Site icon Trickbd.com

হাদীস বিষয়ক কিছু পরিভাষার সরল সংজ্ঞা।

Unnamed

হাদীস বিষয়ক কিছু পরিভাষার সরল সংজ্ঞা

রহমান রহীম আল্লাহ্‌ তায়ালার নামে-

হাদীস বিষয়ক কিছু পরিভাষা যা আমাদের জানা থাকা জরুরী
হাদীসের ব্যাবহারিক সংজ্ঞাঃ হাদীস বলতে সাধারনতঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কথা, কর্ম বা অনুমোদনকে বুঝানো হয়। অর্থাৎ, ওহীর মাধ্যমে প্রাপ্ত জ্ঞানের আলোকে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) যা বলেছেন, করেছেন বা অনুমোদন করেছেন তাকে হাদীস বলা হয়। এবং হাদীস বলে যা জানা যায় তা সত্যিই রাসুল (সাঃ) এর কথা কিনা তা যাচাই করে নির্ভরতার ভিত্তিতে মুহাদ্দিসগণ হাদীসের বিভিন্ন প্রকারে ও পর্যায়ে বিভক্ত করেছেন।
আমরা প্রায়ই শুনে থাকি এমন আরও কিছু শব্দের সহজ সংজ্ঞা এখানে দেওয়া হল-
মুহাদ্দিসঃ যে ব্যক্তি হাদীস চর্চা করেন এবং বহু সংখ্যক হাদীসের ‘সনদ’ ও ‘মতন’ সম্পর্কে বিশেষ জ্ঞান রাখেন, তাঁকে মুহাদ্দিস বলে।
সনদঃ হাদীসের মূল কথাটুকু যে সুত্র পরম্পরায় হাদীসের গ্রন্থ সংকলনকারী পর্যন্ত পৌঁছেছে তাকে ‘সনদ’ বলা হয়। এতে হাদীস বর্ণনাকারীদের নাম একের পর এক সজ্জিত থাকে।
মতনঃ হাদীসের মূল কথা বা বক্তব্য ও তার শব্দ সমষ্টিকে ‘মতন’ বলে।
রিওয়ায়াতঃ হাদীস বর্ণনা করাকে রিওয়ায়াত বলে। কখনও কখনও মূল হাদীসকেও রিওয়ায়াত বলে। যেমন, এই কথার সমর্থনে একটি রিওয়ায়াত (হাদীস) আছে। হাদীস বর্ণনাকারীকে রাবী বলা হয়।
সাহাবীঃ যে ব্যাক্তি ঈমানের সঙ্গে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর সাহচর্য লাভ করেছেন বা তাঁকে দেখেছেন ও তাঁর হাদীস বর্ণনা করেছেন, অথবা জীবনে একবার তাঁকে দেখেছেন এবং ঈমানের সঙ্গে মৃত্যুবরণ করেছেন তাঁকে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর সাহাবী বলে।
তাবিঈঃ সাহাবীদের ঠিক পরের প্রজন্মের কোন ব্যক্তি যিনি রাসুল (সাঃ) এর কোনসাহাবীর নিকট হাদীস শিক্ষা করেছেন অথবা অন্ততঃপক্ষে সাহাবীকে দেখেছেন এবং মুসলমান হিসেবে মৃত্যুবরণ করেছেন, তাঁকে তাবিঈ বলে।
মারফু হাদীসঃ যে হাদীসের সনদ (বর্ণনা পরম্পরা) রাসুলুল্লাহ (সাঃ) থেকে শুরু হয়, তাকে মারফু হাদীস বলে। অর্থাৎ, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর কর্ম, কথা বা অনুমোদন হিসেবে বর্ণিত হাদীসকে মারফু হাদীস বলে। *

