আসসালামু আলাইকুম সবাই কেমন আছেন…..? আশা করি সবাই ভালো আছেন । আমি আল্লাহর রহমতে ভালোই আছি ।আসলে কেউ ভালো না থাকলে TrickBD তে ভিজিট করেনা ।তাই আপনাকে TrickBD তে আসার জন্য ধন্যবাদ ।ভালো কিছু জানতে সবাই TrickBD এর সাথেই থাকুন ।
আজকে আমি আপনাদের মাঝে কোরআনে আলো এ পর্বে মাপে ও ওজনে ফাঁকি সম্পর্কে জানতে চলে আসলাম ।
মাপে ও ওজনে ফাঁকি
লিখেছেনঃ মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব ।
(১) দুর্ভোগ মাপে কম দানকারীদের জন্য।(২) যারা লোকদের কাছ থেকে মেপে নেয়ার সময় পূর্ণ মাত্রায় নেয়।(৩) এবং যখন লোকদের মেপে দেয়, বা ওযন করে দেয়, তখন কম দেয়’।(৪) তারা কি চিন্তা করে না যে, তারা পুনরুত্থিত হবে?(৫) সেই মহা দিবসে,(৬) যেদিন মানুষ দন্ডায়মান হবে বিশ্বপালকের সম্মুখে।
বিষয়বস্ত্ত:
আলোচ্য আয়াতগুলিতে মাপ ও ওযনে কম-বেশী করাকে সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবনে বড় যুলুম হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে এবং জীবনের সকল ক্ষেত্রে হকদারের প্রাপ্য হক আদায়ে কম-বেশী করার ভয়াবহ পরিণতির দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। একথা স্পষ্টভাবে বলে দেওয়া হয়েছে যে, দুনিয়ার মানুষকে ফাঁকি দিয়ে সাময়িক লাভবান হলেও আল্লাহর পাহারাকে ফাঁকি দেওয়া সম্ভব হবে না। এর দ্বারা আখেরাতে চিরস্থায়ী ক্ষতির সম্মুখীন হ’তে হবে এবং জাহান্নাম অবধারিত হবে।
শানে নুযূল:
আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা: ) যখন মদীনায় পদার্পণ করেন, তখন মদীনাবাসীগণ ছিল মাপ ও ওযনে কম-বেশী করায় সবার চেয়ে সিদ্ধহস্ত । তখন আল্লাহপাক নাযিল করেন। ফলে তারা বিরত হয় এবং মাপ ও ওযনে সততা অবলম্বন করে’। তিনি বলেন: ‘তারা এখন পর্যন্ত মাপ ও ওযনের সততায় সবার সেরা’।
[1] আরবী বাকরীতি অনুযায়ী অর্থ দুর্ভোগ বা ধ্বংস। যেমন রাসূল (সা:) বলেছেন: ‘দুর্ভোগ ঐ ব্যক্তির জন্য যে কথা বলার সময় মিথ্যা বলে, যাতে লোকেরা হাসে। তার জন্য দুর্ভোগ, তার জন্য দুর্ভোগ’।
[2]তবে এখানে -এর সাথে যোগ হওয়ায় এর অর্থ হবে জাহান্নাম। কেননা ক্বিয়ামতের দিন দুর্ভোগের একমাত্র পরিণাম হ’ল জাহান্নাম। মাপ ও ওযনে ইচ্ছাকৃতভাবে কম-বেশী করে যারা, এটাই হবে তাদের পরকালীন পুরস্কার। মূলতঃ এই পাপেই বিগত যুগে হযরত শো‘আয়েব (আঃ)-এর কওম আল্লাহর গযবে ধ্বংস হয়ে গিয়েছে (হূদ ১১/৮৪-৯৪)। ঐ ধ্বংসের পুনরাবৃত্তি হওয়া এ যুগে মোটেই অসম্ভব নয়।
আল্লাহ বলেন: ‘তোমরা মাপ ও ওযন পূর্ণ করে দাও ন্যায়নিষ্ঠার সাথে। আমরা কাউকে তার সাধ্যের অতিরিক্ত কষ্ট দেই না’। [আন‘আম ৬/১৫২]
তিনি আরও বলেন: ‘তোমরা মেপে দেয়ার সময় মাপ পূর্ণ করে দাও এবং সঠিক দাঁড়িপাল্লায় ওযন করো। এটাই উত্তম ও পরিণামের দিক দিয়ে শুভ’। [বনু ইস্রাঈল ১৭/৩৫]
অন্যত্র আল্লাহ বলেন: ‘তোমরা যথার্থ ওযন প্রতিষ্ঠা কর এবং ওযনে কম দিয়ো না’। [রহমান ৫৫/৯]
মাপে ও ওযনে কমদানকারীদের জন্য পরকালে কঠিন শাস্তির দুঃসংবাদ শুনানোর কারণ হ’তে পারে দু’টি।
