শাদ্দাদ বলক্ষমতাবান বাদশাহ শাদ্দাদ, হযরত হুদ (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উনার দাওয়াতে ইসলাম ধর্ম গ্রহন না করে, বরং হযরত হুদ (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর মুখে পরকালের বেহেশতের বর্ননা শুনে,ল, তোমার আল্লাহর বেহেশত আমার প্রয়োজন নেই। বেহেশতের যে নিয়ামত ও সুখ-শান্তির বিবরণ তুমি দিলে, অমন বেহেশত আমি নিজে এই পৃথিবীতেই বানিয়ে নিব। তুমি দেখে নিও। তারপর সাদ্দাদ দুনিয়াতে বেহেশত নির্মান করার জন্য প্রস্তুতি নিল ।
অবশেষে ইয়ামানের একটি শস্য শ্যামল অঞ্চলে প্রায় একশ চল্লিশ বর্গ মাইল এলাকার একটি জায়গা নির্বাচন করা হল। বেহেশত নির্মাণের জন্য প্রায় তিন হাজার সুদক্ষ কারিগর কে নিয়োগ করা হল। নির্মান কাজ শুরু হয়ে গেলে শাদ্দাদ তার অধীনস্থ প্রজাদের জানিয়ে দিল যে, কারো নিকট কোন সোনা রূপা থাকলে সে যেন তা গোপন না করে এবং অবিলম্বে তা রাজ দরবারে পাঠিয়ে দেয়।
এ ব্যাপারে তল্লাশী চালানো হয় সারাটি রাজ্যে। কারো কাছে এক কণা পরিমাণ সোনা-রূপা পেলেও তা কেড়ে নিতে লাগল। এক বিধবার শিশু মেয়ের কাছে চার আনা পরিমাণ রূপার গহনা পেয়ে তাও তারা কেড়ে নিল। মেয়েটি কেঁদে গড়াগড়ি দিতে লাগল। তা দেখে বিধবা আল্লাহর নিকট ফরিয়াদ জানাল যে, হে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন, এই অত্যাচারী বাদশাহ কে তুমি তার বেহেশত উপভোগ করার সুযোগ দিও না। দুঃখিনী মজলুম বৃদ্ধ মায়ের এই দোয়া কবুল হয়ে গিয়েছিল।
ওদিকে শাদ্দাদের বেহেশত নির্মানের কাজ ধুমধামের সাথে চলতে লাগল। বিশাল ভূখন্ডের চারদিকে চল্লিশ গজ জমি খনন করে মাটি ফেলে মর্মর পাথর দিয়ে বেহেশতের ভিত্তি নির্মান করা হল। তার উপর সোনা ও রূপার ইট দিয়ে নির্মিত হল প্রাচীর। প্রাচীরের উপর জমরূদ পাথরের ভীম ও বর্গার উপর লাল বর্ণের মূল্যবান আলমাছ পাথর ঢালাই করে প্রাসাদের ছাদ তৈরী হল। মূল প্রাসাদের ভিতরে সোনা ও রূপার কারূকার্য খচিত ইট দিয়ে বহু সংখ্যক ছোট ছোট দালান তৈরী করা হল।
সেই বেহেশতের মাঝে মাঝে তৈরী করা হয়েছিল সোনা ও রূপার গাছ-গাছালি এবং সোনার ঘাট ও তীর বাধানো পুকুর ও নহর সমূহ। আর তার কোনটি দুধ, কোনটি মধু ও কোনটি শরাব দ্বারা ভর্তি করা হয়েছিল। বেহেশতের ভিতরে দুনিয়াবি মাটির পরিবর্তে শোভা পেয়েছিল সুবাসিত মেশক ও আম্বর এবং মূল্যবান পাথর দ্বারা তার মেঝে নির্মিত হয়েছিল। বেহেশতের প্রাঙ্গন মণিমুক্তা দ্বারা ঢালাই করা হয়েছিল। বর্ণিত আছে যে, এই বেহেশত নির্মাণ করতে প্রতিদিন অন্ততঃ চল্লিশ হাজার গাধার বোঝা পরিমাণ সোনা-রূপা নিঃশেষ হয়ে যেত। এইভাবে একাধারে তিনশ’ বছর ধরে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়।
এরপর কারিগরগণ শাদ্দাদ কে জানাল যে, বেহেশত নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। শাদ্দাদ খুশী হয়ে আদেশ দিল যে, এবার রাজ্যের সকল সুন্দর যুবক-যুবতী ও বালক-বালিকাকে বেহেশতে এনে জড়ো করা হোক। নির্দেশ যথাযথভাবে পালিত হলো। অবশেষে একদিন শাদ্দাদ সপরিবারে বেহেশত অভিমুখে রওনা হল। তার অসংখ্য লোক-লস্কর বেহেশতের সামনের প্রান্তরে তাকে অভিবাদন জানাল। শাদ্দাদ অভিবাদন গ্রহণ করে বেহেশতের প্রধান দরজার কাছে গিয়ে উপনীত হল। দেখল, একজন অপরিচিত লোক বেহেশতের দরজায় দাঁড়িয়ে আছে। শাদ্দাদ তাকে জিজ্ঞেস করল,তুমি কে?
লোকটি বললেনঃ আমি মৃত্যুর ফেরেশতা আজরাঈল আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
শাদ্দাদ বললঃ তুমি এখন এখানে কি উদ্দেশ্য এসেছ?
আজরাঈল আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমার প্রতি নির্দেশ এসেছে তোমার জান কবজ করার।
শাদ্দাদ বললঃ আমাকে একটু সময় দাও। আমি আমার তৈরী পরম সাধের বেহেশতে একটু প্রবেশ করি এবং এক নজর ঘুরে দেখি।
আজরাঈল আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমাকে এক মুহুর্তও সময় দানের অনুমতি নেই।
শাদ্দাদ বললঃ তাহলে অন্ততঃ আমাকে ঘোড়া থেকে নামতে দাও।
আজরাঈল আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ না, তুমি যে অবস্থায় আছ, সে অবস্থায়ই তোমার জান কবজ করা হবে।
শাদ্দাদ ঘোড়া থেকে এক পা নামিয়ে দিল। কিন্তু তা বেহেশতের চৌকাঠ স্পর্শ করতে পারলনা। এই অবস্থায় তার মৃত্যু ঘটল। তার বেহেশতের আশা চিরতরে নির্মূল হয়ে গেল।
ইতোমধ্যে আল্লাহ সুবাহানাহু ওয়া তায়ালা উনার নির্দেশে হযরত জিবরাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এক প্রচন্ড আওয়াজের মাধ্যমে শাদ্দাদের বেহেশত ও লোক-লস্কর সব ধ্বংস করে দিলেন।এভাবে শাদ্দাদের রাজত্ব চিরতরে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল।
বর্ণিত আছে যে, হযরত মুয়াবিয়া (রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) উনার রাজত্বকালে আব্দুল্লাহ বিন কালব নামক এক ব্যক্তি ইয়েমেনের একটি জায়গায় একটি মূল্যবান পাথর পেয়ে তা হযরত মুয়াবিয়ার (রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) উনার নিকট উপস্থাপন করেন। সেখানে তখন কা’ব বিন আহবার (রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) উপস্থিত ছিলেন। তিনি উক্ত মূল্যবান রত্ন দেখে বললেন, এটি নিশ্চয় শাদ্দাদ নির্মিত বেহেশতের ধ্বংসাবশেষ।
সুস্থ সংস্কৃতির, সচ্ছ ব্যবহার।
প্রকাশিত ও প্রচারেঃFuturebd24.Com