Site icon Trickbd.com

প্রামাণ্যচিত্রঃ কুরআনের সাথে বিজ্ঞানের কিছু ভিত্তিহীন সাংঘর্ষিকতা [পর্বঃ০৪] বিষয়ঃ পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ গঠন

আসসালামু আলাইকুম বন্ধুরা। আশা করি সবাই ভালো আছেন। আলহামদু লিল্লাহ। মহান আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমতে আমি সফলভাবে আপনাদেরকে এই ধারাবাহিকের তিনটি পর্ব উপহার দিতে সক্ষম হয়েছি। আপনারা আমার Profile-এর উপর ক্লিক করে প্রবেশ করলেই সেগুলো খুঁজে পাবেন। আজ তাহলে চতুর্থ পর্ব শুরু করি।

 

 

মহান আল্লাহ তায়ালা সূরা আত-ত্বলাকের ১২ নম্বর আয়াতে বলেন-

اللَّهُ الَّذِي خَلَقَ سَبْعَ سَمَاوَاتٍ وَمِنَ الْأَرْضِ مِثْلَهُنَّ يَتَنَزَّلُ الْأَمْرُ بَيْنَهُنَّ لِتَعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ وَأَنَّ اللَّهَ قَدْ أَحَاطَ بِكُلِّ شَيْءٍ عِلْمًا

 

এর অর্থ হচ্ছে-

ইনিই আল্লাহ যিনি সাতটি মহাকাশ সৃষ্টি করেছেন। এবং তার (মহাকাশের) মতো করেই পৃথিবীর মাঝে মধ্যে যা আছে তা সৃষ্টি করেছেন। সেগুলোর উপর [তাঁর] আদেশ নাজিল হয়, যাতে তোমরা জানতে পারো আল্লাহই সর্বশক্তিমান এবং সকল বিষয়ই তাঁর জ্ঞানের আওতাধীন।

(It is Allah who has created seven heavens and of the [things of] earth, the like of them. [His] command descends among them so you may know that Allah is over all things competent and that Allah has encompassed all things in knowledge.)

 

এখানে সবুজ রঙে লেখা অংশ দ্বারা আল্লাহ সাত মহাকাশ সৃষ্টি করেছেন সেটুকু চিহ্নিত করা হয়েছে। লাল কালি দ্বারা চিহ্নিত করা হয়েছে আল্লাহর পৃথিবীর ভেতরের অংশ সৃষ্টির কথা। আর নীল রং দ্বারা আলাদা করা আরবী শব্দটার (মিসলাহুন্না) অর্থ কোনোকিছুর মতো। অর্থাৎ, এখানে সাতটি মহাকাশ সৃষ্টির সাথে পৃথিবীর ভেতরের অংশ সৃষ্টির তুলনা করা হয়েছে।

 

লাল অংশে “মিন” নামে একটা শব্দ আছে। এই মিন শব্দের অর্থ তিনটা ভাবের ক্ষেত্রে ব্যাবহৃত হয়। যথা- মধ্যে (কোনোকিছুর ভিতর), হতে/থেকে (কোনো কিছুর থেকে/অনেকের মধ্য হতে) এবং হতে/থেকে/অপেক্ষা (তুলনা বোঝাতে)। সুতরাং, এখানে এটা দিয়ে পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ অংশ সৃষ্টির কথা বলা হয়েছে।

 

বিজ্ঞানী এবং কিছু অন্য ধর্মের লোকের ভাষ্যমতে, এখানে বলা হয়েছে পৃথিবীর ভেতরের অংশ সাত ভাগে বিভক্ত। সত্যিই এখানে আল্লাহ এটাই বলেছেন। কিন্তু তারা বলে যদি তাই-ই হয়, তাহলে কুরআন তো ভুল বলছে। কেননা, পৃথিবীর ভেতরের অংশ তো সাত ভাগে বিভক্ত নয়!

 

আগেকার সময়ে, বিশেষত প্রাচীন মিশরীয় এবং গ্রিকদের আমলে মানুষ মনে করতো যে পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ কোনো অংশ নেই। পরবর্তীতে অনেক গবেষণা করে প্রায় দুইশ বছর আগে বিজ্ঞানীরা বললো পৃথিবীর ভেতরের অংশ প্রধানত চার ভাগে বিভক্ত। যথা-

Crust, Mantle, Outer Core এবং Inner Core

 

এরপর মাত্র কয়েক দশক আগে বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর ভেতরের Mantle অংশকে বৈশিষ্ট্যগত পার্থক্যের জন্য দুই ভাগ করেন। যথা- Upper Mantle ও‌ Lower Mantle। এভাবে সর্বমোট পাঁচটি অংশ আবিষ্কৃত হয়।

 

আর বিজ্ঞানপ্রেমী মানুষেরা এটাই বলতো যে পৃথিবীর তো পাঁচটি অংশ, সাতটি নয়। কিন্তু মাত্র কয়েক বছর আগে এইসব মানুষের মুখ বন্ধ হয়ে যায়। সম্প্রতি পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ আরও দুইটি অংশের কথা বিজ্ঞানলদ্ধ পরীক্ষা থেকে জানা গেছে। Uper Mantle ও Lower Mantle-এর মাঝে একটি অংশ খুঁজে পেয়েছে বিজ্ঞানীরা যার নাম দেওয়া হয়েছে Transition Zone। তার কিছু সময় পরে আবার D” Layer নামে আরেকটি অংশ খুঁজে পায় বিজ্ঞানীরা।

এভাবেই আবিষ্কৃত হলো মোট সাতটি অংশ, তাও আবার ১৪০০ বছর পর, নানা তর্ক-বিতর্ক করে। শেষ পর্যন্ত কিন্তু কুরআনই জিতলো।

 

তাহলে এটা খুবই পরিষ্কার যে মহান আল্লাহ তায়ালা অবশ্যই সঠিক বলেছেন। সাত জমিনের ব্যাপারে অসংখ্য হাদীসও রয়েছে। কিন্তু এটা যেহেতু কুরআনের আলোচনা, তাই সেগুলো আর উল্লেখ করলাম না।

 

আমার মতো এক সাধারণ মানুষের সংগ্রহ করা তথ্যগুলো হয়তো আপনি বিশ্বাস করবেন না, তাই নামিদামি একটা জায়গা থেকেই দেখে নিন-

Forbes Link-

Layers Of The Earth: What Lies Beneath Earth’s Crust

 

আপনারা হয়তো অনেকেই আগের প্রামাণ্যচিত্রগুলো পছন্দ করেননি। কারণ সেগুলো ছিলো শুধু শব্দের অর্থের ভুল প্রয়োগের উপর। কিন্তু এটা বেশ জোরদার প্রমাণ সংবলিত একটি পর্ব। তাই আশা করছি আপনাদের ভালো লেগেছে। এই Post টা যত পারেন সবার মাঝে ছড়িয়ে দিন, তাতে আপনিও সাওয়াব লাভ করবেন। আর কেউ যদি এই বিষয় তুলে কুরআনকে ছোটো করে, তবে তাকে বুঝিয়ে বলার মাধ্যমে প্রতিবাদ করবেন।

 

ধন্যবাদ। সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। আসসালামু আলাইকুম।