আসসালামু আলাইকুম সবাই কেমন আছেন…..? আশা করি সবাই ভালো আছেন । আমি আল্লাহর রহমতে ভালোই আছি ।আসলে কেউ ভালো না থাকলে TrickBD তে ভিজিট করেনা ।তাই আপনাকে TrickBD তে আসার জন্য ধন্যবাদ ।ভালো কিছু জানতে সবাই TrickBD এর সাথেই থাকুন ।
উলঙ্গ হয়ে ঘুমানো যাবে কি…?
আজকে আমরা বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ ।আশা করি আপনারা সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়বেন। মানুষের ঘুম বা নিদ্রাও মহান আল্লাহর কুদরতের নিদর্শনসমূহের অন্যতম। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ আর তার নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে রাতে ও দিনে তোমাদের নিদ্রা। (সূরা রুম আয়াত ২৩)
অন্যত্র মহান আল্লাহতালা ইরশাদ করেছেন →আমি তোমাদের নিদ্রাকে করেছি বিশ্রাম, রাতকে করেছি আবরণ এবং দিনকে করেছি জীবিকা আহরণের সময়। (সূরা নাবা আয়াত ১১)
প্রিয় পাঠক আজ আমরা জানবো উলঙ্গ হয়ে ঘুমালে কি হয় এবং উলঙ্গ হয়ে গোসল করলে কি হয় এবং স্বামী স্ত্রী একসাথে গোসল করলে বা অযু করলে কি হয়…? এবং স্বামী স্ত্রী একসাথে গোসল করতে পারবে কিনা…? এই সমস্ত বিষয়ে আজকে আমরা আলোচনা করবো ইনশাআল্লাহ।
উলঙ্গ হয়ে ঘুমালে কি হয় এ বিষয়ে হাদীস শরীফে একা থাকা অবস্থায় আংশিক কিংবা পূর্ণ উলঙ্গ থাকাকেও অনুৎসাহিত করা হয়েছে। কিন্তু সেটা কেন তা জানতে হলে আমাদের আরও কয়েকটি হাদিসের দিকে মনোনিবেশ করতে হবে। তার আগে আর একটি কথা বলে রাখা জরুরি। ধরুন আপনি উলঙ্গ হয়ে ঘুমালেন। এমত অবস্থায় আপনার বাড়িতে আগুন লেগেছে বা আকস্মিক কোনো দুর্ঘটনা হচ্ছে বা হঠাউ কোন বিপদের সম্মুখীন যেমন ভূমিকম্প হচ্ছে, আগুন লাগছে বা পাশের রুমে কেউ বিপদে পড়ে চিৎকার দিয়েছে।
অর্থ যাই হোক না কেন হঠাৎ কোনো বিপদের সম্মুখীন হলে আপনার সাথে সাথেই ঘুম থেকে উঠে ঘর থেকে বের হয়ে যেতে পারবেন না। কারণ আপনার পরনে জামাকাপড় নেই। তাই এক্ষেত্রে আমাদের প্রত্যেককেই ঘুমানোর সময় সতর ঢাকা অবস্থায় ঘুমোতে হবে এবং এটাই আল্লাহর রাসূলের নির্দেশ। তো আমরা এখন এ সম্পর্কিত হাদিস গুলো জেনে নেই।
হযরত ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু সাল্লাম বলেছেন→ তোমরা নগ্নতা হতে বেঁচে থাকো। কেননা তোমাদের এমন সঙ্গী আছেন যারা প্রস্রাব-পায়খানা ও স্বামী স্ত্রী সহবাসের সময় ছাড়াও অন্য যেকোনো সময়ে তোমাদের হতে আলাদা হয় না। সুতরাং তাদের লজ্জা করো এবং সম্মান করো।( সুনানে তিরমিজি হাদিস নাম্বারঃ ২৮০০)
