Site icon Trickbd.com

দান-সদকা এর গুরুত্ব | কেন দান-সদকা দিবেন | দান-সদকা দেয়ার উপকার। (দুটি সোলাইমান (আঃ) এর সময় গঠিত ঘটনার সহিত বোঝতে পারবেন দান-সদকার কেমন গুরুত্ব)

Unnamed

”বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম”

(= আসসালামুআলাইকুম =)

মহান আল্লাহ তায়ালা সব মানুষকে ধনী ও সম্পদশালী বানিয়ে দিতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। আসলে ধনীরা গরিবদের সাথে কেমন আচরণ করে আল্লাহ তায়ালা তা দেখতে চান।

বাস্তবার আলোকে বলতে হয় আজ বিশ্বের মুসলমানরা আল্লাহর কোনো বিধানই যথার্থভাবে পালন করছে না। মুসলিম সমাজ যদি যাকাত, দান-সদকা প্রদানে মহান আল্লাহর নির্দেশ পালন করত তবে সারা বিশ্বের মুসলিম সমাজ আজকের মত দারিদ্র্যের যাতাকলে পিষ্ট হত না।

দান – সদকা বলতে যে শুধু টাকা পায়সা দেয়া, তা না। যদি আপনি আপনার খাদ্যের অর্ধেক বা কিছু অংশ কোন ক্ষুধার্থকে দেন, তাহলে তাই সদকা। বাসায় – বাড়িতে কোন গরিব, ক্ষুধার্থ বা ফকির -মিসতিন আসে তা হলে তাকে কোন কিছু না দিয়ে ফিরিয়ে দেয়া কোন ঈমানদার মানুষের কাজ না, যদি না কোন কারণ থাকে।

নিম্নে বর্ণিত ২টি ঘঠনা  এর মাধ্যমে বোঝতে পারবেন দান-সদকা এর আরো গুরুত্ব। (এর মধ্যে ১ম ঘটনাতে বোঝানো হয়েছে “দান- সদকা করলে কমে না, বরং আরো বাড়ে”। আর ২য় ঘটনাতে বোঝানো হয়েছে “দান-সদকা করলে, আল্লাহ তায়ালা তার যেকোন বিষয়ে নিরাপত্তা প্রদান করেন”।

এর আগে নিম্নে কিছু দান-সদকা সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালার বাণী…

আল্লাহ তায়ালা কোরআনুল করীমে ফরমানঃ হে ঈমানদারগণ! আমার দেওয়া রিজিকের কিয়াদাংশ দান করে দাও এমন এক মহা সংকটপুর্ণ দিন আসার পূর্বে যে দিন না কোন বেচা কিনা চলবে, না কোন বন্ধুত্ব কাজে আসবে এবং আল্লাহর অনুমতি ভিন্ন না কোন সুপারিশের সুযোগ হবে। (–সুরা বাকারা, আয়াতঃ ২৫৪)

আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ এবং তোমরা যারা আল্লাহর রাস্তায় দান করবে উহার প্রতিদান তোমাদিগকে পুরাপুরি দেয়া হবে। আর তোমাদের প্রতি কোনপ্রকার জুলুম করা হবে না। (-সুরা আনফাল, আয়াতঃ ৬০)

আল্লাহপাক আরও ইরশাদ ফরমানঃ আল্লাহ তাআলা সুদকে ধ্বংস করে দেন এবং সদকাকে বর্দ্ধিত করে দেন। (-সুরা বাকারা, আয়াতঃ ২৭৬)

ঘটনা – ১

হযরত দাউদ (আঃ) এর যুগে একদা এক মহিলা রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছিলেন। তাহার সাথে ছিল এক ব্যাগ আটা। হঠাত বাতাস এসে তাঁর পরো আটা উড়িয়ে নিয়ে গেল। তখন ঐ মহিলা হযরত দাউদ (আঃ) এর কাছে গিয়ে নাশিল দিলেন বাতাসের বিরোদ্ধে (তখন হযরত দাউদ (আঃ) ছিলেন বাদশা)  যে, “আমি একজন গরিব। আমি এক ব্যাগ আটা নিয়ে যাচ্ছিলাম, আর পথিমধ্যে বাতাস এসে আমার সব আটা উঠিয়ে নিয়েছিল”। অতএব আপনি এর বিচার করুন। বাতাসকে বলেদিন যাতে আমার আটা আবার ফিরিয়ে দেয়।

হযরত দাউদ (আঃ) ভাবলেন বাতাস কে কি ভাবে বলব যে আটা ফিরিয়ে দেয়। তিনি এর পরিবর্তে ঐ মহিলাকে এক বস্তা আটা দিয়ে দিলেন।

