Site icon Trickbd.com

??[কোরআনের আলো পর্ব ৮৭]সাহাবা ও ইমামগণকে গালি দেয়া নিষিদ্ধ সম্পর্কে জানতে পারবো ??

Unnamed

আসসালামু আলাইকুম সবাই কেমন আছেন…..? আশা করি সবাই ভালো আছেন । আমি আল্লাহর রহমতে ভালোই আছি ।আসলে কেউ ভালো না থাকলে TrickBD তে ভিজিট করেনা ।তাই আপনাকে TrickBD তে আসার জন্য ধন্যবাদ ।ভালো কিছু জানতে সবাই TrickBD এর সাথেই থাকুন ।

আজকে আমি আপনাদের মাঝে কোরআনে আলো এ পর্বে সাহাবা ও ইমামগণকে গালি দেয়া নিষিদ্ধ জানতে চলে আসলাম ।

সাহাবা ও ইমামগণকে গালি দেয়া নিষিদ্ধ

লিখেছেন: সালেহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান

এক. সাহাবায়ে কিরামকে গালি দেয়া নিষিদ্ধ:

আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের একটি মূলনীতি হচ্ছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহাবাদের ব্যাপারে তাদের অন্তর এবং বাক-যন্ত্র পুত:পবিত্র ও সংযত থাকবে  যেমনি ভাবে আল্লাহ তাআলা তাদেরকে অনুরূপ গুণসম্পন্ন বলে বর্ণনা করেছে: ‘আর যারা তাদের পরে আগমন করেছে, তারা বলে: হে আমাদের পালন কর্তা! আমাদেরকে এবং আমাদের আগে আমাদের যে সব ভাইয়েরা ঈমান এনেছে তাদেরকে ক্ষমা করুন। আর ঈমানদারদের বিরুদ্ধে আমাদের অন্তরে কোন বিদ্বেষ রাখবেন না। হে আমাদের পালন-কর্তা! আপনি দয়ালু, পরম করুণাময়। 

 আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ বাণীর প্রতিও তারা আমল করবে: ‘আমার সাহাবাদেরকে তোমরা গালি গালাজ কর না, যার হাতে আমার প্রাণ তার কসম করে বলছি  যদি তোমাদের কেউ ওহুদ পাহাড়ের সমপরিমাণ স্বর্ণও ব্যয় কর, তবে তাদের ব্যয় করা এক অঞ্জলি বা তার অর্ধেকের সমান পর্যন্ত ও পৌঁছোবে না’  

আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত, রাফেযী খারেজীদের ভ্রষ্ট তরীকা থেকে মুক্ত  যারা সাহাবায়ে কিরাম রা. কে গালি দেয়,  তাদের প্রতি বিদ্বেষ রাখে,  তাদের ফযিলত ও মর্যাদা অস্বীকার করে এবং তাদের অধিকাংশকে কাফির বলে ঘোষণা দেয়। কিতাব ও সুন্নায় সাহাবায়ে কিরামের যে ফযিলত বর্ণনা করা হয়েছে, আহলে সুন্নাত তা মেনে নেয় এবং বিশ্বাস করে যে, তারাই যুগের সর্বোত্তম প্রজন্ম। যেমন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: ‘আমার যুগের লোকেরাই তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম’

একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন বর্ণনা করেছিলেন যে,  এ উম্মাত ৭৩টি ফিরকায় বিভক্ত হবে এবং তারমধ্যে একটি ছাড়া বাকিগুলো সবই জাহান্নামী হবে। তখন লোকেরা তাকে সে দলটি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করল। তিনি বললেন: ‘তারা হল ঐ সব লোক যারা আমি এবং আমার সাহাবারা আজ যে আদর্শে আছি, তার উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে,

