আসসালামু আলাইকুম সবাই কেমন আছেন…..? আশা করি সবাই ভালো আছেন । আমি আল্লাহর রহমতে ভালোই আছি ।আসলে কেউ ভালো না থাকলে TrickBD তে ভিজিট করেনা ।তাই আপনাকে TrickBD তে আসার জন্য ধন্যবাদ ।ভালো কিছু জানতে সবাই TrickBD এর সাথেই থাকুন ।
যে কিতাবের উপর ইবলিশ শয়তান আমল করে।
আজকে আমরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি। আমরা কে না চাই, যে আমাদের ঘরের মধ্যে ইবলিশ শয়তান যেন প্রবেশ করতে না পারে …? কেননা এ পৃথিবীর মধ্যে মানবজাতির জন্য সবচেয়ে বড় শত্রু হচ্ছে ইবলিশ । ইবলিশ আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছ থেকে চারটি শর্তে মানুষের ক্ষতি করার ওয়াদা পূর্ব থেকে নিয়ে নিয়েছে এবং এর শক্তি আল্লাহতালা তাকে কিয়ামত পর্যন্ত দিয়ে রেখেছেন।
আল্লাহর রাসূল (সাঃ) বিশেষ 30 মিনিট তথা আধঘন্টা পর্যন্ত ঘরের দরজা বন্ধ রাখলেই কখনো শয়তান আর ঘরে প্রবেশ করতে পারবে না বলে নির্দেশনা প্রদান করেছেন উম্মতের জন্য। শয়তান থেকে কেনা বাঁচতে চায়, সফলতার অন্যতম শর্ত হলো শয়তানের হাত থেকে রক্ষা পেয়ে আপনি আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের একত্ববাদের স্বীকৃতি দেওয়া এবং নেক আমল করা।
আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআনুল কারীমে বলেন →”অবশ্যই শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু ( সূরা বাকারা আয়াত ১৬৮)
পৃথিবীতে মানুষের সবচেয়ে বড় শত্রু হলো শয়তান। আল্লাহর অনুগ্রহ ছাড়া কোন মানুষের পক্ষে তার প্রতারণা থেকে আত্মরক্ষা করা সম্ভব নয়। শয়তান এর অর্থ হল বিদূরিত, বিতাড়িত, বঞ্চিত ইত্যাদি। শয়তান হক থেকে বিদূরিত এবং কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলে তাকে শয়তান বলা হয়। শয়তানের খাদ্য হলো হাড়, গোবর, ইত্যাদির ঘ্রাণ ও বিসমিল্লাহ বর্জিত খাদ্য।
রাসূল (সাঃ) বলেন→ যে খাবার গ্রহণের সময় বিসমিল্লাহ পড়া হয়না শয়তান তার নিজের জন্য বৈধ মনে করে নেয়। (বুখারি হাদিস নাম্বারঃ 5167)
শয়তানের পানীয় হলো মদ, শিকারের ফাঁদ হলো নারী, বার্তা বাহক হল গণক, শয়তানের কিতাব হল অশ্লীল কল্পিত গ্রন্থাবলী, কথা হলো মিথ্যে, শয়তানের মুয়াজ্জিন হলো বাঁশি, বাদ্যযন্ত্র, উপাসনালয় হলো বাজার।
আল্লাহ যখন শয়তানকে জান্নাত থেকে বের করে দেন তখন সে চারটি বিষয়ের আবেদন করে। আজকের এই আর্টকেলে আমরা সেই চারটি বিষয় কি এবং কিভাবে আপনি শয়তানের রাস্তা বন্ধ করে দিবেন এবং কিভাবে শয়তানের রাস্তা স্থায়ীভাবে ব্যারিকেড দিয়ে দিবেন। যেন কোনোভাবেই সে আপনার এরিয়ায় ঢুকতে না পারে এবং আপনার ক্ষতি করতে না পারে।
যে চারটি বিষয়ে আবেদন শয়তান করে শয়তানের চারটি বিষয়ে আল্লাহ সুবাহান আল্লাহ শয়তানকে প্রদান করেন।
১. আমাকে কিয়ামত পর্যন্ত জীবন লাভ করতে সুযোগ দিন। আল্লাহ তারে প্রার্থনা কবুল করেন। আল্লাহর বাণী, ইবলিশ বলল-আমাকে পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত সুযোগ দিন, আল্লাহতালা বললেন তুমি সুযোগ প্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত। (সূরা আরাফ আয়াত 15)
২. আমার জীবিকার ব্যবস্থা করতে হবে শয়তানের এই আবেদন কিন্তু আল্লাহ তালা কবুল করে নেন। শয়তানের জীবিকার ব্যবস্থাও কিন্তু আল্লাহ তালাই করে দেন এবং কিয়ামত পর্যন্ত করে দেবেন.
