স্ত্রীদের প্রতি মহানবি (স)-এর সুন্দর ব্যবহার [পর্ব ৩]
স্ত্রীদের প্রতি মহানবি (স) ছিলেন সবসময় দায়িত্বশীল । তিনি তাঁর দায়িত্ব থেকে এক চুলও সরে আসেন নি । এরকম বহু ঘটনা আমাদের অজানা । এই অজানা বিষয় নিয়ে লেখা আজকের আর্টিকেলটি পর্ব তৃতীয় । প্রথম ও দ্বিতীয় পর্বে এ বিষয়ে কিছু ঘটনা তুলে ধরা হয়েছিল । প্রথম ও দ্বিতীয় পর্ব নিচের থেকে দেখে নিতে পারেন ।
প্রথম পর্ব
দ্বিতীয় পর্ব
তো চলুন এই পর্ব থেকে মহানবি (সঃ) চারিত্রিক নিদর্শন দেখে নিই :-
১। মহানবি (স) তাঁর স্ত্রীদেরকে কাঁচের পাত্রের সাথে তুলনা করেছেন । ব্যাখ্যাঃ
হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার রাসুল (সঃ) কোন এক সফরে যাচ্ছিলেন । জৈনক উষ্ট্র-সংগীত গায়ক একটি উষ্ট্র উত্তেজক সংগীত গেয়ে রাসুল (সঃ) এর স্ত্রী-বাহী উটগুলোকে জোর গতিতে চালাচ্ছিলেন । স্ত্রী-বাহী উট মহানবি (সঃ) কে অতিক্রম করার উপক্রম হলে,মহানবি (সঃ) গায়ককে লক্ষ্য করে বলেন, আনযাশাহ!(গায়কের নাম) সাবধানে চলো; এ কাঁচের পাত্রদের প্রতি কোমল আচরণ করো অর্থাৎ উট বেশি জোরে চালিও না । (মুসনাদে ইমাম আহমাদ ৩:১৭২,১৮৭ ও ২০২)
বুখারি শরীফে হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত । তিনি বলেন, রাসুল (সঃ) সফরে এক স্ত্রীর নিকটে এলেন । সেখানে উম্মে সুলাইম (রাঃ) ছিল । রাসুল (সঃ) গায়ককে লক্ষ্য করে বলেন, আনযাশাহ! এই কাঁচের পাত্রগুলো আস্তে আস্তে নিয়ে যাও । কারণ দ্রুত গেলে দূর্ঘটনা ঘটতে পারে ।
হযরত আবু কিলাবা (রাঃ) বলেন, মহানবী (সঃ) সেদিন যে কথা বললেন তা যদি তোমাদের মধ্যে কেহ বলত, তবে তা অবশ্যয় দূষণীয় হতো । আর সেই কথাটা হলো, “এগুলো কাঁচের পাত্র, আস্তে আস্তে নিয়ে যাও ।” (বুখারি,৮ম খন্ড, নং ১৭০)
এই হাদিসগুলো বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায় যে মহানবী (সঃ) স্ত্রীদের অর্থাৎ নারীদেরকে কাঁচের পাত্রের সাথে তুলনা করেছেন । কাঁচের পাত্রকে সবসময় যত্নসহকারে তদারকি করতে হয় । তা না হলে তা ভেঙ্গে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে । তাই সবার উচিত স্ত্রীদের সাথে কাঁচের পাত্রের ন্যায় তথা মানবিক, শৃঙ্খল আচরণ করা ।
মহানবি (সঃ)-এর সামনে দুই স্ত্রীর হালুয়া মাখামাখি
হযরত সওদা (রাঃ) মহানবি (সঃ)-এর স্ত্রী । রাসুল (সঃ)-এর আজ তাঁর ঘরে থাকার পালা । সেদিন আয়িশা (রাঃ) হালুয়া তৈরি করেছিলেন । হযরত সওদা (রাঃ) তাঁর প্রতি হিংসা করেছিলেন । আয়িশা (রাঃ) তাঁকে খাবার জন্য অনুরোধ জানান । কিন্তু তিনি না করে দেন । এভাবে আরও একবার না করার পর হযরত আয়িশা (রাঃ) তাঁর মুখে হালুয়া মাখিয়ে দেন । তারপর হযরত সাওদা (রাঃ) মহানবি (সঃ) কে অভিযোগ জানান । তখন রাসুল (সঃ) পবিত্র কুরআনের একটি আয়াত পাঠ করেন । আয়াতটির অর্থ :
“কেউ যদি তোমার সাথে অন্যায় আচরণ করে তবে তুমিও তার প্রতি মন্দ আচরণ করতে পার ।”
আয়াতটি শোনার পর হযরত সওদা (রাঃ) আয়িশা (রাঃ) কে হালুয়া মাখিয়ে দেন । এই মজার ঘটনাটি উপলব্ধি করেন মহানবি (সঃ)
এই সময়ে উমর (রাঃ) দরজা ঠকঠক করলে মহানবি (সঃ) তাঁর স্ত্রীদেরকে মুখ ধুয়ে আসার অনুরোধ জানান । (অনুমিত হয় যে তখনও পর্দার বিধান নাযিল হয় নি)
এই হাদিস থেকে বোঝা যায় যে, মহানবি (সঃ) তাঁর স্ত্রীদের সাথে মজার মজার কাণ্ডের সাথে লিপ্ত থাকতেন । আমাদের উচিত এরকম কাজ করা ।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে সুস্থ মস্তিষ্কের অধিকারী হওয়ার তৌফিক দান করুন । আজকের পর্বটি আপনার কেমন লেগেছে তা কমেন্টের মাধ্যমে অবহিত করুন ।