Site icon Trickbd.com

জ্বিন ও শয়তানের ক্ষতি থেকে নিজেকে কিভাবে রক্ষা করবেন?

Unnamed

জিন ও শয়তান মানুষের চির শত্রু।
আদিকাল থেকেই মানুষের ক্ষতি করে
আসছে এই দুই প্রজাতি। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ
দুইভাবেই এরা মানুষের উপর চড়াও হয়।
রাতের বেলা ভয় দেখানো, আছর করে
রোগাক্রান্ত করা ছাড়াও মানুষের
ইমান ও আমলে মারাত্মক রকম ত্রুটি
ঢুকিয়ে দেয় জিন ও শয়তান। শয়তান তো
সার্বক্ষণিক লিপ্তই থাকে মানুষকে
বিপথে নিতে।
জিন ভূত এবং শয়তানের এমন অনিষ্ট ও
কুমন্ত্রণা থেকে বাঁচার একমাত্র উপায়
আল্লাহর রহমত, তার সুদৃষ্টি অর্জন।
হাদিসে এসেছ, রাসুলুল্লাহ সা. বলেন,
রক্ত যেমনভাবে শিরার মধ্য দিয়ে
প্রবাহমান ঠিক তেমনিভাবে শয়তান
মানুষের মাঝে প্রবাহমান এবং আমার
ভয় হল যে শয়তান হয়তো তোমাদের
অন্তরে কোনো কুমন্ত্রণা দেবে, ফলে
এ: নিয়ে বিভিন্ন কথা উঠবে।’ [ছহিহ
বুখারি]
অনেকে মনে করেন যারা যেসব লোক
খারাপ প্রকৃতির তাদেরই জিন ও শয়তান
আছর করে থাকে। তাদেরই অনিষ্ট করে।
ভালো মানুষকে তারা বিরক্ত করে না
বা কুমন্ত্রণা দেয় না। এটা ভুল ধারণা।
ভালো মন্দ প্রতিটি ব্যক্তিকেই সে
টার্গেট করে থাকে। কারণ শয়তান তো
মানুষ সৃষ্টির শুরু থেকেই আল্লাহর কাছে
সব ধরনের মানুষকে পথভ্রষ্ট করার
ব্যাপারে অনুমোদন নিয়েছে।
কুরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘আমার
পালনকর্তা আপনি যেমন আমাকে
পথভ্রষ্ট করেছেন, আমিও তাদের
সবাইকে পৃথিবীতে নানা সৌন্দর্যে
আকৃষ্ট করব এবং তাদের সবাইকে পথভ্রষ্ট
করব। তাদের মধ্যে আপনার একনিষ্ঠ
বান্দা ছাড়া। [সুরা হিজর ৩৯]

আজকের পৃথিবীতে আমরা এ বিষয়টিই
দেখে থাকি। মানুষ নানারকম
সৌন্দর্যে আকৃষ্ট। তার বাড়ি গাড়ি
চাই।
অঢেল সম্পদ চাই। আলিশান বাড়িতে
ঘুমানো চাই। নিত্যদিন মানুষ তার এসব
চাহিদার পেছনে ছুটেই পার করছে।
সেখানে আল্লাহকে মনে রাখার সময়
কোথায়।
পৃথিবীতে জিন রয়েছে তিন ধরনের।
এরমধ্যে একদল যারা সর্বদা আকাশে
উড়ে বেড়ায়, আরেক দল যারা সাপ ও
কুকুরের আকার ধারণ করে থাকে এবং
তৃতীয় দল পৃথিবীবাসী যারা কোনো
এক স্থানে বাস করে বা ঘুরে বেড়ায়।
[বায়হাকি ও তাবরানি]
অবশ্য সব ধরনের জিন মানুষের ক্ষতি করে
না। কেবল দুষ্ট প্রকৃতির জিনরাই
মানুষের অনিষ্ট করে থাকে। মানুষের
প্রকাশ্য শত্রু জিন ও শয়তানের হাত
থেকে মুক্তি পেতে হলে আল্লাহর
কাছে সাহায্য চাইতে হবে। কুরআনে
আল্লাহ পাক নির্দেশ দিয়েছেন,
তোমরা যুদ্ধ করো শয়তানের পক্ষ
অবলম্বনকারীদের বিরুদ্ধে, (দেখবে)
শয়তানের চক্রান্ত একান্তই দুর্বল। [সুরা
নিসা ৭৬]
জিন ও শয়তান থেকে বাঁচতে রাসুল
সা. এক উত্তম ওষুধ দিয়ে গেছে।যা
নিয়মিত আমল করলে জিন ও শয়তানের
অনিষ্ট থেকে বাঁচা যাবে সহজেই। কী
সেই ওষুধ? রাসুল সা. বলেন, তোমাদের
ঘরগুলোকে কবরে পরিণত করো না। যে
ঘরে সুরা বাকারা পাঠ করা হয় সে ঘর
থেকে শয়তান পালিয়ে যায়। [সহিহ
মুসলিম ৭৮০]
জিন ও শয়তান মানুষকে নানাভাবে
কুমন্ত্রণা দেয়। বিভ্রান্ত করে সত্যের পথ
থেকে। যারা এর ফাঁদে পা দেন
তারা বিপথগামী হয়ে যান। এ জন্য
এসবের কুমন্ত্রণা থেকে আল্লাহ
মানুষকে সতর্ক থাকার নির্দেশ
দিয়েছেন কুরআনে।
বর্ণিত হয়েছে, বল! আমি আশ্রয় গ্রহণ
করছি মানুষের পালনকর্তার, মানুষের
অধিপতির, মানুষের উপাস্যের, গোপন
কুমন্ত্রণাদাতার অনিষ্ট হ’তে, যে
কুমন্ত্রণা দেয় মানুষের অন্তর সমূহে,
জ্বিনের মধ্য হ’তে ও মানুষের মধ্য হ’তে।
[সুরা নাস : ১-৬]
জিন ও শয়তানের প্রধান টার্গেট হলো
মানুষকে দিয়ে কুফরি ও শিরকি কাজ
করানো। বেশি বেশি আল্লাহ ও
রাসুলের দুশমনি করানো। যদি সেটি
করাতে ব্যর্থ হয় তবে শয়তান মানুষকে
লিপ্ত করে বেদাতি কাজে, তাতেও
ব্যর্থ হলে সে কবিরা গুনাহ হয় এমন
কাজে লিপ্ত করে।
তাতেও ব্যর্থ হলে মুবাহ (গোনাহ বা পুণ্য
কোনটাই নয়) কাজে প্রণোদিত করে।
যদি তাতেও ব্যর্থ হয় তাহলে
অপ্রয়োজনীয় কাজে লিপ্ত করে। এসব
শয়তান জিনদেরই অন্তর্ভুক্ত।
সুতরাং শয়তান ও জিনের কুমন্ত্রণা
থেকে বাঁচতে মনের ভেতর হুট করে
চলে আসা খারাপ কাজগুলো থেকে
দূরে থাকতে হবে। অন্যায় কাজ করা
যাবে না। সব সময় ইস্তেগফার ও দোয়া
দরুদ পড়তে হবে। আর সুরা বাকারা ও সুরা
ইউনুসের তেলাওয়াত ঘরের মধ্যে জারি
রাখতে হবে। তাহলেই মুক্তি পাওয়া
যাবে জিন-শয়তানের অনিষ্ট থেকে।
লেখক : মাওলানা রোকন রাইয়ান।

এরকম আরো নতুন কিছু জানতে TrickMax.com ভিজিট করুন