পথিমধ্যে দেখামিল হযরত সোলাইমান (আঃ) এর সাথে (সোলাইমান (আঃ) হলেন দাউদ (আঃ) এর পুত্র ও দাউদ (আঃ) এর পরে- পুরো পৃথিবী সহ জ্বীন, পানি ইত্যাদি এর বাদশা) ।  তিনি ঐ মহিলাকে জিগ্গেস করলেন কেন রাজদরবারে গিয়েছিলেন? উত্তরে ঐ সমস্ত কথা বললেন ঐ মহিলা। এর উত্তরে হযরত সোলইমান (আঃ) বললেন আপনি আবার যান এবং বলুন যে আমি আবার পাঠিয়েছি এর সঠিক বিছারের জন্য।

ঐ মহিলা আবার রাজদরবারে এসে সমস্ত কথা বললেন এবং ঐ সময় সোলাইনাম (আঃ)ও এসে উপস্থিত হলেন। হযরত দাউদ (আঃ) সোলাইমান (আঃ) কে বললেন, আমি আর কি ভাবে এর বিচার করতে পারি। এর উত্তরে হযরত সোলাইমান (আঃ) বললেন হাশরের দিন যখন ঐ মহিলা বলবেন যে তাহার ঠিক মতো বিচার হয়নি তখন। আপনিত আল্লাহ তায়ালার একজন নবী। আপনি চাইলে বাতাসকে আপনার সামনে এনে হাজির করাতে পারবেন এবং বিচার করতে পারবেন।

তখন হযরত সোলাইমান (আঃ) আল্লাহ তায়ালার দরবারে সেজদা দিয়ে। তখন বাতাস হাজির হলো। এ কথা জিগ্গেস করলে বাতাস বলে এক মালবাহি নৌকা সগরে ডুবে যেতে ছিল। তখন তারা আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করে যে তারা বাঁচলে তাদের সব মাল আল্লাহর রাস্তায় দান করবে। তখন আমি আল্লাহর হুকুমে ঐ মহিলার আটা উড়িয়ে নিয়ে নৌকার ফাঁটল বন্ধ করি এবং তারা বেঁচে যায়।

তখন মালবাহি নৌকার মানুষেরা দাউদ (আঃ) এর কাছে এসে ((…ঘঠনা…)) বলে তাদের সমস্ত মাল দিয়ে দেয় যাতে দাউদ (আঃ) সঠিক পথে সে মাল দেন। তখন হযরত দাউদ (আঃ) ঐ মহিলাকে বললেন, আপনি কি কোন ভলো কাজ করেন? উত্তরে ঐ মহিলা বললেন “”ভালো কাজ বলতে আমার বাড়িতে কোন ফকির মিসকিন এলে তাদের আমি খালি হাতে ফিরিয়ে দেই না। এ কারণে আমাকে অনেক সময় এক দিন ক্ষুধার্থ থাকে হয়। আজও একজন এসেছে সে খুব ক্ষুধার্থ, আমার দুটো রুটি ছিল – খেয়ে দিন কাটানোর। তা দিলে সে খেয়ে বলে আরো লাগবে তার অনেক ক্ষুধা লেগেছে। আর ঘরে আটাও ছিল না কিন্তু গম ছিল। তা পিশে ঘরে নিয়ে যাচ্ছিলাম আর পথিমধ্যে…

হযরত দাউদ (আঃ) বোঝতে পারলেন যে, “এই করণে আল্লাহ তায়ালা ঐ কাজে খুশি হয়ে জাহাজের মাল তাহার জন্য নির্ধারণ করেছেন। তিনি ঐ সকল মাল ঐ মহিলাকে দিয়ে দিলেন।