ইমাম মুসলিমের সবচেয়ে বড় উস্তাদ ও শায়খ আবু যুরআ বলেন: যখন কোন ব্যক্তিকে সাহাবাদের কারো ত্রুটি বর্ণনা করতে দেখবে,  তবে জানবে যে,  নিশ্চয়ই  সে যিন্দিক। কেনান কুরআন সত্য,  রাসূল সত্য এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আনীত শরীয়ত সত্য। আর এ সকল কিছু সাহাবায়ে কিরামেই আমাদের কাছে পৌঁছিয়েছেন। অতএব যারা তাদের নিন্দা করে, তারা প্রকৃত পক্ষে কুরআন ও সুন্নাহকেই বাতিল করে দিতে চায়। তাই সাহাবাদের যারা নিন্দা করে, তারাই নিন্দিত হওয়ার উপযুক্ত এবং তাদেরকে যিন্দিক ও ভ্রষ্ট বলে অবহিত করা খুবই সমীচীন।

আল্লামা ইবনে হামদান তার নেহায়াতুল মুবতাদিয়ীন গ্রন্থে বলেন: যে ব্যক্তি জায়েয মনে করে সাহাবাদের কাউকে গালি দেয়,  সে কাফির হয়ে যাবে। আর জায়েয নয় মনে করে গালি দিলে সে ফাসিক হবে। তার থেকে একথাও বর্ণিত যে, উভয় অবস্থায়ই সে ব্যক্তি কাফির হয়ে যাবে। আর যে ব্যক্তি তাদেরকে ফাসিক বলবে কিংবা তাদের দ্বীনদারির প্রতি আঘাত করবে অথবা তাদেরকে কাফির বলবে, সে নিজেই কাফির হয়ে যাবে।

দুই. উম্মতের ওলামাদের অন্তর্গত আয়িম্মায়ে কিরামকে গালি দেয়া নিষিদ্ধ:

ফযিলত,মর্যাদা ও সম্মানের দিক দিয়ে সাহাবাদের পরই আয়িম্মায়ে কিরামের স্থান। তন্মধ্যে রয়েছেন সম্মানিত যুগের তাবেয়িন তাবে তাবেয়িন এবং তাদের পরে আগত ঐ সকল ব্যক্তি যারা সাহাবিদের সঠিক অনুসারী ছিলেন। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন: ‘মুহাজির ও আনসারদের প্রথম অগ্রবর্তী দল এবং যারা নিষ্ঠার সাথে তাদের অনুসরণ করে, আল্লাহ তাদের প্রতি প্রসন্ন এবং তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট’। আর তিনি তাদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছেন জান্নাত, যার নিম্নদেশে নদী প্রবাহিত। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে, এটাই মহা সাফল্য’

 তাই তাদের দোষ বর্ণনা করা ও তাদেরকে গালি দেয়া বৈধ নয়। কেননা তারা হিদায়েতের পতাকাবাহী। আল্লাহ তাআলা বলেন: ‘হিদায়াতের পথ সুস্পষ্ট হওয়ার পর যে ব্যক্তি রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে এবং মুমিনদের পথ ব্যতীত অন্য পথ অনুসরণ করে, তবে যেদিকে সে ফিরে যায়, সেদিকেই তাকে ফিরিয়ে দেব এবং জাহান্নামে তাকে নিক্ষেপ করব। আর তা অতি নিকৃষ্ট প্রত্যাবর্তন স্থল’

‘আত তাহাবিয়া’ গ্রন্থের ব্যাখ্যাদাতা বলেন: প্রত্যেক মুসলমানের উচিত আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের সাথে মুহব্বত ও বন্ধত্ব রাখার পর মুমিনদের সাথেও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখা যেমনিভাবে কুরআন নির্দেশ প্রদান করেছে  বিশেষ করে সে সব লোকের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখা, যারা নবীদের উত্তরাধিকারী এবং যাদেরকে আল্লাহ তারকারাজির মত বলে বর্ণনা করেছেন। যাদের দ্বারা মানুষ স্থল ও জলের অমানিশায় পথ পেয়ে থাকে। সকল মুসলমান এ ব্যাপারে একমত যে,  তারা হেদায়েতের উপর ছিলেন এবং দ্বীনকে সঠিকভাবে বুঝেছেন। তারা প্রকৃতপক্ষে উম্মতের মধ্যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতিনিধি এবং তার মিটে যাওয়া সুন্নাতকে পুনরুজ্জীবিতকারী। তাদের দ্বারাই আল্লাহর কিতাব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং তারাও কিতাব দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। এবং কিতাবুল্লাহর ভাষায়ই কথা বলেছেন। সকল মুসলমান একথার উপর নিশ্চিতভাবে একমত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসরণ করা ওয়াজিব। তবে যদি তাদের কারো কাছ থেকে এমন কোন কথা বর্ণিত হয়ে থাকে, যা সরাসরি সহিহ হাদীসের পরিপন্থী, তাহলে নিম্নের যে কোন ওজরের ভিত্তিতে সে কথাটি পরিত্যাগ করা জরুরি।

