Site icon Trickbd.com

যে ব্যক্তি কাফিরকে কাফির আখ্যা দিবে না সেও কাফির” মূলনীতি প্রসঙ্গে আলোচনা

Unnamed

রহমান রহীম আল্লাহ্ তায়ালার নামে-

সকল প্রশংসা একমাত্র আল্লাহ তা’আলার এবং সলাত ও সালাম বর্ষিত হোক রাসূল সাঃ এর উপর।
অতঃপর,
নিশ্চয়ই “যে ব্যক্তি কাফিরকে কাফির আখ্যা দিবে না সেও কাফির” এটি একটি সুপরিচিত ও প্রসিদ্ধ মূলনীতি। আর এই মূলনীতিটি শাইখ মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল ওয়াহ্হাব রাহঃ বর্ণিত ‘নাওয়াক্বিদুল ইসলাম’ বা ইসলাম ভঙ্গকারী বিষয়ের তৃতীয় বিষয় (তৃতীয়ঃ যে ব্যক্তি মুশরিকদেরকে কাফির মনে না করবে অথবা তাদের কুফরের ব্যাপারে সংশয় পোষণ করবে অথবা তাদের ধর্মকে সঠিক মনে করবে, সে ব্যক্তি কুফুরী করলো।)
.
তবে এই মূলনীতিটি সার্বজনীন নয় বরং তাতে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের ব্যাপার রয়েছে। যে এসব ব্যাপারে গাফেল অর্থাৎ অবগত নয়, সে (ঢালাওভাবে এ মুলনীতির প্রয়োগ করতে গিয়ে) মুসলিমদেরকে কাফির আখ্যা দিয়ে ভ্রষ্টতায় পতিত হয়েছে অথবা (অতীব শিথিলতার কারনে) কাফির আসলী বা মৌলিক কাফিরকে কাফির আখ্যা দেওয়া পরিহার করেছে।
.
এ বিষয়টির ব্যাখ্যা নিম্নরুপঃ
.
জেনে রাখুন,
প্রথমতঃ এই মূলনীতির প্রয়োগ কথা ও কাজের ক্ষেত্রে কুফরের সাথে সম্পৃক্ততার দিক থেকে নয়। বরং, যে ব্যক্তি কাফিরকে কাফির আখ্যা দিবে না, সে কাফির সাব্যস্ত হবে দলীলগুলোকে প্রত্যাখ্যান ও মিথ্যা প্রতিপন্ন করার কারণে।
.
সুতরাং যে ব্যক্তি কাফিরকে কাফির আখ্যা দেওয়া পরিহার করেছে, তার এ কাজ দ্বারা মূলতঃ উক্ত কাফিরের ক্ষেত্রে সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত দলীলগুলোকে অস্বীকার করা প্রতীয়মান হয় । আর এক্ষেত্রে এমন (অস্বীকারকারী) ব্যক্তিকে তাকফীরের করতে হলে, বর্ণিত দলীলগুলো বিশুদ্ধ ও সর্বসম্মত হতে হবে। (আর এটিও জানা আবশ্যক) যে ব্যক্তি কাফিরকে কাফির আখ্যা দেওয়া পরিহার করেছে, সে উক্ত দলীলগুলোকে প্রত্যাখ্যান করেছে এমনটি হতে হবে। আর কাফির আখ্যা দেওয়ার বিষয় একটি নয় এবং তাতে পতিত হওয়াও এক পর্যায়ের বিষয়। বিষয়টি আলোচনার জন্য বিভিন্ন পর্যায়ের মধ্যে শ্রেণীবিন্যাস করা অপরিহার্য।
.
আর তা দু’টি প্রকারে বিভক্তঃ
 .
প্রথম প্রকারঃ আসলী কাফির। যেমন- ইয়াহুদী, খ্রিস্টান,অগ্নিপূজারী এবং অন্যান্যরা। সুতরাং যে ব্যক্তি এদেরকে কাফির আখ্যা দিবে না অথবা এদের কুফরের ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করবে অথবা তাদের বাতিল ধর্মকে সঠিক মনে করবে, নিশ্চয়ই ইজমা বা সর্বসম্মতভাবে সে কাফির হয়ে যাবে। যেমনটি আহলে ইলমগণের প্রায় সকলে তা উল্লেখ করেছেন। কেননা এতে মুসিলমদের আকীদার বিপরীত আকীদা এবং যারা দ্বীন ইসলামের উপর নেই এমন ব্যক্তিদের কুফরকে বাতিল আখ্যা দেওয়ার ব্যাপারে বর্ণিত নুসুস বা দলীলসমূহকে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।
দ্বিতীয় প্রকারঃ মুরতাদ তথা ইসলাম পরিত্যাগকারী।
.
আর এটিও দুইভাগে বিভক্ত।
.
প্রথম শ্রেণীঃ যে ব্যক্তি তার কুফুরী এবং ইসলাম থেকে অন্য বাতিল ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়েছে, যেমন- ইহুদী কিংবা খ্রিস্টান। অথবা মুলহিদ হয়ে গেছে এবং সে তা স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছে। এমন ব্যক্তির হুকুম পূর্বে বর্ণিত প্রকার তথা আসলী কাফিরের হুকুমের অনুরুপ।
.
দ্বিতীয় শ্রেণীঃ যে ব্যক্তি ইসলাম ভঙ্গকারী বিষয়সমূহের মধ্যে যেকোনো একটি ভঙ্গকারী কাজ করলো, এতদসত্ত্বেও সে নিজেকে ইসলামের উপর আছে এমনটি মনে করলো। এমন ইসলাম ভঙ্গকারী ব্যক্তিকে যে তাকফীর করলো না, এধরণের ব্যক্তিরাও আবার দুইভাগে বিভক্ত।
.
প্রথমতঃ যে ব্যক্তি সর্বসম্মত ও সুস্পষ্ট ইসলাম ভঙ্গকারী কোনো কাজ করলো; যেমনঃ আল্লাহ সুবঃ তা’আলাকে গালি দেওয়া। তাহলে নিশ্চয়ই এমন ব্যক্তিকে কাফির আখ্যা দেওয়া হবে। আর এমন ব্যক্তিকে তাকফীর করা থেকে যে বিরত থাকে সে দুই জনের একজন হবে।
.
এক. যে ব্যক্তি স্বীকার করে যে, আল্লাহ তা’আলাকে গালি দেওয়া কুফুরী এবং এই কাজ যে করলো সে কুফুরী করলো। তবে কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তির উপর কুফরের হুকুম আরোপের ক্ষেত্রে তার জানার সীমাবদ্ধতা কিংবা সে যা দেখেছে সে ব্যাপারে সংশয় থাকার কারণে বা অন্য কোনো কারণে সে তাকফীর করা স্থগিত রেখেছে, এমন ব্যক্তি ভুলকারী বিবেচিত হবে এবং তার কথা বাতিল। কিন্তু তাকে কাফির আখ্যা দেওয়া হবে না। কেননা সে দলীলকে প্রত্যাখ্যান কিংবা অস্বীকার করেনি। যেহেতু সে দলীল ও ইজমায় বর্ণিত বিষয় স্বীকার করে যে, আল্লাহ তা’আলাকে গালি দেওয়া কুফর।
 .
দুই. যে ব্যক্তি আল্লাহ তা’আলাকে গালি দেওয়া মৌলিকভাবে কুফুরী হওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে। বিস্তারিতভাবে আলোচনার পর তাকে কাফির আখ্যা দেওয়া হবে। কেননা এর মাধ্যমে দলীল এবং ইজমাকে অস্বীকার করা হয়। আর এটি সেই ব্যক্তির অনুরুপ যে ইসলামের সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করেও কবরের উপাসনা করে। সুতরাং যে ব্যক্তি এধরণের কাজকে কুফর বলে আখ্যা দেওয়ার সাথে দ্বিমত পোষণ করবে, তাকে কাফির আখ্যা দেওয়া হবে।
কেননা এটি দলীল ও ইজমাকে অস্বীকার করা বুঝায়। কিন্তু যে স্বীকার করে যে, এধরণের কাজ করা কুফর; কিন্তু সে যা প্রত্যক্ষ করেছে তাতে সংশয় থাকার কারণে যদি সে কাউকে তাকফীর করা থেকে বিরত থাকে,তাকে উক্ত ব্যক্তিকে তাকফীর করা হবে না।
.

