনসান: ২১)
জান্নাতীদের সৌন্দর্য ও সম্প্রীতি
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন:
«ان اول زمرة يدخلون الجنة على صورة القمر ليلة البدر ثم الذين يلو نهم كا شد كوكب درى فى السماء اضاءة قلو بهم على قلب رجل واحد لا اختلاف بينهم ولاتباغض»
‘‘যে দলটি সর্বপ্রথম জান্নাতে প্রবেশ করবে তাদের চেহারা পূর্ণিমার চাঁদের মতো সুন্দর ও উজ্জল হবে। তাদের পর যারা প্রবেশ করবে তাদের চেহারা হবে আকাশের সর্বাধিক আলোকউজ্জল তারকার মতো জ্যোর্তিময়। আর সকলের অন্তকরণ একটি অন্তকরণ সাদৃশ হবে। তাদের মধ্যে পারস্পারিক মতভেদ বা বৈপরিত্য থাকবে না। (বুখারী, ৩২৪৬; মুসলিম, ২৮৩৪)
আল্লাহ রাববুল আলামীন ইরশাদ করেছেন:
﴿ وَنَزَعۡنَا مَا فِي صُدُورِهِم مِّنۡ غِلٍّ إِخۡوَٰنًا عَلَىٰ سُرُرٖ مُّتَقَٰبِلِينَ ٤٧ ﴾ [الحجر: ٤٧]
‘‘আমি তাদের অন্তর থেকে ঈর্ষা ও বৈরিতা দূর করে দেবো। তারা ভাইয়ের মতো পরস্পর মুখোমুখি হয়ে আসন সমূহে সমাসীন থাকবে।’’ [সূরা আল-হিজর: ৪৭]
জান্নাতীগণ জান্নাতী বাপদাদা, স্ত্রী ও সন্তানসহ একান্নবর্তী পরিবারের ন্যায় বসবাস করবে
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿ وَٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَٱتَّبَعَتۡهُمۡ ذُرِّيَّتُهُم بِإِيمَٰنٍ أَلۡحَقۡنَا بِهِمۡ ذُرِّيَّتَهُمۡ وَمَآ أَلَتۡنَٰهُم مِّنۡ عَمَلِهِم مِّن شَيۡءٖۚ كُلُّ ٱمۡرِيِٕۢ بِمَا كَسَبَ رَهِينٞ ٢١ ﴾ [الطور: ٢١]
‘‘যারা ঈমান এনেছে এবং তাদের সন্তানও ঈমানের কোন মাত্রায় তাদের পদাংক অনুসরণ করেছে, তাদের সে সন্তানদেরকে আমরা (জান্নাতে) তাদের সাথে একত্রিত করবো, আর তাদের আমলে কোন কম করা হবে না।’’ (সূরা তুর: ২১)
সূরা রাদে বলা হয়েছে:
﴿جَنَّٰتُ عَدۡنٖ يَدۡخُلُونَهَا وَمَن صَلَحَ مِنۡ ءَابَآئِهِمۡ وَأَزۡوَٰجِهِمۡ وَذُرِّيَّٰتِهِمۡۖ وَٱلۡمَلَٰٓئِكَةُ يَدۡخُلُونَ عَلَيۡهِم مِّن كُلِّ بَابٖ ٢٣ ﴾ [الرعد: ٢٣]
‘‘তারাতো চিরন্তন জান্নাতে প্রবেশ করবেই, তাদের সাথে তাঁদের বাপ-দাদা, তাদের স্ত্রী এবং তাদের সন্তানদের মধ্যে যারা সৎ ও নেককার তারাও তাদের সাথে সেখানে (জান্নাতে) যাবে। ফেরেশতাগণ চারদিক হতে তাদেরকে সম্বর্ধনা দিতে আসবে এবং বলবে তোমাদের প্রতি শান্তি।’’(সূরা রা‘দ: ২৩)
এখানে উল্লেখ্য যে, যে সন্তান অপ্রাপ্ত বয়সে মৃত্যুবরণ করে তাদের কথা বলা হয় নি, কেননা তাদের ব্যাপারে তো কুফুর, ঈমান, আল্লাহর আনুগত্য ও নাফরমানীর প্রশ্নই উঠে না। সহীহ হাদীসে বর্ণিত আছে যে, ঈমানদের সন্তান-সন্তুতি এমনিই জান্নাতে যাবে এবং মা বাপের সন্তুষ্টির জন্য তাদের সাথে একত্রিত করে দেয়া হবে।
জান্নাতে চিরস্থায়ীভাবে অবস্থান
