Site icon Trickbd.com

আসুন সবাই জেনে নিই। যে পাঁচ শ্রেণী মানুষের সাথে আল্লাহ সবসময় থাকেন।

Unnamed

আসসালামু আলাইকুম সবাই কেমন আছেন…..? আশা করি সবাই ভালো আছেন । আমি আল্লাহর রহমতে ভালোই আছি ।আসলে কেউ ভালো না থাকলে TrickBD তে ভিজিট করেনা ।তাই আপনাকে TrickBD তে আসার জন্য ধন্যবাদ ।ভালো কিছু জানতে সবাই TrickBD এর সাথেই থাকুন ।

পাঁচ শ্রেণী মানুষের সাথে আল্লাহ সবসময় থাকেন

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত রাসূল (সাঃ) বলেন → জেনে রেখো ! যদি সব সৃষ্টি একত্রে হয়ে তোমার কোনো উপকার করতে চায় তবু তারা আল্লাহর নির্ধারিত পরিমাণ ছাড়া কখনোই তোমার উপকার করতে পারবেনা।আর যদি সব সৃষ্টি একত্র হয়ে তোমার কোনো ক্ষতি করতে চায় তবু তারা আল্লাহর নির্ধারিত পরিমাণ ছাড়া কখনোই তোমার ক্ষতি করতে পারবেনা। কলম তুলে নেওয়া হয়েছে এবং দপ্তরসমূহ শুকিয়ে গেছে। ( সুনানে তিরমিজি ২৫১৬)

আলোচ্য হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) মুমিনদের আল্লাহর সান্নিধ্য ও নৈকট্য লাভে উৎসাহিত করেছেন। যেন তারা ইমান, ইখলাস (সততা) ইবাদত ও অনুগত্যের মাধ্যমে আল্লাহর ভালোবাসা, সান্নিধ্য ও রহমতের দৃষ্টি লাভে সক্ষম হয়। পার্থিব জীবনে তারা কখনো আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে যেন বঞ্চিত না হয়।

আল্লাহ সঙ্গে থাকার অর্থ হলোঃ সঙ্গ বা সঙ্গে থাকা বোঝাতে আরবি ভাষায় মায়িয়্যাত শব্দ ব্যবহৃত হয়।আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের বিশ্বাস অনুযায়ী ‘মায়িয়্যাত’ মহান আল্লাহর একটি গুণ। তবে আল্লাহর সঙ্গে থাকা কোনো সৃষ্টির সঙ্গে থাকার মতো নয়। কেননা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে → কোনো কিছুই তার মতো নয়,তিনি সব শোনেন এবং দেখেন। (সূরা আশ-শুরা আয়াত ১১)

বিশেষজ্ঞ আলেমরা আল্লাহর সঙ্গে থাকার দুটি অর্থ করেন।

এক সাধারণ অর্থে আল্লাহর সঙ্গে থাকা। তাহলে আল্লাহ তাঁর জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও ক্ষমতার মাধ্যমে সব সৃষ্টির সঙ্গে থাকেন।

দুই বিশেষ অর্থে সঙ্গে থাকা। আর তাহলো সতর্কীকরণ, সাহায্য, সহযোগিতা ও সুযোগ দানের মাধ্যমে সঙ্গে থাকা।

কোরআন ও হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী আল্লাহ নবী – রাসূল, মুমিন ও তার নৈকট্যপ্রাপ্ত বান্দাদের সঙ্গে দয়া, অনুগ্রহ ও সহযোগিতা মাধ্যমে সঙ্গে থেকে থাকেন।ওহি ও ইলহামের মাধ্যমে তাদের সতর্ক করেন।

আল্লাহর যাদের সঙ্গে থাকেনঃ পবিত্র কোরআনে একাধিক আয়াতে আল্লাহর থাকার বিষয়টি বলা হয়েছে। তেমনি ৫ শ্রেণীর মানুষের সঙ্গে আল্লাহ সব সময় থাকেন। এই বিষয়ে আজকে আমরা আলোচনা করবো ইনশাআল্লাহ।

