আসসালামু আলাইকুম সবাই কেমন আছেন…..? আশা করি সবাই ভালো আছেন । আমি আল্লাহর রহমতে ভালোই আছি ।আসলে কেউ ভালো না থাকলে TrickBD তে ভিজিট করেনা ।তাই আপনাকে TrickBD তে আসার জন্য ধন্যবাদ ।ভালো কিছু জানতে সবাই TrickBD এর সাথেই থাকুন ।
আজকে আমি আপনাদের মাঝে কোরআনে আলো এ পর্বে ছাহাবায়ে কেরামের প্রতি আমাদের কর্তব্য জানতে চলে আসলাম ।
ছাহাবায়ে কেরামের প্রতি আমাদের কর্তব্য
হামদ ও ছানার পর, ছোট্ট এই পুস্তিকার শিরোনাম হচ্ছে, ‘ছাহাবায়ে কেরামের প্রতি আমাদের কর্তব্য’। সত্যিই এ কর্তব্য মহান। সেজন্য আমাদের উচিত, এ বিষয়টির প্রতি সবিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা এবং সর্বোচ্চ যত্নশীল হওয়া।
সম্মানিত পাঠকের জানা যরূরী যে, ছাহাবায়ে কেরামের প্রতি আমাদের কর্তব্য যেনতেন কোন বিষয় নয়। এটা দ্বীন ইসলামের প্রতি আমাদের কর্তব্যেরই একটি অংশ। যে দ্বীনকে আল্লাহ তাঁর বান্দাদের জন্য মনোনীত করেছেন এবং যা ব্যতীত তিনি তাদের নিকট থেকে অন্য কোন দ্বীন গ্রহণ করেন না। মহান আল্লাহ বলে: ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ্র নিকট মনোনীত দ্বীন হচ্ছে ইসলাম’ [আলে ইমরান ১৯]
তিনি আরো বলেন: ‘যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম তালাশ করে, কস্মিনকালেও তা তার পক্ষ থেকে গ্রহণ করা হবে না এবং আখেরাতে সে হবে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত’ [আলে ইমরান ৮৫]
মহান আল্লাহ অন্যত্র বলেন: ‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার নে‘মত পরিপূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন মনোনীত করলাম’[মায়েদাহ ৩]
অতএব এই সরল-সোজা পথ এবং সত্য দ্বীনই হচ্ছে আল্লাহ্র দ্বীন। এই দ্বীনের প্রচার ও প্রসারের জন্য আল্লাহপাক বিশ্বস্ত প্রচারক, বিচক্ষণ নছীহতকারী এবং সম্মানিত রাসূল মুহাম্মাদ (সা:)-কে নির্বাচন করেন। তিনি এই দ্বীনকে পরিপূর্ণভাবে পৌঁছে দিতে এবং আল্লাহ নির্দেশিত বিষয়সমূহ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পালন করতে কোন প্রকার ত্রুটি করেননি। মহান আল্লাহ বলেন: ‘হে রাসূল! আপনার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আপনার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে, তা পৌঁছে দিন’ [মায়েদাহ ৬৭]
আল্লাহ্র এই নির্দেশ মোতাবেক তিনি আমরণ রিসালাতের পূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। আল্লাহ কর্তৃক আরোপিত আমানত যথাযথভাবে রক্ষা করেছেন। তাঁর উম্মতকে সঠিক নছীহত করে গেছেন এবং আল্লাহ্র রাহে সত্যিকার জিহাদ করেছেন। কল্যাণের এমন কোন দিক নেই, যা তিনি তাঁর উম্মতকে বলে যাননি। পক্ষান্তরে অকল্যাণের এমন কোন দিক নেই, যা থেকে তিনি তাঁর উম্মতকে সতর্ক করে যাননি। মহান আল্লাহ স্বীয় বান্দাদেরকে তাঁর কৃতজ্ঞতাপাশে আবদ্ধ করে বলেন: ‘তিনিই নিরক্ষরদের নিকট তাদের মধ্য থেকে একজন রাসূল প্রেরণ করেছেন, যিনি তাদের কাছে তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করেন, তাদেরকে পবিত্র করেন এবং কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেন। ইতিপূর্বে তারা ছিল স্পষ্ট পথভ্রষ্টতায় লিপ্ত’ [জুম‘আহ ২]