–> এই হলো দান – সদকা এর গুরুত্ব <–

ঘটনা – ২

হযরত সোলাইমান (আঃ) এর শাসনামলের ঘটনা। একটি পাখি এসে নবী (আঃ) এর দরবারে অভিযোগ দায়ের করলো, একটি ছোট ছেলে এসে তার পারা ডিম প্রতিনিয়ত ভেঙ্গে ফেলে, যার দ্বারা তাদের বংশ বিস্তারে বাধা প্রদান হচ্ছে।
উল্লেখ্যঃ হযরত সোলাইমান (আঃ) সমগ্র পৃথিবীর বাদশা ছিলেন এবং তিনি সমগ্র জন্তু-জানোয়ার পক্ষিকূলের ভাষা বুঝতে পারতেন। আল্লাহ্ তায়ালা তাঁকে এ ক্ষমতা দান করেন।
তিনি পাখির অভিযোগ আমলে নিলেন এবং যেহেতু ছেলেটির বাবা জীবিত ছিল না তাই তার মা কে ডেকে পাঠালেন। সতর্ক করে দিলেন তার ছেলে যেন পাখির বাসা থেকে ডিম নিয়ে আর না ভাঙ্গে। নবী (আঃ) কে মা আশ্বাস দিলেন তার ছেলে আর ডিম ভাঙ্গবে না।
কিন্তু কিছু দিন যেতেই পাখিটি আবাও অভিযোগ নিয়ে এলো, ছেলেটি আবাও ডিম ভেঙ্গে ফেলেছে। এবার হযরত সোলাইমান (আঃ) রাষ্ট্রীয় ফরমান ভঙ্গ করায় রাগান্নিত হলেন। ছেলেটির মাকে ডেকে এনে নতুন আরেকটি ফরমান জারি করলেন।পাখির বাসার ডিম রক্ষার্থে দু’টি জ্বিন নিযুক্ত করে দিলেন এবং জ্বিনকে হুকুম দিলেন, যেই ডিম ভাঙ্গতে যাবে, তার দুই পা ধরে ফেড়ে ফেলবে।
মা বাড়িতে গিয়ে ছেলেকে খুবই বকাঝকা করলেন এবং বাদশার ফরমান জানলেন, আবার ডিম ভাঙ্গতে গেলে জিবন নিয়ে আর ফিরতে হবে না।
কিছু দিন অতিবাহিত হল, ছেলেটির আবারো পাখির ডিম পারার কথা মনে পড়লো। ডিম ভাঙ্গা ছেলেটি নেশায় পরিনত হয়ে গিয়েছিল। বাদশার ফরমান ছেলেটি ভুলে গেল!
পাখির ডিম ভাঙ্গার জন্য ছেলেটি দৌড় দিল! ঐ সময় তার মা রুটি তৈরি করছিলেন। মা তাকে ডাক দিলেন রুটি খাওয়ার জন্য। ছেলেটি মা এর থেকে একটি রুটি নিয়ে পাখির ডিম ভাঙ্গতে দে দোড়!
পথিমধ্যে এক ভিক্ষুক ছেলেটিকে রুটি নিয়ে যেতে দেখলে হাক দিল যে, সে অভুক্ত। ছেলেটি তার রুটির অর্ধেক ছিড়ে ভিক্ষুককে দান করলো এবং দৌড়ে গিয়ে আবারও পাখির বাসায় গিয়ে ডিম ভেঙ্গে ফেললো।

পাখিটি হাযরত সোলাইমান আঃ.এর দরবারে এসে ছেলেটি বিরুদ্ধে আবারো অভিযোগ দায়ের করলো। এবার নবী আঃ খুবই আশ্চর্য হলেন, এমটি তো হওয়ার কথা না।তিনি আরেক দল জ্বিন প্ররণ করলেন। কিছুক্ষনের মধ্যেই তারা এক বিশ্মকর খবর নিয়ে আসলো!
জ্বিনেরা পাখির বাসার নিরাপত্তার জন্য ঠিকই পাহারায় নিযুক্ত ছিল। ছেলেটি পাখির বাসা ভাঙ্গতে আসার সময় একটি ভিক্ষুককে রুটির কিছু অংশ দান করে, যার প্রেক্ষিতে আল্লাহ্ তা’য়ালা! ছেলেটির নিরাপত্তার জন্য একজন ফেরেস্তা নিযুক্ত করে দেন। ছেলেটি পাখির ডিম ভাঙ্গার সময় জ্বিনেরা ছেলেটিকে আক্রমন করতে গেলে ফেরেস্তা তাদের দুই জ্বিনকে দুই মেরুতে নিক্ষেপ করেন।

*** সুবাহানআল্লাহ।

আপনারা নিশ্চই দান – সদকা এর গুরুত্ব বোঝতে পেরেছেন। বেশি বেশি করে ফকির মিসকিনদের দান- সদকা করবেন। এবং নিয়মিত নামাজ আদায় সহ সাওম পালন সহ সকল ফরজ কাজ আদায় করবেন। হে আল্লাহ সবাইকে ফরজ কাজ আদায় করার তাওফিক দান করুন। (আমিন)

কয়েকদিন যাবত ট্রিকবিডিতে কিছু লেখতে পারিনা ব্যাস্ততার করাণে। এখন থেকে নিয়মিত লেখার চেষ্টা করব। ইনশাল্লাহ্

তথ্যসূত্রঃ এখন যদি পোষ্ট কপি কপি করে চিল্লান তাহলে বলবেন কি ভাবে কপি। ইসলামিক ঘটনা ত আর কপি করলেও সমস্যা নেই। তবে হ্যাঁ নিজের হতে লিখেছি। আর তথ্যসূত্র- © Some rights reserved from P.A.I.I.B. & Supravat sydney ©® ME…

কোন ভুল হলে ধরিয়ে দিবেন আর সবসময় ট্রিকবিডির সাথেই থাকবেন। পোষ্ট পড়ার জন্য ~ ধন্যবাদ। 🙂

আল্লাহ হাফেজ।।

Exit mobile version