Site icon Trickbd.com

কবির পেশা ও কবিতা পড়া/বলা/লিখা কি হারাম? আসুন জেনে নিই

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লহ। আশা করছি আপনারা সবাই মহান আল্লাহু রব্বুল ইজ্জাতের অসীম রহমতে ভালো আছেন। আজ আমি পবিত্র আল-ক্বুরআনের আলোকে কবি ও কবিতার বিষয়ে আল্লাহর বিধানের কথা তুলে ধরব ইংশাআল্লহ। চলুন শুরু করি।

 

 

 

প্রথমেই বলতে হয় যেসব কবিতায় প্রবৃত্তি বা মোহের কথা রয়েছে, যাতে কল্পনার কথা তথা বাস্তবতাবিরোধী কথা আছে এবং যা মানুষকে তমসাচ্ছন্ন করে, এমন কবিতা ইসলামে সম্পূর্ণরূপে হারাম বা নিষিদ্ধ। আপনারা এখন নিশ্চয়ই প্রশ্ন করবেন যে কেন এরূপ কবিতাকে হারাম করা হলো। উত্তরটা আমি বলে দিচ্ছি। আপনারা নিশ্চয়ই জানেন যে ইসলাম একটি বাস্তব সমর্থিত ধর্ম। আর আল্লাহ সবসময় বলেন বাস্তবতার পথে চলো। সুতরাং, এসব কবিতা পড়লে মানুষ বাস্তবতা থেকে দূরে সরে যায়। কল্পনা বা প্রবৃত্তির রাজ্যে ঘুরে বেড়ানো অনর্থক। অন্যদিকে, যাবতীয় যেকোনো জিনিস, যা আল্লাহর স্মরণ থেকে দূরে নিয়ে যায়, তা-ই হারাম। কবিতা পড়ার সময় প্রায় সর্বদাই মানুষ বাস্তব জ্ঞান হারিয়ে ফেলে এবং আল্লাহর স্মরণ থেকে দূরে সরে যায়। তাই এগুলোকে হারাম করা হয়েছে। অনুরূপভাবে এরূপ কবিতা যারা লিখে তাদেরকেও আল্লাহ পছন্দ করেন না এবং তাদের থেকে দূরে থাকতে আল্লাহ আমাদের নির্দেশ প্রদান করেছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, “হে মানুষ! মনে রেখো, যারা কবিদের অনুসরণ করে তারা বিভ্রান্ত হয়। (কারণ কবিরা অনেক সময়ই কল্পরাজ্যে হারিয়ে গিয়ে আত্মপ্রবঞ্চনার শিকার হয়।) তোমরা কি দেখো না, ওরা লক্ষ্যহীনভাবে ঘুরে বেড়ায়? আর তারা যা বলে তা তারা অনুসরণ করে না। (অধিকাংশ কবির স্বভাবই এমন।)” (সূরা শু’আরা : ২২৪-২২৬)

 

অর্থাৎ, আল্লাহ অধিকাংশ কবিকেই মুনাফিক বলে অভিহিত করেছেন। আর মুনাফিকদের অনুসরণ করা সম্পূর্ণ হারাম।

 

কিন্তু তাই বলে সব কবিতাই কিন্তু হারাম নয়। যেসব কবিতা আপনাকে বাস্তবধর্মী করে তুলে, যেসব কবিতার মাধ্যমে ন্যায়ের কথা প্রকাশ পায়, জালিমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ প্রকাশ পায়, সত্য কথা প্রকাশিত হয় এবং মানুষকে আল্লাহর পথে ডাকা হয় সেসব কবিতাকে আল্লাহ তায়ালা হালাল করেছেন। এমন কবিতা যারা লিখে তাদেরকে আল্লাহ পছন্দও করেন। এই প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, “অবশ্য যারা বিশ্বাস করে ও সৎকর্ম করে এবং (স্বীয় কবিতায় সত্য প্রকাশের মধ্য দিয়ে) আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করে এবং অত্যাচারিত হওয়ার পর (প্রতিবাদী কবিতা দ্বারা) তা প্রতিহত করে,(তারা বিভ্রান্ত নয়)।” (সূরা শু’আরা : ২২৭)

 

এই আয়াত থেকে আমরা বুঝতে পারি যেসব কবিতা ন্যায়কে তুলে ধরে এমন কবিতা লিখা, বলা ও পড়া আপনার জন্য জায়েজ। আর এরকম কবিতা রচনাকারী কবির পেশাও জায়েজ। কিন্তু যেসব কবিতায় রসের কথা রয়েছে, সেগুলো লিখা, বলা কিংবা পড়া কোনোটাই জায়েজ নেই। উদাহরণস্বরূপ আমরা কাজী নজরুল ইসলামের কবিতাগুলোর কথা বলতে পারি। তাঁর প্রায় বেশিরভাগ কবিতাতেই অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ফুটে উঠেছে। এগুলো পড়া ও বলা আপনার জন্য জায়েজ হবে। তবে তাঁর লেখা এমন কবিতাও কম ছিল না, যেগুলোতে অবাস্তব কথা বলা হয়েছে। তাই আপনাকে অবশ্যই জ্ঞান ও বিবেক দিয়ে বিচার করতে হবে কোনগুলো হালাল আর কোনগুলো হারাম। আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাজীবনে আমাদেরকে অনেক কবিতাই পড়তে এবং মুখস্ত করতে হয়, যেগুলোর প্রায় অধিকাংশই হারাম। কিন্তু এটা যেহেতু বাধ্য হয়ে পড়তে হয়, তাই আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করে দিবেন ইংশাআল্লহ। কারণ মহান আল্লাহ তায়ালা কখনোই তার বান্দার উপর সহ্য করার চেয়ে অতিরিক্ত বোঝা চাপিয়ে দেন না। কিন্তু মনে রাখবেন, প্রয়োজন ব্যতীত কখনো মনের ইচ্ছার কারণে হারাম কবিতাগুলো পড়বেন বা বলবেন না। আপনাদের মধ্যে কেউ কেউ হয়তো নিশ্চয়ই এতক্ষণে আমার Post টা পড়ে মনে মনে আমাকে গালি দিতে লেগেছেন। কিন্তু মনে রাখবেন, এটা আমার বানানো কোনো কথা নয়, এটা আল্লাহরই বাণী। আমি শুধু আপনাদেরকে একটু জানানোর চেষ্টা করলাম।

 

এই Post টা যত পারেন বেশি বেশি Share করুন। তাতে আপনারও সাওয়াব হবে। সবাই ভালো থাকবেন। আল্লাহ আমাদের সকলকে এগুলো মেনে চলার তাওফিক দান করুন। আমিন!