পৃথিবীতে কিয়ামত সংঘটিত হয়ে যাওয়ার পর আল্লাহ তাআলা সপ্তআকাশ ভেঙে দিবেন। সপ্ত আকাশে অবস্হানরত ফেরেশতারা মৃত্যুর দুয়ারে। সমস্হ ফেরেশতা মৃত্যুর পেয়ালা পান করবে। আরশ বহনকারী ফেরেশতাগণও বরণ করবে মৃত্যুর মালা। অতঃপর নির্দেশ হবে –
:
=> জিবরাইল! মৃত্যু বরণ কর!
=> মিকাইল! মৃত্যু বরণ কর!
:
আল্লাহ তাআলার ইশক ও ভালোবাসা সুপারিশ করবে – ‘হে আল্লাহ! জিবরাইল ও মিকাইলকে রক্ষা করো!’ তখন আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করবেন –
ﺍَﺳْﻜُﺖْ ﻓَﻘَﺪْ ﻛَﺘَﺒْﺖُ ﺍﻟْﻤَﻮْﺕَ ﻋَﻠَﻰ ﻣَﻦْ ﻛَﺎﻥَ ﺗَﺤْﺖُ ﻋَﺮْﺷِﻰْ
“চুপ কর! আমার আরশের নিচে যারা আছে সকলের জন্যই আমি মৃত্যুর ফয়সালা করে দিয়েছি।”
:
মৃত্যুবরণ করবে জিবরাইল। মিকাইল ও শেষ। সিঙা ফুৎকারের ইসরাফিলও ঢলে পড়বে মৃত্যুর কোলে। সিঙার ফুৎকার হাওয়ায় ভেসে উড়ে যাবে আরশে। আরশের উপরে আছেন আল্লাহ। নিচে কেবল আজরাইল। তখন আল্লাহ তাআলা প্রশ্ব করবেন – ‘বলো আর কে বাকি আছে?’
বলবে, ‘উপরে তুমি আর নিচে তোমার গোলাম।’
নির্দেশ করবেন –
ﺍِﻧَّﻚَ ﻣَﻴّـِﺖٌ
“তুমিও মরে যাও।”
এতদিন পর্যন্ত যে সকলের রুহ কবজ করে ফিরতো আজ সে নিজেই নিজের প্রাণ কবজ করবে। যদি মানুষ বেঁচে থাকতো তাহলে মৃত্যুমুখে আজরাইলের সেই চিৎকার শুনে হৃদয় বিদীর্ণ হয়ে সকল মানুষ মারা যেত।
:
=> আজ কারও জন্য কাঁদবার মত কেউ নেই।
=> আজ কাউকে দাফন করার মত কেউ নেই।
=> আজ কাউকে কাফন পরানোর মত কেউ নেই।
=> আজ কারও জন্য মাতম করার কেউ নেই।
=> আজ সম্পদ হারিয়ে যাওয়ার ফলে মামলা
করার মত কেউ নেই।
=> আজ দরবার আছে। দরবারী কেউ নেই।
=> কুরসী আছে। কুরসীতে বসার কেউ নেই।
=> বাদশাহী আছে। বাদশাহ কেউ নেই।
=> আজ এক আল্লাহ আছেন। তাঁর কোন শরীক নেই।
*
আল্লাহ তাআলা যখন সবাইকে মৃত্যু দিয়ে দিবেন তখন ঘোষণা করবেন –
ﻣَﻦْ ﻛَﺎﻥَ ﻟِﻰ ﺷَﺮِ ﻳْﻜٌﺎ ﻓَﻠْﻴَﺂﺕِ …
“আমার কোন শরীক আছে কি যে আমার মোকাবিলা করবে?”
তিনি তিনবার এই ঘোষণা দিবেন। বলবেন, আমার কোন প্রতিপক্ষ থাকলে সামনে এসো। অতঃপর তিনি আকাশ ও পৃথিবীকে নত করে দিয়ে ঘোষণা করবেন –
ﺍَﻧَﺎ ﺍﻟْﻘُﺪُّﺱُ ﺍﻟﺴَّﻠَﺎﻡُ ﺍﻟْﻤُﺆْ ﻣِﻦُ
“আমিই কুদ্দুস সালাম ও মু’মিন।”
পুণরায় ঝাঁকুনি দিয়ে একই বাণী উচ্চারণ করবেন। তৃতীয়বার উচ্চারণ করবেন –
ﺍَﻧﺎَ ﺍﻟْﻤُﻬَﻴْﻤِﻴﻦُ ﺍﻟْﻌَﺰِ ﻳْﺰُ ﺍﻟْﺠَﺒَّﺮُ ﺍﻟْﻤُﺘَﻜَﺒِِّﺮُ
“আমিই মুহাইমিনুল আজিজুল জব্বারুল মুতাকাব্বির।”
:
তারপর বলবেন –
ﺍَﻳْﻦَ ﺍﻟْﻤُﻠْﻚُ
“আজ রাজারা কোথায়?”
ﺍَﻳْﻦَ ﺍﻟْﺠَﺒَّﺎﺭُﻭْﻥَ
“জালেমরা আজ কোথায়?”
ﺍَﻳْﻦَ ﺍﻟْﻤُﺘَﻜَﺒِِّﺮُﻭْﻥَ
“অহঙ্কারীরা আজ কোথায়?”
# বলবেনঃ
ﻟِﻤَﻦِ ﺍﻟْﻤُﻠْﻚُ ﺍﻟْﻴَﻮْﻡَ
“আজ বাদশাহ কে?”
কোন জবাব নেই। অতঃপর আল্লাহ নিজেই বলবেন –
َ ﻟِﻠَّﻪِ ﺍﻟْﻮَﺍﺣِﺪِ ﺍﻟْﻘَﻬَّﺎﺭِ
“পরাক্রমশালী এক আল্লাহরই নিরঙ্কুশ রাজত্ব।”
– [ সুরা মু’মিনঃ ১৬ ]
:
যেখানে হিসাব নিবেন স্বয়ং আল্লাহ। যেখানে ব্যবস্হা আছে শাস্তি ও পুরষ্কারের।
যেখানে চিরন্তন সুশ্রী রূপ আছে, আছে কুশ্রী রূপও।
যেখানকার সফলতা চিরন্তন, ব্যার্থতাও চিরন্তন।
যেখানকার অপমান যেমন সীমাহীন তেমনি সীমাহীন সম্মানও।
:
আল্লাহ যদি কারও প্রতি সন্তুষ্ট হন তাহলে তাকে বেহেশত দিবেন ।
আর অসন্তুষ্ট হলে দিবেন জাহান্নাম।
আমাদের এই মরণই যদি শেষ কথা হতো,
তাহলে আর কোন চিন্তা ছিলোনা।
নামাজ পড়তাম কিংবা না পড়তাম।
পর্দা করতাম কিংবা না করতাম।
সত্য বলতাম কিংবা না বলতাম।
অন্যায় করতাম কিংবা কল্যাণ করতাম।
সুদ খেতাম কিংবা না খেতাম।
মানুষের প্রতি ন্যায় করতাম কিংবা অন্যায় করতাম।
* কিন্তু মৃত্যুই শেষ নয়। কবর, হাশর, মিযান, পুলসিরাত, জান্নাত অথবা জাহান্নাম – এ সব কিছু রয়েছে আমাদের সামনে।
আল্লাহ সকলের জন্য তা সহজ করে দিন।
আমিন।