আসসালামু আলাইকুম সবাই কেমন আছেন…..? আশা করি সবাই ভালো আছেন । আমি আল্লাহর রহমতে ভালোই আছি ।আসলে কেউ ভালো না থাকলে TrickBD তে ভিজিট করেনা ।তাই আপনাকে TrickBD তে আসার জন্য ধন্যবাদ ।ভালো কিছু জানতে সবাই TrickBD এর সাথেই থাকুন ।

যে ৪টি কারণে আমাদের ঘর থেকে বরকত চলে যায়।

অনেকের অভিযোগ আয় রোজগার ভালো হওয়া সত্ত্বেও অভাব দূর হয় না। সংসারে টানাটানি লেগেই থাকে। দিনরাত পরিশ্রম করেও সুখের দেখা মিলে না। কোথায় যেন কি নেই এমন একটা বিষয়। আসলেই একটা জিনিসই নেই সেটা হলো বরকত।বরকত হলো আল্লাহ প্রদত্ত বিষয়। এটা অর্জন করতে হয় বিভিন্ন আমল দোয়া ও সৎ কর্মের মাধ্যমে। আল্লাহ সম্পদে বরকত দিলেই অল্পতেই অনেক হয়, আরো বরকত না হলে কাড়ি কাড়ি ধন-সম্পদ থাকলেও পর্যাপ্ত মনে হয়না। ইসলামি স্কলারদের মতে, বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের কারণে মানুষের সম্পদের বরকত চলে যায়। এখানে জীবন-জীবিকা থেকে বরকত দূড়িভূত হওয়ার চারটি মূল কারণ উল্লেখ করা হলো

প্রথম কারণ হলোঃ প্রাপ্ত বয়স ও পর্যাপ্ত ধন-সম্পদ থাকার পরেও যারা বিবাহ করে না বা বিবাহ দেয় না। সেই ঘরে বরকত থাকেনা। আমাদের অনেক পিতা-মাতার মধ্যে এই বাজে অভ্যাসটি অনেক বেশী চর্চা হয়। তাঁরা সন্তানকে এক প্রকার জেনা করার লাইসেন্স দিয়ে দেয়, কিন্তু বিয়েকে কঠিন করে রাখে। অথচ সেই পিতা-মাতা নামাজ রোজা হজ্জ যাকাত ইত্যাদি সবই পালন করে এসবের কিছুই বাদ দেয় না। কিন্তু বুঝে না বুঝে সন্তানকে জিনার দিকে ধাবিত করছেন প্রকারান্তরে।তাই বিশেষ করে ঘরে বিবাহযোগ্য ছেলে মেয়ে থাকলে তাঁদের বিবাহের ব্যবস্থা করতে হবে। সামর্থ্যবান যুবক এবং তার পিতামাতার প্রতি এটি বেশি বর্তায়। কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু সাল্লাম যুবকদের উদ্দেশ্যে বলেনঃহযরত ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন আমরা নবী সাল্লাহু সাল্লাম এর সাথে কিছু যুবক ছিলাম যাদের কিছুই ছিল না। তখন রাসূল সাল্লাহু সাল্লাম আমাদের উদ্দেশ্য করে বলেন →এই যুবসমাজ তোমাদের মধ্যে যারা সামর্থ্য রাখ তাদের উচিত বিয়ে করে ফেলা। কেননা বিয়ে দৃষ্টি অবনতকারী ও লজ্জাস্থানকে হেফাজতকারী। আর যার সামর্থ্য নেই তার উচিত হবে রোজা রাখা। কেননা রোজা যৌন উত্তেজনা প্রশমনকারী। (সহিহ বুখারি হাদিস নাম্বারঃ ৫০৬৬)

