Site icon Trickbd.com

??[কোরআনের আলো পর্ব ১৪]খিযির ও মূসা (আ.) সম্পর্কে জানতে পারবো??

Unnamed

Assalamualikumসবাই কেমন আছেন…..? আশা করি সবাই ভালো আছেন । আমি আল্লাহর রহমতে ভালোই আছি ।আসলে কেউ ভালো না থাকলে TrickBD তে ভিজিট করেনা ।তাই আপনাকে TrickBD তে আসার জন্য ধন্যবাদ ।ভালো কিছু জানতে সবাই TrickBD এর সাথেই থাকুন ।

আজকে আমরা আপনাদের মাঝে কোরআনে আলো এ পর্বে খিযির ও মূসা (আ.)সম্পর্কে হাদিস নিয়ে আসলাম।

খিযির ও মূসা (আ.)

হযরত ইবনু আব্বাস (রা.) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, হযরত উবাই ইবনু কা‘ব (রা.) রাসূলুল্লাহ (ছা.) হ’তে আমাদের নিকট বর্ণনা করেছেন যে, হযরত মূসা (আ.) একদা বনী ইসরাঈলের এক সমাবেশে ভাষণ দিতে দাঁড়ালে তাঁকে জিজ্ঞেস করা হ’ল, কোন্ ব্যক্তি সর্বাধিক জ্ঞানী? তিনি বললেন, আমিই সর্বাধিক জ্ঞানী। জ্ঞানকে আল্লাহ্‌র দিকে সোপর্দ না করার কারণে আল্লাহ তাকে তিরষ্কার করে বললেন, বরং দু’সাগরের সঙ্গমস্থলে আমার এক বান্দা আছে, যিনি তোমার চেয়ে অধিক জ্ঞানী। হযরত মূসা (আ.) বললেন, ‘হে আমার প্রতিপালক! তাঁর নিকট পৌঁছতে কে আমাকে সাহায্য করবে? কখনো সুফইয়ান এভাবে বর্ণনা করেছেন, আমি কিভাবে তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করতে পারি? তখন বলা হ’ল, তুমি একটি থলিতে করে একটি মাছ নাও। যেখানে তুমি মাছটি হারাবে, সেখানেই আমার সে বান্দা আছে। অতঃপর হযরত মূসা (আ.) একটি মাছ ধরলেন এবং থলিতে রাখলেন। অতঃপর মাছ নিয়ে তাঁর সঙ্গী ইউশা বিন নূনকে সাথে নিয়ে চললেন। শেষ পর্যন্ত তারা একটি পাথরের কাছে পৌঁছলেন এবং তার উপর মাথা রেখে বিশ্রাম নিলেন। মূসা (আ.) ঘুমিয়ে পড়লেন। এ সময় মাছটি থলি থেকে বের হয়ে লাফিয়ে সমুদ্রে চলে গেল। অতঃপর সে সমুদ্রে সুড়ঙ্গের মত পথ করে নিল। আর আল্লাহ মাছটির চলার পথে পানির প্রবাহ থামিয়ে দিলেন। ফলে তার গমনপথটি সুড়ঙ্গের মত হয়ে গেল। অতঃপর তারা উভয়ে অবশিষ্ট রাত এবং পুরো দিন পথ চললেন। পরদিন সকালে হযরত মূসা (আ.) তাঁর সাথীকে বললেন, আমরা তো সফরে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি, আমাদের খাবার নিয়ে এস।

