মজা করবার কিছু বিষয় থাকে। বাঙালী দেখি সবকিছুতেই মজা নামের জিনিসের উপস্থিতি চাই। এমনিতেই সারা বছর এ জাতি মজার মধ্যেই ডুবে থাকে—এখন এই ইস্যু তো তখন আরেকটা। আমাদের অদ্ভুত ক্রিয়েটিভিটি দিয়ে যেকোন বিষয়কেই ‘মজা’ দিয়ে একেবারে চুবিয়ে তারপর সেটা উপস্থাপন ও গলধঃকরণ করি।
ভালো। আপনারা যারা সবকিছুতেই মজা খুঁজেন এবং এবং দেন তারা আর কিছু করুক আর না করুক জটিল বিষয়টাকে সহজেই সরলে রূপান্ত করিয়ে দেখিয়ে দিতে পারেন আপনারা কতটা ‘মজা’ প্রেমী।
পুরো পৃথিবী আজ লকড-ডাউন। শহরগুলিতে রিক্ততার বাতাস বয়ে চলছে। দিন কে দিন মহামারী (কভিট-১৯) করোনা ভাইরাসে পৃথিবীর কোন না কোন প্রান্তে ঝরছে কত প্রাণ। আক্রান্ত হচ্ছে হাজারে হাজারে মানুষ। এ যেন বাতাসের বেগে সর্বত্র ছড়িয়ে যাচ্ছে। প্রযুক্তি, ক্ষমতা আর সচেতন জনশক্তি নিয়েও পৃথিবীর উন্নত দেশগুলি এই ভাইরাসের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাচ্ছে না। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান যে ভাইরাসের এই পর্যন্ত কোন প্রতিষেধক আবিষ্কার করতে পারেনি। আমরা..?
একটা বিষয় এখন পর্যন্ত সকলের নিকটই পরিষ্কার ‘করোনা ভাইরাস’ আমাদের দেশেও ঢুকেছে এবং মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ছে শহর হতে অজপাড়া গাঁয়ে। প্রতিদিন খবরের পাতায় কারো না কারো আক্রান্তের খবর পাচ্ছি। এমন কি একজনের মৃত্যুও হয়েছে। দেশের সকল শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আজকে দেখলুম বিভিন্ন অঞ্চলে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট বন্ধ। হাটবাজারে কি রকম একটা শূণ্যতা বিরাজ করছে। সব ধরনের পাবলিক গ্যাদারিং নিষিদ্ধ! মাসজিদগুলো মুসল্লি শূণ্য। আমরা লকড-ডাউন!
এমতাবস্থায় আমাদের কি করা উচিত? আর আমরা করছি কী!?
একজন মু’মিন কখনো আল্লাহ’র আযাবে খুশি হতে পারে না। আল্লাহ আযযা ওয়া জাল কখন আযাব নাযিল করে?
যখন আল্লাহ’র জমিনে তাঁরই অবাধ্যতা বেড়ে যায়। মানুষগুলো দুনিয়ার চাকচিক্যে হুমড়ি খেয়ে পড়ে।
আল্লাহ’র রাসূল (সাল্লাল্লাহু’ আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “যখন সমাজে অশ্লীলতা, বেহায়াপনা ছড়িয়ে পড়বে, তখন তাদের মধ্যে এমন রোগ-ব্যাধি ছড়িয়ে পড়বে যা ইতোপূর্বে দেখা যায়নি।” (ইবনে মাজাহ :৪০১৯)
এমন নয় যে, আমরা সবাই আল্লাহ’র নাফরমানীতে লিপ্ত। এমনও বান্দা/বান্দি আছে যাদের সমস্ত চিন্তা জুড়েই সুমহান আল্লাহ আযযা ওয়া জাল্লা’র ভালোবাসা। তারা নিয়মিত তাহাজ্জুদ গুজার যায়, প্রতিটি সময় আল্লাহ’র যিকির দ্বারা জিহ্বা ভিজিয়ে রাখেন। তাদের জন্য এই মহামারী (কভিট-১৯) কি তাহলে?
“আমি অবশ্যই তোমাদেরকে কিছু না কিছু দিয়ে পরীক্ষায় ফেলবোই: মাঝে মধ্যে তোমাদেরকে বিপদের আতঙ্ক, ক্ষুধার কষ্ট দিয়ে, সম্পদ, জীবন, পণ্য-ফল-ফসল হারানোর মধ্য দিয়ে। আর যারা কষ্টের মধ্যেও ধৈর্য-নিষ্ঠার সাথে চেষ্টা করে, তাদেরকে সুখবর দাও।” (আল-বাক্বারাহ : ১৫৫)
এক কথায় জবাব, তাদের জন্যে এই মহামারী পরীক্ষাস্বরূপ! আমরা প্রত্যেকেই এই পরীক্ষায় পাশ করে আল্লাহ সন্তুষ্টি অর্জন করায় সচেষ্ট থাকবো। নিঃসন্দেহে প্রত্যেক বিপদ-মুসিবত আল্লাহ আযযা ওয়া জাল্লা’র হুকুম ব্যতীত আপতিত হয় না।
“আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কোন বিপদই আপতিত হয় না।..” (সূরাহ আত-তাগাবুন : ১১)
আল্লাহ আযযা ওয়া জাল আরো বলেন,
“মানুষের কৃতকর্মের দরুন জলে-স্থলে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে। আল্লাহ তা’য়ালা তাদের কতিপয় কাজকর্মের জন্য তাদের শাস্তির স্বাদ আস্বাদন করাতে চান, যাতে করে তারা (সে কাজ থেকে) ফিরে আসে।” ( সূরাহ আর-রুম : ৪১)
আল্লাহ আযযা ওয়া জাল এমনি এমনিই কোন আযাব দেন না, তিনি তো তার বান্দাদের তার দিকে ফিরে আসার আহ্বান করেন, এই সমস্ত আযাব আমাদের জন্য রিমাইন্ডার স্বরূপ আল্লাহ যেন বলতে চান— ও হে বিশ্বাসীরা আর কত আমাকে ভুলে পাপের মেকি সুখে নিজেদের ডুবিয়ে রাখবে। ফিরে এসো!
