♥♥আসসালামু আলাইকুম♥♥
♥সবাই কেমন আছেন?আশা করি সবাই ভালো আছেন।আর আপনাদের দোয়ায় আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।
♥আজকে একটি ইসলামিক পোস্ট নিয়ে হাজির হইলাম আপনাদের মাঝে।সেটি হলো কিয়ামতের আলামত এখানে ৪২ টি আলামত নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।তাই এক সাথে লিখলে আমার অবস্হা শেষ হবে লেখতে লেখতে
আর একসাথে দিলে অনেক লম্বা হয়ে যাবে।এমনিতেই ইসলামিক পোস্ট বেশি কেউ পড়ে না।আরও অনেক বড় লেখা দেখলে কেউ পড়বে না।তাই ভেঙ্গে part করে দিলাম।
♥♥আজকে ১২ টি part নিয়ে আলোচনা করব।
১) নবী (সাঃ)এর আগমণ ও মৃত্যু বরণঃ
২) চন্দ্র দ্বিখন্ডিত হওয়াঃ
৩) বায়তুল মাকদিস (ফিলিস্তীন) বিজয়ঃ
৪) ধন-সম্পদ বৃদ্ধি পাবেঃ
৫) কিয়ামতের পূর্বে অনেক ফিতনার আবির্ভাব হবেঃ
৬) ভন্ড ও মিথ্যুক নবীদের আগমণ হবেঃ
৭) হেজায থেকে বিরাট একটি আগুন বের হবেঃ
৮) আমানতের খেয়ানত হবেঃ
৯) দ্বীনী ইল্ম উঠে যাবে এবং মূর্খতা বিস্তার লাভ করবেঃ
১০) অন্যায়ভাবে জুলুম-নির্যাতনকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবেঃ
১১) জেনা-ব্যভিচার বৃদ্ধি পাবেঃ
১২) সুদখোরের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবেঃ
♥♥
বিস্তারিত আলোচনাঃ
(১) নবী (সাঃ)এর আগমণ ও মৃত্যু বরণঃ
কিয়ামতের সর্বপ্রথম আলামত হচ্ছে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর আগমণ। কেননা তিনি হলেন সর্বশেষ নবী। তাঁর পর কিয়ামত পর্যন্ত আর কোন নবীর আগমণ হবেনা। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর দুনিয়াতে আগমণের অর্থ হলো, দুনীয়ার বয়স শেষ হয়ে আসছে, কিয়ামত অতি নিকটবর্তী হয়ে গেছে। তিনি বলেনঃ
بُعِثْتُ أَنَا وَالسَّاعَةُ كَهَاتَيْنِ قَالَ وَضَمَّ السَّبَّابَةَ وَالْوُسْطَى
আমি এবং কিয়ামত এক সাথে প্রেরিত হয়েছি। একথা বলে নবী (সাঃ) হাতের শাহাদাত আঙ্গুল
এবং মধ্যমা আঙ্গুলকে একত্রিত করে দেখালেন(মুসলিম, অধ্যায়: কিয়ামতের আলামত)
২) চন্দ্র দ্বিখন্ডিত হওয়াঃ
আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
اقْتَرَبَتْ السَّاعَةُ وَانْشَقَّ الْقَمَرُ
কিয়ামত নিকটবর্তী হয়ে গেছে এবং চন্দ্র দ্বিখন্ডিত হয়েছে”। (সূরা কামারঃ ১)
হাফেয ইবনে রজব বলেনঃ আল্লাহ তাআলা চন্দ্র দ্বিখন্ডিত হওয়াকে কিয়ামত নিকটবর্তী হওয়ার অন্যতম আলামত হিসাবে নির্ধারণ করেছেন। الحكم الجديرة بالإذاعة: ص 19)
আলেমদের সর্বসম্মত অভিমত হলো রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর যামানায় চন্দ্র দ্বিখন্ডিত হওয়ার ঘটনা সংঘটিত হয়ে গেছে। এ ব্যাপারে একাধিক সহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। আনাস (রাঃ) বলেনঃ মক্কাবাসীরা যখন নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর কাছে নবুওয়াতের প্রমাণ চাইল তখন তিনি চন্দ্রকে দ্বিখন্ডিত করে দেখালেন| (মুসলিম, অধ্যায়: সিফাতুল মুনাফিকীন)