আমি আবারও বলছি, আমাদের প্রিয় রাসূল (সা:) আললাহ্র দ্বীনের প্রচার ও প্রসার যথার্থভাবে করে গেছেন। তিনি তাঁর উম্মতকে নছীহত করতে কোন প্রকার ত্রুটি করেননি; বরং তিনি তাদের জন্য তাদের লক্ষ্যস্থল স্পষ্টভাবে বাৎলে দিয়ে গেছেন। মহান আল্লাহ সম্মানিত এই রাসূল (সা:)-এর জন্য সম্মানিত ছাহাবায়ে কেরামকে মনোনীত করেন। তারা তাঁকে এবং আল্লাহ্র দ্বীনকে সার্বিক সাহায্য-সহযোগিতা করেছেন। তাঁরা ছিলেন ভূ-পৃষ্ঠের শ্রেষ্ঠতম ব্যক্তির শ্রেষ্ঠতম সহচর। তারা ছিলেন তাঁর সৎ সঙ্গী, মহৎ সহকর্মী এবং শক্তিশালী সাহায্যকারী। আল্লাহ্র দ্বীনের প্রচার ও প্রসারে তারা সর্বাত্মক সাহায্য-সহযোগিতা করেছেন।তাঁরা কতই না নিবেদিতপ্রাণ এবং মহৎ ছিলেন! কতই না সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী ছিলেন! আল্লাহ্র দ্বীনের সহযোগিতার জন্য তাঁরা কি প্রাণান্ত প্রচেষ্টাই না করেছেন!
মহান আল্লাহ বিশেষ তাৎপর্যকে সামনে রেখেই তাঁর প্রিয় নবী (সা:)-এর জন্য উত্তম ও ন্যায়পরায়ণ এ সকল ছাহাবীকে মনোনীত করেন। স্বয়ং আল্লাহ এবং তদীয় রাসূল (সা:)-এর সাক্ষ্যানুযায়ী নবী ও রাসূলগণ (আঃ)-এর পরে তারাই ছিলেন সর্বোত্তম মানুষ। মহান আল্লাহ বলেন: ‘তোমরাই হ’লে সর্বোত্তম উম্মত, মানবজাতির কল্যাণের জন্যই তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে’ [আলে ইমরান ১১০]
অগ্রবর্তিতার ভিত্তিতে এবং শ্রেষ্ঠত্বের বিচারে নবী (ছাঃ)-এর ছাহাবীগণই সর্বপ্রথম মহান আল্লাহ্র এই দ্ব্যর্থহীন ঘোষণার আওতাভুক্ত হবেন। ছহীহ হাদীছে এসেছে, নবী করীম (সা:) বলেন: ‘আমার যুগের মানুষই সর্বোত্তম মানুষ। অতঃপর তার পরের যুগের মানুষ, অতঃপর তার পরের যুগের মানুষ’। [1]
এখানে ছাহাবীগণের শ্রেষ্ঠত্বের সাক্ষ্য দিলেন স্বয়ং আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল (সা:)। সত্যিই তাঁরা ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ, ন্যায়পরায়ণ, বিশ্বস্ত এবং সুদৃঢ় দিক-নির্দেশক। অতএব আমাদের ভালভাবে জানা উচিত যে, ছাহাবীগণ ও তাদের প্রতি আমাদের কর্তব্য শীর্ষক আলোচনা দ্বীন, ইসলামী আক্বীদা এবং ঈমানেরই একটি অংশ। কেননা অতীত ও বর্তমানে সালাফে ছালেহীন কর্তৃক প্রণীত আক্বীদা বিষয়ক এমন কোন বই আপনি পাবেন না, যাতে ছাহাবীগণের প্রতি মুসলিম আক্বীদার বিষদ বিবরণ নেই।
কিন্তু এখানে একটি প্রশ্ন উঠে, ছাহাবীগণের প্রতি আমাদের যে দায়িত্ব ও কর্তব্য, তা কেন দ্বীনের প্রতি আমাদের কর্তব্যের একটি অংশ হিসাবে বিবেচিত হ’ল?