৩. আমাকে মানুষের দৃষ্টি শক্তির অন্তরাল হওয়ার সুযোগ দিতে হবে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর এই দোয়াটি ও কবুল করে নেন। যার ফলে আমরা শয়তানকে দেখতে পাই না। কিন্তু শয়তানের অনিষ্ট ও চক্রান্ত দ্বারা আমরা ঠিকই ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাই।
৪.আমি যেন মানব দেহের শিরা উপশিরায় চলাচল করতে পারি। আল্লাহতালা শয়তানের এই দোয়াটি ও কবুল করে নেন। মহানবীর সাল্লাহু সাল্লাম বলেন →অবশ্যই শয়তান আদম সন্তানের শিরা-উপশিরায় বিচরণ কর। (সহিহ বুখারি হাদিস নাম্বারঃ 1288, মুসলিম হাদিস নাম্বারঃ 2174)
এখন আমরা জানবো শয়তানের ক্ষতি থেকে কিভাবে আমরা বাঁচতে পারি। শয়তানের ক্ষতি থেকে বাঁচার জন্য বিভিন্ন ধরনের আমল কোরআন ও হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে কিভাবে আপনি শয়তানের রাস্তায় ব্যারিকেড জীবনে। তো সেখান থেকে আমরা চারটি রাস্তা নিয়ে আলোচনা করব।
এক নম্বর রাস্তা হচ্ছে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করা। আল্লাহ বলেন→ যখন কোরআন পাঠ করো তখন বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা ক’রো অর্থাৎ “আউযুবিল্লাহি মিনাশ শাইত্বনির রজীম” হে আল্লাহ আমি বিতারিত শয়তান থেকে আশ্রয় চাই এটি হলো শয়তান থেকে আশ্রয় চাওয়ার দুনিয়ার সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ এবং সহজ দোয়া। (সূরা নাহল আয়াত 98)
অর্থাৎ এটি পাঠের মাধ্যমে শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে বেঁচে থাকার রক্ষাকবচ বলা যেতে পারে। অনুরূপভাবে সুবাহানাল্লাহ, আসতাগফিরুল্লাহ, লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ, আল্লাহু আকবার, আয়াতুল কুরসী, সূরা ইখলাস, সূরা ফাতেহা ইত্যাদির কথা ও পবিত্র কোরআনে এবং বিভিন্ন হাদীসে এসেছে। এ দোয়া গুলোর মাধ্যমে শয়তান থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
দ্বিতীয় নাম্বার হচ্ছে কাজকর্মের সর্তকতা মহানবীর (সাঃ) বলেন “সূর্যাস্তের পর আধা ঘন্টা পর্যন্ত ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ রাখবে এবং বাচ্চাদের ঘরের বাহিরে যেতে দিবে না। কারণ এই সময় শয়তান চলাচল করে। ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ রাখলেই শয়তান প্রবেশ করতে পারে না সুতরাং সূর্যাস্তের পর আধঘন্টা ঘরের দরজা করে দেবে এবং দরজা বন্ধ সময় বিসমিল্লাহ বলবে। কেননা বিসমিল্লাহ বলে দরজা বন্ধ করলে শয়তান বন্ধ দরজা খুলতে পারে না। (সহিহ বুখারি হাদিস নাম্বারঃ 3304)
