আসসালামু আলাইকুম সবাই কেমন আছেন…..? আশা করি সবাই ভালো আছেন । আমি আল্লাহর রহমতে ভালোই আছি ।আসলে কেউ ভালো না থাকলে TrickBD তে ভিজিট করেনা ।তাই আপনাকে TrickBD তে আসার জন্য ধন্যবাদ ।ভালো কিছু জানতে সবাই TrickBD এর সাথেই থাকুন ।
স্বামীর নাম ধরে ডাকা কি জায়েজ
আমাদের কাছে এক বোন প্রশ্ন করেছেন স্ত্রী স্বামীর নাম ধরে ডাকতে পারবে কিনা…? যেহেতু আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশে গ্রাম অঞ্চলে সাধারণত স্বামীর নাম ধরে ডাকাকে অসম্মানজনক ও বেয়াদবি মনে করা হয়। যদিও আমি শুনেছি আরব দেশে স্বামীর নাম ধরে ডাকার প্রচলন রয়েছে। এক্ষেত্রে ইসলামের নির্দেশনা বা রাজনীতি কি বিস্তারিত জানাবেন। আলহামদুলিল্লাহ প্রিয় বোন। আপনি একটি সুন্দর প্রশ্ন করেছেন।
আপনার প্রশ্নের উত্তরে বলবোঃ স্বামী স্ত্রী একে অন্যকে সম্মান সূচক নাম ব্যবহার করে ডাকবে। বিশেষ করে স্ত্রী তার স্বামীকে সম্মান প্রদর্শন করবে এটাই স্বাভাবিক। তাই এ সম্পর্কে ফাতাওয়া শামিতে বর্ণিত আছে, সন্তান কর্তৃক তার বাবাকে এবং স্ত্রী কর্তৃক তার স্বামীকে নাম ধরে ডাকা মাকরুহ বা অপছন্দনীয় কাজ। ইবনে আবেদীন শামি রহমতুল্লাহি এ বক্তব্যের সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন বরং এমন শব্দের মাধ্যমে ডাকা উচিত যেটাতে সম্মান বোঝাবে।
যেমন—হে আমার প্রিয়, হে আমার সর্দার অথবা সন্তান থাকলেই অমুকের বাবা ইত্যাদি অথবা সম্মানসূচক পেশার সঙ্গে সংযুক্ত করে ডাকবে। (যেমন —ইমাম সাহেব, ডাক্তার সাহেব, উকিল সাহেব ইত্যাদি)। কেনন বাবা ও স্বামী তাদের উভয়ের হক একটু বেশি।(রদ্দুল মুহতার আলাদ দুররিল মুখতার ৬/৪১৮)
এখন প্রশ্ন হলো স্বামীর নাম ধরে ডাকলে গুনাহ হবে কিনা কিংবা স্বামীর নাম ধরে ডাকা ইসলামে জায়েজ কিনা…? প্রথমত আমাদের দেশে একটা খারাপ প্রচলন হলো এটাই যে স্বামীর বয়স প্রায় স্ত্রীর দ্বিগুণ থাকে। সে ক্ষেত্রে দ্বিগুণ বয়সী একজন মানুষকে নাম ধরে ডাকাটা খানিকটা বেমানান লাগে। কিন্তু স্বামী স্ত্রী যদি সমবয়সী হয় কিংবা বন্ধুসুলভ হয় এবং স্বামী যদি তার নাম ধরে ডাকলে মনে কষ্ট না পায় তাহলে নাম ধরে ডাকলে কোন সমস্যা নেই।
কেননা ইসলামে এর নজির আছে। যেমন ইবরাহীম আলাইহিস সাল্লাম যখন তাঁর স্ত্রী হাজেরা এবং শিশুপুত্র ইসমাইলকে মক্কার জনমানবহীন প্রান্তরে রেখে চলে যাচ্ছিলেন। তখন পেছন থেকে তাঁর স্ত্রী তাকে এভাবে ডাকেন — হে ইব্রাহিম! পুরো ঘটনা সহীহ বুখারীতে বর্ণিত আছে।সেখানে আছে — হযরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন যখন ইবরাহীম আলাইহিস সাল্লাম ও তাঁর স্ত্রী(সারার) মধ্যে যা হওয়ার তা হয়ে গেল।
তখন ইব্রাহিম (আ.) শিশুপুত্র ইসমাঈল ও তাঁর মাকে নিয়ে বের হলেন। তাঁদের সঙ্গে একটি থলে ছিল যাতে পানি ছিল। ইসমাঈল আলাইহিস সালামের মা মশক থেকে পানি পান করছেন। ফলে শিশুর জন্য তাঁর স্তন দুধ বাড়তে থাকে। অবশেষে ইবরাহীম আলাইহিস সাল্লাম মক্কা পৌঁছে হাজরাকে একটি বিরাট গাছের নিচে থাকার ব্যবস্থা করে দিলেন। অতঃপর ইবরাহীম আলাইহিস সাল্লাম নিজ পরিবারের(সারার) কাছে ফিরে চললেন। তখন ইসমাঈল আলাইহিস সালামের মা কিছু দূর পর্যন্ত তাঁকে অনুসরণ করেন।
অবশেষে যখন কাদা নামক স্থানে পৌছলেন, তখন তিনি পেছন থেকে ডেকে বলেন,হে ইব্রাহীম! আপনি আমাদের কার কাছে রেখে যাচ্ছেন…? তখন ইব্রাহীম আলাইহিস সাল্লাম বললেন →আল্লাহর কাছে। এই কথা শুনে হাজরা (আ.) বলেন, আমি আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট। (সহিহ বুখারি হাদিস নাম্বারঃ ৩৩৬৫)
এছাড়া বিভিন্ন মুসলিম দেশে স্বামীর নাম ধরে ডাকার প্রচলন রয়েছে। সুতরাং এ বিষয়ে সামাজিক নিয়ম নীতি সম্মান ও ভদ্রতার প্রতি লক্ষ্য রাখা জরুরি। যেমন দেখা গেল কোনো মুরুব্বিদের সামনে স্ত্রী স্বামীকে তার নাম ধরে ডাকলে,তখন তারা হয়তো জিনিসটা ভালোভাবে নেয় না। সেই স্ত্রী তার স্বামীর প্রতি আদবের খেলাফ করেছে বলে তারা হয়তো মনে করতে পারেন। কিন্তু আদৌতে এটি যে ইসলামে জায়েজ তা হয়তো তাঁরা জানেন না।
তাই স্ত্রী তার স্বামীর নাম ধরে ডাকতে পারেন, কিন্তু যদি মনে হয় কারো সামনে নাম ধরে ডাকলে সে সেটা ভদ্রতার খেলাপ মনে করে কিংবা স্বামী যদি সেটাতে অখুশি থাকে, তাহলে তাঁর নাম ধরে না ডাকাই উত্তম। তবে ডাকলে স্ত্রী কোন গুনাহ হবে না আর স্বামী যদি কিছু মনে না করেন তাহলে স্বামী-স্ত্রী একা থাকা অবস্থায় ডাকতে কোনো সমস্যা নেই। আশা করি বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন।
আপনার ওয়েবসাইটের জন্য আর্টিকেল প্রয়োজন হলে আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন ফেসবুকে আমি