কেন আপনি বিশ্বাস করবেন ইসলাম সত্য? যুক্তি কী? আসুন বলি..
ইসলাম পরিপূর্ণ হয়েছে কুর’আনের মাধ্যমে। আর কুর’আনকে যদি আল্লাহর বাণী বলে প্রমাণ করা যায়, আপনি মানবেন তো ইসলাম সত্যি?
তবে তাই হোক! আজকে আমরা মহাকাশবিজ্ঞান নিয়ে কুর’আনে যেসব তথ্য দেয়া আছে তা আলোচনা করব।
১. বিশ্বজগতের উৎপত্তি নিয়ে বিজ্ঞানীরা কয়েক বছর আগে মাত্র জানতে পেরেছেন যে, বিশ্বজগতের সবকিছু আগে একত্রে মিশে ছিল, পরবর্তীতে সেটি বিগ ব্যাং বা মহাবিস্ফোরণের মাধ্যমে আলাদা হয়েছে। কুর’আনে এ কথা এসেছে আজ থেকে ১৪০০ বছর আগে।
“যারা কুফরী করে তারা কি ভেবে দেখেনা যে, আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী মিশে ছিল ওতপ্রোতভাবে; অতঃপর আমি উভয়কে পৃথক করে দিলাম এবং প্রাণবান সমস্ত কিছু সৃষ্টি করলাম পানি হতে; তবুও কি তারা বিশ্বাস করবেনা?”
(সূরা আম্বিয়াঃ ৩০)
২. এডুইন হাবল কিছু বছর আগে তার থিওরি দিয়ে সবাইকে চমকে দিয়েছিলেন যে মহাবিশ্ব ক্রমশ সম্প্রসারিত হচ্ছে। অথচ, এই কথা কুর’আন আজ থেকে ১৪০০ বছর আগে বলে দিয়েছে।
“আমি আকাশ নির্মাণ করেছি আমার ক্ষমতাবলে এবং আমি অবশ্যই মহাসম্প্রসারণকারী।”
(সূরা আয যারিয়াতঃ ৪৭)
৩. পৃথিবীর আকৃতি কেমন? একটা সময় মানুষ ভাবতো পৃথিবী ফ্ল্যাট। কয়েকশো বছর আগে (খুব সম্ভবত ১৫৭৫) আবিষ্কৃত হয় যে পৃথিবীর আকৃতি হচ্ছে গোলাকার(spherical)। পুরোপুরি গোল নয় যদিও। কিন্তু এই তথ্য কুর’আনে এসেছে আজ থেকে ১৪০০ বছর আগে!
সূরাঃ আন-নাযিয়াত [79:30]
وَٱلْأَرْضَ بَعْدَ ذَٰلِكَ دَحَىٰهَآ
“পৃথিবীকে এর পরে বিস্তৃত/ডিম-আকৃতি করেছেন।”
এই دَحَىٰهَآ শব্দটির ‘বিস্তৃত’ একটি অর্থ হলেও এটির অন্য একটি অর্থ হচ্ছে ‘eggshape’ বা ‘ডিম আকৃতি’।
আর বর্তমান গবেষণায় জানা যায় যে পৃথিবী সম্পূর্ণ গোল না, বরং ওপর-নিচ খানিকটা চাপা। অর্থাৎ ডিমের আকৃতি!
৪. চাঁদের কি নিজস্ব আলো আছে? একটা সময় ভাবা হত যে হ্যাঁ, চাঁদের নিজস্ব আলো আছে। কিন্তু, এখন আমরা জানি চাঁদের নিজস্ব আলো নেই, এটি কেবল সূর্যের আলোকে প্রতিফলিত করে। কিন্তু, কুর’আন এই কথা আজ থেকে ১৪০০ বছর আগে বলে দিয়েছে।
সূরাঃ আল-ফুরকান [25:61]
تَبَارَكَ ٱلَّذِى جَعَلَ فِى ٱلسَّمَآءِ بُرُوجًا وَجَعَلَ فِيهَا سِرَٰجًا وَقَمَرًا مُّنِيرًا
“কল্যাণময় তিনি, যিনি নভোমন্ডলে রাশিচক্র সৃষ্টি করেছেন এবং তাতে রেখেছেন প্রদীপ(সূর্য) ও দীপ্তিময় চন্দ্র।”
কুর’আনে সূর্যের আলো বোঝাতে সব জায়গায় এই سِرَٰجًا শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে যার অর্থ হচ্ছে ‘প্রদীপ’ আর চাঁদের আলো বোঝাতে مُّنِيرً (মুনীর) অথবা نور (নূর) ব্যবহৃত হয়েছে। মুনীর শব্দের অর্থ হচ্ছে ধার করা আলো আর নূর শব্দের অর্থ হচ্ছে প্রতিফলিত আলো। অর্থাৎ, সূর্য হচ্ছে প্রদীপ এবং চাঁদ সেই প্রদীপের আলো প্রতিফলিত করে।
৫. একটা সময় ভাবা হত কেবল পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘোরে এবং সূর্য স্থির। এই ধারণা কিছু বছর আগেও প্রচলিত ছিল। কিন্তু, এখন আমরা জানি, পৃথিবী সূর্যের চারদিকে কেবল ঘোরে তা নয়, নিজ অক্ষেও ঘোরে এমনকি সূর্যও প্রতি ২৭ দিনে একবার নিজ অক্ষ আবর্তন করে। অর্থাৎ, সদা পরিবর্তনশীল বিজ্ঞান অবশেষে সত্য আবিষ্কার করেছে, কিন্তু অপরিবর্তিত কুর’আনে সেই ১৪০০ বছর আগেই বলে দেয়া আছে এই কথা।
সূরাঃ আল-আম্বিয়া [21:33]
وَهُوَ ٱلَّذِى خَلَقَ ٱلَّيْلَ وَٱلنَّهَارَ وَٱلشَّمْسَ وَٱلْقَمَرَ كُلٌّ فِى فَلَكٍ يَسْبَحُونَ
“তিনিই সৃষ্টি করেছেন রাত্রি ও দিন এবং সূর্য ও চন্দ্র। সবাই আপন আপন কক্ষপথে বিচরণ করে।”
এখানে يَسْبَحُونَ শব্দটি একটি ‘moving body/rotating body’ কে নির্দেশ করে।
এইযে পাঁচটি তথ্য আমি দিলাম যা কুর’আন আজ থেকে ১৪০০ বছর আগে বলেছে আর আমরা আবিষ্কার করেছি আজ থেকে ৫০ কিংবা ১০০ কিংবা ২০০ বছর আগে মাত্র! কে কুর’আনে এসব বলে দেয়ার ক্ষমতা রাখেন, একমাত্র আল্লাহ ছাড়া?