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ إِنَّ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَعَمِلُواْ ٱلصَّٰلِحَٰتِ كَانَتۡ لَهُمۡ جَنَّٰتُ ٱلۡفِرۡدَوۡسِ نُزُلًا ١٠٧ خَٰلِدِينَ فِيهَا لَا يَبۡغُونَ عَنۡهَا حِوَلٗا ١٠٨ ﴾ [الكهف: ١٠٧، ١٠٨]
“নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে তাদের আতিথেয়তার জন্য রয়েছে জান্নাতুল ফিরদাউস। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে, সেখান থেকে তারা স্থানান্তরিত হতে চাইবে না।”( সূরা আল-কাহাফ: ১০৭ – ১০৮)
রবের সামনে দণ্ডায়মানে ভীত ব্যক্তির জন্য দু’টি জান্নাত
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ وَلِمَنۡ خَافَ مَقَامَ رَبِّهِۦ جَنَّتَانِ ٤٦ فَبِأَيِّ ءَالَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ ٤٧ ذَوَاتَآ أَفۡنَانٖ ٤٨ فَبِأَيِّ ءَالَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ ٤٩ فِيهِمَا عَيۡنَانِ تَجۡرِيَانِ ٥٠ فَبِأَيِّ ءَالَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ ٥١ فِيهِمَا مِن كُلِّ فَٰكِهَةٖ زَوۡجَانِ ٥٢ فَبِأَيِّ ءَالَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ ٥٣ ﴾ [الرحمن: ٤٦، ٥٣]
“আর যে তার রবের সম্মুখে উপস্থিত হওয়ার ভয় রাখে, তার জন্য রয়েছে দুটি উদ্যান। কাজেই তোমরা উভয়ে তোমাদের রবের কোন্ অনুগ্রহে মিথ্যারোপ করবে? উভয়ই বহু শাখা-পল্লববিশিষ্ট। কাজেই তোমরা উভয়ে তোমাদের রবের কোন অনুগ্রহে মিথ্যারোপ করবে? উভয় উদ্যানে রয়েছে প্রবাহমান দুই প্রস্রবণ। কাজেই তোমরা উভয়ে তোমাদের রবের কোন অনুগ্রহে মিথ্যারোপ করবে? উভয় উদ্যানে রয়েছে প্রত্যেক ফল দুই দুই প্রকার। কাজেই তোমরা উভয়ে তোমাদের রবের কোন অনুগ্রহে মিথ্যারোপ করবে?”(সূরা আর-রাহমান: ৪৬ – ৫৩)
জান্নাতীগণ সর্বাধিক বড় নিয়ামত আল্লাহর দর্শন লাভ করবে
আল্লাহর দর্শনের ব্যাপারে আল-কুরআনের মাত্র দু’জায়গায় আলোচনা করা হয়েছে। সূরা আল কিয়ামাহ এবং সূরা আল-মুতাফফিফীনে।
আল্লাহ বলেন:
﴿ وُجُوهٞ يَوۡمَئِذٖ نَّاضِرَةٌ ٢٢ إِلَىٰ رَبِّهَا نَاظِرَةٞ ٢٣ ﴾ [القيامة: ٢٢، ٢٣]
“সেদিন অনেক মুখমন্ডল উজ্জ্বল হবে। তারা তাদের রবের প্রতি তাকিয়ে থাকবে।” (সূরা কিয়ামাহ: ২২-২৩)
অন্যত্র বলা হয়েছে:
﴿ كَلَّآ إِنَّهُمۡ عَن رَّبِّهِمۡ يَوۡمَئِذٖ لَّمَحۡجُوبُونَ ١٥ ﴾ [المطففين: ١٥]
‘‘কখনই নয়। নিঃসন্দেহে সেদিন এ লোকদেরকে তাদের রব এর দর্শন হতে বঞ্চিত রাখা হবে।’’ (সূরা মুতাফফিফীন: ১৫)
নবী করীম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে, “আল্লাহর কসম, জান্নাতীদের জন্য আল্লাহর দর্শন ব্যতিরেকে অধিক প্রিয় ও পছন্দনীয় আর কিছু হবে না।” (মুসলিম, ১৮১; তিরমিযী, ২৫৫২)
