## এসব comment এর জন্য Post টা compile না করে পারলাম না…। কোনো ভুল করলে মাফ চাচ্ছি…
## PDF file টা 2mb , তাই এটা Download করে নিন…। কেননা TrickBD তে যারা Atheist আছেন , তাদের প্রশ্ন & উত্তর দুটোই পাবেন …। Size ২mb বেশি না …।
ইসলাম
ইসলাম |
---|
এর ধারাবাহিক নিবন্ধের অংশ: |
বিশ্বাসসমূহ
|
ইসলামের পঞ্চস্তম্ভ
|
গ্রন্থ ও আইন
|
ইতিহাস এবং নেতৃত্ব
|
গোষ্ঠী
|
সংস্কৃতি ও সামাজিক বিষয়াদি
|
ইসলাম (আরবি: الإسلام) একটি একেশ্বরবাদী এবং আব্রাহামিক ধর্ম; যা আল্লাহর বানী (কোরআন) এবং নবী মুহাম্মাদ-এর প্রদত্ত শিক্ষা পদ্ধতি, জীবনাদর্শ (সুন্নাহ এবং হাদিস নামে লিপিবদ্ধ) দ্বারা পরিচালিত।
ইসলাম শব্দটি এসেছে আরবি س-ل-م শব্দটি হতে; যার দু’টি অর্থঃ ১. শান্তি ২. আত্মসমর্পণ করা। সংক্ষেপে, ইসলাম হলো শান্তি (প্রতিষ্ঠা)’র উদ্দেশ্যে এক ও অদ্বিতীয় ঈশ্বর (আল্লাহ)-এর কাছে আত্মসমর্পণ করা।
অনেকের ধারণা যে, মুহাম্মদ হলেন এই ধর্মের প্রবর্তক। তবে মুসলমানদের মতে, তিনি এই ধর্মের প্রবর্তক নন, বরং আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত সর্বশেষ ও চূড়ান্ত রাসূল (পয়গম্বর)। খ্রিষ্টীয় সপ্তম শতকে তিনি এই ধর্ম পুনঃপ্রচার করেন। পবিত্র কুরআন ইসলাম ধর্মের মূল ধর্মগ্রন্থ। এই ধর্মে বিশ্বাসীদের মুসলমান বা মুসলিম বলা হয়। মুসলিমরা যেকোনো জাতি, বর্ণের মানুষকে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হতে উৎসাহিত করে। মুসলমানরা বিশ্বাস করেন, কুরআন গ্রন্থটি আল্লাহর বাণী এবং এটি তার দ্বারা স্বর্গীয় দূত জিব্রাইল-এর মাধ্যমে মুহাম্মদ-এর নিকট প্রেরিত। তাদের বিশ্বাস অনুসারে মুহাম্মদ স্রষ্টার সর্বশেষ বার্তাবাহক। মুসলমানরা বিশ্বাস করে যে ইসলাম হচ্ছে একটি পরিপূর্ণ ও সার্বজনীন ধর্ম এবং কুরআন হচ্ছে সর্বোত্তম জীবন বিধান।
মুসলমানরা মৃত্যুর পরে পুনরুত্থানের উপর বিশ্বাস করে। এই দিনটিকে হাশরের দিন বলা হয়। এই দিন প্রত্যেক মানুষের কৃতকর্মের বিচার করা হবে এবং এর ভিত্তিতে বেহেশত বা দোযখে পাঠানো হবে। তারা আরও বিশ্বাস করে ভাগ্যের ভাল-মন্দ সবকিছু আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত।
ইহুদি ও খৃস্ট ধর্মের ন্যায় ইসলাম ধর্মও ইব্রাহিমীয়। বর্তমান বিশ্বে মুসলমানের সংখ্যা আনুমানিক ১.