হযরত মূসা (আ.)-কে আল্লাহ যে স্থানে যাবার কথা বলেছিলেন, সেই স্থান অতিক্রম করার পূর্ব পর্যন্ত তিনি কোনরূপ ক্লান্তিবোধ করেননি। সাথী ইউশা বিন নূন তখন বলল, আপনি কি ভেবে দেখেছেন, যে পাথরটির নিকট আমরা বিশ্রাম নিয়েছিলাম সেখানেই মাছটি অদ্ভুতভাবে সমুদ্রের মধ্যে চলে গেছে। কিন্তু আমি মাছটির কথা আপনাকে বলতে ভুলে গিয়েছিলাম। মূলতঃ শয়তানই আমাকে এ কথা ভুলিয়ে দিয়েছে। বর্ণনাকারী বলেন, পথটি মাছের জন্য ছিল একটি সুড়ঙ্গের মত আর তাঁদের জন্য ছিল আশ্চর্যজনক ব্যাপার। হযরত মূসা (আ.) বললেন, আমরা তো সেই স্থানটিরই অনুসন্ধান করছি। অতঃপর তারা তাদের পদচিহ্ন ধরে ফিরে চললেন এবং ঐ পাথরের নিকটে পৌঁছে দেখলেন, এক ব্যক্তি কাপড় মুড়ি দিয়ে বসে আছেন। মূসা (আ.) তাঁকে সালাম দিলেন। তিনি সালামের জবাব দিয়ে বললেন, এখানে সালাম কি করে এলো? তিনি বললেন, আমি মূসা। খিযির জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কি বনী ইসরাঈল বংশীয় মূসা? মূসা (আ.) বললেন, হ্যাঁ। আমি এসেছি এজন্য যে, সত্য পথের যে জ্ঞান আপনাকে দান করা হয়েছে, তা হ’তে আপনি আমাকে শিক্ষা দিবেন। খিযির বললেন, হে মূসা! আমার আল্লাহ প্রদত্ত কিছু জ্ঞান আছে, যা আপনি জানেন না। আর আপনিও আল্লাহ প্রদত্ত এমন কিছু জ্ঞানের অধিকারী, যা আমি জানি না। মূসা (আ.) বললেন, আমি কি আপনার সাথী হ’তে পারি? খিযির বললেন, ‘আপনি কিছুতেই আমার সাথে ধৈর্যধারণ করতে পারবেন না। যে বিষয় আপনার জ্ঞানের আওতাধীন নয় সে বিষয়ে আপনি ধৈর্যধারণ করবেন কেমন করে? মূসা (আ.) বললেন, ইনশাআল্লাহ আপনি আমাকে ধৈর্যশীল পাবেন এবং আপনার কোন আদেশ আমি অমান্য করব না’ {কাহফ ৬৭-৬৯}।

অতঃপর তাঁরা দু’জনে সাগরের কিনারা ধরে হেঁটে চললেন। তখন একটি নৌকা তাদের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। তারা তাদেরকে নৌকায় তুলে নেওয়ার জন্য অনুরোধ করলেন। তারা খিযির-কে চিনতে পেরে বিনা ভাড়ায় তাঁদেরকে নৌকায় তুলে নিল। যখন তাঁরা দু’জনে নৌকায় চড়লেন, তখন একটি চড়ুই পাখি এসে নৌকাটির কিনারায় বসল এবং সমুদ্র থেকে এক ফোঁটা বা দুই ফোঁটা পানি পান করল। খিযির বললেন, হে মূসা! আমার ও আপনার জ্ঞানের দ্বারা আল্লাহ্‌র জ্ঞান হ’তে ততটুকুও কমেনি যতটুকু এ পাখিটি তাঁর ঠোটের দ্বারা সাগরের পানি হ্রাস করেছে। তখন খিযির একটি কুড়াল নিয়ে নৌকাটির একটা তক্তা খুলে ফেললেন। মূসা (আ.) অকস্মাৎ দৃষ্টি দিতেই দেখতে পেলেন যে, তিনি কুড়াল দিয়ে একটি তক্তা খুলে ফেলেছেন। তখন তিনি তাঁকে বললেন, আপনি একি করলেন? এ লোকেরা বিনা ভাড়ায় আমাদেরকে নৌকায় তুলে নিল, আর আপনি তাদেরকে ডুবিয়ে দেয়ার জন্য নৌকা ছিদ্র করে দিলেন? আপনি তো একটি গুরুতর কাজ করলেন। খিযির বললেন, আমি কি বলিনি যে, আপনি আমার সাথে ধৈর্যধারণ করতে পারবেন না। মূসা (আ.) বললেন, আমার ভুলের জন্য আমাকে অপরাধী করবেন না এবং আমার এ ব্যবহারে আমার প্রতি কঠোর হবেন না। মূসা (আ.)-এর পক্ষ থেকে প্রথম এ কথাটি ছিল ভুলক্রমে।

অতঃপর তাঁরা যখন উভয়ে সমুদ্র পার হলেন, তখন তারা একটি বালকের পাশ দিয়ে অতিক্রম করলেন, যে অন্যান্য বালকদের সাথে খেলা করছিল। খিযির ছেলেটির মাথা দেহ হ’তে ছিন্ন করে ফেললেন। হযরত মূসা (আ.) বললেন, আপনি একটি নিষ্পাপ শিশুকে বিনা অপরাধে হত্যা করলেন? আপনি খুবই খারাপ একটা কাজ করলেন। খিযির বললেন, আমি কি বলিনি যে, আপনি আমার সাথে ধৈর্যধারণ করতে পারবেন না। মূসা (আ.) বললেন, এরপর যদি আমি আপনাকে আর কোন প্রশ্ন করি, তাহ’লে আমাকে আর সঙ্গে রাখবেন না।