অন্যত্র বলা হয়েছে:
«إِنَّ اللَّهَ تَبَارَكَ وَتَعَالَى يَقُولُ لِأَهْلِ الجَنَّةِ: يَا أَهْلَ الجَنَّةِ؟ فَيَقُولُونَ: لَبَّيْكَ رَبَّنَا وَسَعْدَيْكَ، فَيَقُولُ: هَلْ رَضِيتُمْ؟ فَيَقُولُونَ: وَمَا لَنَا لاَ نَرْضَى وَقَدْ أَعْطَيْتَنَا مَا لَمْ تُعْطِ أَحَدًا مِنْ خَلْقِكَ، فَيَقُولُ: أَنَا أُعْطِيكُمْ أَفْضَلَ مِنْ ذَلِكَ، قَالُوا: يَا رَبِّ، وَأَيُّ شَيْءٍ أَفْضَلُ مِنْ ذَلِكَ؟ فَيَقُولُ: أُحِلُّ عَلَيْكُمْ رِضْوَانِي، فَلاَ أَسْخَطُ عَلَيْكُمْ بَعْدَهُ أَبَدًا»
“মহান ও পরাক্রমশালী আল্লাহ জান্নাতবাসীদের বলবেন, হে জান্নাত বাসীগণ! তারা বলবে হে আমাদের প্রভূ, আমরা উপস্থিত। সমস্ত মঙ্গল ও কল্যাণ আপনার হাতে। (কি আদেশ বলুন!) আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে জিজ্ঞাসা করবেন, তোমরা কি তোমাদের আমলের প্রতিদান পেয়ে সন্তুষ্ট হয়েছ? তারা (জান্নাতীগণ) জবাব দিবে-হে আমাদের রব, আপনি আমাদেরকে এমন সব নেয়ামত দিয়েছেন যা অন্য কাউকে দেননি। তখন আমরা সন্তুষ্ট হবো না কেনো? তখন আল্লাহ বলবেন আমি কি তোমাদেরকে এর চেয়েও অধিক উত্তম ও উন্নত জিনিস দান করবো না? তারা বলবে এর চেয়ে অধিক ও উত্তম বস্তু আর কি হতে পারে? তখন আল্লাহ বলবেন আমি চিরকাল তোমাদের উপর সন্তুষ্ট থাকবো। কোনদিন আর অসন্তুষ্ট হবো না। (বুখারী, ৬৫৪৯; মুসলিম, ২৮২৯)
অন্য হাদীসে আছে এ কথা শুনে জান্নাতীগণ তাদের সমস্ত নেয়ামতের কথা ভুলে যাবে। কেননা এ সুসংবাদ-ই হচ্ছে তাদের কাছে সবচেয়ে বড়ো নেয়ামত।
সোহাইব ইবন সেনান আর-রূমী থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«إِذَا دَخَلَ أَهْلُ الْجَنَّةِ الْجَنَّةَ، قَالَ: يَقُولُ اللهُ تَبَارَكَ وَتَعَالَى: تُرِيدُونَ شَيْئًا أَزِيدُكُمْ؟ فَيَقُولُونَ: أَلَمْ تُبَيِّضْ وُجُوهَنَا؟ أَلَمْ تُدْخِلْنَا الْجَنَّةَ، وَتُنَجِّنَا مِنَ النَّارِ؟ قَالَ: فَيَكْشِفُ الْحِجَابَ، فَمَا أُعْطُوا شَيْئًا أَحَبَّ إِلَيْهِمْ مِنَ النَّظَرِ إِلَى رَبِّهِمْ عَزَّ وَجَلَّ»
জান্নাতীরা জান্নাতে প্রবেশের পর আল্লাহ তাদেরকে জিজ্ঞেস করবেন, তোমরা কি আরো কিছু চাও, তাহলে আমি তা বাড়িয়ে দেবো? তারা উত্তরে বলবে, আপনি কি আমাদের চেহারা উজ্জ্বল করেন নি, আমাদেরকে কি জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করাননি? এরপর আল্লাহ নিজের নূরের পর্দা খুলে ফেলবেন। আল্লাহর অতিশয় সুন্দর সত্তার প্রতি দৃষ্টি দান অপেক্ষা তাদেরকে জান্নাতের আর কোন উত্তম নিয়ামত দেয়া হয় নি। (মুসলিম, ১৮১)
জান্নাত চাইতে হবে আল্লাহর কাছে