৮ বিলিয়ন এবং তারা পৃথিবীর প্রধান ধর্মাবলম্বী গোষ্ঠীসমূহ।। এবং দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মাবলম্বী গোষ্ঠী। মুহাম্মদ ও তার উত্তরসূরীদের প্রচার ও যুদ্ধ জয়ের ফলশ্রুতিতে ইসলাম দ্রুত বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে সমগ্র বিশ্ব জুড়ে, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকা, দক্ষিণ এশিয়া, পূর্ব আফ্রিকা, পশ্চিম আফ্রিকা, মধ্য এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, পূর্ব ইউরোপে মুসলমানরা বাস করেন। আরব দেশের মুসলমানরা মোট মুসলমান জনসংখ্যার শতকরা মাত্র ২০ ভাগ।যুক্তরাজ্যসহ বেশ কিছু বলকান অঞ্চল দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম ইসলাম।
ধর্ম বিশ্বাস
মুসলমানদের ধর্ম বিশ্বাসের মূল ভিত্তি আল্লাহর একত্ববাদ।
তারা আরও বিশ্বাস করেন, তাদের পবিত্র গ্রন্থ কুরআন নিখুঁত, অবিকৃত ও মানব এবং জ্বিন জাতির উদ্দেশ্যে অবতীর্ণ আল্লাহর সর্বশেষ বাণী, যা পুনরুত্থান দিবস বা কেয়ামত পর্যন্ত বহাল ও কার্যকর থাকবে। তবে কিছু সম্প্রদায়, যেমনঃ আহ্মদি বা কাদিয়ানী নামক একটি সম্প্রদায় মনে করে মুহাম্মদ শেষ নবী নন; বরং যুগের চাহিদা মোতাবেক নবুওয়াতের ধারা অব্যহত থাকবে। এবং শিয়াদের একটি বিরাট অংশবিশেষ ইসমাঈলীয়দের মধ্যে প্রচলিত বিশ্বাস যে, ইমাম ইসমাঈল আখেরী নবী ছিলেন।
ইসলামী বিশ্বাস অনুসারে, আদম হতে শুরু করে আল্লাহ্ প্রেরিত সকল পুরুষ ইসলামের বাণীই প্রচার করে গেছেন। কুরআনের সূরা ফাতিরে বলা হয়েছে,
“ | “নিঃসন্দেহে আমি তোমাকে (মুহাম্মদ) পাঠিয়েছি সত্যের সাথে সুসংবাদদাতা এবং সতর্ককারীরূপে। আর এমন কোনো সম্প্রদায় নেই, যাঁদের মধ্যে একজন সতর্ককারী পাঠানো হয়নি।”৩৫:২৪ | ” |
ইসলামের দৃষ্টিতে ইহুদি ও খ্রিস্টান উভয় ধর্মাবলম্বীরাই ইব্রাহিমের শিক্ষার ঐতিহ্য পরম্পরা। উভয় ধর্মাবলম্বীকে কুরআনে “আহলে কিতাব” বলে সম্বোধন করা হয়েছে । কুরআনের সূরা আলে ইমরানে আহবান করা হয়েছে,
“ | “তুমি (মুহাম্মদ) বল, হে কিতাবীগণ, এসো সেই কথায় যা তোমাদের এবং আমাদের মধ্যে এক; যেন আমরা আল্লাহ ব্যতীত কারও ইবাদত না করি। কোনো কিছুকেই তাঁর শরিক না করি। এবং আমাদের কেউ কাউকে আল্লাহ ব্যতীত উপাস্য হিসেবে গ্রহণ না করি। যদি তাঁরা মূখ ফিরিয়ে নেয় তবে বল, তোমরা স্বাক্ষী থাক; অবশ্যই আমরা মুসলিম।”৩:৬৪ | ” |
এই ধর্ম দুটির গ্রন্থসমূহের বিভিন্ন ঘটনা ও বিষয়ের উল্লেখ কুরআনেও রয়েছে, তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রয়েছে পার্থক্য। ইসলামি বিশ্বাসানুসারে এই দুই ধর্মের পন্ডিতগণ তাদের নিকট প্রদত্ত আল্লাহ্-এর বাণীর অর্থগত ও নানাবিধ বিকৃতসাধন করেছেন। ইহুদিগণ তৌরাতকে (তোরাহ) ও খৃস্টানগণ ইনজিলকে নতুন বাইবেল বলে থাকে।
আল্লাহ্
