Site icon Trickbd.com

নিয়নবাতি [পর্ব-৩৮] :: আমরা কি খাটি মুসলিম নাকি মূর্খ মুসলমান??!!!

লেখার শুরুতেই বলে রাখি আমি কোন ইসলামিক আলেম নই কিংবা খুব জ্ঞানী কেউ নই তাই লেখার মাঝে যদি কোন ভুল হয় তবে ক্ষমার সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন এবং উপযুক্ত দলিল-প্রমান-লজিক দিয়ে আমাকে সংশোধন করবেন।

কারা মুমিন??
সোজা কথাতে যারা ঈমানের মূল বিষয়গুলো সম্পর্কে সন্দেহাতীত বিশ্বাস রাখে তারা মুমিন তথা বিশ্বাসী। ঈমানের যেই ৭ টি বিষয়ে বিশ্বাস স্থাপন করতে হয় (১) আল্লাহ তা’য়ালার উপর (২) ফেরেশতাদের উপর (৩) তাঁর কিতাব সমূহের উপর (৪) রাসূলগণের উপর
(৫) কিয়ামত দিবসের উপর (৬) ভালো-মন্দ তাকদীরের উপর (৭) মৃত্যুর পর পুনঃরায় জীবিত হওয়ার উপর।

মুসলিম কারা??
যারা ঈমান আনে ও সেই বিশ্বাসগুলো অন্তর হতে বিশ্বাস করে মুখে স্বীকার করে এবং সেই অনুযায়ী কাজ করে তারাই মুসলিম।
এক্ষেত্রে “সকল মুসলিম’ই মুমিন তবে সকল মুমিন যে মুসলিম হবেই এননটা নয়”

মুনাফিক কারা?
যারা ঈমান আনে (বাহ্যিকভাবে মুখে স্বীকার করে) তবে অন্তরে বিশ্বাস করে না কিংবা মুসলিমদের সাথে ঐক্যতার কথা বলে অন্তর হতে বিরূপতা পোষণ করে কিংবা লুকায়িত অবস্থাতে ইসলামের ক্ষতি করে বা করার চেষ্টা করে তারা মুনাফিক। এর ইসলামের চিরন্তন লুকায়িত শত্রু

কাফির কারা?
যারা দৃঢ়ভাবে ইসলামের বিরোধীতা করে এবং ইসলামের নিয়মকানুন মেনে চলে না সোজাকথায় তারা কাফির যেমন ইসলাম ধর্ম ব্যাতীত অন্যান্য ধর্মের লোকেরা কাফির।

চিন্তা চিন্তা চিন্তা!!!!
এইবার আপনি নিজেই বিচার করুন যে আসলে আপনি নিজে কি মুমিন নাকি মুসলিম? কাফির নাকি মুনাফিক??

লক্ষ্য করুন হিন্দু/ক্রিশ্চিয়ান/বৌদ্ধ প্রভৃতি ধর্মের মানুষেরা কাফির হতে পারে তবে তারা মুনাফিক নয়; তাদের অবস্থান মুসলিমদের নিকট মুনাফিকের চেয়ে সম্মানের এবং সহজাত মানবিক সৌহার্দ পাওয়া তাদের অধিকার [আপনি অধিকার না দিলে আপনি যালিম হয়ে যাচ্ছেন কেননা ইসলাম জুলুম পছন্দ করে না; তা হউক ফিজিক্যাল কি সাইকোলজিক্যাল ]।

নাস্তিক কারা??
যারা সৃষ্টিকর্তাতে বিশ্বাস করেনা তারা নাস্তিক; এটা যার যার ব্যক্তিগত ব্যাপার এখানে আপনার রাগ করা কিংবা অভিশাপ দেবার কিছু নেই। Big Bang থিউরি পড়ে মাস্টার্স কমপ্লিট করা ছেলেটির নিকট টুপি-জুব্বা পড়া অহেতুক মনে হওয়ায় স্বাভাবিক।

এন্টি-মুসলিম কারা??
যারা ইসলাম ধর্মকে পৃথিবী হতে শেষ করে দিতে তারাই এন্টি-মুসলিম। তারা নিঃসন্দেহে কাফির তবে তাদের তুরুপের তাস হলো মুনাফিক!
এরা অস্ত্র হাতে- মাথার ব্রেইন দিয়ে- কিংবা সুইসাইডাল মিশন দিয়ে ইসলামকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে চায়।