আল্লাহভীরু ও দয়াশীলঃ আল্লাহ মুত্তাকী ও দয়াশীল মানুষের সঙ্গে থাকার ঘোষণা দিয়ে বলেন→ নিশ্চয়ই আল্লাহ তাদের সঙ্গে আছেন যারা আল্লাহভীরু ও অনুগ্রহকারী। (সূরা নাহল আয়াত ১২৮)

এই আয়াতের সারমর্ম হলো, আল্লাহ তায়ালা সাহায্য তাদের সাথে থাকে,যারা দুটি গুনে গুণান্বিত। তাকওয়া ও ইহসান।তাকওয়ার অর্থ হারাম কাজ পরিত্যাগ করা এবং ইহসানের অর্থ সৎকাজ করা। অর্থাৎ যারা শরীআতের অনুসারী হয়ে নিয়মিত হারাম কাজ পরিত্যাগ করে আর সৎকর্ম সম্পাদন করে আল্লাহ তায়ালা তাদের সঙ্গে আছেন ( সূত্রঃ তাফসীরে ইবনে কাসীর)

আল্লাহর পথে আহ্বানকারীঃ যারা মানুষকে আল্লাহর পথে আহ্বান করে আল্লাহ তাদের সঙ্গে থাকেন। আল্লাহর মহান দুই নবী মুসা ও হারুন (আ.) কে ফেরাউনের কাছে দ্বিনি দাওয়াত নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়ে বলেন → তোমরা ভয় পেয়ো না নিশ্চয়ই আমি তোমাদের সঙ্গে আছি। আমি শুনি ও দেখি। ( সূরা ত্ব-হা আয়াত ৪৬)

অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা বলেন → আমি তোমাদের সাথে আছি।আমি সব শুনব এবং দেখবো।আল্লাহ তায়ালা আরশের উপরে আছেন, এটাই একজন মুমিনের আকীদা- বিশ্বাস। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা কোরআনে বিভিন্ন স্থানে তাঁর সঠিক বান্দা ও সৎ লোকদের সাথে আছেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন।

আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আকীদা অনুসারে সে সমস্ত আয়াতে সঙ্গে থাকার অর্থ সাহায্য করা। অর্থাৎ আল্লাহর সাহায্য ও সহযোগিতা তাদের সাথেই থাকবে। পরবর্তী বাক্য, “আমি শুনি ও আমি দেখিন” ও এ কথা প্রমাণ করে যে, এখানে সহযোগিতা মাধ্যমে সংগে থাকা বোঝানো হয়েছে। ( সূত্রঃ তাফসীরে ইবনে কাসীর)

বিপদগ্রস্ত মুমিনঃ যখন কোনো মুমিন বিপদগ্রস্ত হয় এবং তারা আল্লাহর সাহায্য কামনা করে আল্লাহ সাহায্যের মাধ্যমে তাদের সঙ্গেই থাকেন। ইরশাদ হয়েছে → যখন দুই দল পরস্পরকে দেখল মুসার অনুসারীরা বলল নিশ্চয়ই আমরা ধরা পড়ে যাব। মুসা বলল কখনোই না। নিশ্চয়ই আমার প্রভু আমার সঙ্গেই আছেন। তিনি আমাকে পথ দেখাবেন। ( সূরা আশ-শুআ’রা ৬২)

পশ্চাব্দাবনকারী ফিরআউনের সৈন্য বাহিনী যখন তাদের সামনে এসে যায়, তখন সমগ্র বনী-ইসরাঈল চিৎকার করে উঠলো, হায়! আমরা তো ধরা পড়ে গেলাম ! আর ধরা পড়ার মধ্যে সন্দেহ ও দেরীই বা কি ছিল, পশ্চাতে অতিবিক্রম সেনাবাহিনী এবং সম্মুখে সমুদ্র অন্তরায়। এই পরিস্থিতি মূসা আলাইহিস সালামের অগোচরে ছিলনা। কিন্তু তিনি দৃঢ়তার হিমালয় হয়ে আল্লাহ তায়ালা প্রতিশ্রুতিতে দৃঢ় বিশ্বাসী ছিলেন। তিনি তখনো সজোরে বলেনঃ আমরা তো ধরা পড়তে পারিনা। আমার সাথে আমার পালনকর্তা আছেন। তিনি আমাদের পথ বলে দেবেন। ( তাফসীরে কুরতুবি)