মুসলমানগণ বিশ্বজগতের সৃষ্টিকর্তাকে ‘আল্লাহ’ বলে সম্বোধন করেন। ইসলামের মূল বিশ্বাস হলো আল্লাহর একত্ববাদ বা তৌহিদ। আল্লাহর একত্বের সাক্ষ্য দেওয়া ইসলামের পাঁচটি মূল স্তম্ভের মধ্যে প্রথম, যাকে বলা হয় শাহাদাহ। এটি পাঠের মাধ্যমে একজন স্বীকার করেন যে, আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কোনো উপাস্য নাই এবং মুহাম্মদ [(সাঃ)] তাঁর প্রেরিত বাণীবাহক বা রাসূল
সুরা এখলাছে আল্লাহর বর্ণনা দেয়া হয়েছে এভাবে,
[قُلْ هُوَ اللهُ أَحَدٌ. اللهُ الصَّمَدُ. لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ. لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ. وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أَحَدٌ] {الاخلاص:১-৪}
“ | “বলুন, তিনি আল্লাহ, এক, আল্লাহ অমুখাপেক্ষী, তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাঁকে জন্ম দেয়নি এবং তাঁর সমতুল্য কেউ নেই।”১১২:১-৪ | ” |
আল্লাহ্ শব্দটি আল এবং ইলাহ যোগে গঠিত। আল অর্থ সুনির্দিষ্ট এবং ইলাহ অর্থ উপাস্য, যার অর্থ সুনির্দিষ্ট উপাস্য। খৃস্টানগণ খৃস্ট ধর্মকে একেশ্বরবাদী বলে দাবী করলেও মুসলিমগণ খৃস্টানদের ত্রিত্ববাদ (trinity) বা এক ঈশ্বরের মধ্যে পিতা, পুত্র ও পবিত্র আত্মার মিলন, এই বিশ্বাসকে অস্বীকার করেন। ইসলামি ধারণায় আল্লাহ সম্পূর্ণ অতুলনীয় ও পৌত্তলিকতার অসমতুল্য, যার কোনোপ্রকার আবয়বিক বর্ণনা অসম্ভব। মুসলিমরা তাদের সৃষ্টিকর্তাকে বর্ণনা করেন তাঁর বিভিন্ন গুণবাচক নাম ও গুণাবলীর মাধ্যমে।
কিতাবুল ঈমানে আল্লাহর বর্ণনা এভাবে আছে :
আল্লাহ এক, অদ্বিতীয়, অতুলনীয়। তার কোন অংশ বা অংশিদার বা শরিক নেই। তিনি কারো উপন নির্ভরশীল নন, বরং সকলেই তার উপর নির্ভরশীল। তার কোন কিছুর অভাব নেই। তিনিই সকলের অভাব পূরণকারী। তিনি কারো পিতা নন, পুত্র নন, তাঁর সমতুল্য কেউ নেই। একমাত্র তিনি সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা,রক্ষাকর্তা ও পালনকর্তা। কোন জ্ঞান বা চক্ষু আল্লাহ তাআলাকে আয়ত্ব করতে পারেনা।
তিনি চিরকাল আছেন এবং থাকবেন। তিনি অনাদি ও অনন্ত। অাল্লাহ ছাড়া আর কোন মাবুদ নাই। শুধু তিনিই ইবাদত (উপাসনা) পাওয়ার যোগ্য। তিনি সর্বশক্তিমান। আল্লাহ তায়ালা দুনিয়াতে ঘটমান সব কিছু দেখতে ও শুনতে পান। তাঁর কোনো কিছুর প্রয়োজন নেই, তিনি সবকিছুর ঊর্ধ্বে।
মুসলিমরা বিশ্বাস করে, আল্লাহর বর্ণনা মানুষের কল্পনা, বিজ্ঞান, দর্শন দ্বারা জানা সম্ভব না।
ফেরেশতা