মর্ডান মুসলিম!
আজকের দিনে দেখবেন নামায় পড়ার আগে কেউ কেউ টাকনুর কাপড় উচু করে আবার নামায শেষে কাপড় নামিয়ে দেয়….ইটল কলড স্টাইল!!
বাইরে মেয়ে দেখলেই “জটিল মাল” বলে ইস-উশ-নিশ-পিশ করে অথচ তারাই মেয়েদের পর্দা নিয়ে মুখে ফেনা তুলে!!!
একজন মুসলিম মেয়ের পর্দা করা ফরজ তাইবলে তিনি পর্দা না করলেই যে তার অঙ্গের ভাজে ইচ্ছাকৃত চোখ দিতে হবে এমনটা তো নয়…সবার আগে পুরুষের চোখের পর্দার কথা বলা হয়েছে।
যদি বলেন যে খোলা মিষ্টিতে তো মাছি বসবেই তাহলে আবার ভাবুন “আপনি মাছি নাকি মুসলিম” যদি মাছি হন তবে ইসলাম নিয়ে মাথা ব্যাথার দরকার নেই।
আজকার ফেসবুকে একটা ছোট বাচ্চার ফটো আপলোড করলেই হাজার হাজার মানুষ কমেন্টে “আমিন” বলে নেকী হাসিল করেন অথচ কখন আমিন বলতে হয় আর কখন কি দোয়া পড়তে হয় সেটা জানেন কি????
ফেসবুকে ইসলামকে নিয়ে একটা শয়তান চক্র যারা লাইক/কমেন্ট/ফলোয়ার বাড়ানোর জন্য উদ্ভট পোস্ট করে [যেমন নবীর পায়ের ছাপ, মাছের গায়ের কুরআনের আয়াত ইত্যাদি] এগুলো ইসলামকে ছোট করার হেয় চক্রান্ত ছাড়া আর কিছুই না; যারা এতে বিশ্বাস করে আমিন আমিন বলে চিল্লায় তারা বড়জোর ননসেন্স পিপল- মুসলিম নয় [একজন প্রকৃত মুসলিম জ্ঞানী এবং দিক দূরদর্শী হয়ে থাকেন]।

মালাউন কারা??
যদিওবা শব্দটার বুৎপত্তিগত উৎস বিচ্যুত তবে এটার আক্ষরিক অর্থ হলো “আল্লাহর অভিশপ্ত”। এখন আপনি নিজে কি আল্লাহ নাকি আমি নিকে আল্লাহ [ নাউজুবিল্লাহ] তাহলে কাউকে অভিশপ্ত বিচার করার দায়-দায়িত্ব-ক্ষমতা কিছুই আপনার আমার হাতে নেই। তবুও বিধর্মীরা যেহেতু ইসলাম নামক বৃত্তপরিধির বাইরে তাই হরহমেশায় আমরা তাদের মালাউন বলে ডাকি যেমন “হিন্দুরা মালাউন”।
হ্যা হতেই পারে….তবে সেটা বলার মতোন ধৃষ্টতা আমার আপনার মুখে শোভা পায়না কেননা আল্লাহর বিচার নিজের হাতে তুলে নেবার অধিকার আমাদের হাতে নেই।
আবার মুসলমান হওয়ার পরও যারা সালাত কায়েম করেন না, নির্বিচারে কুরআনে তাফসিরদের খুন-গুম-নির্যাতন করে, হত্যা-রাহাজানী-অন্যায়-অবিচার করে তারা কি আল্লাহর অভিশপ্ত হতে পারে না???!!!!
মুসলিম নাম হওয়ার পরও আমরা অনেকেই মালাউন [আল্লাহ মাফ করুন ] এটাই চরম সত্য!
একজন বিধর্মী মালাউনের চেয়ে একজন মুসলিম মালাউন সবচেয়ে বেশী ঘৃণিত এবং নিকৃষ্ট!