জবাবে বলব, ছাহাবীগণ হ’লেন এই দ্বীনের ধারক এবং বাহক। তাঁরা কোন প্রকার মাধ্যম ছাড়াই সরাসরি এই দ্বীনের বার্তা রাসূল (সা:)-এর কাছ থেকে শ্রবণের মহান গৌরর অর্জন করেছেন। তাঁরা সরাসরি রাসূল (সা:)-কে দেখেছেন এবং তাঁর কাছ থেকে হাদীছ শুনেছেন। অতঃপর পূর্ণ আমানতদারীর সাথে উক্ত হাদীছসমূহকে সংরক্ষণ করতঃ মুসলিম উম্মাহ্র উদ্দেশ্যে বর্ণনা করেছেন।
রাসূল (সা:)-এর একটি হাদীছও কি এমন পাওয়া যাবে যে, তা ছাহাবায়ে কেরাম ছাড়া অন্য কারো সূত্রে আমাদের কাছে এসে পৌঁছেছে?
যখন আপনি ছহীহ বুখারী, ছহীহ মুসলিম, সুনান[2], মাসানীদ [3], মাজামী‘ [4], আজ্যা [5] বা হাদীছের অন্য কোন গ্রন্থ খুলবেন, তখন দেখবেন, গ্রন্থকার থেকে হাদীছের সনদ শুরু হয়ে ছাহাবী পর্যন্ত পৌঁছেছে। অতঃপর ছাহাবী নবী (সা:) থেকে হাদীছটি বর্ণনা করেছেন। সেজন্য রাসূল (সা:) থেকে সাব্যস্ত প্রত্যেকটি হাদীছের সূত্রে কোন না কোন বিশিষ্ট ছাহাবী অবশ্যই রয়েছেন।
ছাহাবায়ে কেরাম (রাঃ)-এর ন্যায়পরায়ণতা :
ছাহাবায়ে কেরাম (রাঃ)-এর প্রত্যেকেই ছিলেন ন্যায়পরায়ণ। স্বয়ং আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল (ছাঃ) তাদেরকে ন্যায়পরায়ণ হিসাবে আখ্যা দিয়েছেন। সেজন্য দেখা গেছে, মুহাদ্দিছগণ হাদীছ বর্ণনাকারীগণের ন্যায়পরায়ণতার বিষয়টি সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্মভাবে পর্যবেক্ষণ করতেন। সনদের কোন্ বর্ণনাকারী বিশ্বস্ত আর কে যঈফ, তা তাঁরা চুলচেরা বিশ্লেষণ করতেন। কিন্তু সনদের ধারাবাহিকতা যখন ছাহাবী পর্যন্ত পৌঁছত, তখন তাঁরা আর কোন বিশ্লেষণই করতেন না। কেননা তাঁরা নিশ্চিত জানতেন যে, সকল ছাহাবী ন্যায়পরায়ণ এবং বিশবস্ত। সেকারণে আপনি যখন ‘রিজাল শাস্ত্রে’র [6] গ্রন্থসমূহ পড়বেন, তখন সেখানে দেখবেন, গ্রন্থকারগণ তাবেঈন থেকে শুরু করে সকলের অবস্থা বিশ্লেষণ করেছেন। তাঁরা বলেছেন, অমুক বিশ্বস্ত, অমুক হাফেয, অমুক যঈফ, অমুক এমন…। কিন্তু ছাহাবীগণ (রাঃ) কি ন্যায়পরায়ণ, নাকি ন্যায়পরায়ণ নন, তাঁরা কি বিশ্বস্ত, নাকি বিশ্বস্ত নন ইত্যাদি বিষয়ে তারা কোন আলোচনাই আনেননি।
এর মূল কারণ হ’ল ছাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) সবাই ছিলেন ন্যায়পরায়ণ। মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের বহু আয়াতে এবং তাঁর রাসূল (সা:) অসংখ্য হাদীছে তাঁদেরকে ন্যায়পরায়ণ হিসাবে আখ্যা দিয়েছেন।
ছাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) এই দ্বীনের ধারক-বাহক :
ছাহাবীগণ স্বয়ং রাসূল (সা:)-এর কাছ থেকে এই দ্বীন শ্রবণ করেছেন এবং যেভাবে শুনেছেন, ঠিক সেভাবেই সংরক্ষণ করতঃ আমানতদারী ও বিশ্বস্ততার সাথে উম্মতের নিকট তা পৌঁছে দিয়েছেন। ছাহাবায়ে কেরাম রাসূল (সা:) কৃত নিম্নোক্ত দো‘আটির পূর্ণ হিস্সা লাভে ধন্য হয়েছেন। রাসূল (সা:) বলেন: ‘আল্লাহ ঐ ব্যক্তির মুখমন্ডল উজ্জ্বল করুন, যে আমাদের কাছ থেকে হাদীছ শুনল এবং তা সংরক্ষণ করতঃ মানুষের নিকট পৌঁছে দিল’। [7]
ছাহাবায়ে কেরাম যেমন এই দো‘আর পূর্ণ হিস্সা লাভে ধন্য হয়েছেন, উম্মতে মুহাম্মাদীর অন্য কেউ তেমনটি অর্জন করতে পেরেছেন বলে কি আপনাদের জানা আছে ?