৩) বায়তুল মাকদিস (ফিলিস্তীন) বিজয়ঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ কিয়ামতের পূর্বে ছয়টি বস্তু গণনা করো। তার মধ্যে বায়তুল মাকদিস বিজয় অন্যতম। (বুখারী, অধ্যায়: কিতাবুল জিযাইয়্যাহ)। উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)এর শাসনামলে হিজরী ১৬ সালে বায়তুল মাকদিছ বিজয়ের মাধ্যমে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর ভবিষ্যৎ বাণী বাস্তবায়িত হয়েছে।
৪) ধন-সম্পদ বৃদ্ধি পাবেঃ
কিয়ামতের অন্যতম আলামত হচ্ছে মানুষের ধন-সম্পদ বৃদ্ধি পাবে। ফকীর-মিসকীন খুঁজে পাওয়া যাবেনা। সাদকা ও যাকাতের টাকা নিয়ে খুঁজা-খুঁজি করেও নেয়ার মত কোন লোক পাওয়া যাবেনা। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
ততক্ষণ পর্যন্ত কিয়ামত প্রতিষ্ঠিত হবেনা যতক্ষণ না মানুষের ধন-সম্পদ বৃদ্ধি পাবে। মানুষ যাকাতের মাল নিয়ে সংকটে পড়বে। যাকাতের মাল মানুষের কাছে পেশ করা হলে সে বলবেঃ এতে আমার কোন প্রয়োজন নেই| (মুসলিম, অধ্যায়: কিতাবুয্ যাকাত)
কিয়ামতের এই আলামতটি একাধিক সময়ে প্রকাশিত হবে। উমার ইবনে আব্দুল আযীযের শাসন আমলে তা প্রকাশিত হয়েছিল।
ইয়াকূব ইবনে সুফিয়ান বলেনঃ উমার ইবনে আব্দুল আযীযের শাসন আমলে লোকেরা প্রচুর সম্পদ নিয়ে আমাদের কাছে আগমণ করতো। তারা আমাদেরকে বলতঃ তোমরা যেখানে প্রয়োজন মনে কর সেখানে এসম্পদগুলো বিতরণ করে দাও। গ্রহণ করার মত লোক না পাওয়া যাওয়ার কারণে তাদের কাছ থেকে কেউ মাল গ্রহণ করতে রাজী হতনা। পরিশেষে মাল ফেরত নিতে বাধ্য হত। মোট কথা তাঁর শাসন আমলে যাকাত নেয়ার মত লোক ছিলনা| (ফাতহুল বারী, ১৩/৮৩)| কিয়ামতের এই আলামতটি ইমাম মাহদীর আমলে পুনরায় প্রকাশিত হবে।
৫) কিয়ামতের পূর্বে অনেক ফিতনার আবির্ভাব হবেঃ
ফিতনা শব্দটি বিপদাপদ, বিশৃংখলা, পরীক্ষা করা ইত্যাদি বিভিন্ন অর্থে ব্যবহার হয়ে থাকে। অতঃপর শব্দটি প্রতিটি অপছন্দনীয় বিষয়ের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছে।
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ এই উম্মাতের প্রথম যুগের মুমিনদেরকে ফিতনা থেকে হেফাজতে রাখা হয়েছে। আখেরী যামানায় এই উম্মতকে বিভিন্ন ধরণের ফিতনায় ও বিপদে ফেলে পরীক্ষা করা হবে। প্রবৃত্তির অনুসরণ ফির্কাবন্দী এবং দলাদলির কারণে ফিতনার সূচনা হবে। এতে সত্য-মিথ্যার মাঝে পার্থক্য করা কঠিন হয়ে যাবে এবং ঈমান নিয়ে বেঁচে থাকা কষ্টকর হবে। একে অপরের উপর তলোয়ার উঠাবে। ব্যাপক রক্তপাত ও প্রাণ হানি ঘটবে। