আসসালামু আলাইকুম
কেমন আছেন সবাই? আশা করি আল্লাহর রহমতে ভালোই আছেন। আজ আমাদের জান্নাত সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন!! এর শেষ পর্ব তাই আজ আলোচনা বেশি হচ্ছে না। এতদিন ধরে সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
চলুন! আজকের জানাজানি শুরু করা যাক।
সসম্মানে জান্নাতে প্রবেশ, ফেরেশতাদের অভ্যর্থনা এবং চিরশান্তি ও নিরাপত্তার ঘোষণা।
এই সম্পর্কে আল্লাহ তা’য়ালা বলেন:
إن المتقين في جنات وعيون. ادخلوها بسلام آمنين
অর্থঃ নিশ্চয়ই পরহেজগারদের জন্য বাগান ও ঝর্ণা সমূহ থাকবে। তাদেরকে বলা হবে শান্তি ও নিরাপত্তার সাথে তোমরা তাতে প্রবেশ কর।
অন্য জায়গায় আল্লাহ তা’য়ালা বলেন:
وسيق الذين اتقوا ربهم إلي الجنة زمرا. حتي إذا جاءوها وفتحت أبوابها وقال لهم خزنتها سلام عليكم طبتم فادخلوها خالدين
অর্থঃ যখন তারা উন্মুক্ত জান্নাতের নিকট পৌঁছবে এবং (প্রথম জান্নাতে নিরাপত্তারক্ষী ফেরেশতারা বলবে: তোমাদের প্রতি সালাম তোমরা সুখি হও এবং স্থায়ী ভাবে অবস্থান করার জন্যে জান্নাতে প্রবেশ কর।
জান্নাতে প্রবেশের পর ধন্যবাদ জ্ঞাপন।
আল্লাহ তা’য়ালা বলেন:
والذين صبروا ابتغاء وجه ربهم وأقاموا اصلاة وأنفقوا مما رزقناهم سرا وعلانية ويدرءون بالحسنة السئءة أولءك لهم عقبي الدار جنات عدن يدخلونها ومن صلح من آباءهم وأزواجهم وذرياتهم والملاءكة يدخلون عليهم من كل باب سلام عليكم بما صبرتم فنعم عقبي الدار
অর্থঃ যার প্রতিপালকের সন্তষ্টি লাভের জন্য ধৈর্যধারণ করে এবং নামায কায়েম করে, আর আমি তাদেরকে যা দিয়েছি তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে এবং ভালো দ্বারা মন্দকে দূরীভূত করে, তাদের জন্যই শুভ পরিণাম। তাহলো চিরস্থায়ী জান্নাত। সেখানে তারা ও তাদের পিতা-মাতা, পতি-পত্নী, সন্তান:সন্ততিদের মধ্যে যারা সৎকর্ম করেছে, তারা প্রবেশ করবে এবং ফেরেশতাগণ প্রতিটি দরজা দিয়ে তাদেরকে এ কথা বলার জন্য প্রবেশ করবে যে, তোমরা ধৈর্যধারণ করেছ বিধায় তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। কত ভালো এই পরিণাম!
সূরা রায়া’দঃ ২২-২৩
জান্নাতে প্রবেশের পর জান্নাতিদের কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন।
আল্লাহ তা’য়ালা বলেন:
ونزعنا ما في صدورهم من غل تجري من تحتهم الأنهال وقالوا الحمدلله الذي هدانا لهذا وما كنا لنهتدي لولا أن هدانا الله لقد جاءت رسل ربنا باالحق ونودوا أن تلكم الجنة أورثتموها بما كنتم تعملون
অর্থঃ তাদের অন্তরে পরস্পর যে হিংসা বিদ্বেষ ছিল, তা আমি বের করে দেব। তাদের পাদ্বদেশে ঝর্ণা প্রবাহিত হবে। আর তারা বলবে: ঐ আল্লাহরই জন্য সকল প্রশংসা, যিনি এই পর্যন্ত পৌঁছিয়েছেন। আল্লাহ আমাদেরকে পথ না দেখালে আমরা কখনো পথ পেতাম না। নিঃসন্দেহে আমাদের প্রতিপালকের রাসূলগণ আমাদের কাছে সত্যবাণী নিয়ে এসেছিলেন। তাদেরকে সম্বোধন করে বলা হবে, তোমাদের কৃতকর্মের বদলায় তোমাদেরকে জান্নাতের উত্তরাধিকারী বানানো হয়েছে।
সূরা আ’রাফঃ ৪৩
জান্নাতে প্রবেশের পর জান্নাতীদের প্রথম নাস্তা কি হবে?