এক্ষেত্রে পিতা-মাতার যদি রাজি না হয় তাহলে আপনি আপনার অন্য কারো সাহায্য নিয়ে তাদের বোঝানোর ব্যবস্থা করতে পারেন। সেটাও না হলে আপনার সামর্থ্য থাকলে (যেকোনো ভাবেই অভিভাবকে রাজি করিয়ে) বিয়ে করে নিন। কারন আপনার বিবাহের বিলম্বের কারণে যদি আপনার দ্বারা কোন পাপ সংঘটিত হয়ে যায় যেমন আপনি যদি জেনা ব্যভিচারে লিপ্ত হয়ে যান, তাহলে সেটার জন্য আপনার পিতা মাতা ও শাস্তি ভোগ করবে। তাই বড় কোন গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার জন্য আপনার সামর্থ্য থাকলে অবশ্যই বিয়ে করে নিন। আর যদি পিতা-মাতা বিয়ে না করানোর পেছনে যৌক্তিক কারণ থাকে তাহলে সিয়াম পালনের মাধ্যমে নিজের যৌবনকে সংযত রাখবেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু সাল্লাম বলেছেন→ তোমাদের মাঝে যার কোন (পুত্র বা কন্যা) সন্তান জন্ম হয় সে যেন তার সুন্দর নাম রাখে এবং তাকে যেন উত্তম আদব কায়দা শিক্ষা দেয়। যখন সে বালেগ অর্থাৎ সাবালক বা সাবালিকা হয়, তখন যেন তার বিবাহ দেয়, যদি সে বালেগ হয় এবং তার বিয়ে না দেয় তাহলে, সে কোন পাপ করলে উক্ত পাপের দায়ভার তার পিতা মাতার উপর বর্তাবে। ( বাইহাকি হাদিস নাম্বার ৮১৪৫)

বিবাহের ক্ষেত্রে ছেলে মেয়ের বয়সের মাঝে বেশি পার্থক্য থাকা উচিত নয় বরং বয়সের পার্থক্য কম থাকা উত্তম। এটা আমরা বুঝতে পারি হযরত ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু তালা আনহার বিয়ের দিকে তাকালেই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু সাল্লাম তার কম বয়সী মেয়ে ফাতেমাকে বিবাহ দিয়েছেন কাছাকাছি বয়স্ক হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু তা’আলা এর সঙ্গে। ( সূত্রঃ মওসূআতু হায়াতুস সাহাবিয়্যাত ৬২১)

দ্বিতীয় কারণ হলোঃ পাপাচারের কারণে।যায় কারণে ঘরে বরকত স্হায়ী হয় না। গুনাহের কারণে যেমন মানুষের আজব গজব নাজিল হয়, তেমনি জীবিকার বরকত দূরীভূত হয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন →যদি সে সব জনপদের অধিবাসীরা ঈমান আনত ও তাকওয়া অবলম্বন করত তাহলে আমি তাদের জন্য আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর বরকত( কল্যাণ ও প্রাচুর্য) উন্মুক্ত করে দিতাম। কিন্তু তারা তা প্রত্যাখ্যান করেছিল, সুতরাং তাদের কৃতকর্মের জন্য তাদের শাস্তি দিয়েছি( সূরা আরাফ আয়াত ৯৬)

তৃতীয় কারণ হলোঃ প্রাপ্ত রিজিক ও তাকদীরে সন্তুষ্ট না থাকা। আল্লাহ তায়ালা বান্দাদের জন্য রিজিক বন্টন করে থাকেন। মানুষ আল্লাহ প্রদত্ত রিজিকের উপর সন্তুষ্ট থাকলে তার জীবিকায় বরকত লাভ হয়। পক্ষান্তরে ওই রিজিকের উপর সন্তুষ্ট না হলে তাদের জীবিকার বরকত চলে যায়। হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু সাল্লাম বলেন →আল্লাহ বান্দাকে প্রদত্র জিনিসের মাধ্যমিক পরীক্ষা করে থাকেন। যা তার জন্য নির্ধারণ করেছেন তাতে যদি সে সন্তুষ্ট থাকে, তাহলে আল্লাহ তাতে বরকত দান করেন এবং তাকে আরও বৃদ্ধি করে দেন আর যদি সন্তুষ্ট না হয় তাহলে তাতে বরকত দেন না। (মুসনাদে হাদিস নাম্বারঃ ২০২৭৯)