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সকল ফিতনা সম্পর্কে উম্মাতকে সাবধান করেছেন এবং তা থেকে বাঁচার উপায়ও বলে দিয়েছেন। আমর বিন আখতাব (রাঃ) বলেনঃ একদা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে নিয়ে ফজর নামায পড়লেন। অতঃপর মিম্বরে উঠে যোহর নামায পর্যন্ত ভাষণ দিলেন। যোহর নামায আদায় করে পুনরায় ভাষণ শুরু করে আসর নামায পর্যন্ত ভাষণ দান করলেন। অতঃপর আসর নামায শেষে ভাষণ শুরু করে সূর্যাস্ত পর্যন্ত ভাষণ দিলেন। এই দীর্ঘ ভাষণে তিনি কিয়ামতের পূর্ব পর্যন্ত যা হবে সবই বলে দিয়েছেন। আমাদের মধ্যে যারা সবচেয়ে জ্ঞানী তারাই এগুলো মুখস্থ রেখেছেন (মুসলিম, অধ্যায়: কিতাবুল ফিতান)
ফিতনাগুলো একটি অপরটির চেয়ে ভয়াবহ হবে। এমনকি ফিতনায় পড়ে মানুষ দ্বীন থেকে বের হয়ে যাবে। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
إِنَّ بَيْنَ يَدَيِ السَّاعَةِ فِتَنًا كَأَنَّهَا قِطَعُ اللَّيْلِ الْمُظْلِمِ يُصْبِحُ الرَّجُلُ فِيهَا مُؤْمِنًا وَيُمْسِي كَافِرًا وَيَبِيعُ فِيهَا أَقْوَامٌ خَلَاقَهُمْ بِعَرَضٍ مِنَ الدُّنْيَا
নিশ্চয়ই কিয়ামতের পূর্বে অন্ধকার রাত্রির মত ঘন কালো অনেক ফিতনার আবির্ভাব হবে। সকালে একজন লোক মুমিন অবস্থায় ঘুম থেকে জাগ্রত হবে। বিকালে সে কাফেরে পরিণত হবে। বহু সংখ্যক লোক ফিতনায় পড়ে দুনিয়ার সামান্য স্বাথের বিনিময়ে তাদের চরিত্র ও আদর্শ বিক্রি করে দিবে।(মুসলিম, অধ্যায়: কিতাবুল ফিতান)| অপর বর্ণনায় এসেছে, তোমাদের একজন দুনিয়ার সামান্য সম্পদের বিনিময়ে তার দ্বীন বিক্রি করে দিবে|(তিরমিজী, ইমাম আলবানী সহীহ বলেছেন: সহীহুর জামে আস্ সাগীর হাদীস নং ৫১৫২)|
ফিতনার কতিপয় দৃষ্টান্ত
৬) ভন্ড ও মিথ্যুক নবীদের আগমণ হবেঃ
আমাদের নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সর্বশেষ নবী। কিয়ামতের পূর্বে আর কোন নবীর আগমণ ঘটবেনা। এটি ইসলামী আকীদার গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক। কিন্তু কিয়ামতের পূর্বে অনেক মিথ্যুক মিথ্যা নবুওয়াতের দাবী করে মুসলমানদের ঈমান নষ্ট করার চেষ্টা করবে। তাই এ সম্পর্কে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর উম্মাতকে যথাসময়ে সতর্ক করে দিয়েছেন। তিনি বলেনঃ
لَا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يُبْعَثَ دَجَّالُونَ كَذَّابُونَ قَرِيبٌ مِنْ ثَلَاثِينَ كُلُّهُمْ يَزْعُمُ أَنَّهُ رَسُولُ اللَّهِ
ত্রিশজন মিথ্যুক আগমণের পূর্বে কিয়ামত প্রতিষ্ঠিত হবেনা। তারা সকলেই দাবী করবে যে, সে আল্লাহর রাসূলমুমিন।(বুখারী, অধ্যায়: কিতাবুল মানাকিব)তিনি আরো বলেনঃ