আল্লাহর পথে হিজরতকারীঃ আল্লাহর নির্দেশে মহানবী (সাঃ) যখন মক্কা থেকে মদিনার হিজরত করছিলেন, তখন আবু বাকর (রা.) শত্রুর হাতে ধরা পড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেন। — সে সময় সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে → যখন তারা গুহায় ছিল তখন সে তার সঙ্গীকে বলেছিল বিষণ্ন হয়োনা। আল্লাহ আমাদের সঙ্গেই আছেন। ( সূরা তাওবা ৪০)

এ আয়াতে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) হিজরতের ঘটনা উল্লেখ করে দেখিয়ে দেয়া হয় যে আল্লাহর রাসূল কোন মানুষের সাহায্য সহযোগিতা মুখাপেক্ষী নন বা ছিলেন না। আল্লাহ প্রত্যক্ষভাবে গায়েব থেকে সাহায্য করতে সক্ষম। যেমন হিজরতের সময় করা হয়, যখন তার আপন গোত্র ও দেশবাসী তাকে ত্যাগ করতে বাধ্য করে। সফরসঙ্গী হিসেবে একমাত্র সিদ্দিক আকবর রাদিয়াল্লাহু আনহু ছাড়া আর কেউই ছিলেনা। পদব্রজী ও অশ্বারোহী শত্রুরা সর্বত্র তার খোঁজ করে ফিরেছে। অথচ আশ্রয়স্হল কোন মজবুত দুর্গ ছিল না।

বরং তা ছিলঃ এক গিরী গুহা যার দ্বারপ্রান্তে পর্যন্ত পৌঁছেছিল তার শত্রুরা। তখন গুহা আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুর চিন্তা নিজের জন্য ছিল না বরং তিনি এই ভেবে সন্ত্রস্ত হয়েছিলেন যে হয়তো শত্রুরা তার বন্ধুরা জীবন নাশ করে দেবে, কিন্তু সে সময়ে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ছিলেন পাহাড়ের মত অনড়, অটল ও নিশ্চিত।শুধু যে নিজের তা নয় বরং সফর সঙ্গেকে অভয় দিয়ে বলেছিলেন, চিন্তিত হয়োনা আল্লাহ আমাদের সাথেই আছেন। (অর্থাৎ তাঁর সাহায্য আমাদের সাথেই রয়েছে)

আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন → আমি গিরী গুহায় রাসুলুল্লাহ (সাঃ) সাথে ছিলাম। তখন আমি কাফেরদের পদশব্দ শুনতে পেলাম। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল (সাঃ) তাদের কেউ যদি পা উঁচিয়ে দেখে তবে আমাদের দেখতে পাবে।তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেন → যে দুজনের সাথে আল্লাহ তৃতীয় জন তাদের ব্যাপারে তোমার ধারণা কি…? অর্থাৎ সেখানে আল্লাহ তৃতীয় জন হিসেবে ছিলেন। এটিই তিনি আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বলে বুঝিয়েছিলেন ( বুখারী ১৭৭) (তাছাড়া পুরো ঘটনাটির দেখেন, সীরাতে ইবন হিশাম)

ধৈর্যশীল ব্যক্তিঃ যারা দ্বিনের ওপর চলতে গিয়ে বিপদে শিকার হয় এবং ধৈর্য ধারন করে আল্লাহ তাদের সঙ্গেই থাকেন। আল্লাহ বলেন → হে মুমিনরা ! তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য চাও। নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন। ( সূরা বাকারা ১৫৩)

