Site icon Trickbd.com

ভালো বা মন্দ কাজ কেন মানুষ করে?

Unnamed

وَمَا أُبَرِّئُ نَفْسِي إِنَّ النَّفْسَ لأَمَّارَةٌ بِالسُّوءِ إِلاَّ مَا رَحِمَ رَبِّيَ إِنَّ رَبِّي غَفُورٌ رَّحِيمٌ

আমি নিজেকে নির্দোষ মনে করি না, [1] মানুষের মন অবশ্যই মন্দকর্ম প্রবণ, [2] কিন্তু সে নয় যার প্রতি আমার প্রতিপালক দয়া করেন।[3] নিশ্চয় আমার প্রতিপালক অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ [ সুরা ইউসুফ ১২:৫৩ ]

[1] এটা যদি ইউসুফ (আঃ)-এর উক্তি হয়, তাহলে এটা তাঁর পক্ষ থেকে আত্মবিনয়ের বহিঃপ্রকাশ। কেননা এটা সুস্পষ্ট যে, সব দিক থেকেই তাঁর পবিত্রতা সাব্যস্ত হয়ে গিয়েছিল। পক্ষান্তরে এটা যদি মিশরের বাদশার স্ত্রীর কথা হয়, (যেমন ইবনে কাসীরের মত) তাহলে তা বাস্তবের উপরই প্রতিষ্ঠিত। কেননা সে নিজের অপরাধ এবং ইউসুফ (আঃ)-কে ফুসলানো ও ব্যভিচারে উদ্বুদ্ধ করানোর কথা স্বীকার করেছিল।
[2] এটা সে তার নিজের কৃত অপরাধের কারণ উল্লেখ করে বলছে যে, মানুষের মনের প্রবণতা এমন যে, সে তাকে মন্দ কর্মের প্রতি প্ররোচিত করে এবং খারাপ কাজের দিকে অগ্রসর করে।

[3] অর্থাৎ, মনের কুপ্রবণতা থেকে সেই বেঁচে থাকে, যার প্রতি আল্লাহর রহমত ও অনুকম্পা হয়। যেমন তিনি ইউসুফ (আঃ)-কে বাঁচিয়ে নিলেন।

যখন কেউ বলে ‘আমি চোখ দিয়ে দেখতে পেলাম’ – এটা সত্য, কারণ চোখ দেখার যন্ত্র। আবার কেউ যখন বলে ‘আমি অন্তর দিয়ে দেখতে পেলাম’ – এটাও সত্য, কারণ অন্তর হলো কমান্ডার, অন্তরই আপনাকে কোনো কিছু করতে বা না করতে আদেশ দান করে। অন্তর যদি দেখার আদেশ না দিতো আপনি দেখতে পেতেন না। উভয়টাই সত্য।

কুরআন দেখার ব্যাপারটাকে কখনো চোখের সাথে আবার কখনো অন্তরের সাথে সম্বদ্ধযুক্ত করে। যেহেতু চোখ হলো দেখার যন্ত্র আর হৃদয় হলো কমান্ডার তাই আপনি দেখার বিষয়টাকে চোখ বা অন্তর যে কোনো কিছুর সাথে সম্বন্ধযুক্ত করতে পারেন।

এখন আসে ‘নফসের বা প্রবৃত্তির’ ব্যাপারটা। আল্লাহ মানুষের অন্তরে কিছু জিনিসের চাহিদা তৈরী করে দিয়েছেন। এই চাহিদা বা আকাঙ্ক্ষাগুলো মানুষের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা। এই আকাঙ্ক্ষাগুলো ছাড়া আপনার জীবন অচল। যেমন – খাওয়ার ইচ্ছা, পান করার ইচ্ছা, নারী-পুরুষের মাঝে সম্পর্কের ইচ্ছা, রাগ ইত্যাদি। এই আকাঙ্ক্ষাগুলো আপনার অন্তরে স্থাপন করে দেয়া হয়েছে। কেন দেয়া হয়েছে? এইগুলো দেয়ারও উদ্দেশ্য আছে। আপনার অন্তর এবং মন যেন এগুলোর উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে এগুলোর সঠিক ব্যবহার করতে পারে। বেঁচে থাকতে হলে আপনাকে খেতে হবে, পান করতে হবে, নারী-পুরুষের মাঝে সম্পর্ক তৈরী হতে হবে, কখনো কখনো আপনাকে রাগান্বিতও হতে হবে। মানুষের এই আকাঙ্ক্ষাগুলো দরকার। কিন্তু এগুলো অন্তর এবং বুদ্ধি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতে হবে।

সমস্যা তখনই তৈরী হয় যখন এইআকাঙ্ক্ষাগুলো এতো শক্তিশালী হয়ে উঠে যে অন্তর এগুলোর সামনে দুর্বল হয়ে পড়ে। তখন ‘নফস’ আপনাকে আদেশ দিতে শুরু করে। যেমন কুরআনে এসেছে,

إِنَّ النَّفْسَ لَأَمَّارَةٌ بِالسُّوءِ

”নফস খারাপ কাজের আদেশ দান করে।”

নফস শক্তিশালী হয়ে উঠলো আর অন্তরকে দুর্বল করে ফেললো তাই আপনি খারাপ কামনা বাসনা চরিতার্থ করার পেছনে লেগে পড়েন। কামনা-বাসনা ততক্ষণ পর্যন্ত ভালো ছিল যতক্ষণ এগুলো অন্তরের নিয়ন্ত্রণে ছিল। এখন যেহেতু এই আকাঙ্ক্ষাগুলো/কামনা-বাসনাগুলো শক্তিশালী হয়ে উঠলো এগুলোই এখন আপনাকে আদেশ করতে লাগলো।

এ জন্যই পরিশুদ্ধি দরকার। এজন্য অতিরিক্ত খাওয়া-দাওয়া ভালো নয়। যখন কোনো চাহিদা পূর্ণ করা হয় ‘নফস’ শক্তিশালী হয়ে উঠে। যখন আপনি প্রচুর পরিমানে খাওয়া-দাওয়া করেন, অনেক বেশি ঘুমান, অনেক বেশি রাগ করেন, অনেক বেশি অশ্লীল কাজে জড়িয়ে পড়েন তখন ‘নফস’ ভয়ংকর রকম শক্তিশালী হয়ে উঠে। অন্তরের মৃত্যু ঘটে।

নফস হলো আপনার কামনা-বাসনার প্রধান জায়গা। এটা খারাপ কিছু নয়, কিন্তু এটা নিয়ন্ত্রণ করা দরকার। ভালো কাজ করতে থাকলে ‘নফস’ এক সময় ‘নফসে মুতমাইন্না’ হয়ে যায়। ‘নফসে মুতমাইন্না’ হলো এমন নফস যা শুধু অন্তরের কথা শুনে, কোনো কিছুর আদেশ করে না। ‘নফসে মুতমাইন্না’ জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে। আর নফস যখন ‘আম্মারা বিস্ সু’ হয়ে উঠে অর্থাৎ যে মন্দ কাজের আদেশ দেয় তখনি আপনি সমস্যায় পতিত হবেন।

সৌজন্য : OurislamBD.Com