মাওকুফ হাদীসঃ সাহাবীগনের কর্ম, কথা বা অনুমোদন হিসেবে বর্ণিত হাদীসকে মাওকুফ হাদীস বলে।*
মাকতু হাদীসঃ তাবেয়ীগনের কথা, কর্ম বা অনুমোদন হিসেবে বর্ণিত হাদিসকে মাকতু হাদীস বলে।*
মুত্তাসিল হাদীসঃ যে হাদীসের সনদের ধারাবাহিকতা প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পূর্ণরূপে রক্ষিত আছে, কোন স্তরেই কোন রাবীর নাম বাদ পরেনি, তাকে মুত্তাসিল হাদীস বলে।
মুরসাল হাদীসঃ যে হাদীসের সাহাবীর নাম বাদ পড়েছে এবং তাবিঈ সরাসরি রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর উল্লেখ করে হাদীস বর্ণনা করেছে, তাকে মুরসাল হাদীস বলে।
সহীহ হাদীসঃ মুহাদ্দিসগণের পরিভাষায় যে হাদীসের মধ্যে ৫ টি শর্ত পূরণ হয়েছে তাকে সহীহ হাদীস বা বিশুদ্ধ হাদীস বলে। শর্ত ৫ টি হল-
১) হাদীসের সকল বর্ণনাকারী বা রাবী পরিপূর্ণ সৎ ও বিশ্বস্ত বলে প্রমানিত। একে ‘আদালত’ বলে।
২) সকল রাবীর ‘নির্ভুল বর্ণনা ক্ষমতা’ পূর্ণরূপে বিদ্যমান বলে প্রমানিত। একে ‘যাবতা’ বলে।
৩) সনদের প্রত্যকে রাবী তাঁর ঊর্ধ্বতন রাবী থেকে স্বকর্ণে হাদিসটি শুনেছেন বলে প্রমানিত। একে ‘ইত্তিসাল’ বলে।
৪) হাদীসটি অন্যান্য প্রমানিত হাদীসের বর্ণনার বিপরীত নয় বলে প্রমানিত। একে ‘শুযুয মুক্তি’ বলে।
৫) হাদিসটির মধ্যে সূক্ষ্ম কোন সনদগত বা অর্থগত ত্রুটি নেই বলে প্রমানিত। একে ‘ইল্লাত মুক্তি’ বলে।
হাসান হাদীসঃ মুহাদ্দিসগণের পরিভাষায় যেসব হাদীসে সহীহ হাদীসের ৫ টি শর্ত বিদ্যমান, কিন্তু দ্বিতীয় শর্ত অর্থাৎ, ‘যাবতা’ বা হাদীস বর্ণনাকারীর ‘নির্ভুল বর্ণনা ক্ষমতা’ কিছুটা দুর্বল বলে বোঝা যায়, সেই হাদিসকে হাসান হাদীস বা গ্রহণযোগ্য হাদীস বলা হয়। অর্থাৎ, যদি সনদে উল্লেখিত কোন একজন রাবীর বর্ণিত হাদীসের মধ্যে কিছু অনিচ্ছাকৃত ভুল ত্রুটি লক্ষ্য করা যায়, তাহলে এইরূপ রাবীর বর্ণিত হাদীস ‘হাসান হাদীস’ বলে গন্য।
ফিকহবিদগণ সাধারণত সহীহ ও হাসান হাদীসের ভিত্তিতে শরীয়তের বিধান নির্ধারণ করেন।
যঈফ বা দুর্বল হাদীসঃ যে হাদীসের মধ্যে হাসান হাদীসের শর্তগুলি অবিদ্যমান দেখা যায়, মুহাদ্দিসগণের পরিভাষায় তাকে যঈফ হাদীস বলে। অর্থাৎ,
১- রাবীর বিশ্বস্ততার ঘাটতি, বা
২- তাঁর বিশুদ্ধ হাদীস বর্ণনা বা স্মৃতির ঘাটতি, বা
৩- সনদের মধ্যে কোন একজন রাবী তাঁর ঊর্ধ্বতন রাবী থেকে সরাসরি ও স্বকর্ণে শোনেননি বলে প্রমানিত হওয়া বা দৃঢ় সন্দেহ হওয়া, বা
৪- অন্যান্য প্রমানিত হাদীসের সাথে সাংঘর্ষিক হওয়া, অথবা
৫- সূক্ষ্ম কোন সনদগত বা অর্থগত ত্রুটি থাকা;
ইত্যাদি যে কোন একটি বিষয় কোন হাদীসের মধ্যে থাকলে হাদিসটি যঈফ বলে গণ্য। কোন হাদিসকে ‘যঈফ’ বলে গণ্য করার অর্থ হল, হাদিসটি রাসুল (সাঃ) এর কথা নয় বলেই প্রতীয়মান হয়।
মাউযু হাদীস বা বানোয়াট হাদীসঃ যে হাদীসের রাবী জীবনে কখনও ইচ্ছাকৃত ভাবে রাসুল (সাঃ) এর নামে বানোয়াট কথা সমাজে প্রচার করেছে অথবা, ইচ্ছাকৃত ভাবে হাদীসের সুত্র (সনদ) বা মূল বাক্যের মধ্যে কমবেশি করেছে বলে প্রমানিত হয়েছে, তার বর্ণিত হাদিসকে বানোয়াট বা মাউযু হাদীস বলে। এরূপ ব্যক্তির বর্ণিত হাদীস গ্রহণযোগ্য নয়।
গরীব হাদীসঃ যে সহীহ হাদীস কোন যুগে মাত্র একজন রাবী বর্ণনা করেছেন তাকে গরীব হাদীস বলা হয়।