ফিরিশতা বা ফেরেশতা ফারসী শব্দ। ফেরেশতা আরবী প্রতিশব্দ হলো ‘মালাইকা’। ফেরেশতায় বিশ্বাস ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসের একটি মূল নীতি। এরা অন্য সকল সৃষ্টির মতই আল্লাহর আরেক সৃষ্টি। তাঁরা মুলত আল্লাহর দূত। তারা সর্বদা ও সর্বত্র আল্লাহর বিভিন্ন আদেশ পালনে রত এবং আল্লাহর অবাধ্য হবার কোনো ক্ষমতা তাদের নেই। ফেরেশতারা নূর তথা আলোর তৈরি। তারা খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ করেন না। তারা পবিত্র স্থানে অবস্থান করেন। তারা আল্লাহর আদেশ অনুসারে যেকোনো স্থানে গমনাগমন ও আকৃতি পরিবর্তনের ক্ষমতা রাখেন।
ফেরেশতাদের সংখ্যা অগণিত। ইসলামে তাদের কোনো শ্রেণীবিন্যাস করা না হলেও চারজন গুরুদায়িত্ব অর্পিত প্রধান ফেরেশতার নাম উল্লেখযোগ্য:
- জিব্রাইল – ইনি আল্লাহর দূত ও সর্বশ্রেষ্ঠ ফেরেশতা। এই ফেরেশতার নাম তিনবার কুরআন শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে (সূরা ২:৯৭; ৯৮, ৬৬:৪)। সূরা ১৬:১০২ আয়াতে জিব্রাইল ফেরেশতাকে পবিত্র রূহ বা রুহুল ক্বুদুস বলা হয়েছে। আল্লাহর আদেশ-নিষেধ এবং সংবাদ আদান-প্রদান যেসব ফেরেশতার দায়িত্ব, জিব্রাইল তাদের প্রধান। জিব্রাইল-ই আল্লাহর বাণী নিয়ে নবীদের কাছে গমনাগমন করেন। এই ফেরেশতাকে ইসলামের নবী মুহাম্মদ তার নিজস্ব আকৃতিতে মোট দুইবার দেখেছেন। পবিত্র কোরআনে সূরা আন নাজমে বলা হয়েছে,
“ | “সে ঊর্ধ্বাকাশের উপরিভাগে। তারপর সে কাছে এলো। অতঃপর সে আরো কাছে এলো। তাঁদের মাঝে ব্যবধান থাকল দুই ধনুকের বা তাঁর চাইতেও কম। অতঃপর সে তাঁর বান্দার কাছে ওহী পৌঁছে দিল, যা তাঁর পৌঁছানোর ছিল। সে যা দেখেছে, অন্তর তা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেনি। তোমরা কী সে বিষয়ে বিতর্কে লিপ্ত হতে চাও, যা সে নিজের চোখে দেখেছে। সে তাঁকে আরও একবার দেখেছিল। সিদরাতুল মুন্তাহার কাছে।” ৫৩:৭-১৪ | ” |
প্রাসঙ্গিক হাদিসসমূহ: মুসলিম শরীফ ৩২৯, ৩৩০, ৩৩২, ৩৩৩, ৩৩৪ এবং ৩৩৬
- মিকাইল – কুরআনের ২:৯৭ আয়াতে এই ফেরেশতার নাম উল্লেখ করা হয়েছে। ইনি বৃষ্টি ও খাদ্য উৎপাদনের দায়িত্বপ্রাপ্ত।
- ইসরাফিল – এই ফেরেস্তা আল্লাহর আদেশ পাওয়া মাত্র শিঙ্গায় ফুঁক দেওয়ার মাধ্যমে কিয়ামত বা বিশ্বপ্রলয় ঘটাবেন। তার কথা কুরআন শরীফে বলা না হলেও হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে।
- মালাকুল-মাউত – ইনি মৃত্যুর ফেরেশতা ও প্রাণ হরণ করেন।
বিশেষ শ্রেণীর ফেরেশতা যাদেরকে কুরআনে ‘কিরামান কাতিবিন’ (অর্থ: সম্মানিত লেখকগণ) বলা হয়েছে তাঁরা প্রতিটি মানুষের ভালো মন্দ কাজের হিসাব রাখেন। কবরে মুনকির ও নাকির নামের দুই ফেরেশতা মানুষকে তার কৃত কর্মের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। মালিক নামের ফেরেশতা নরক বা জাহান্নামের রক্ষণাবেক্ষণ করেন এবং রিদওয়ান নামের আরেক ফেরেশতা জান্নাত বা বেহেশতের দেখভাল করেন বলে বর্ণিত আছে।