মানুষের দুটি অবস্থা হয়, আরাম ও স্বস্তি এবং কষ্ট ও অস্বস্তি। আরাম ও স্বস্তির সময় আল্লাহর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন এবং কষ্ট ও অস্বস্তির সময় ধৈর্য ধারন ও আল্লাহর নিকট সাহায্য কামনার তাকীদ করা হয়েছে। হাদিসে এসেছে → মুমিনের ব্যাপারে আশ্চর্যজনক বা অবাক করার মতো। তার জন্য আনন্দের কোন কিছু হলে, সে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। আর ক্ষতিকর কোন কিছু হলে সে ধৈর্য ধারণ করে। এই উভয় অবস্থা তার জন্য কল্যাণকর ( মুসলিম ২৯৯৯)

ধৈর্য দুপ্রকারের। প্রথম হলো, হারাম ও পাপ কাজ ত্যাগ করা ও তা থেকে দূরে থাকার উপর এবং লোভনীয় (অবৈধ) জিনিস বর্জন ও সাময়িক সুখ ত্যাগ করার উপর ধৈর্য ধারণ করা। এবং দ্বিতীয় হলো, আল্লাহর নির্দেশাবলী পালন করতে গিয়ে যে কষ্টের সম্মুখীন হতে হয়, তা ধৈর্য এ সংযমের সাথে সহ্য করা। কেউ কেউ সবর ও ধৈর্যের ব্যাখ্যা এইভাবে করেছেন, আল্লাহর পছন্দনীয় কর্মসমূহ সম্পাদন করা, তাতে দেহ ও আত্নায় যতই কষ্ট অনুভব হোক না কেন। আর আল্লাহর অপছন্দনীয় কর্মসমূহ থেকে দূরে থাকা তাতে প্রবৃত্তি ও কামনা তাকে সেদিকে যতই আকৃষ্ট করুক না কেন। সে আল্লাহর অপছন্দনীয় কাজ কখনো করবেনা। ( সূত্রঃ ইবনে কাসীর এবং তাফসীরে আহসানুল বায়ান)

অর্থাৎ আল্লাহকে সঙ্গে পেতে হলে আল্লাহকে যথাযথভাবে ভয় করতে হবে। জীবনের সর্বত্র তাঁর বিধি বিধান সমূহ যথাযথভাবে পালন করতে হবে এবং তার সৃষ্টির সঙ্গে বিনম্র আচরণ করতে হবে। আর কখনো আল্লাহ বিপদ আপদ দ্বারা পরিক্ষা নিলে ধৈর্য ধারণ করতে হবে।

আল্লাহ পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন → নিশ্চয়ই আল্লাহ তাদের সঙ্গে আছেন যারা আল্লাহভীরু ও অনূগ্রহকারী। ( সূরা নাহল আয়াত ১২৮)

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন → যে ব্যক্তি তার কঠিন সময়ে বিপদের সময়ে আল্লাহর কাছে দোয়া কবুল হওয়ার আনন্দ পেতে চায় সে যেন তার সচ্ছলতার সময় বেশি বেশি দোয়া করে। ( সুনানে তিরমিজি ৩৩৮২)

আল্লাহ যখন সঙ্গে থাকেনঃ হজরত কাতাদাহ (রহ.) বলেন → যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করবে আল্লাহ তার সঙ্গী হবেন, যার সঙ্গী আল্লাহ হবেন, তার সঙ্গী এমন একটি দল হবে যাদের পরাজিত করা যায় না ( ফেরেশতা) এমন পাহারাদার হবেন যিনি ঘুমান না এবং এমন পথপ্রদর্শক হবেন যিনি কখনো পথভ্রষ্ট হননা ( জামিউল উলুম ওয়াল হিকামঃ ২০/১৪)

আশা করি সবাই সবকিছু বুঝতে পেরেছেন। কোথাও সমস্যা হলে কমেন্ট করে জানাবেন অথবা ফেসবুকে জানাতে পারেন ফেসবুকে আমি