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা যখন আল্লাহর কাছে জান্নাত চাইবে তখন জান্নাতুল ফেরদৌস চাইবে। সেটাই মধ্যম ও সর্বোচ্চ জান্নাত।
জান্নাতীদেরকে অসংখ্য ও অগণিত নিয়ামত দেয়া হবে। আল্লাহ এক সাথে অনেক নিয়ামতের উল্লেখ করেছেন নিম্নোক্ত আয়াতে:
﴿وَجَزَىٰهُم بِمَا صَبَرُواْ جَنَّةٗ وَحَرِيرٗا ١٢ مُّتَّكِِٔينَ فِيهَا عَلَى ٱلۡأَرَآئِكِۖ لَا يَرَوۡنَ فِيهَا شَمۡسٗا وَلَا زَمۡهَرِيرٗا ١٣ وَدَانِيَةً عَلَيۡهِمۡ ظِلَٰلُهَا وَذُلِّلَتۡ قُطُوفُهَا تَذۡلِيلٗا ١٤ وَيُطَافُ عَلَيۡهِم بَِٔانِيَةٖ مِّن فِضَّةٖ وَأَكۡوَابٖ كَانَتۡ قَوَارِيرَا۠ ١٥ قَوَارِيرَاْ مِن فِضَّةٖ قَدَّرُوهَا تَقۡدِيرٗا ١٦ وَيُسۡقَوۡنَ فِيهَا كَأۡسٗا كَانَ مِزَاجُهَا زَنجَبِيلًا ١٧ عَيۡنٗا فِيهَا تُسَمَّىٰ سَلۡسَبِيلٗا ١٨ ۞وَيَطُوفُ عَلَيۡهِمۡ وِلۡدَٰنٞ مُّخَلَّدُونَ إِذَا رَأَيۡتَهُمۡ حَسِبۡتَهُمۡ لُؤۡلُؤٗا مَّنثُورٗا ١٩ وَإِذَا رَأَيۡتَ ثَمَّ رَأَيۡتَ نَعِيمٗا وَمُلۡكٗا كَبِيرًا ٢٠ عَٰلِيَهُمۡ ثِيَابُ سُندُسٍ خُضۡرٞ وَإِسۡتَبۡرَقٞۖ وَحُلُّوٓاْ أَسَاوِرَ مِن فِضَّةٖ وَسَقَىٰهُمۡ رَبُّهُمۡ شَرَابٗا طَهُورًا ٢١ إِنَّ هَٰذَا كَانَ لَكُمۡ جَزَآءٗ وَكَانَ سَعۡيُكُم مَّشۡكُورًا ٢٢ ﴾ [الانسان: ١٢، ٢٢]
“এবং তাদের সবর ও ধৈর্যের বিনিময়ে তাদেরকে দেবেন জান্নাত ও রেশমী পোশাক-আশাক। তারা সেখানে সিংহাসনে হেলান দিয়ে বসবে। সেখানে রোদের তাপ ও শীতের ঠান্ডা অনুভব করবে না। আর গাছের ছায়া তাদের উপর ঝুঁকে থাকবে এবং ফলসমূহ তাদের আয়ত্বে রাখা হবে। তাদেরকে খাদ্য ও পানীয় পরিবেশন করা হবে রূপার পাত্রে এবং স্ফুটিকের মতো পানপাত্রে। পরিবেশনকারীরা তা পরিমাণ করে পূর্ণ করবে। তাদেরকে সেখানে পান করানো হবে, ‘যানজাবীল’ মিশ্রিত পানপাত্র। এটা জান্নাতে অবস্থিত ‘সালসাবীল’ নামক একটি ঝর্ণা। আর তাদের কাছে আনাগোনা করবে চির কিশোরগণ। আপনি তাদেরকে দেখে মনে করবেন যেন বিক্ষিপ্ত মণি-মুক্তা। আপনি যখন সেখানে দেখবেন, তখন নিয়ামতরাজি ও বিশাল রাজ্য দেখতে পাবেন। তাদের পোশাক হবে চিকন সবুজ রেশম ও মোটা সবুজ রেশম এবং তাদেরকে পরিধান করানো হবে রৌপ্য নির্মিত কংকন এবং তাদের প্রতিপালক তাদেরকে পান করাবেন পবিত্র পানীয়। এটা তোমাদের প্রতিদান। তোমাদের আমল ও কাজ স্বীকৃতি লাভ করেছে।” (সূরা আদ-দাহর: ১২-২২)
জান্নাত সর্বাধিক মূল্যবান জিনিস। তাই তা সংগ্রহের আপ্রাণ ও জোরদার চেষ্টা চালানো উচিত। তাকওয়া মূলত: জান্নাত লাভের উপায় এবং তা অর্জনের জন্য বাস্তব চেষ্টা ও পরিশ্রমের বাস্তব প্রশিক্ষণ।
সূত্র :ইমাম বাতায়ন
পোস্টটি ভালো লাগলে লাইক দিবেন এবং কমেন্ট করবেন কোন ভুল হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখুন ।আল্লাহ্ হাফেজ ।