আসসালামু আলাইকুম সবাই কেমন আছেন…..? আশা করি সবাই ভালো আছেন । আমি আল্লাহর রহমতে ভালোই আছি ।আসলে কেউ ভালো না থাকলে TrickBD তে ভিজিট করেনা ।তাই আপনাকে TrickBD তে আসার জন্য ধন্যবাদ ।ভালো কিছু জানতে সবাই TrickBD এর সাথেই থাকুন ।
মোহরানা না দিয়ে স্ত্রীকে স্পর্শ করা যাবে কি…?
স্ত্রীকে স্পর্শ করার একমাত্র উপায় হলো বিবাহ সম্পন্ন করা। বিয়ে সম্পন্ন করার শর্ত তিনটিঃ
১. প্রস্তাব দেওয়া ও কবুল করা,
২. দেনমোহর দেওয়া
৩. কমপক্ষে দুইজন সাক্ষী থাকা।( বুখারি হাদিস নাম্বারঃ ৪৭৪১, তিরমিজি হাদিস নাম্বারঃ ১০২১, মুসনাদে আহমাদ হাদিস নাম্বারঃ ১০৭২)
প্রিয় পাঠক আজকে আমাদের আলোচ্য বিষয় হলো দেনমোহর বা মোহরানা আদায় না করে স্ত্রী সহবাস করলে সেটা বৈধ হবে কিনা..?নাকি সেটা যেনা হয়ে যাবে….? এছাড়া এ প্রসঙ্গে আরও প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন হলোঃ
১. মোহরের টাকা পরিশোধ না করে কি স্ত্রীকে স্পর্শ করা যাবেনা…?
২.মোহরের সম্পূর্ণ টাকা বাসর রাত্রেই কি পরিশোধ করতে হয়…?
৩. স্বামী কি স্ত্রীর কাছে ঐ রাতে দেনমোহরের টাকা মাফ চাইতে পারবে…?
৪. স্ত্রী যদি মাফ করে দেন তাহলে ভবিষ্যতে কি দেনমোহরের টাকা পরিশোধ করতে হবে নাকি পরিশোধ করতে হবে না…?
৬. অনেকেই ১০ থেকে ১২ লক্ষ টাকা দেনমোহর ধার্য করে থাকে অথচ এক সময় এই টাকা পরিশোধ করা স্বামীর পক্ষে সম্ভব হয় না। তখন তার হুকুম কি…? অনেক সময় বংশমর্যাদা অনুযায়ী বড় অংকের মোহরানা ধার্য করতে দেখা যায়। এটা কি ঠিক…?
প্রিয় পাঠক আজকের আর্টিকেলটি ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ তাই বিস্তারিত জানতে আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন।
উত্তরঃ মোহরানা দেনমোহর স্ত্রীর প্রাপ্য একটা ঋণ বিশেষ!স্ত্রীর দেনমোহর স্বামীর উপর অবশ্য পরিশোধ বিষয়। এটি ফরজ। এজন্য যতটুকু পরিমাণ স্বামীর পক্ষে পরিশোধ করা সম্ভব হবে সেই পরিমানই দেনমোহর ধার্য করা কর্তব্য। না দেওয়ার ইচ্ছে পোষণ করে মোটা অংকের দেনমোহর ধার্য করে সম্পাদিত বিয়ে শুদ্ধ হয়না! দেনমোহর একান্তভাবেই স্ত্রী প্রাপ্য।
স্ত্রী যদি ইচ্ছে করেন, তবে তাকে স্পর্শ করার আগেই স্বামীকে তা আদায় করে দিতে বাধ্য করতে পারেন। তবে যদি পরস্পরের সম্মতি ক্রমে সময় নেওয়া হয়, তবে তা বৈধ হবে অর্থাৎ বিলম্বে ও পরিশোধ করা যাবে। বাসর রাতে স্বামী কর্তৃক স্ত্রী নিকট দেনমোহর মাফ চাওয়া নিতান্ত কাপুরুষোচিত একটি প্রথা।নতুন স্ত্রী লজ্জার খাতিরে হয়তো অনেক সময় মাফ করে দিলাম বলে দেয়, কিন্তু যেহেতু সন্তুষ্টচিত্তে সেই ঋণ ক্ষমা করা হয়না, তাই এরূপ ক্ষমা চাওয়া অর্থহীন লজ্জাজনক।