তৃতীয় নাম্বার হলো ভালো প্রবণতাকে প্রাধান্য দেওয়া। রাসূল (সাঃ) বলেন→” নিশ্চয়ই আদম সন্তানের উপর শয়তানের একটি প্রভাব আছে। অনুরূপ ফেরেশতাদের ও একটি প্রভাব আছে। শয়তানের প্রভাব হলো অকল্যাণকর প্রতিশ্রুতি দেওয়া এবং সত্যকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করা। আর ফেরেশতাদের প্রভাব হলো কল্যাণের প্রতিশ্রুতি দেওয়া এবং সত্যের প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করা।
সুতরাং যে ব্যক্তি কল্যাণ এর অবস্থা উপলব্ধি করে সে যেন জেনে রাখে এটি আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকেই হয়েছে কাজেই তার উচিত আল্লাহর প্রশংসা করা আর যে ব্যক্তি অকল্যাণ এর অবস্থা উপলব্ধি করে সে যেন অভিশপ্ত শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে।
অতঃপর রাসূল (সাঃ) এই আয়াতটি পাঠ করেন, “শয়তান তোমাদের দারিদ্র্যের ভয় দেখায় এবং অশ্লীলতার প্রতি নির্দেশ দেয় (সহিহ মুসলিম হাদিস নাম্বার 2174)
চতুর্থ নাম্বার হল নামাজে মনোযোগ সৃষ্টির। হযরত উসমান ইবনে আবুল আস রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (সাঃ) এর কাছে আরজ করি, হে আল্লাহর রাসূল! শয়তান আমার ও আমার নামাজের কিরাতের মধ্যে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় এবং তাদের জটিলতা সৃষ্টি করে।
রাসূল (সাঃ) যখন বললেন→ তুমি যখন তার উপস্থিতি অনুভব করবে তখন তার কুমন্ত্রণা থেকে মনে মনে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করবে এবং তোমার বাঁ দিকে তিনবার থুতু ফেলবে (সহিহ মুসলিম হাদিস নাম্বারঃ 2203, মিশকাত হাদিস নাম্বার 77)
রাসূল (সাঃ) আরও বলেন →শয়তান আল্লাহ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে আদম সন্তানের শিরা-উপশিরায় বিতরণ ও চলাফেরা করে আদম সন্তানকে পথহারা করে। মহানবী (সাঃ) বলেন →অবশ্যই শয়তান মানুষের শিরা উপশিরায় বিচরণ করে (সহিহ বুখারি হাদিস নাম্বারঃ 1288)
মনে রাখবেন সব মানুষের সঙ্গেই শয়তান আছে মহানবী (সাঃ) বলেন তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই যার সঙ্গে কাউকে সঙ্গী নিযুক্ত করা হয়নি।সাহাবারা বললেন→ হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। আপনার সঙ্গেও কি জিন সঙ্গী নিযুক্ত আছে…? রাসূল (সাঃ) বললেন হ্যাঁ আমার সঙ্গেও আছে। তবে আল্লাহ তাআলা তার উপর আমাকে বিজয়ী করেছেন, ফলে সে আমার অনুগত হয়ে গেছে। সে আমাকে কল্যাণকর কাজ ছাড়া অন্য কোন কাজের পরামর্শ দেয় না।( তিরমিজি হাদিস নাম্বারঃ 1172)
আশা করি সবাই সবকিছু বুঝতে পেরেছেন। কোথাও সমস্যা হলে কমেন্ট করে জানাবেন অথবা ফেসবুকে জানাতে পারেন ফেসবুকে আমি