[১]- ঐ ব্যক্তি গোপনে অন্যের মাল চুরি করে ও তার প্রাপ্য হক নষ্ট করে।
[২]- ঐ ব্যক্তি আল্লাহর দেওয়া অমূল্য জ্ঞান-সম্পদকে লোভরূপী শয়তানের পদলেহী বানায়। জ্ঞান ও বিবেক হ’ল মানুষের প্রতি আল্লাহর দেওয়া সর্বশ্রেষ্ট নে‘মত। আর এজন্যেই মানুষ আশরাফুল মাখলূক্বাত বা সৃষ্টির সেরা। মানুষ যখন তার এই শ্রেষ্ঠ জ্ঞান-সম্পদকে নিকৃষ্ট কাজে ব্যবহার করে, তখন তার জন্য কঠিনতম শাস্তি প্রাপ্য হয়ে যায়। আর সেই শাস্তির কথাই প্রথম আয়াতে শুনানো হয়েছে।
আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) এরশাদ করেছেন যে: ‘পাঁচটি বস্ত্ত পাঁচটি বস্ত্তর কারণে হয়ে থাকে। [১]- কোন কওম চুক্তিভঙ্গ করলে আল্লাহ তাদের উপরে তাদের শত্রুকে বিজয়ী করে দেন। [২]-কেউ আল্লাহর নাযিলকৃত বিধানের বাইরে বিধান দিলে তাদের মধ্যে দারিদ্র্য ছড়িয়ে পড়ে। [৩]- কোন সম্পদ্রায়ের মধ্যে অশ্লীল কাজ বিস্তৃত হ’লে তাদের মধ্যে মৃত্যু অর্থাৎ মহামারি ছড়িয়ে পড়ে। [৪]-কেউ মাপে বা ওযনে কম দিলে তাদের জন্য খাদ্য-শস্যের উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং দুর্ভিক্ষ তাদের গ্রাস করে। [৫]-কেউ যাকাত দেওয়া বন্ধ করলে তাদের থেকে বৃষ্টি বন্ধ করে দেয়া হয়’।
[3]ইবনু আববাস (রাঃ) বর্ণিত অনুরূপ আরেকটি হাদীছে এসেছে:
(১) যে জাতির মধ্যে খেয়ানত অর্থাৎ আত্মসাতের ব্যাধি আধিক্য লাভ করে, সে জাতির অন্তরে আল্লাহ শত্রুর ভয় নিক্ষেপ করেন(২) যে জাতির মধ্যে যেনা-ব্যভিচার বিস্তার লাভ করে, সে জাতির মধ্যে মৃত্যুহার বেড়ে যায়(৩) যে জাতি মাপে ও ওযনে কম দেয়, তাদের রিযিক উঠিয়ে নেওয়া হয়।(৪) যে জাতি অন্যায় বিচার করে, তাদের মধ্যে খুন-খারাবি ব্যাপক হয়(৫) যে জাতি অঙ্গীকার ভঙ্গ করে, তাদের উপর শত্রুকে চাপিয়ে দেওয়া হয়’।
[4]হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) যখন বাজারে যেতেন, তখন বিক্রেতাদের উদ্দেশ্যে রাসূল (সা:)-এর হাদীছ শুনিয়ে বলতেন: আল্লাহকে ভয় কর। মাপ ও ওযন ন্যায্যভাবে কর। কেননা মাপে কম দানকারীগণ ক্বিয়ামতের দিন দন্ডায়মান থাকবে এমন অবস্থায় যে, ঘামে তাদের কানের অর্ধেক পর্যন্ত ডুবে যাবে’।
[5]আল্লাহ বলেন: ‘তারা কি চিন্তা করে না যে, তারা পুনরুত্থিত হবে’। ‘সেই মহা দিবসে’। ‘যেদিন মানুষ দন্ডায়মান হবে বিশ্বপালকের সম্মুখে’ [ঐ, ৪-৬ আয়াত]
অর্থাৎ তারা কি ক্বিয়ামতের ভয় পায় না এবং তারা কি এটা বিশ্বাস করে না যে, তাদেরকে একদিন এমন এক মহান সত্তার সম্মুখে দন্ডায়মান হ’তে হবে, যিনি তার প্রতিপালক এবং যিনি তার ভিতর-বাহির সবকিছুর খবর রাখেন।
তারা কি ভাবে না যে, তাদেরকে একদিন মহাপরাক্রান্ত আল্লাহর সম্মুখে দাঁড়াতে হবে? যেদিন মানুষের মুখ বন্ধ করে দেওয়া হবে এবং তাদের হাত, পা, চক্ষু, কর্ণ ও দেহচর্ম সাক্ষ্য প্রদান করবে। সেদিন অবস্থাটা কেমন হবে? [ইয়াসীন ৩৬/৬৫; হামীম সাজদাহ ৪১/২০-২১]