ইসলাম, খৃস্টান ও ইহুদী ধর্ম ছাড়া হিন্দুধর্মেও ফেরেশতা তথা স্বর্গীয় দূতদের অস্তিত্বের কথা বলা হয়েছে।
আসমানী কিতাবসমূহ
আসমানী কিতাব হলো মূলত আল্লাহর বাণী যা আল্লাহ তায়ালা হযরত জিব্রাইল (আঃ) নামক ফেরেশতার মাধ্যমে রাসূলগণের নিকট প্রেরণ করেছেন।
প্রধান আসমানী কিতাব ৪টি; যথাঃ
১. তাওরাত
২. যবূর
৩. ইঞ্জিল
৪. কুরআন মাজীদ
এ ছাড়াও আরও ১০০ সহিফা বা ছোট আসমানী কিতাব নাজিল হয়েছে।
আল-কুরআন
কুরআন মুসলিমদের মূল ধর্মগ্রন্থ। তাদের বিশ্বাস পবিত্র এই কুরআন স্রষ্টার অবিকৃত, হুবহু বক্তব্য। বিশ্বাস করা হয়, আল্লাহ নিজেই কুরআনের সংরক্ষণের দায়িত্ব নিয়েছেন। এর আগে স্রষ্টা প্রত্যেক জাতিকে বিভিন্ন গ্রন্থ পাঠিয়েছেন, কিন্তু সেগুলোকে বিকৃত করা হয়। কুরআনকে আরও বলা হয় “আল-কুরআন” । বাংলায় “কুরআন”-এর জায়গায় বানানভেদে “কোরআন” বা “কোরান”ও লিখতে দেখা যায়।
ইসলাম ধর্মমতে, জীব্রাইল ফেরেশতার মাধ্যমে নবী মুহাম্মদ-এর নিকট ৬১০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ৬ই জুলাই, ৬৩২ খ্রিস্টাব্দে তাঁর মৃত্যু অবধি বিভিন্ন সময়ে আল্লাহ তাঁর বাণী অবতীর্ণ করেন। এই বাণী তাঁর (মুহাম্মদের) অন্তঃস্থ ছিলো, সংরক্ষণের জন্য তাঁর অনুসারীদের দ্বারা পাথর, পাতা ও চামড়ার ওপর লিখেও রাখা হয়।
অধিকাংশ মুসলিম পবিত্র কুরআনের যেকোনো পাণ্ডুলিপিকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা করেন, স্পর্শ করার পূর্বে ওজু করে নেন। কুরআন জীর্ণ ও ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়লে আবর্জনা হিসেবে ফেলে দেয়া হয় না, বরং কবর দেয়ার মত করে মাটির নিচে রেখে দেয়া হয় বা পরিষ্কার স্রোতের পানিতে ডুবিয়ে দেয়া হয়।
প্রত্যেক মুসলিমই কুরআনের কিছু অংশ এর মূল ভাষা আরবিতে মুখস্থ করে থাকেন, কমপক্ষে যেটুকু আয়াত নামাজ আদায়ের জন্য পড়া হয়। সম্পূর্ণ কুরআন মুখস্থকারীদের হাফিজ (সংরক্ষণকারী) বলা হয়। মুসলিমরা আরবি কুরআনকেই কেবলমাত্র নিখুঁত বলে বিশ্বাস করেন। সকল অনুবাদ মানুষের কাজ বিধায় এতে ভুল-ত্রুটি থাকার সম্ভাবনা থেকে যায় এবং বিষয়বস্তুর মূল প্রেরণা ও সণেটিক উপস্থাপনা অনুবাদকর্মে অনুপস্থিত থাকতে পারে বিধায় অনুবাদসমূহকে কখনোই আরবি কুরআনের সমতুল্য ও সমান নিখুঁত গণ্য করা হয় না, বরং এগুলোকে সর্বোচ্চ ‘অর্থানুবাদ’ হিসেবে অভিহিত করা হয়।
নবী ও রসূলগণ
বলা হয়, হযরত আদম থেকে শুরু করে হযরত মুহাম্মদ পর্যন্ত আল্লাহ পৃথিবীতে প্রায় ১,২৪,০০০ (আনুমানিক) নবী ও রাসূল পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। আর তাদের মধ্যে হযরত আদম সর্ব প্রথম মানুষ ও আল্লাহর সর্ব প্রথম নবী এবং সর্ব শেষ ও সর্ব শ্রেষ্ঠ নবী ও রাসূল হযরত মুহাম্মদ।
