নববধূর কোলে প্রথম সন্তান আসছে, এ
খবরে পরিবারের সদস্য ও স্বজনদের
আনন্দের সীমা ছিল না। কিন্তু ছেলে
শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর উৎসবের
পরিবর্তে
সবার মুখে বিষাদের ছায়া নামে।
সদ্য পৃথিবীর মুখ দেখা শিশুটি মানবশিশু
নাকি অন্য কিছু, তা নিয়ে সবখানে
আলোচনা। কারণ তার অবয়বে বৃদ্ধ
মানুষের ছাপ, বিকৃত চেহারা। দেখলে
মনে হয়, সে আশি বছরের বৃদ্ধ।
জন্মের পর শিশুটিকে দেখে ভয় পেত
অনেকেই। কাছে ভিড়তে চাইত না কেউ।
রটাতো নানা কল্পকাহিনী। সবাই যখন
শিশুটিকে ফেলে দূরে সরে গেল, তখন
পরম মমতায় সন্তান বায়েজিদকে
লালনপালন করতে লাগলেন মা তৃপ্তি
খাতুন।
বায়েজিদের বাবার নাম লাভলু
শিকদার। তার বাড়ি মাগুরার মহম্মদপুর
উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়নের
খালিয়া গ্রামে।
রোববার বিকেলে লাভলুর বাড়ি গিয়ে
কথা হয় তার পরিবারের সদস্যদের
সঙ্গে।
বায়েজিদের মুখে সবসময় হাসি লেগেই
থাকে। বায়েজিদ শিকদারের বয়স এখন
চার বছর। শুনলে সবাই চমকে ওঠেন।
কারণ,
৮০ বছরের বৃদ্ধের মতো মুখ-পেটসহ
শরীরের বিভিন্ন অংশে চামড়া ঝুলে
আছে। দেখলে মনে হয়, বৃদ্ধ মানুষ।
শিকদার জানান, শিশুটি বিকৃত চেহারা
নিয়ে জন্ম নেয়। এ নিয়ে নানা কথা
রটাতো গ্রামের লোকজন। অনেকে ভয়ে
তার কাছে ভিড়ত না। আস্তে আস্তে সে
বড় হতে থাকলে তার চেহারায় বৃদ্ধ
মানুষের ভাব চলে আসে। দিন যত
যাচ্ছে,
তার এ সমস্যা বাড়ছে।
মা তৃপ্তি খাতুন জানান, স্বাভাবিক
শিশুরা ১০ মাসে হাঁটা শিখলেও
বায়েজিদ সাড়ে তিন বছরে হাঁটতে
শিখেছে। আবার তিন মাস বয়সে তার
সবগুলো দাঁত উঠেছে। সে স্বাভাবিক
চলাফেরা ও খাওয়া-দাওয়া করতে
পারে।
বায়েজিদের বাবা লাভলু শিকদার
বলেন, ‘অনেক ডাক্তার দেখিয়েছি। ৩-৪
লাখ টাকা ব্যয় করেছি। কোনো অসুখ
ধরতে পারেননি চিকিৎসকরা। অনেক
কষ্টে টাকা-পয়সা সংগ্রহ করে কয়েক
জায়গায় চিকিৎসা করিয়েও কোনো ফল
পাইনি। চিকিৎসকরা বিদেশে নেওয়ার
পরামর্শ দিয়েছেন। এটা আমার পক্ষে
সম্ভব নয়।’
মা আয়েশা বেগম, বাবা হাসেম
শিকদার,
স্ত্রী তৃপ্তি খাতুন ও বায়েজিদকে
নিয়ে
লাভলু শিকদারের পরিবার। নিজের
সামান্য জমিতে কৃষিকাজ আর মৌসুমি
ক্ষুদ্র ব্যবসা করে চলে তাদের সংসার।
মহম্মদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য
কমপ্লেক্সের
মেডিক্যাল অফিসার ডা. মোকসেদুল
মোমিন জানান, একটি শিশুর শারীরিক
ও
মানসিক বৃদ্ধি যেমন জিনগত ও
তেমনই নির্ভর করে তার সার্বিক সুস্থতা
ও হরমোনের ওঠা-নামার ওপর। এ ছাড়া
শৈশবে কোনো দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা,
যেমন : কিডনি বা ফুসফুসের রোগ,
অপুষ্টি
ইত্যাদি কারণে শিশুর বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।
শরীরের প্রায় সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গের বৃদ্ধি
যে হরমোনগুলো নিয়ন্ত্রণ করে, তার
মধ্যে থাইরয়েড ও গ্রোথ হরমন সবচেয়ে
গুরুত্বপূর্ণ। এই হরমোনগুলোর অভাবে
শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধি থমকে যেতে
পারে বা ধীরে হতে পারে। নানা
ধরনের
জেনেটিক সমস্যায় এমন হতে পারে।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় একে
বলে টার্নার বা ডাউনস সিনড্রোম। এ
রোগের চিকিৎসা আছে। তবে তা জটিল,
সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল।
মহম্মদপুর উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়ন
পরিষদের সদস্য মো. হামিদ মিয়া
জানান, ‘কোনো বাবার কাছেই
সন্তানের এই অবস্থা সুখকর নয়।
দরিদ্র এই বাবার সন্তানের চিকিৎসার
জন্য বিত্তবান লোকদের এগিয়ে আসার
আহ্বান জানান মো. হামিদ মিয়া।
সৌজন্যঃ
ট্রিকপ্রিয় ডট কম