বিয়ের মোহরানা সম্পর্কে পবিত্র কোরআন কি বলে…? মহান আল্লাহ তা’আলা বলেন→ তোমরা নারীগণকে তাদের মোহরানা বা একটি নির্দিষ্ট উপহার দিবে। যদি তারা সন্তুষ্টচিত্তে মোহরানার কিছু অংশ ছেড়ে দেয়, তোমরা তা স্বাচ্ছন্দে ভোগ করবে। (সূরা নিসা আয়াত ৪)
পবিত্র কোরআন নারীর পারিবারিক অধিকার রক্ষার জন্য স্বেচ্ছায় ও সন্তুষ্টচিত্তে মোহরানা পরিশোধ করতে বিবাহিত পুরুষের প্রতি নির্দেশ দিয়েছে এবং এ ব্যাপারে সব ধরনের কঠোরতা ও কর্কশ আচরণ পরিহার করতে বলেছে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেছেন →মোহরানা ফিরিয়ে নেওয়া বা এর অংশবিশেষ ফিরিয়ে নেওয়া তোমাদের জন্য বৈধ নয়। যদি তারা অর্থাৎ স্ত্রীরা নিজেরাই খুশি মনে মোহরানার কিছু অংশ ফিরিয়ে দিতে চায়, তাহলে তা গ্রহণ করা যেতে পারে। (সূরা নিসা আয়াত ৪)
এই আয়াতে উল্লেখিত নাহলেও শব্দটির অর্থ হলো মৌচাকের মৌমাছি। মৌমাছি যেমন কোন স্বার্থের আশা না করেই মানুষকে মধু দিয়ে থাকে, সে রকম পুরুষেরও উচিত হবে জীবনসঙ্গীকে দাম্পত্য জীবনের মধু হিসাবেই মোহরানা দেয়া। আর যা উপহার হিসেবে দেওয়া হয় সে উপহার তা ফিরে পাবার আশা করা কি অন্যায় নয় কি..? এই আয়াতের শিক্ষণীয় দিকগুলো হলোঃ
প্রথমতঃ স্ত্রীর প্রাপ্য মোহরানা তার ক্রয় মূল্য নয়, বরং এটা স্ত্রীর প্রতি স্বামীর ভালোবাসার নিদর্শন ও উপহার। কোরআনের আয়াতে মহারানা শব্দটিকে বলা হয়েছে, যা ছাদাক্কাত বা আন্তরিকতা শব্দ থেকে উদ্ভূত।
দ্বিতীয়ঃ মোহরানা স্ত্রীর অধিকার এবং স্ত্রীই এর মালিক। স্ত্রীকে মোহরানা দেওয়া যেমন বন্ধ রাখা যায়না, তেমনি তা ফেরতও নেওয়া যায় না।
তৃতীয়তঃ মোহরানা মাফ করার জন্য স্ত্রীর বাহ্যিক সন্তুষ্টি যথেষ্ট নয়। এর জন্য স্ত্রীর প্রকৃত ও আন্তরিক সন্তুষ্টি জরুরি। মহানবী (সাঃ) বলেছেনঃ যে কোনও ব্যক্তি কোন মহিলাকে কম বেশী মোহরের বিনিময়ে বিবাহ করেছে, কিন্তু মনে মনে তার হক আদায় দেওয়া নিয়ত রাখেনি তাকে ধোঁকা দিয়েছে, অতঃপর তারা হক আদায় না করেই সে মারা গিয়েছে, তাহলে সে ব্যক্তি কেয়ামতের দিন ব্যাভিচারী বা যেনাকার হয়ে আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাত করবে।( ত্বাবারানী সহিহ আত তারগীব হাদিস নাম্বারঃ ১৮০৭)