মুসলিমগণ বিশ্বাস করে যীশু(ঈসা) আল্লাহর পুত্র নন বরং তিনি আল্লাহর রাসূল। তাঁর উপর ইঞ্জিল কিতাব নাজিল হয়েছে। তিনি কেয়ামতের আগে আবার পৃথিবীতে আবার আসবেন এবং মুহাম্মাদের অনুসারী হিসেবে মৃত্যু বরণ করবেন ।
ইসলামের নবী মুহাম্মদ
মুহাম্মদ ছিলেন তৎকালীন আরবের কুরাইশ বংশের একজন। নবুওয়াত প্রাপ্তির পূর্বে তাঁর গুণের কারণে তিনি আরবে “আল-আমীন” বা “বিশ্বস্ত” উপাধিতে ভূষিত হন। স্রষ্টার নিকট হতে নবুওয়াত প্রাপ্তির পর তিনি মানুষকে ইসলাম ধর্ম এর দিকে দাওয়াত দেন। তাঁকে ইসলামের শ্রেষ্ঠ বাণী-বাহক (নবী) হিসেবে শ্রদ্ধা ও সম্মান করা হয়। বিশ্বাস করা হয়, পূর্বের একেশ্বরবাদী ধর্ম বিভিন্ন সময় পরিবর্তিত ও বিকৃত হয়ে গিয়েছিল।
ইসলাম ধর্মমতে, তিনি চল্লিশ বছর বয়স হতে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ২৩ বছরের বিভিন্ন সময়ে জিব্রাইলের মাধ্যমে ঐশী বাণী লাভ করেন। এই বাণীসমূহের একত্ররূপ হলো পবিত্র কুরআন, যা তিনি মুখস্থ করেন ও তাঁর অনুসারীদের (সাহাবী) দিয়ে লিপিবদ্ধ করান। কারণ, তিনি নিজে লিখতে ও পড়তে জানতেন না।
কুরআনে বলা হয়েছে,
“ | “তুমি তো এর আগে কোনো কিতাব পড় নি এবং স্বহস্তে কোনো কিতাব লেখনি যে অবিশ্বাসীরা সন্দেহ পোষণ করবে।”২৯:৪৮ | ” |
“ | “সে যদি আমার নামে কোনো কথা রচনা করতো, তবে আমি তাঁর ডান হাত ধরে ফেলতাম, অতঃপর কেটে দিতাম তাঁর গ্রীবা। তোমাদের কেউ তাকে রক্ষা করতে পারতে না।” ৬৯:৪৪-৪৭ | ” |
মুসলিমরা বিশ্বাস করেন, ঐশ্বিক বাণী প্রচারের ক্ষেত্রে ইসলামের নবী কখনো ভুল করেননি। আরো বিশ্বাস করা হল, তাঁর জীবনকালে তিনি সম্পূর্ণ আলৌকিকভাবে মেরাজ লাভ করেন।
মুসলিমদেরকে শেষ বাণীবাহক মুহাম্মদের নাম উচ্চারণ করার সাথে সাথে “সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম” বলতে হয়। এর অর্থ: ‘আল্লাহ তাঁর উপর রহমত এবং শান্তি বর্ষণ করুন।’ একে বলা হয় দরুদ শরীফ। এছাড়াও আরও অনেক দরুদ হাদীসে বর্ণীত আছে। তাঁর মধ্যে এটাই সর্বপেক্ষা ছোট। কোনো এক বৈঠকে তাঁর নাম নিলে দরুদ একবার বলা অবশ্যকর্তব্য (ওয়াজিব)।
হাদিস