لَا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى تَلْحَقَ قَبَائِلُ مِنْ أُمَّتِي بِالْمُشْرِكِينَ وَحَتَّى يَعْبُدُوا الْأَوْثَانَ وَإِنَّهُ سَيَكُونُ فِي أُمَّتِي ثَلَاثُونَ كَذَّابُونَ كُلُّهُمْ يَزْعُمُ أَنَّهُ نَبِيٌّ وَأَنَا خَاتَمُ النَّبِيِّينَ لَا نَبِيَّ بَعْدِي
আমার উম্মাতের একদল লোক মুশরিকদের সাথে মিলিত হওয়ার পূর্বে এবং মূর্তি পূজায় লিপ্ত হওয়ার পূর্বে কিয়ামত প্রতিষ্ঠিত হবেনা। আর আমার উম্মাতের মধ্যে ত্রিশজন মিথ্যুকের আগমণ ঘটবে। তারা সকলেই নবুওয়াতের দাবী করবে। অথচ আমি সর্বশেষ নবী। আমার পর কিয়ামতের পূর্বে আর কোন নবী আসবেনামুমিন।(আবু দাউদ, তিরমিযী. অধ্যায়: কিতাবুল ফিতান। ইমাম আলবানী সহীহ বলেছেন, মিশকাতুল মাসাবীহ, হাদীছ নং-৫৪০৬)
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর ভবিষ্যৎবাণী সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর শেষ বয়সের দিকে মুসায়লামা কায্যাব নবুওয়াতের দাবী করেছিল। তার অনুসারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকলে ইয়ামামার যুদ্ধে আবু বকর (রাঃ)এর খেলাফতকালে সাহাবীগণ এই ফিতনার অবসান ঘটান। এমনিভাবে যুগে যুগে আরো অনেকেই নবুওয়াতের দাবী করেছে। তাদের মধ্যে আসওয়াদ আনাসী, সাজা নামক জনৈক মহিলা, মুখতার আছ-ছাকাফী, হারিছ আল-কায্যাব অন্যতম।
নিকটবর্তী অতিতে ভারতে মীর্জা গোলাম আহমাদ কাদিয়ানী নবুওয়াতের দাবী করেছিল। তার অনুসারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকলে ভারত বর্ষের অনেক আলেম তার দাঁতভাঙ্গা জবাব দিয়েছেন এবং মুসলমানদেরকে পরিস্কারভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে সমস্ত ভন্ড এবং মিথ্যুক নবী থেকে উম্মাতকে সতর্ক করেছেন সে তাদেরই একজন। আল্লামা ছানাউল্লাহ অম্রিতসরী অত্যন্ত কঠোর ভাষায় তার প্রতিবাদ করেন। এতে মিথ্যুক কাদিয়ানী শায়খ ছানাউল্লাহর সাথে চ্যালেঞ্জ করলে উভয় পক্ষের মাঝে ১৩২৬ হিজরী সালে এক মুনাযারা (বিতর্ক) অনুষ্ঠিত হয়। তাতে এই মর্মে মুবাহালা হয় যে, দুজনের মধ্যে যে মিথ্যুক সে যেন অল্প সময়ের মধ্যে এবং সত্যবাদীর জীবদ্দশাতেই কলেরা রোগে আক্রান্ত হয়ে হালাক হয়ে যায়। আল্লাহ তা’আলা শায়খ ছানাউল্লাহর দুআ কবূল করলেন। এই ঘটনার এক বছর এক মাস দশদিন পর মিথ্যুক কাদীয়ানী ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়।(ইসনান ইলাহী যহীর, আল কাদীয়ানীয়া, পৃষ্ঠা নং-১৫৫-১৫৯)
এমনিভাবে কিয়ামতের পূর্ব পর্যন্ত একের পর এক মিথ্যুকের আগমণ ঘটে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কর্তৃক ঘোষিত ত্রিশ সংখ্যা পূর্ণ হবে।