“যে বিপদ-আপদই তোমাদের ওপর আসুক না কেন, তা হচ্ছে তোমাদের নিজেদের হাতের কামাই, আল্লাহ তা’য়ালা তো অনেক গুনাহ ক্ষমা করে দেন।” (সূরাহ আশ-শুরা : ৩০)
নিজেদের কৃতকর্মের ফল নিজেদেরই ভোগ করতে হবে। এই আয়াতের শেষাংশটুকু খেয়াল করুন। আল্লাহ বলছেন তিনি অতি ক্ষমাশীল তিনি সব গুনাহ মাফ করে দেন। প্রিয় ভাই এবং বোনেরা আমরা আর কত কোরআনের কথাগুলোকে হালকাভাবে নিব? আল্লাহ আযযা ওয়া জাল তার বান্দাদের তাওবাহের জন্য ডাকছেন। আমরা তাওবাহ করি তাঁর দিকেই ছুটে চলি। বিপদ কিংবা মুসিবতের সময়ই নিজেদের ইমানকে স্ট্রং করতে হয়। দূর্বল ইমানের মানুষেরা বিপদে আল্লাহকে ভুলে যায়, তাদের তাওয়াক্কুল উঠে যায়। অপরদিকে মজবুত ইমান ওয়ালা মু’মিন বান্দা/বান্দিগুলো আল্লাহ’কে খুঁজে পায়। তাঁর দিকেই প্রত্যাবর্তিত হয়।
করোনা ভাইরাস (কভিট-১৯) আমাদের জন্য আল্লাহ পক্ষ হতে একটি রিমাইন্ডার, একটি সুযোগ সেই চিরসত্য এক ইলাহকে চেনার। কারণ আল্লাহ বলেন,
“বড়ো আযাবের আগে আমি অবশ্যই (দুনিয়ায়) ছোট খাটো আযাব আস্বাদন করাবো, হয়তো এতে (অনুতপ্ত হয়ে) সে আমার দিকে ফিরে আসবে।” (সূরাহ আস-সিজদাহ : ২১)
আমাদের করণীয় :
• প্লিজ সোস্যাল মিডিয়াতে ‘করোনা’ নিয়ে ট্রল করবেন না। নিঃসন্দেহে করোনা ভাইরাস আমাদের জন্য এক মহা মুসিবত।
• বেশি বেশি তাওবাহ ইস্তেগফার করতে হবে। আল্লাহ ভয় অন্তরে স্থাপন করতে হবে। ওয়াক্তের সালাত মাসজিদে আদায় না করতে পারলেও বাসায় আদায় করে নিতে হবে। কারণ বিপদ আল্লাহ দিয়েছেন তা থেকে তিনিই উত্তোলন করবেন (ইন শা আল্লাহ)
• বিপদ মুসিবতের সময় আল্লাহ’র রাসূল (সাল্লাল্লাহু’ আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কয়েকটি দো’আ পাঠ করতেন :
১. সাদ ইবনে আবি ওক্কাস (রা.) বলেন, রাসূল (সাল্লাল্লাহু’ আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুঃখ-কষ্টের সময় বলতেন : “লা-ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জোয়ালিমিন।” (দোয়া ইউনূস)
অর্থ : একমাত্র তুমি ছাড়া কোনো মাবুদ নেই। তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি। নিশ্চয়ই আমি সীমালঙ্ঘনকারী। (তিরমিজি : ৩৫০০)
২. আসমা বিনতে ওমাইর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সাল্লাল্লাহু’ আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আমি কি তোমাদের এমন কিছু শিখিয়ে দেব না যা তুমি দুশ্চিন্তা ও পেরেশানির মধ্যে পড়বে। সাহাবী বললেন, অবশ্যই শেখাবেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু’ আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, দোয়াটি হচ্ছে : “আল্লাহু আল্লাহ রব্বী লা উশরিকু বিহি শাইয়ান।”
অর্থ : আল্লাহই আল্লাহ আমার প্রতিপালক। আমি তার সঙ্গে কোনো কিছু শরিক করি না। (আবু দাউদ : ১৫২৫)
৩. আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সাল্লাল্লাহু’ আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন : “আল্লাহুম্মা লা সাহলা ইল্লা মা জায়ালতাহু সাহলান, ওআনতা তাজআলুল হুযনা সাহলান ইযা শিইতা।”
অর্থ : ইয়া আল্লাহ, কোনো বিষয় সহজ নয়। হ্যাঁ, যাকে তুমি সহজ করে দাও। যখন তুমি চাও তখন তুমি মুশকিলকে সহজ করে দাও। (ইবনে হিব্বান : ৯৭৪)
আল্লাহ আমাদের এই মুসিবত থেকে হেফাযত করুন। তাঁর দিকে টেনে নিক, আমাদের তাঁর ও তাঁকে আমাদের বানিয়ে নিক। আল্লাহুম্মা আমীন!
যিনি লিখেছেনঃ সিয়াম ভূঁইয়া ভাই (আল্লাহ্ তাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন!)