একজন মুফাসসিল ইসলাম সংশয়বাদী
ফেসবুকে আমরা অনেকেই মুফাসসিল ইসলাম’কে চিনি ইসলামের নামে নানান কুৎসা রটনা করেন এবং ইসলামকে মিথ্যা ধর্ম প্রমান করতে চান। তিনি একাধারে একজন নাস্তিক এবং এন্টি-মুসলিম ও এন্টি-রিলিজিয়ান পার্সন।
তবে সবচেয়ে ভালো কথা হলো তিনি লজিকাল…আমি তাকে বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই।

দেখুন তিনি ইসলামকে গালাগাল কিংবা কুরআন শরীফ পুড়িয়ে নিশ্চয়ই গুনাহ ও অন্যায় করেছেন তবে সেটা কোন আইনে?? আমি যদি ইসলাম না মানি তবে ইসলাম ধর্মকে অপমানিত করা আমার জন্য সহজাত স্বাভাবিক ব্যাপার আর এসব দেখে ধর্মভীরু মানুষেরা উত্তেজিত হবে এটাও স্বাভাবিক। আর উত্তেজিত হয়ে যখনি আপনি “মুফাসসিলের মায়েরে বাপ সেভেন আপ” টাইপের গাগাগাল দিবেন তখনই ইসলামের অসহিষ্ণুতা প্রকাশ পেলো…সিম্পল ইকুয়েশন; মুফাসসিল সাকসেসফুল!

তিনি যদি লজিক দিয়ে ইসলাম বিরোধীতা করেন তবে আপনাকেও লজিক দিয়েও উত্তর দিতে হবে…গালাগালি দিয়ে নয়। গালগালি দিয়ে সেটা উপেক্ষা করুন এমনভাবে যেন সে নিরাশ হয় [এই কথাটা একটা বুড়ীর গল্প মনে এসেছিলো তবে সেটা আর বললাম না]।
মনে রাখুন আপনি যখন ইসলামকে নিয়ে কারো সাথে ডিবেট করবেন তখন আপনাকে অবশ্যই লজিকাল এবং নলেজ সম্পন্ন হতে হবে নইলে আপনার ইসলামকে রিপ্রেজেন্ট করার কোন রাইট নেই….ইসলাম ধর্ম কারো বাপ দাদার সম্পত্তি নয় বরং এটা একটা অবিকৃত-পবিত্র-সুশৃঙ্খল জীবন ব্যবস্থা।

তথাপি যদি একান্তই আপনার মুফাসসিলের ওপর ক্ষুদ্ধ থাকেন তবে আইন মেনে মামলা করুন…ভয় পেয়ে গেলেন??
মনে রাখুন একজন আদর্শ মুসলিম ভয় পায়না বরং বুক চিতিয়ে এগিয়ে যায়…কথা বলার মতোন যোগ্যতা নিয়ে তারপর চিল্লাতে হয়; এমনভাবে চিল্লাবেন যেন শত্রুও সেই আওয়াজ কানে শুনতে না পায়।

উল্লেখ্য লেখাটি আমি ধর্ম নিয়ে উগ্রতা কিংবা কাউকে আঘাত করতে লিখিনি বরং শুধুমাত্র ইসলাম নিয়ে বাড়াবাড়ি করার বিষয়টা আয়নার সামনে তুলে ধরলাম যাতে আমাদের চোখের পর্দাটা একটু হলেও খুলে….তথাপি লেখার সকল দায়ভার আমার নিজের এতে ট্রিকবিডি/ট্রিকবিডি এডমিন কোনভাবে দায়ী নয়। লেখনীর জন্য যদি কোন সমস্যা হয়[ আইনগত] তবে সেটা আমার উপর বর্তাবে এবং আলহামদুলিল্লাহ সেগুলি রিভার্সলি প্রটেক্ট করার ক্ষমতা আমার আছে

সকলের জন্য শুভকামনা রইলো; সকলের প্রতি শেষ অনুরোধ “সালাত কায়েম করুন; সালাত মানে নামায পড়া নয় বরং নামাযকে নিজের ও সমাজ জীবনে প্রতিষ্ঠা করা”!

ফেসবুকে আমি→ নিশান আহম্মেদ নিয়ন

আল্লাহ হাফেজ

Exit mobile version