৭) হেজায থেকে বিরাট একটি আগুন বের হবেঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে সহীহ হাদীছে বর্ণিত হয়েছে যে, কিয়ামতের পূর্বে হেজাযের (আরব উপদ্বীপের) যমিন থেকে বড় একটি আগুন বের হবে। এই আগুনের আলোতে সিরিয়ার বুসরা নামক স্থানের উটের গলা পর্যন্ত আলোকিত হয়ে যাবে। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
لَا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى تَخْرُجَ نَارٌ مِنْ أَرْضِ الْحِجَازِ تُضِيءُ أَعْنَاقَ الْإِبِلِ بِبُصْرَى
হেজাযের ভূমি থেকে একটি অগ্নি প্রকাশিত না হওয়া পর্যন্ত কিয়ামত কায়েম হবেনা। উক্ত অগ্নির আলোতে বুসরায় অবস্থানরত উটের গলা পর্যন্ত আলোকিত হবেমুমিন।(বুখারী, অধ্যায়: কিতাবুল ফিতান)
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর ভবিষ্যৎবাণী সত্যে পরিণত হয়েছে। ইমাম নববী (রঃ) বলেনঃ ৬৫৪ হিজরীতে আমাদের যামানায় উল্লেখিত ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। এটি ছিল বিরাট একটি অগ্নি। পবিত্র মদীনার পূর্ব দিক থেকে তা প্রকাশিত হয়েছিল। একমাস পর্যন্ত আগুনটি স্থায়ী ছিল।
৮) আমানতের খেয়ানত হবেঃ
আমানত শব্দটি খেয়ানত শব্দের বিপরীত। আমানতের হেফাযত করা ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। আমানতের খেয়ানত করা মুনাফেকের লক্ষণ। আখেরী যামানায় আমানতের খেয়ানত ব্যাপাকভাবে দেখা দিবে। অযোগ্য লোককে কোন কাজের দায়িত্ব দেয়াও আমানতের খেয়ানতের অন্তর্ভূক্ত। আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন এক মজলিসে আলোচনা করছিলেন। এমন সময় একজন গ্রাম্য লোক এসে নবীজীকে এই বলে প্রশ্ন করলো যে, কিয়ামত কখন হবে? নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর কথা চালিয়ে যেতে থাকলেন। কিছু লোক মন্তব্য করলোঃ নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লোকটির এই প্রশ্নকে অপছন্দ করেছেন। আবার কিছু লোক বললোঃ তিনি তাঁর কথা শ্রবণ করেন নি। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আলোচনা শেষে বললেনঃ প্রশ্নকারী লোকটি কোথায়? সে বললোঃ এই তো আমি। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ
إِذَا ضُيِّعَتِ الْأَمَانَةُ فَانْتَظِرِ السَّاعَةَ قَالَ كَيْفَ إِضَاعَتُهَا يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ إِذَا أُسْنِدَ الْأَمْرُ إِلَى غَيْرِ أَهْلِهِ فَانْتَظِرِ السَّاعَةَ
যখন আমানতের খেয়ানত হবে তখন কিয়ামত নিকটবর্তী হয়ে গেছে বলে মনে করবে। লোকটি আবার প্রশ্ন করলোঃ কিভাবে আমানতের খেয়ানত করা হবে? নবীজী বললেনঃ যখন অযোগ্য লোকদেরকে দায়িত্ব দেয়া হবে তখন কিয়ামতের অপেক্ষা করতে থাকোমুমিন।(বুখারী, অধ্যায়: কিতাবুল রিকাক)