‘হাদীস’ (اﻠﺤﺪﻴث) আরবি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে- কথা, বাণী, কথা-বার্তা, আলোচনা, কথিকা, সংবাদ, খবর, কাহিনী ইত্যাদি। ইসলামী পরিভাষায় মুহাম্মদের (সাঃ) কথা, কাজ, অনুমোদন এবং তাঁর দৈহিক ও চারিত্রিক যাবতীয় বৈশিষ্ট্যকে হাদীস বলে। মুহাম্মদের জীবদ্দশায় তাঁর সাহাবীরা তাঁর হাদীসসমূহ মুখস্থ করে সংরক্ষণ করতেন। প্রথমদিকে হাদীস লেখার অনুমতি ছিলো না। তখনকার অনুন্নত মুদ্রণব্যবস্থার কারণে কেউ লিখিত হাদিসকে ভুলক্রমে কুরআনের আয়াত মনে করতে পারে এই আশংকা ছিল। পরবর্তীতে ইসলামের নবী তাঁর কোনো কোনো সাহাবী বা সহচরকে হাদীস লেখার অনুমতি প্রদান করে. তার মৃত্যুর পর তার সাহাবীরা নিয়মিত তাঁর হাদিসগুলো চর্চা করতেন ও তাদের ছাত্রদের কাছে বর্ণনা করতেন। সাহাবীদের ছাত্র তথা তাবেঈরা ওমর ইবন আব্দুল আযীযের আমলে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় হাদীস লিখিত আকারে সংরক্ষণ করেন।
মুহাম্মদের কথা-কাজসমূহের বিবরণ এভাবে লোকপরম্পরায় সংগ্রহ ও সংকলন করে সংরক্ষণ করা হলে তাঁর বক্তব্যসমূহ পরবর্তী প্রজন্মের কাছে উন্মুক্ত হয়। মুসলিম পণ্ডিতদের সংকলিত সেসব হাদিস-সংকলন গ্রন্থগুলোর মধ্যে ছয়টি গ্রন্থ প্রসিদ্ধ হয়েছে। এগুলোকে ‘ছয়টি হাদিস গ্রন্থ’ (কুতুবুস সিত্তাহ) আখ্যা দেয়া হয়। হাদিসের বিশুদ্ধতা যাচাইয়ের বিভিন্ন মাপকাঠি রয়েছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো হাদীসের সনদ বা হাদিসের বর্ণনাকারীদের নির্ভরযোগ্য যাচাই।
কিয়ামত
কিয়ামতে বা শেষ বিচারের দিনে বিশ্বাস ইসলামের মূল বিশ্বাসগুলির একটি। ইসলাম ধর্মে কিয়ামত হলো সেই দিন যে দিন এই বিশ্বের সৃষ্টা( আল্লাহ) সকল মানুষ ও জ্বীন দের পুনরুত্থান করা হবে বিচারের জন্য। সকলে তার কৃতকর্মের হিসাব দেওয়ার জন্যে এবং তার কৃতকর্মের ফলাফল শেষে পুরস্কার বা শাস্তির পরিমাণ নির্ধারণ শেষে জান্নাত/বেহেশত কিংবা জাহান্নাম/দোযখ এ পাঠানো হবে। ইসলামের নবী কিয়ামতের পুর্বের ঘটনাবলি সম্পর্কে কিছু আগাম নিদর্শন বলে গেছেন। সেগুলোর মধ্যে কয়েকটি হল
- নারীদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া
- ইউফ্রেটিস থেকে স্বর্ণের পাহাড় আবিষ্কৃত হওয়া
- ইমাম মাহদীর আগমন, নবী ঈসার অবতরণ
- দাজ্জাল ও ইয়াজুজ মাজুজের আবির্ভাব
- পশ্চিমদিকে সূর্যোদয়
ইসলামের মূল স্তম্ভসমূহ
ইসলামের ৫টি মূল স্তম্ভ রয়েছে।এগুলো হলো-
- কালেমা (বিশ্বাস)
- নামাজ (প্রার্থনা)
- সিয়াম (উপবাস)
- যাকাত (দান)
- হজ্জ্ব (মক্কা ভ্রমণ)
ইসলামিক উৎসবসমূহ
ইসলামের উৎসবগুলোর কয়েকটি হল:
- ঈদুল ফিতর
- ঈদুল আযহা
- মাওলিদ
- আশুরা
- শবে বরাত বা লাইলাতুল বরাত
- শবে মেরাজ বা লাইলাতুল মিরাজ
- শবে কদর বা লাইলাতুল কদর
তথ্যসূত্র
- ↑ http://quraan.com[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ Vartan Gregorian (২০০৩)। Islam: A Mosaic, Not a Monolith। Washington D.C.: Brookings Institution Press। পৃষ্ঠা p. ix। আইএসবিএন০-৮১৫৭-৩২৮৩-X।উদ্ধৃতি শৈলী রক্ষণাবেক্ষণ: অতিরিক্ত লেখা (link)
