বিপদ-আপদ মানুষের জীবনে খুব স্বাভাবিক বিষয়। আর ‘মুমিন নারী-পুরুষের বিপদ-মুসিবত লেগেই থাকে। এ বিপদ-মুসিবত তার শারীরিক, ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততির ব্যাপারে হতে পারে। আল্লাহর সঙ্গে মিলিত হওয়ার আগ পর্যন্ত তা চলতেই থাকে। আর আল্লাহর সঙ্গে মিলিত হওয়ার পর তার ওপর গুনাহের কোনো বোঝাই থাকে না’।(মেশকাত: ১৫৬৭)
এক.
إِنَّا لِلهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ اَللّٰهُمَّ أْجُرْنِيْ فِيْ مُصِيبَتِيْ وَأَخْلِفْ لِيْ خَيْرًا مِنْهَا
উচ্চারণ: ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না লিল্লাহি রাজিউন। আল্লাহুম্মা’জুরনী ফী মুছীবাতী ওয়া আখলিফ লি খাইরাম মিনহা।
অর্থ: নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর জন্য এবং আমরা তার দিকেই ফিরে যাবো। হে আল্লাহ! আপনি আমাকে আমার এই মসিবতের প্রতিদান দিন এবং তার বদলায় আরো ভালো কিছু দিন।
উপকার: হজরত উম্মে সালামা (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (স.)-কে বলতে শুনেছি, বিপদগ্রস্ত ব্যক্তি এই দোয়া পড়লে আল্লাহ তাআলা অবশ্যই তাকে তার মসিবত থেকে, বিপদ থেকে মুক্তি দান করবেন এবং সেই বিপদের মাধ্যমে যা হারিয়েছে তার থেকে উত্তম কিছু তাকে দান করবেন। হজরত উম্মে সালামা (রা.) বলেন, যখন আবু সালামা (অর্থাৎ আমার স্বামী) মৃত্যুবরণ করেছে, আমি দোয়াটি ওইরূপ বলেছি যেরকম রাসুলুল্লাহ (স.) আমাকে আদেশ করেছিলেন। এর ফলে আল্লাহ আমাকে তার চেয়ে উত্তম রাসুলুল্লাহ (স.)-কে আমার জন্য (স্বামী হিসেবে) দান করলেন। (সহিহ মুসলিম: ২১৬৬)
দুই.
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ جَهْدِ الْبَلاَءِ وَدَرَكِ الشَّقَاءِ وَسُوءِ الْقَضَاءِ وَشَمَاتَةِ الأَعْدَاءِ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নী আউজুবিকা মিন জাহদিল বালা-ই, ওয়া দারাকিশ শাকা-ই, ওয়া সু-ইল কদা-ই, ওয়া শামাতাতিল আ‘দা-ই।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই কঠিন বিপদ, দুর্ভাগ্যে পতিত হওয়া, ভাগ্যের অশুভ পরিণতি এবং শত্রুর আনন্দিত হওয়া থেকে।
উপকার: আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) এ সমস্ত বিষয় থেকে মহান আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইতেন। (বুখারি: ৬৩৪৭)
তিন.
কঠিন বিপদে আল্লাহর দুটি গুণবাচক নাম অনবরত জিকির করার কথাও এসেছে হাদিসে। যেমনটি বদর যুদ্ধের কঠিন দিনে নবীজি (স.) করেছিলেন।
আলি ইবনু আবি তালিব (র.) বলেন, ‘বদরের যুদ্ধের দিনে আমি কিছুক্ষণ যুদ্ধ করে এসে দেখি— নবীজি সেজদারত অবস্থায় আছেন আর শুধু বলছেন— يَا حَيُّ يَا قَيُّوْمُ ‘ইয়া হাইয়্যু ইয়া কাইয়্যুম’ অর্থ: হে চিরঞ্জীব! হে চিরস্থায়ী।
এর বেশি কিছুই বলছেন না।’ এরপর আলি (র.) আবার যুদ্ধ করতে চলে যান। আবার ফিরে আসেন; এসে দেখেন— নবীজি একই অবস্থায় আছেন। এভাবে কয়েকবার এসে তিনি একই অবস্থায় পেয়েছেন। অতঃপর আল্লাহ তাআলা নবী (স.)-কে বিজয় দান করেন। (ইমাম হাইসামি, মাজমাউয যাওয়ায়েদ: ১০/১৪৭; ইমাম হাইসামি (রহ.) বলেন, হাদিসটির সনদ হাসান)
তাই যেকোনো দোয়ার মধ্যে কিছুক্ষণ পরপর এই বাক্য দুটো বলার অভ্যাস করা উচিত। কারণ, `এগুলো ইসমে আজমের অন্তর্ভুক্ত’। (ইমাম আবু দাউদ, আস-সুনান: ১৪৯৬)
চার.
নবীজির খাদেম সাহাবি আনাস (রা.) বলেন, ‘যখন রাসুলুল্লাহ (স.)- এর ওপর কোনো কাজ কঠিন হয়ে দেখা দিত, তখন তিনি এ দোয়াটি পড়তেন।’
يَا حَيُّ يَا قَيُّومُ بِرَحْمَتِكَ أَسْتَغِيثُ
‘ইয়া হাইয়্যু ইয়া কাইয়্যুমু বিরাহমাতিকা আসতাগিছ’
অর্থ: হে চিরঞ্জীব! হে বিশ্ব চরাচরে ধারক! আমি তোমার রহমতের আশ্রয় প্রার্থনা করছি। (তিরমিজি, মেশকাত: ২৪৫৪)
পাঁচ.
হাদিসে কঠিন বিপদে নামাজে দাঁড়িয়ে যাওয়ার কথাও এসেছে। হজরত হুজাইফা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসুল (স.) কোনো কঠিন সমস্যার সম্মুখীন হলে নামাজে দাঁড়িয়ে যেতেন।’
(আবু দাউদ: ১৩১৯)।
পবিত্র কোরআনেও একই কথা বর্ণিত হয়েছে যে, তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করো, আর তা আল্লাহভীরু ব্যক্তি ছাড়া অন্যদের কাছে নিশ্চিতভাবেই কঠিন।(সুরা বাকারা: ৪৫)
ছয়.
রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, মাছের পেটে ইউনুস (আ.) যে দোয়া পড়ে আল্লাহকে ডেকেছিলেন এবং মুক্তি পেয়েছিলেন, সেই দোয়াটি যদি কোনো মুসলিম বিপদে পাঠ করে, আল্লাহ তা কবুল করবেন।’ (আহমদ, তিরমিজি, মেশকাত: ২২৯২)
لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحَانَكَ، إِنِّي كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِينَ
উচ্চারণ: ‘লাইলা-হা ইল্লা আনতা সুবহা-নাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ্জালিমীন।’ (সুরা আম্বিয়া: ২১/৮৭)
অর্থ: তুমি ছাড়া কোনো মাবুদ নেই, তুমি পবিত্র সুমহান। নিশ্চয়ই আমি সীমা লঙ্ঘনকারীদের অন্তর্ভুক্ত।
মহান আল্লাহ বলেন, আমি নবী ইউনুসের প্রার্থনা মঞ্জুর করেছি। তাকে দুঃখ থেকে মুক্তি দিয়েছি। অনুরূপভাবে যে মুমিনরা এ দোয়া পড়বে আমি তাদেরও বিভিন্ন দুঃখ-দুর্দশা ও বিপদ থেকে মুক্তি দিব। (সুরা আম্বিয়া: ৮৮)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে বিপদে আপদে ধৈর্যধারণ করার এবং আল্লাহর কাছে দোয়া ও সেজদায় অবনত হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।