আখেরী যামানায় যখন আমানতদারের সংখ্যা কমে যাবে তখন বলা হবে অমুক গোত্রে একজন আমানতদার লোক আছে। লোকেরা একথা শুনে তার প্রশংসা করবে এবং বলবেঃ সে কতই না বুদ্ধিমান! সে কতই না মজবুত ঈমানের অধিকারী! অথচ তার অন্তরে সরিষার দানা পরিমাণ ঈমানও নেই।(বুখারী, অধ্যায়: কিতাবুল ফিতান)
৯) দ্বীনী ইল্ম উঠে যাবে এবং মূর্খতা বিস্তার লাভ করবেঃ
কিয়ামতের নিকটবর্তী সময়ে দ্বীনী ইলমের শিক্ষা ও চর্চা কমে যাবে এবং মানুষের মাঝে ব্যাপকভাবে দ্বীনী বিষয়ে মূর্খতা বিরাজ করবে। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
إِنَّ مِنْ أَشْرَاطِ السَّاعَةِ أَنْ يُرْفَعَ الْعِلْمُ وَيَثْبُتَ الْجَهْلُ
কিয়ামতের অন্যতম আলামত হচ্ছে ইলম উঠিয়ে নেয়া হবে এবং মানুষের মাঝে অজ্ঞতা বিস্তার লাভ করবেমুমিন।(বুখারী, অধ্যায়: কিতাবুল ইল্ম) এখানে ইল্ম বলতে ইলমে দ্বীন তথা কুরআন-সুন্নাহর জ্ঞান উদ্দেশ্য। তিনি আরো বলেনঃ
إِنَّ اللَّهَ لَا يَقْبِضُ الْعِلْمَ انْتِزَاعًا يَنْتَزِعُهُ مِنَ الْعِبَادِ وَلَكِنْ يَقْبِضُ الْعِلْمَ بِقَبْضِ الْعُلَمَاءِ حَتَّى إِذَا لَمْ يُبْقِ عَالِمًا اتَّخَذَ النَّاسُ رُءُوسًا جُهَّالًا فَسُئِلُوا فَأَفْتَوْا بِغَيْرِ عِلْمٍ فَضَلُّوا وَأَضَلُّوا
আল্লাহ তাআলা মানুষের অন্তর থেকে ইল্মকে টেনে বের করে নিবেন না; বরং আলেমদের মৃত্যুর মাধ্যমে ইল্ম উঠিয়ে নিবেন। এমন কি যখন কোন আলেম অবশিষ্ট থাকবেনা তখন লোকেরা মূর্খদেরকে নেতা হিসাবে গ্রহণ করবে। তাদেরকে কোন মাসআলা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে বিনা ইলমেই ফতোয়া দিবে। ফলে তারা নিজেরা গোমরাহ হবে এবং মানুষদেরকেও গোমরাহ করবেমুমিন।(বুখারী, অধ্যায়: কিতাবুল ইলম)
ইমাম যাহাবী বলেনঃ বর্তমানে দ্বীনী ইল্ম কমে গেছে। অল্প সংখ্যক মানুষের মাঝেই ইলম চর্চা সীমিত হয়ে গেছে। সময় অতিবাহিত হওয়ার সাথে সাথে ইলমের আরো কমতি হবে এবং (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর বাণী সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়িত হবে।
ইমাম যাহাবীর যামানায় যদি এই অবস্থা হয়ে থাকে তাহলে বর্তমানকালের অবস্থা কেমন হতে পারে তা আমরা সহজেই উপলব্ধি করতে পারি। বর্তমানে ইলমে দ্বীনের চর্চা কমে গেছে। কুরআন-সুন্নার আলেমের সংখ্যা খুবই নগণ্য। যার ফলে শির্ক-বিদআতে অধিকাংশ মুসলিম সমাজ পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। মোটকথা কিয়ামতের এই আলামতটি অনেক আগেই প্রকাশিত হয়েছে এবং নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর বাণী সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে।
