ওয়াদা একটি উন্নত চরিত্র। যাদের স্বভাব ভাল এবং যাদের পারিবারিক পরিবেশ মার্জিত কেবল তারাই মহং গুণে গুণান্বিত হতে পারে। সম্মানিত ব্যক্তি যখন ওয়াদা করে তা পূরণ করে। আল্লাহ তাআলা ওয়াদা পূরণের নির্দেশ দিয়ে ইরশাদ করেন, “এবং তোমরা ওয়াদা পূরণ কর, নিশ্চয়ই ওয়াদা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে” (আল ইসরা ৩৪)। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, মুনাফিকের আলামত ৩টি, কথা বললে মিথ্যা বলে, যখন ওয়াদা করে পরক্ষণে ভঙ্গ করে, আর তার কাছে আমানত রাখলে সে খেয়ানত করে” (মুত্তাফাকুন আলাইহ)। সুতরাং প্রতিশ্রুতিপূরণ করা ইসলামি মৌলিক চরিত্রাবলির অন্যতম এবং তা মুসলমানের জন্য ইসলামের সৌন্দর্য এবং ইমানের স্বচ্ছতার প্রতি সবচেয়ে বেশি নির্দেশ করে থাকে। আর এ কথা সত্য যে, চরিত্র মানুষের গুরুত্বপূর্ণ চালিকা শক্তিসমূহের মধ্যে অন্যতম এবং তা মানুষের উন্নতি, উচ্চমর্যাদা ও সামাজিক মান উন্নয়নের অন্যতম উপাদান। অন্যথায় ওয়াদা খেলাফ করা ও প্রতিশ্রুতির ব্যতিক্রম করা চরম অধঃপতনে কারণ ।

দুস্থ অসহায় নিঃস্ব সেবা:
ইসলাম এক দুয়ার থেকে অন্য দুয়ারে বিতাড়িত ও অভাবীদের জন্য সাহায্য-সহযোগিতার বিছানা বিছিয়ে দিয়েছে এবং এটাকে ইসলাম ও মুসলমানদের বৈশিষ্ট্যাবলির অন্তর্ভুক্ত করেছে। অস্বচ্ছলকে সচ্ছলতা অর্জনে সহযোগিতা করা, অভাবির অভাব মোচন করা, রিক্তহস্ত ও নিঃস্বদেরকে সাবলম্বী করা ইসলামের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এ সকল আমলের বিনিময়ে ফজিলত ও সাওয়াব দানের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “সে (মুসলমান) যেন সাহায্যের মুখাপেক্ষী দুঃখী ব্যক্তিকে সাহায্য করে” (বুখারি ও মুসলিম শরিফ)। প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন, “নিঃস্ব ও বিধবা নারীদের সহযোগিতায় আত্মনিয়োগকারী ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারীর ন্যায়, সে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আল্লাহর ঐ ইবাদতকারীর ন্যায়, যে ক্লান্ত হয় না এবং ঐ রোজা পালনকারীর ন্যায় যে ইফতার করে না (সারা বছর রোজা পালন করে)।” তিনি আরো বললেন, “আমি ও ইয়াতিম লালন-পালনকারী ব্যক্তি জান্নাতে এভাবে থাকবো। আর তিনি তর্জনী ও মধ্যমা আঙ্গুলের মাঝে সামান্য ফাঁকা রেখে (জান্নাতে অবস্থানের ধরণের প্রতি ইঙ্গিত করেন” (বুখারি ও মুসলিম শরিফ)। এভাবেই ইসলাম অনুগ্রহ, বদান্যতা এবং দান খায়রাতের পরিমণ্ডলকে সম্প্রসারিত করেছে যাতে অভাবীরা নিজেদেরকে অসহায় মনে না করে।

রোগীর সেবা :

রোগির সেবা করার অর্থ হল রোগির সাথে সাক্ষাৎ করা এবং তার খোঁজ খবর নেয়া। এ কাজটি মুসলমানের অবশ্য দায়িত্ব কর্তব্যের মধ্যে একটি। এটি গুরুত্বহীন অতিরিক্ত কোনো কাজ নয়। এর গুরুত্ব দিয়ে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, “এক মুসলমানের প্রতি অপর মুসলমানের ছয়টি দায়িত্ব-কর্তব্য রয়েছে। এর একটি হল রোগির সেবা করা”। তিনি আরো বলেন, “তোমরা রোগির সেবা কর, আর আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন বলবেন, হে আদম সন্তান! আমি অসুস্থ হয়েছিলাম তুমি আমার সেবা শুশ্রুষা করোনি। তখন সে বলবে, হে আমার প্রভু কীভাবে আমি আপনার সেবা করবো, আপনি তো সমগ্র জগতের প্রতিপালক তখন আল্লাহ পাক বলবেন, তুমি কি জান না যে, আমার অমুক বান্দা অসুস্থ হয়েছিল, কিন্তু তুমি তার সেবা করনি। তুমি কি জানো? যদি তুমি তার সেবা করতে তবে তুমি আমাকে তার নিকটে পেতে” (মুসলিম)। সেবা করা কতই না বরকতময় কাজ, তা কতই না শ্রেষ্ঠ সাক্ষাৎ এবং কতই না মহান আমল, যা ব্যক্তি তার দুঃস্থ ও অসুস্থ ভাই এর জন্য করে থাকে। প্রকারান্তরে যেন সে কাজগুলো সম্মানিত প্রভুর উপস্থিতিতে করে থাকে। রহমাতুল্লিল আলামিন নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সত্যই বলেছেন, মুসলমান যখন তার কোনো মুসলমান ভাইয়ের সেবা শুশ্রুষা করে তখন সে সেখান থেকে ফিরে না আসা পর্যন্ত জান্নাতের * রাস্তায় থাকে (মুসলিম শরিফ) ইসলামি সমাজে রুগ্ন ব্যক্তি যেন তার কঠিন ও সংকটাপন্ন মুহূর্তে এ ধারণা করতে পারে যে, সে একা নয় বরং তার চার পাশে রয়েছে সেবা শুশ্রূষাকারীদের সাহায্য সহানুভূতি। আর তাদের এ সেবা, সাহায্য, সহানুভূতি ও প্রার্থনা তাকে আবৃত করে রাখছে এবং তার দুঃখ-কষ্ট লাঘব করছে।

Leave a Reply