এই বিষয়ে বুখারী শরীফ এর একটি হাদীসে উল্লেখিত আছে যে, প্রথম নাস্তা হিসেবে যে নাস্তাটি সর্বপ্রথম দেওয়া হবে, (যদিও জান্নাতে অনেক নাস্তা হবে) তা হবে জমীন দ্বারা তৈরিকৃত রুটি। আর এর কারণ হলো, আল্লাহ তা’য়ালা জমীনের মধ্যে নানা ধরণের স্বাদ গচ্ছিত রেখেছেন। যা পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চল ও দেশের বিভিন্ন ফল-ফলাদি, শস্যাদি এবং তরিতরকারি ও অন্যান্য দ্রব্যাদিতে পাওয়া যায়। কিন্ত কেউ তো আর পুরো পৃথিবীর জমীনে উৎপাদিত সমস্ত নেয়ামত খেতে পারে না; এই জন্য জমীনকে রুটি বানিয়ে জান্নাত বাসীকে সর্বপ্রথম তার সমস্ত স্বাদ একত্রিত করে আস্বাদন করানো হবে।
জান্নাতীদের বয়সঃ
عن معاذ بن جبل رضي الله عنه. أن النبي صل الله عليه وسلم. قال: يدخل أهل الجنة الجنة جردا مردا مكحلين أبناء ثلاثين أو ثلاث وثلاثين سنة
অর্থঃ হযরত মু’য়ায ইবনে জাবাল (রাযিঃ) বর্ণনা করেন: রাসূল (সাঃ) বলেছেন: জান্নাতীরা জান্নাতে প্রবেশের সময় দাড়ি, গোফ, কেশহীন ও সুরমা লাগানো অবস্থায় প্রবেশ করবে, প্রত্যেকে ত্রিশ কিংবা তেত্রিশ বছরের যুবক হবে।
তিরমিযীঃ ৪/২৬৩ (২৫৪৫)
জান্নাতের ফল-ফলাদি।
বিলাসিতা ও নেয়ামত সমূহের স্বাদ উপভোগ করার জন্য জান্নাতীরা বিভিন্ন ধরণের ফল-ফলাদি ভক্ষণ করবেন। কোরআনে বিভিন্ন স্থানে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
যেমনঃ
০متكءين فيها يدعون فيها بفاكهة كثيرة وشراب
তারা সেখানে (জান্নাতে) হেলান দিয়ে বসে থাকবে। তথায় তারা প্রচুর ফল-মূল ও পানীয় বস্তু আনার জন্য বলবে।
সূরা ছা’দঃ ৫০
০لهم فيها فاكهة ولهم ما يدعون
জান্নাতে জান্নাতীদের জন্য ফল-মূল ও কাংখিত সবকিছু থাকবে।
সূরা ইয়াসীনঃ ৫৭
০وفاكهة كثيرة لا مقطوعة ولا ممنوعة
জান্নাতে থাকবে প্রচুর ফলমূল যা কখনো শেষ হবেনা এবং তা থেকে কাউকে নিষেধ ও করা হবেনা।
সূরা ওয়াক্বিয়াঃ ৩২-৩৩
০ودانيةوعليهم ظلالها وذللت قطوفها تذليلا
জান্নাতের বৃক্ষছায়া তাদের উপর ঝুকে থাকবে এবং তার ফলসমূহ তাদের অধীনে রাখা হবে।
সূরা দাহারঃ ১৪
দুনিয়ার সমস্ত ফল জান্নাতে পাওয়া যাবে। এমনকি অতি তিক্ত ফলও। তবে জান্নাতে তা মিষ্টি হবে। এ ছাড়া আরো স্পেশাল অনেক কিছু পাওয়া যাবে।।।
হাউযে কাউসার! নাম তো অনেক শুনেছেন তাই না? এবার জানুন!!
عن أنس بن مالك رض الله عنه قال: سءل رسول الله صلي الله عليه وسلم: ما الكوثر؟ قال: ذاك نهر أعطانيه الله, يعني في الجنة أشد بياضا من اللبن, وأحلي من العسل
অর্থঃ হযরত আনাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূল (সাঃ) কে কাউসার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, কাউসার কি? উত্তরে তিনি বলেন: কাউসার হল একটি নহর, যা আল্লাহ তা’য়ালা আমাকে দান করেছেন যার পানি দুধের চেয়ে সাদা, মধুর চেয়ে মিষ্টি।
তিরমিযী শরীফঃ ৪/৪৬১ (২৫৪২)
ধন্যবাদ, পড়ার জন্য। ট্রিকবিডির সাথে থাকুন, আরো অনেক কিছু জানার জন্য।