১০) অন্যায়ভাবে জুলুম-নির্যাতনকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবেঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ æআখেরী যামানায় এই উম্মাতের মধ্যে একদল লোক আসবে যাদের হাতে গরুর লেজের মত লাঠি থাকবে। তারা আল্লাহর অসন্তুষ্টি নিয়ে সকাল বেলা ঘর থেকে বের হবে এবং আল্লাহর ক্রোধ নিয়ে বিকাল বেলা ঘরে ফিরবেমুমিন।( মুসনাদে আহমাদ, ইমাম আলবানী সহীহ বলেছেন, দেখুন সহীহুল জামে হাদীছ নং ৩৫৬)
১১) যেনা-ব্যভিচার বৃদ্ধি পাবেঃ
আল্লাহ তাআলা এবং তদীয় রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ব্যভিচার হারাম করেছেন। ইহা হারাম হওয়া অতি সুস্পষ্ট বিষয়। এমন কোন মুসলিম নারী-পুরুষ পাওয়া যাবেনা যে এর হারাম হওয়া সম্পর্কে অবগত নয়। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
وَلَا تَقْرَبُوا الزِّنَى إِنَّهُ كَانَ فَاحِشَةً وَسَاءَ سَبِيلًا
আর তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেয়োনা। নিশ্চয় এটা অশ্লীল কাজ এবং খুবই মন্দ পথ। (সূরা বানী ইসরাঈলঃ ৩২)
ব্যভিচারের ইহকালীন শাস্তি হলো বিবাহিত হলে
রজম করা তথা পাথর মেরে হত্যা করা। আর অবিবাহিত হলে একশত বেত্রাঘাত করা।
সহীহ বুখারীতে সামুরা বিন জুনদুব (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর স্বপ্নের দীর্ঘ হাদীছে কবরে ব্যভিচারীর ভয়াবহ শাস্তির বর্ণনা এসেছে। তিনি বলেনঃ
فَأَتَيْنَا عَلَى مِثْلِ التَّنُّورِ قَالَ فَأَحْسِبُ أَنَّهُ كَانَ يَقُولُ فَإِذَا فِيهِ لَغَطٌ وَأَصْوَاتٌ قَالَ فَاطَّلَعْنَا فِيهِ فَإِذَا فِيهِ رِجَالٌ وَنِسَاءٌ عُرَاةٌ وَإِذَا هُمْ يَأْتِيهِمْ لَهَبٌ مِنْ أَسْفَلَ مِنْهُمْ فَإِذَا أَتَاهُمْ ذَلِكَ اللَّهَبُ ضَوْضَوْا
আমরা একটি তন্দুর চুলার নিকট আগমণ করলাম। যার উপরিভাগ ছিল সংকীর্ণ এবং ভিতরের অংশ ছিল প্রশস্ত। তার ভিতরে আমরা কান্নার আওয়াজ শুনতে পেলাম। দেখতে পেলাম, তাতে রয়েছে কতগুলো উলঙ্গ নারী-পুরুষ। তাদের নিচের দিক থেকে আগুনের শিখা প্রজ্বলিত করা হচ্ছে। অগ্নিশিখা প্রজ্ব্বলিত হওয়ার সাথে সাথে তারা Dমুমিন উচ্চস্বরে চিৎকার করছে। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কারণ জানতে চাইলে ফেরেশতাদ্বয় বললেনঃ এরা হলো আপনার উম্মাতের ব্যভিচারী নারী-পুরুষ।(বুখারী, অধ্যায়: কিতাবুল তা’বীর)
কিয়ামতের পূর্বে উম্মাতে মুহাম্মাদীর মধ্যে এই পাপের কাজটি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়বে। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
إِنَّ مِنْ أَشْرَاطِ السَّاعَةِ أَنْ يُرْفَعَ الْعِلْمُ وَيَثْبُتَ الْجَهْلُ وَيُشْرَبَ الْخَمْرُ وَيَظْهَرَ الزِّنَا