হযরত জাবির রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম বলেছেন→ আল্লাহ তায়ালা ও পরকালের প্রতি যে লোক ঈমান রাখে সে যেন জামা কাপড় গামছা লুঙ্গি পরিহিত অবস্থা ছাড়া গোসল খানায় প্রবেশ না করে। অর্থাৎ সে যেন উলঙ্গ হয়ে গোসল খানায় প্রবেশ না করে। (সুনানে তিরমিজি হাদিস নাম্বারঃ ২৮০১)
একটি হাদীসে এসেছে মুয়াবিয়া বিন হাইদা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত। যে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেছেনঃ যে তুমি তোমার স্ত্রী ছাড়া অপরের নিকট হতে তোমার লজ্জাস্থানকে সর্বদা রক্ষা করো অর্থাৎ ঢেকে রাখবে। আমি বললাম- ইয়া রাসুলাল্লাহ (সাঃ)! বলুন! যদি কোন ব্যক্তি নির্জনে একাকী থাকে!( তখন কি তার সতর ঢেকে রাখতে হবে..? তখন তিনি বললেন হ্যাঁ) আল্লাহ তায়ালাকে অধিক লজ্জা করা উচিত।( জামে তিরমিজি হাদিস নাম্বারঃ ২৭৬৯)
অন্য আরেকটি বর্ণনায় নবী করিম সল্লালাহ সালাম বলেছেন →লজ্জা করার ব্যাপারে মানুষের চেয়ে আল্লাহ তালায় বেশী হকদার। (সুনানে আবু দাউদ হাদিস নাম্বারঃ ৪০১৭)
অর্থাৎ উলঙ্গ হয়ে ঘুমালে প্রথমত মানুষের লজ্জা কমে যায় এবং এতে আল্লাহর হক নষ্ট হয়। কারণ রাসূলে কারীম সাল্লাহু সাল্লাম বলেছেন→ আল্লাহকে অধিক লজ্জা করা উচিত এবং লজ্জার ব্যাপার এই আল্লাহই বেশী হকদার। তবে হ্যাঁ কারো যদি কোন ওজর থাকে, যেমন কোনো অসুস্থতা বা কোনো দুর্ঘটনা কেটে যাওয়া বা পুড়ে যাওয়ার ফলে তাকে যদি কিছুটা উলঙ্গ হয়ে ঘুমাতে হচ্ছে, সেই ক্ষেত্রে তা জায়েয আছে। কারণ আল্লাহ তাআলা বলেন →আল্লাহ তাআলা তার সাধ্যের বাইরে কাউকে কোন কাজ চাপিয়ে দেন না।( সূরা বাক্বারাহ ২৮৬)
দ্বিতীয়তঃ উলঙ্গ হয়ে ঘুমানোর ফলে কোন পোকামাকড় জাতীয় প্রাণী যেমন পিঁপড়ে, টিকটিকি, তেলাপোকা, ছারপোকা ইত্যাদি আমাদের লজ্জাস্থানের ক্ষতি করার সম্ভাবনা থাকে। আর লজ্জাস্হান যেহেতু অনেক সেনসিটিভ হয়ে থাকে তাই সামান্য আঘাতেই বা কামড়ে অনেক ক্ষতি হতে পারে। রাসূলে কারীম সাল্লাহু সাল্লাম বলেছেন →দ্বীন হচ্ছে হক আদায় /আদব রক্ষা এবং শুভকামনা। (সাহাবীরা জিজ্ঞেস করলো) আমরা জিজ্ঞেস করলাম কার…?