- ↑ Teece, Geoff (২০০৫)। Religion in Focus: Islam। Smart Apple Media। পৃষ্ঠা p. 10।উদ্ধৃতি শৈলী রক্ষণাবেক্ষণ: অতিরিক্ত লেখা (link)
- ↑ Nelson, Lynn Harry। “Islam and the Prophet Muhammad”। Kansas University। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-০৬-১৭। – “One must remember that we are talking about the Muslim expansion, not Arab conquests. The expansion of Islam was as much, or perhaps much more, a matter of religious conversion than it was of military conquest.”
- ↑ John L Esposito (২০০২)। What Everyone Needs to Know About Islam। Oxford University Press US। পৃষ্ঠা p. 2। আইএসবিএন০-১৯-৫১৫৭১৩-৩।উদ্ধৃতি শৈলী রক্ষণাবেক্ষণ: অতিরিক্ত লেখা (link)
- ↑ Office for National Statistics (২০০৩-০২-১৩)। “Religion In Britain”। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-০৮-২৭।
- ↑ BBC (২০০৫-১২-২৩)। “Muslims in Europe: Country guide”। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-০৯-২৮।
- ↑ http://www.quraneralo.com/qadiyani-exposed/ কাদিয়ানী মতবাদ এবং খতমে নবুওয়াত
- ↑ http://www.djanata.com/index.php?ref=MjBfMDFfMjFfMTRfMV80XzFfNTQyNzA=
- ↑ কখগঘঙচ পবিত্র কোরআনুল করীম (বাংলা অনুবাদ ও সংক্ষিপ্ত তফসীর)। খাদেমুল-হারমাইন বাদশাহ ফাহদ, কোরআন মুদ্রণ প্রকল্প। ১৪১৩। পৃষ্ঠা ১৪৮০ পাতা।
- ↑ সহীহ বোখারী শরীফ [১ম হইতে ১০ম খন্ড এক ভলিয়মে সমাপ্ত] অনুবাদ: শায়খুল হাদিস মাওলানা মোহাম্মদ আজীজুল হক। আলহাজ্ব মোঃ সোলায়মান চৌধুরী, একুশে বই মেলা। ২০০৬। পৃষ্ঠা ১১২০ পাতা।
- ↑ আধুনিক আরবি বাংলা অভিধান, ড.ফজলুর রহমান, রিয়াদ প্রকাশনী ২০০৫
- ↑ Khatib Bagdadi, Taq-eedul ‘Ilm. Beirut: Ihya-us-sunnah An-nabawiah.
- ↑ প্রাগুক্ত।
- ↑ সহীহ বুখারী, সহীহ বুখারী, অধ্যায়ঃ ০২, পর্বঃ ঈমান, হাদিস নাম্বারঃ ৪৮। ““Sahih Bukhari““। ৩ এপ্রিল ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ ডিসেম্বর ২০১৮।উদ্ধৃতি শৈলী রক্ষণাবেক্ষণ: একাধিক নাম: লেখকগণের তালিকা (link)
আল কুরআনে বিজ্ঞান। ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ।
*** আপনার মতামত নিচে লিখবেন আর ভালো লাগলে অবশ্যই like দিবেন ।
## কিছু শিখাতে পারলে নিজেকে সার্থক মনে করব ।
??? মানুষ মাত্রই ভুল।কোনো ভুল হলে ক্ষমা করবেন ।
*** ধন্যবাদ ***
## small request:
( Like দিতে কেউ ভুলবেন না )