অতঃপর উভয়ে চলতে লাগলেন। চলতে চলতে তাঁরা একটি জনপদের অধিবাসীদের নিকট পৌঁছে তাদের নিকট কিছু খাবার চাইলেন। কিন্তু জনপদবাসী তাদের দু’জনের মেহমানদারী করতে অস্বীকার করল। সেখানে তারা একটি প্রাচীর দেখতে পেলেন, যা ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছিল। হযরত খিযির প্রাচীরটি মেরামত করে সুদৃঢ় করে দিলেন। হযরত মূসা (আ.) বললেন, এই বসতির লোকদের নিকট এসে আমরা খাবার চাইলাম। তারা মেহমানদারী করতে অস্বীকার করল। অথচ আপনি এদের দেয়াল সোজা করে দিলেন। আপনি তো ইচ্ছা করলে এর জন্য পারিশ্রমিক গ্রহণ করতে পারতেন। হযরত খিযির বললেন, এবার আমার এবং আপনার মধ্যে বিচ্ছেদ হয়ে গেল। এক্ষণে যে বিষয়ে আপনি ধৈর্যধারণ করতে পারেননি, আমি এর তাৎপর্য বলে দিচ্ছি।

নৌকাটির ব্যাপার ছিল এই যে, সেটি ছিল কয়েকজন দরিদ্র ব্যক্তির। তারা সমুদ্রে জীবিকা অন্বেষণ করত। আমি নৌকাটিকে ত্রুটিযুক্ত করে দিতে চাইলাম। কারণ, তাদের সামনে ছিল এক রাজা, যে ভাল নৌকা পেলেই জোরপূর্বক কেড়ে নিত। তারপর যখন এটাকে দখল করতে লোক আসল, তখন ছিদ্রযুক্ত দেখে ছেড়ে দিল। অতঃপর নৌকাওয়ালারা একটা কাঠ দ্বারা নৌকাটি মেরামত করে নিল।

আর বালকটি সূচনালগ্নেই ছিল কাফের। আর সে ছিল তার ঈমানদার বাবা-মার বড়ই আদরের সন্তান। আমি আশঙ্কা করলাম যে, সে বড় হয়ে অবাধ্যতা ও কুফরী দ্বারা তাদেরকে কষ্ট দিবে। অতঃপর আমি ইচ্ছা করলাম যে, তাদের পালনকর্তা তাদেরকে তার চেয়ে পবিত্রতায় ও ভালবাসায় ঘনিষ্ঠতর একটি শ্রেষ্ঠ সন্তান দান করুন।

আর প্রাচীরের ব্যাপার এই যে, সেটি ছিল নগরের দু’জন ইয়াতীম বালকের। এর নীচে ছিল তাদের গুপ্তধন। তাদের পিতা ছিলেন সৎকর্মপরায়ণ। সুতরাং আপনার পালনকর্তা দয়াপরবশ হয়ে ইচ্ছা পোষণ করলেন যে, তারা যৌবনে পদার্পণ করে নিজেদের গুপ্তধন উদ্ধার করুক। আমি নিজ ইচ্ছায় এসব করিনি। আপনি যে বিষয়গুলোতে ধৈর্যধারণ করতে পারেননি, এই হ’ল তার ব্যাখ্যা।

[কাহফ ৭৯-৮২; ছহীহ বুখারী হা/৩৪০১ ‘নবীদের কাহিনী’ অধ্যায়, ‘খিযিরের সাথে মূসা (আ.)-এর কাহিনী’ অনুচ্ছেদ, মুসলিম হা/২৩৮০, ‘ফাযায়েল’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৪৬]।

শিক্ষাঃ

১. সকল জ্ঞানের আধার আল্লাহ রাব্বুল আলামীন। তিনি যাকে যতটুকু ইচ্ছা প্রদান করেন।

২. জ্ঞান অর্জনের জন্য সফর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

৩.শয়তান সর্বদা মানুষের পিছে পড়ে থাকে। সে তাকে প্রতিনিয়ত আল্লাহবিমুখ করার চেষ্টা করে।

৪. জ্ঞান অর্জনের জন্য ধৈর্য অবলম্বন করা যরূরী।

৫. অহংকার করা বা নিজেকে সবচেয়ে জ্ঞানী ভাবা ঠিক নয়।

আশা করি সকলের ভালো লেগেছে। আর সবাই আমল করার চেষ্টা করবেন।

আমাদের ফেসবুক group এ জয়েন হতে পারেন এখানে প্রতিদিন ইসলামিক সম্পর্কে পোষ্ট করা হয় কোরআনের আলো

??পোষ্টি কেমন লাগলো কমেন্ট করে জানাবেন। এবং লাইক দিবেন ??