ওযর সর্বমোট তিন প্রকার:

এক. উক্ত ইমামের এ বিশ্বাস না থাকা যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সহিহ হাদীসে এমন বলেছেন।

দুই. তার এ বিশ্বাস থাকা যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সে বক্তব্যের মাধ্যমে উক্ত মাসআলাই বুঝাতে চেয়েছেন।

তিন. তার এ বিশ্বাস যে, সহিহ হাদীসের হুকুমটি মানসূখ।

আমাদের উপর তাদের বহু অনুগ্রহ রয়েছে। আমাদের পূর্বেই তারা ইসলামের এ নিয়ামত প্রাপ্ত হয়েছেন এবং আমাদের কাছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি প্রেরিত বাণী পৌঁছিয়ে দিয়েছেন ও তন্মধ্যে যা অস্পষ্ট ছিল তা স্পষ্ট করে বর্ণনা করেছেন। আল্লাহ; তাদের প্রতি সন্তুষ্ট থাকুন এবং তাদেরকে সন্তুষ্ট করুন। ‘আর যারা তাদের পরে আগমন করেছে, তারা বলে: হে আমাদের পালন কর্তা! আমাদেরকে এবং আমাদের আগে আমাদের যে সব ভাইরা ঈমান এনেছে তাদেরকে ক্ষমা করুন। আর ঈমানদারদের বিরুদ্ধে আমাদের অন্তরে কোন বিদ্বেষ রাখবেন না। হে আমাদের পালন কর্তা! আপনি দয়ালু, পরম করুণাময়।

 কোন ইজতেহাদী ভুলের কারণে ওলামায়ে কিরামের সম্মানহানি করা বেদাআতীদেরই অনুসৃত পন্থা এবং মুসলিম উম্মাহর যারা শত্রু তাদেরই এক গভীর ষড়যন্ত্র  যাতে তারা ইসলাম ধর্মের প্রতি সন্দেহ সৃষ্টি করতে পারে, মুসলমানদের পরস্পরের প্রতি শত্রুতা উৎপাদন করতে পারে এবং উম্মতের সালফে সালেহীন থেকে পরবর্তীদেরকে বিচ্ছিন্ন করে দিতে পারে  যেরূপ বর্তমানে বিরাজ করছে। অতএব কতিপয় প্রাথমিক পর্যায়ের ছাত্র যারা ফিকহ শাস্ত্রবিদ ও ইসলামী ফিকহ শাস্ত্রের মর্যাদা ক্ষুণ  করছে, এ শাস্ত্রের পঠন পাঠনে  অনুৎসাহিত করছে এবং এর হক ও সঠিক সিদ্ধান্ত সমূহ গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করছে তাদের সতর্ক হওয়া উচিত। বরং তাদের উচিত নিজেদের এ ফিকহ নিয়ে গর্ববোধ করা এবং নিজেদের ওলামায়ে কিরামের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা। আর ভ্রষ্ট ও উদ্দেশ্যপূর্ণ প্রচার প্রোপাগান্ডা দ্বারা প্রতারিত ও প্রভাবিত না হওয়া। আল্লাহই তাওফিক দাতা।

আমাদের ফেসবুক group এ জয়েন হতে পারেন এখানে প্রতিদিন ইসলামিক সম্পর্কে পোষ্ট করা হয় কোরআনের আলো

??পোষ্টি কেমন লাগলো কমেন্ট করে জানাবেন। এবং লাইক দিবেন ??