দ্বিতীয়তঃ আর যে ব্যক্তি ইখতিলাফী বা মতবিরোধপূর্ণ এমন ঈমান ভঙ্গকারী বিষয় সম্পাদন করলো; যেমনঃ উদাহরহণস্বরুপঃ সলাত পরিত্যাগ করা। এধরণের বিষয়ে তাকফীর করা একটি মতবিরোধপূর্ণ মাসয়ালা। এক্ষেত্রে মতবিরোধকারী বা ভিন্নমতের ব্যক্তিকে তাকফীর করা যাবে না। এমনকি বিদআ’তী এবং ফাসিক্বও বলা যাবে না। যদিও সে এবিষয়ে ভুলে পতিত হয়েছে।

এই মূলনীতির ব্যাপারে সংক্ষিপ্তভাবে এই হচ্ছে আমার বক্তব্য।
সাল্লাল্লাহু ‘আলা মুহাম্মাদ।

নাসির বিন হামাদ আল-ফাহাদ (আল্লাহ তা’আলা উনাকে মুক্ত করুন) ১০/৫/১৪২৩ হিজরী

সূত্র: WHAT ISLAM SAYS

সবাই ভালো থাকবেন ভালো রাখবেন আর Trickbd সাথেই
থাকবেন।

প্রচারেঃFuturebd24.Com.