চতুর্থ নাম্বার হলোঃ কৃপণতা ও ব্যয়কুন্ঠতা। কৃপনতা মানুষকে পাপাচারে লিপ্ত করে, যা ইহকালীন ও পরকালীন জীবনে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণ। নবী করিম সল্লালাহ সালাম বললেন →তোমরা কৃপণতার ব্যাপারে সাবধান হও। কেননা তোমাদের পূর্ববর্তীরা কৃপণতার কারণে ধ্বংস হয়েছে। অর্থলোভ তাদের কৃপণতার নির্দেশ দিয়েছে, ফলে তারা কৃপণতা করেছে। তারা তাদের আত্মীয়তা ছিন্ন করার নির্দেশ দিয়েছে, তখন তারা তাই করেছে এবং তাদের পাপাচারী প্ররোচিত করেছে তখন তারা তাতে লিপ্ত হয়েছে।( সূত্র সুনানে আবু দাউদ হাদিস নাম্বারঃ ১৬৯৮)

আবার অপচয় ও অপব্যয় করলেও ঘর থেকে দূর হয়ে যায়। অর্থাৎ বাজে কাজের জন্য খরচ করাতেই অপব্যয় বলে। এটা মানুষের একটা নিন্দনীয় স্বভাব, যার কারণেই তার মধ্যে চৌর্যবৃত্তি, অন্যের সম্পদ আত্মসাৎ, উৎকোচ গ্রহণ ইত্যাদি দুশ্চরিত্রত স্বভাব বিস্তার করে। ইসলাম এগুলোকে নিষিদ্ধ করেছে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা’আলা বলেন →তোমরা খাও ও পান করো। কিন্তু অপচয় করো না। নিশ্চয় আল্লাহ অপচয়কারীদের ভালবাসেন না। (সূরা আরাফ আয়াত ৩১)

এ ছাড়া সুদের আদান-প্রদানের অভ্যাসের কারণেও ঘর থেকে বরকত উঠে যায়। সম্পদ বাড়ানোর জন্য মানুষ সুদ গ্রহণ করে। অথচ সুদের আদান-প্রদানে জীবিকার বরকত দূর হয়ে যায়। আল্লাহ তায়ালা বলেন→ আল্লাহ সুদকে নিঃশেষ করেন ও সদকায় প্রবৃদ্ধি দান করেন।( সূরা বাকারা আয়াত ২৭৬)

আর নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় না করার অভ্যাসের কারণে ঘর থেকে বরকত চলে যায়। আল্লাহ তায়ালা অশেষ নিয়ামত দ্বারা আমাদেরকে বেষ্টন করে রেখেছেন।রিজিক তার মধ্যে অন্যতম নিয়ামত। এসব নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় না করলে ঘরে বরকত থাকেনা ও কল্যাণ লাভ হবেনা। আল্লাহ তায়ালা বলেন →যদি তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার করো, তাহলে আমি অবশ্যই তোমাদের আরো বেশি বেশি দিয়ে দেবো। আরো যদি অকৃতজ্ঞ হও, তাহলে (মনে রেখো) আমার শাস্তি অত্যন্ত কঠোর। ( সুরা ইবরাহিম আয়াত ৭)

প্রিয় পাঠক ঘরে বরকত ধরে রাখার জন্য আমাদেরকে উক্ত বিষয়গুলো মাথায় রেখে জীবন পরিচালিত করতে হবে। তবেই আমাদের ঘরে বরকতে পরিপূর্ণ হবে ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ তায়ালা আমাদের প্রত্যেককেই যেন সুস্থ রাখেন, সুন্দর রাখেন, নিরাপদে রাখেন এই কামনাই আজকের আর্টিকেলটি এখানেই সমাপ্তি।

আপনার ওয়েবসাইটের জন্য আর্টিকেল প্রয়োজন হলে আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন ফেসবুকে আমি

One thought on "আসুন জেনে নেই। যে ৪টি কারণে আমাদের ঘর থেকে বরকত চলে যায়।"

Leave a Reply