এখন প্রশ্ন এসে যায়, দেনমোহর এর সর্বনিম্ন পরিমাণ কত বা কি হতে পারে…? এ সম্পর্কে ইমাম ইবনুল কায়্যিম (রহঃ) বলেন →”কোনো বস্তু বা সেবা যার মূল্য আছে তাই মাহার হিসাবে ধার্য করা যেতে পারে” যেমন– সোনা-রুপার, টাকা-পয়সা, জমি জমা, ফলমূল ইত্যাদি। আর সেবার উদাহরণ হলোঃ ভেড়া চরানো,সেচ দেয়া, ফল তোলা, কুরআন শিক্ষা দেওয়া ইত্যাদি।মাহারের সর্বাধিক পরিমাণের ক্ষেত্রেও নির্দিষ্ট কোনো সীমা নেই। এ ব্যাপারে সকল আলিম ঐক্যমত পোষণ করেছেন। (সূত্রঃ আল মুগনী খন্ড ৬;পৃষ্ঠা ৬৮১)
আর বিবাহের পর উভয় পক্ষের সম্মতিতে পূর্ব নির্ধারিত মাহারের হ্রাস বৃদ্ধি করা উভয়েই জায়েয।( সূরা আন নিসা আয়াত ৭৮)
অর্থাৎ বিবাহের পরে স্বামী বা স্ত্রী যদি চায় তাহলে নির্দিষ্ট পরিমাণ থেকে বাড়াতেও পারে আবার কমাতেও পারে। তবে বর্তমানে আধুনিকতার নামে নোংরামি পদ্ধতিতে যে বিবাহ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে, দুনিয়াবী মান-মর্যাদার দোহাই দিয়ে কোরআন-হাদিসের আদেশ নিষেধকে এড়িয়ে গিয়ে গুরুত্ব না দিয়ে (বর) পক্ষকে গরু কাটা করা হয়। যা ইসলামে বৈধ বলে বিবেচিত হবে কিনা আসুন একটু জেনে নেই —
সুন্নতি তথা মহানবী (সাঃ) এর দেখানো নিয়ম পদ্ধতিতে বিবাহ হলে পাত্রের সাধ্যমতো দেনমোহর নির্ধারণ করা উচিত। কেননা অতিরিক্ত দেনমোহরের চাপে পিষ্ঠ (বর) অবশেষে ব্যর্থ হয়ে বৌয়ের কাছেই ক্ষমা চেয়ে নেয় অথবা মাফ চেয়ে নেয়। যা ইসলামী শরীয়তের সম্পন্ন বিরোধী। দ্বীনের প্রতিটা কাজ মহান রাব্বুল আলামিন সহজ করে দিয়েছেন। তাই বরের সাধ্যের মধ্যে দেনমোহর নির্ধারণ করুন! বিয়েকে সহজ করে দিন আল্লাহর হুকুম দুনিয়ার বুকে সুপ্রতিষ্ঠিত করুন।হাদীসে আছে, যে বিয়েতে খরচ কম হয়,সেই বিয়েই বরকতময়। (মুসনাদে আহমদ হাদিস নাম্বারঃ ২৪৫২৯)
আফসোস! বর্তমান সমাজের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই যেনা-ব্যভিচার বাজার হলো সস্তা!!! আর বিয়ের বাজার হলো আকাশচুম্বী।তাই অনেকেই স্ত্রী পালার সামর্থ্য অর্জন করলেও শুধু অযথা বিয়ের আকাশচুম্বী খরচের ভয়ে বিয়ে করতে দেরি করে। অথচ রাসূল (সাঃ) যুবকদের উদ্দেশ্যে বলেন →তোমাদের মধ্যে যারা সামার্থ্য রাখ। তাদের উচিত বিয়ে করে ফেলা। কেননা বিয়ে দৃষ্টি অবনতকারী ও লজ্জাস্থানকে হেফাজতকারী। আর যার সামর্থ্য নেই তার উচিত রোজা রাখা। কেননা রোজা যৌন উত্তেজনা প্রশমনকারী (সহিহ বুখারি হাদিস নাম্বার ৫০৬৬, সহিহ মুসলিম হাদিস নাম্বারঃ ১৪০০)