তিনি বললেন আল্লাহ ও তাঁর কিতাবের, তাঁর রাসূলের, মুসলিম ঈমানদারের এবং সকল মুসলিমের। আর উযু হলো দ্বীনের অংশ। অযুর সুন্নাহ তথা আদব বা হক কখনো উলঙ্গ হয়ে তা সম্পাদন করা হতে পারে না। শয়তানের ওয়াসওয়াসায় পড়ে ও পবৃত্তির অনুসরণ করে নামাজ পড়লে ক্বলুের শর্ত এই উযুর ক্ষেত্রে উলঙ্গ হয়ে ওযু করা দ্বীন মনে করা শয়তানের ওয়াসওয়াসা ছাড়া আর কিছুই নয়। (সূত্র মুসলিম হাদিস নাম্বার ৫৫)
অর্থাৎ বাথরুমে ঢুকে উলঙ্গ হয়ে ওযু করা যাবে না। এখন আর একটি প্রশ্ন সেটি হল উলঙ্গ হয়ে গোসল করা যাবে কিনা….? এবং স্বামী স্ত্রী একসাথে গোসল করতে পারবে কিনা…? এর উত্তর হলোঃ পরিষ্কার পরিছন্নতা পবিত্রতা অর্জনের অন্যতম উপায় হচ্ছে গোসল করা।পবিত্রতা ঈমানের অন্যতম একটি অঙ্গ। বর্তমানে পরিবর্তিত জীবনে মানুষের সামাজিক, সাংস্কৃতিক জীবনের পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে। আধুনিক যুগে ছোয়ার এসে মানুষের মধ্যে দেখা গেছে যে বাথরুমে বিবস্ত্র হয়ে গোসল করার প্রবণতা। বর্তমানে এটি মানুষের মধ্যে ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। এ বিষয়ে ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বলা যায়, একান্ত প্রয়োজন ছাড়া বাথরুমে বিরক্ত হয়ে গোসল করা ঠিক নয়।
এ বিষয়ে হাদিসে অনুৎসাহিত করা হয়েছে। যে কারণে আমাদের সকলকে পরিহার করা উচিত। হাদীস শরীফে এসেছে লজ্জা করার ব্যাপারে মানুষের চেয়ে আল্লাহ তায়ালা বেশী হকদার। তাই গোসলের সময় পুরোপুরি উলঙ্গ হয়ে যাওয়া অনুত্তম। এ বিষয়ে কেউ কেউ মূসা আলাইহিস সালামের বিবস্ত্র হয়ে গোসল করার ঘটনাটাও প্রমাণ হিসেবে উল্লেখ করে থাকেন।( সহিহ বুখারী ১/৬৪)
এখন আমরা জানবো স্বামী ও স্ত্রী একসঙ্গে গোসল করার ব্যাপারে হাদিসে কি বলেছে…? এ বিষয়ে মহানবীর সাল্লাহু সাল্লাম তাঁর স্ত্রী মায়মুনা (রা.) ও আয়েশা (রা.) এর সঙ্গে একসাথে গোসল করেছেন। এটি সহিহ বুখারী ও মুসলিম দ্বারা প্রমাণিত। ( সহিহ বুখারি হাদিস নাম্বারঃ ৩৪০৪)
সব মিলিয়ে কথা হচ্ছে উলঙ্গ হয়ে গোসল করা জায়েয আছে তবে এটা একেবারে অনুত্তম কাজ, সুন্নতের পরিপন্থী। আল্লাহর রাসূল সাল্লাহু সাল্লাম কখনো এমন করেননি। মুস্তাহাব এবং উত্তম হলো লুঙ্গি-গামছা ইত্যাদি বেঁধে গোসল করা এবং মেয়েরা নিচে পায়জামা উড়না সদৃশ্য ও বুকে গামছা সদৃশ্য কিছু রাখবে। কেননা আবু দাউদ শরীফের বর্ণিত আছে যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু সাল্লাম ইরশাদ করেছেন →মহান আল্লাহ তায়ালা লজ্জাশীল ও পর্দাকারীদের পছন্দ করেন। তাই তোমাদের কেউ যখন গোসল করে তখন সে যেন পর্দা করে নেয়। (তাহতাবী)
তা পরিশেষে বলতে চাই কাপড় ছাড়া ঘুমানো বা উলঙ্গ হয়ে গোসল করা, উলঙ্গ হয়ে ওযু করা এগুলো একদম ঠিক নয়। এগুলো রাসুলের সুন্নত পরিপন্থী। আর স্বামী স্ত্রী একসাথে গোসল করা জায়েয আছে। কিন্তু গোসলখানায় ঢুকে সহবাস করা যাবে না। এটি অবশ্য মনে রাখবেন।
আপনার ওয়েবসাইটের জন্য আর্টিকেল প্রয়োজন হলে আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন ফেসবুকে আমি