নিশ্চয় কিয়ামতের অন্যতম আলামত হচ্ছে ইল্ম উঠিয়ে নেয়া হবে এবং মানুষের মাঝে অজ্ঞতা বিস্তার লাভ করবে, মদ্যপান ছড়িয়ে পড়বে এবং মুসলমানেরা ব্যভিচারে লিপ্ত হবে।(বুখারী, অধ্যায়: কিতাবুল ইলম)| তিনি আরো বলেনঃ আমার উম্মাতের একটি দল জেনাকে হালাল মনে করবে।(বুখারী, অধ্যায়: কিতাবুল আশরিবা) আখেরী যামানায় ভাল লোকগণ চলে যাওয়ার পর শুধুমাত্র দুষ্ট লোকেরা অবশিষ্ট থাকবে। তারা প্রকাশ্য দিবালোকে মানুষের সামনে গাধার ন্যায় ব্যভিচারে লিপ্ত হবে। তাদের উপরে কিয়ামত প্রতিষ্ঠিত হবে।(মুসরিম, অধ্যায়: কিতাবুল ফিতান)
ইমাম কুরতুবী বলেনঃ এ হাদীছে নবুওয়াতের অন্যতম প্রমাণ রয়েছে। কারণ তাঁর ভবিষ্যৎবাণী বাস্তবে পরিণত হয়েছে। আমাদের যামানায় প্রকাশ্যে ব্যভিচার সংঘটিত হচ্ছে।
কিয়ামতের এই আলামতটি বর্তমান মুসলিম সমাজেও ব্যাপকভাবে দেখা দিয়েছে, যা বিস্তারিত বলার অপেক্ষা রাখেনা। বড় পরিতাপের বিষয় এইযে, অনেক ইসলামী দেশে সরকারীভাবে ব্যভিচারের লাইসেন্স দেয়া হয়ে থাকে। এ সমস্ত মুসলিম দেশের শাসকরা রোজ কিয়ামতে আল্লাহর দরবারে কি জবাব দিবেন!!
১২) সুদখোরের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবেঃ
মুসলমানদের উপর সুদ আদান-প্রদান করা এবং সুদের ব্যবসা হারাম করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَأْكُلُوا الرِّبَا أَضْعَافًا مُضَاعَفَةً
হে ঈমানদারগণ! তোমরা চক্র বৃদ্ধি হারে সুদ গ্রহণ করোনা। (সূরা আল-ইমরানঃ ১৩০) নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সুদখোরকে অভিশাপ করেছেন।(বুখারী, অধ্যায়: কিতাবুল লিবাস)
কিয়ামতের পূর্বে মুসলমানদের মাঝে সুদ গ্রহণ করা এবং সুদের ব্যবসা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আমার উম্মাতের মধ্যে এমন এক সময় আসবে যখন সম্পদ কামাই করার ব্যাপারে হালাল-হারামের বিবেচনা করা হবেনা।(তাবারানী, ইমাম মুনযেরী বলেন: হাদীছের বর্ণনাকারীগন বিশস্ত, আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব ৩/৯)
তিনি আরো বলেনঃ
إِنَّ مِنْ أَشْرَاطِ السَّاعَةِ أَنْ يَظْهَرَ الرِّبَا
নিশ্চয় কিয়ামতের আলামতের মধ্য থেকে অন্যতম আলামত হচ্ছে সুদের প্রসার লাভ করবে।(বুখারী, অধ্যায়: কিতাবুল বুযু)
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর বাণী বাস্তবে পরিণত হয়েছে। অগণিত সংখ্যক মুসলমান আল্লাহ ও রাসূলের নির্দেশ অমান্য করে সুদের ব্যবসায় লিপ্ত হয়েছে। বর্তমান বিশ্বে এমন কোন ইসলামী দেশ পাওয়া যাবেনা যেখানে সুদী ব্যাংক নেই বা সুদের ব্যবসা নেই।
♥♥বি:দ্রঃশুধু এটা একটা সাইট থেকে নেয়া।ভালো লাগছে তাই শেয়ার করলাম
♥ সবাই ভালো থাকুন সুস্হ থাকুন।ট্রিকবিডির সাথেই থাকুন আর next part এর জন্য অপেক্ষা করুন।
♥♥♥আল্লাহ হাফেজ