তাই বর কনে উভয়পক্ষের অভিভাবকদের উচিত বিবাহের ক্ষেত্রে দ্বীনদারীতাকে প্রাধান্য দিয়ে লৌকিকতা পরিহার করে সামর্থ্যনুযায়ী অনুযায়ী বিবাহের ব্যবস্থা করা। অর্থাৎ আজকের আর্টিকেলে সারমর্ম হলোঃ দেনমোহর বিয়ের আকদের পর প্রদান করতে কোন সমস্যা নেই। তবে সহবাসের পূর্বে প্রদান করাই উত্তম। তবে যদি স্ত্রী যদি দেনমোহর প্রদান করা ছাড়াই সহবাসের অনুমতি প্রদান করে তাহলে কোন সমস্যা নেই।
বাকি দেনমোহর প্রদান করা ছাড়া প্রথম সহবাসের পূর্বে স্ত্রী বাধা প্রদান করতে পারবে। কিন্তু একবার সহবাস হয়ে গেলে আর বাঁধা প্রদান করতে পারবে না। কিন্তু স্বামীর জিম্মায় দেনমোহর আদায় না করলে তা ঋণ হিসাবে বাকি থেকে যাবে। স্ত্রী যদি উক্ত দেনমোহর মাফ না করে, আর স্বামীও যদি তা পরিশোধ না করে, তাহলে কিয়ামতের ময়দানে স্বামীকে ব্যাভিচারী বা যেনাকারী অপরাধী হিসাবে সাব্যস্ত করা হবে। তাই দেনমোহরের টাকা পরিশোধ করে দেওয়া জরুরি।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তা’আলা বলেন →আর তোমরা স্ত্রীদেরকে তাদের মোহর দিয়ে দাও খুশীমনে। তারা যদি খুশি হয়ে তা থেকে অংশ ছেড়ে দেয়, তবে তা তোমরা স্বাচ্ছন্দে ভোগ কর।( সূরা নিসা আয়াত ৪)
আল্লাহ তা’আলা আরও বলেন→ অন্তত তাদের মধ্যে যাকে তোমরা গ্রহণ করবে, তাকে তার নির্ধারিত হক দান করো। তোমাদের কোন গোনাহ হবে না। যদি নির্ধারণের পর তোমরা পরস্পর সম্মত হও। নিশ্চয়ই আল্লাহ সুবিজ্ঞ ও রহস্যবিদ। (সূরা নিসা আয়াত ২৪)
মহান রাব্বুল আলামিন আরো বলেছেন →তোমাদের জন্যে হালাল হলো সতী-সাধ্বী মুসলিম নারী এবং তাদের সতী-সাধ্বী নারী যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে, তোমাদের পূর্বে,যখন তোমরা তাদেরকে মোহরানা প্রদান করো, তারা তোমাদের জন্যে হালাল। (সূরা মায়েদা আয়াত ৫)
আল্লাহ তা’আলা আরও বলেন→ তোমরা এই নারীদেরকে মোহরানা দিয়ে বিবাহ করলে তোমাদের অপরাধ হবে না। (সূরা মুমতাহিনা আয়াত ১০)
Trickbd তে অনেকেই পোস্ট কতে চান কিন্তু করতে পারছেন না। আপনারা Ictbn.Com ওয়েবসাইটে পোস্ট করতে পারেন।এখানে একাউন্ট করলেই author।এখানে প্রতি পোস্টের জন্য ৫-৫০ টাকা পর্যন্ত দেওয়া হয়।পোস্টের মানের উপর ভিত্তি করে। ICTBN.Com
আশা করি সবাই সবকিছু বুঝতে পেরেছেন। কোথাও সমস্যা হলে কমেন্ট করে জানাবেন অথবা ফেসবুকে জানাতে পারেন ফেসবুকে আমি