ক্বিয়ামতের দিনের ভয়ংকর অবস্থা সম্পর্কে বহু হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। তন্মধ্যে একটি হ’ল যেমন মিক্বদাদ ইবনুল আসওয়াদ আল-কিন্দী (রাঃ) বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, ‘ঐদিন সূর্য এক মাইল বা দু’মাইল মাথার উপরে চলে আসবে। … তাতে পাপের পরিমাণ অনুযায়ী কারু হাঁটু পর্যন্ত, কারু কোমর পর্যন্ত, কারু পায়ের টাখনু পর্যন্ত, কারু বুক পর্যন্ত ঘামে ডুবে যাবে। যেমন ব্যাঙ পানিতে হাবুডুবু খায়। এছাড়া তাদের পানীয় হবে দেহনিঃসৃত রক্ত ও পুঁজ..’। [6] এগুলি হবে তাদের দুষ্কর্মের ফল ও তার পরিমাণ অনুযায়ী।
এদেরকে আল্লাহ তাঁর শত্রু হিসাবে অভিহিত করে বলেন: ‘যেদিন আল্লাহর শত্রুদের জাহান্নাম অভিমুখে সমবেত করা হবে, সেদিন তাদেরকে তাড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হবে বিভিন্ন দলে’। [হামীম সাজদাহ ৪১/১৯] উলেখ্য যে, ক্বিয়ামতের একটি দিন হবে দুনিয়ার পঞ্চাশ হাযার বছরের সমান। [মা‘আরেজ ৭০/৪]
পক্ষান্তরে সৎ ব্যবসায়ীদের সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেন: ‘সত্যবাদী ও আমানতদার ব্যবসায়ী ক্বিয়ামতের দিন নবী, ছিদ্দীক ও শহীদগণের সাথে থাকবে’। [7]
তিনি বলেন: ‘ব্যবসায়ীরা ক্বিয়ামতের দিন উপস্থিত হবে পাপাচারী হিসাবে। কেবল সেইসব ব্যবসায়ী ব্যতীত, যারা আল্লাহভীরু, সৎকর্মশীল ও সত্যবাদী’।ক্বিয়ামতের দিন তাদের কোন ভয় নেই।
সারকথা:
বর্ণিত আয়াতগুলির সারকথা হ’ল ওযন ও মাপে কম-বেশী করা ও হকদারের প্রাপ্য হক আদায়ে কমতি করার ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে মানুষকে হুঁশিয়ার করা এবং তাদের ভাল-মন্দ সকল কাজকর্ম যে ইল্লিয়ীন ও সিজ্জীনের সুনির্দিষ্ট দফতরে লিপিবদ্ধ হচ্ছে, সে বিষয়ে সাবধান করা। যেন মানুষ শয়তানের কুহকে পড়ে আত্মবিস্মৃত না হয় এবং আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত না হয়। আল্লাহ আমাদের হেফাযত করুন ।
আমীন!
[1]. নাসাঈ হা/১১৬৫৪ ‘তাফসীর’ অধ্যায়; ইবনু মাজাহ হা/২২২৩, হাকেম ২/৩৩ সনদ ছহীহ।
[2]. আহমাদ, আবুদাঊদ, তিরমিযী, নাসাঈ; মিশকাত হা/৪৮৩৪; সনদ ছহীহ।
[3]. দায়লামী হা/২৯৭৮; কুরতুবী হা/৬২৬৫; ত্বাবারাণী কাবীর হা/১০৯৯২, সনদ হাসান; ছহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব হা/৭৬৫; ছহীহুল জামে‘ হা/৩২৪০।
[4]. মুওয়াত্ত্বা মালেক, মিশকাত হা/৫৩৭০; ছহীহাহ হা/১০৬-১০৭।
[5]. আহমাদ, সনদ ছহীহ; বুখারী হা/৪৯৩৮; মুসলিম হা/২৮৬২; কুরতুবী হা/৬২৬৮।
[6]. তিরমিযী হা/২৪২১; মুসলিম হা/২১৯৬; মিশকাত হা/৫৫৪০ ‘ক্বিয়ামতের অবস্থা’ অধ্যায়-২৮ ‘হাশর’ অনুচ্ছেদ-২।
[7]. ইবনু মাজাহ, তিরমিযী, মিশকাত হা/২৭৯৬; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/২৬৭৪; ছহীহাহ হা/৩৪৫৩।
[8]. তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/২৭৯৯; ছহীহাহ হা/৯৯৪, ১৪৫৮।
আলহামদুলিল্লাহ। আশা করি সকলের ভালো লেগেছে।
আমাদের ফেসবুক group এ জয়েন হতে পারেন এখানে প্রতিদিন ইসলামিক সম্পর্কে পোষ্ট করা হয় কোরআনের আলো