মুহাম্মাদ ﷺ ছিলেন নিরক্ষর, তিনি লিখতে ও পড়তে জানতেন না, তিনি অনেকগুলো দেশও ভ্রমণ করেন নি। সেই নিরক্ষর মানুষটা বিজ্ঞানের এত বড় বড় হিন্ট দিয়ে যেতে পারেন? সম্ভব?
যদি বলেন তিনি আন্দাজে বলেছেন, তাহলে সেটাও যুক্তি ভাঙি আসুন। আমরা এই যুক্তি খন্ডন করব probability theroy দিয়ে।
মহাবিশ্ব সম্প্রসারিত হচ্ছে কি হচ্ছেনা, এখানে দু’টি সম্ভাবনা আছে, তাই নবী যদি আন্দাজে বলে থাকেন তবে তিনি সঠিকটা বলতে পারার সম্ভাবনা হচ্ছে ১/২ বা ৫০%।
চাঁদের নিজস্ব আলো আছে কি নেই, এখানেও দু’টি সম্ভাবনা (১/২)। এবার আসুন, মহাবিশ্ব সম্প্রসারণ এবং চাঁদের আলো দুটোই একসাথে আন্দাজ করতে পারার সম্ভাবনা কত? (১/২ * ১/২ = ১/৪) অর্থাৎ ২৫%।
সূর্য আর পৃথিবী নিজস্ব কক্ষপথে আবর্তন করে অথবা করে না, এটার সম্ভাবনাও ১/২। এখন তিনটি কেইস একত্র করলে সম্ভাবনা দাঁড়ায় (১/২ * ১/২ * ১/২ = ১/৮) অর্থাৎ ১২.৫%।
এবার আসুন পৃথিবীর আকৃতি! কত রকম আকৃতিই তো হতে পারে! আয়তাকার, বর্গাকার, বেলনাকার, ফ্ল্যাট, গোলাকার.. ইত্যাদি ইত্যাদি।
যদি পাঁচটি আকৃতি ধরি, তাহলে যেকোন একটি আন্দাজ করা এবং সঠিক হওয়ার সম্ভাবনা কত? ১/৫। এবার বাকি সবগুলো কেসের সাথে একত্রে সম্ভাবনা কত? (১/২ * ১/২ * ১/২ * ১/২ * ১/৫ = ১/৪০) অর্থাৎ ০.০২৫%।
অর্থাৎ, মাত্র এই ৫টি তথ্য আন্দাজে চালিয়ে দিলে সবগুলোই সঠিক হওয়ার সম্ভাবনা মাত্র ০.০২৫%। এমন শত শত নমুনা আছে কুর’আনে। যেগুলো বিজ্ঞান সম্প্রতি আবিষ্কার করেছে। ভূতত্ত্ব, প্রাণীবিজ্ঞান, পদার্থবিজ্ঞান, ইতিহাসসহ অসংখ্য ক্ষেত্রে কুর’আন যেই কথাগুলো বলেছে সেগুলো ১০০ ভাগ অথেনটিক প্রমাণিত হয়েছে।
এবার আপনি নিজেই ভেবে দেখুন। প্রয়োজনে রিসার্চ করুন। ভালোমত জানুন। এই পৃথিবীতে সৃষ্টিকর্তা আপনাকে পাঠিয়েছেন, জ্ঞান দিয়েছেন, সেটি কাজে লাগান। ইন-শা-আল্লাহ উত্তর পেয়ে যাবেন।
ইন-শা-আল্লাহ আপনি জেনে যাবেন কুর’আন হচ্ছে আল্লাহর পক্ষ থেকে আসা বাণী এবং ইসলাম হচ্ছে তাঁর পক্ষ থেকে মনোনীত ধর্ম।
সূত্রঃ Is the Quran God’s Word? by Dr. Zakir Naik.
সত্যের সন্ধানে প্রতিদিন প্রতিক্ষণ, আমাদের এই পথ চলা সব সময় ইসলামিক পোস্ট পেতে বিজিট করুন ইসলামিক সাইট www.OurislamBD.Com