আমি আবারো বলছি, তাঁরা দ্বীন ইসলামের বাণী ও রাসূল (সা:)-এর হাদীছসমূহ শ্রবণ করেছেন এবং পরিচ্ছন্ন ও পরিপূর্ণভাবে আমানতদারী, বিশ্বস্ততা ও যত্নসহকারে তা উম্মতের নিকট পৌঁছে দিয়েছেন। তারা তাঁর সাথে সর্বদা থাকতেন, তাঁর বৈঠকসমূহে নিয়মিত উপস্থিত হয়ে হাদীছ শ্রবণের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হ’তেন। এভাবে তাঁরা হাদীছ সংরক্ষণ করতঃ মুসলিম উম্মাহ্র নিকট তা পৌঁছে দিতেন।
ছাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) সম্পর্কে আলোচনাই হ’ল দ্বীন সম্পর্কে আলোচনা:
দ্বীন ইসলামের ধারক-বাহক এমন সুমহান মর্যাদার অধিকারী ছাহাবীগণ সম্পর্কে আলোচনা কি দ্বীন সম্পর্কে আলোচনার একটি অংশ হিসাবে পরিগণিত হ’তে পারে না? যেহেতু রাসূল (ছাঃ) থেকে বর্ণিত প্রত্যেকটি হাদীছের সূত্রেই কোন না কোন ছাহাবী রয়েছেন, সেহেতু তাঁদের সম্পর্কে আলোচনা দ্বীন সম্পর্কে আলোচনারই একটি অংশ।
ছাহাবায়ে কেরাম (রাঃ)-কে নিন্দা করাই দ্বীনকে নিন্দা করা:
পক্ষান্তরে ছাহাবায়ে কেরাম (রাঃ)-কে নিন্দা করাই হ’ল দ্বীনকে নিন্দা করা। কারণ আলেমগণ বলছেন, ‘কোন কিছুর বর্ণনাকারীকে নিন্দা করার অর্থই হচেছ বর্ণিত বিষয়কে নিন্দা করা’।
অতএব যাঁরা আমাদের নিকট দ্বীন পৌঁছে দিয়েছেন, তাঁরা যদি হন নিন্দিত, ন্যায়পরায়ণতার ক্ষেত্রে সমালোচিত, বিশ্বস্ততা ও আমানতদারীর ক্ষেত্রে কলংকিত, তাহ’লে সেই দ্বীনের অবস্থা কি হ’তে পারে? নিশ্চয়ই সেই দ্বীনও হবে নিন্দিত এবং প্রশ্নবিদ্ধ। সেজন্য ইমাম আবু যুর‘আহ আর-রাযী (রহ:) বলেন: ‘তোমরা কাউকে ছাহাবায়ে কেরাম (রাঃ)-এর মর্যাদার হানি করতে দেখলে জানবে যে, সে ‘যিনদ্বীক’। [8]
এর কারণ রাসূল (সা:) আমাদের নিকট হক্ব, কুরআন আমাদের নিকট হক্ব। আর এই কুরআন এবং হাদীছ আমাদের নিকট পৌঁছে দিয়েছেন ছাহাবায়ে কেরাম (রাঃ)। মূলতঃ শত্রুরা কুরআন ও হাদীছকে বাতিল করার হীন উদ্দেশ্যেই আমাদের প্রত্যক্ষদর্শী ছাহাবায়ে কেরাম (রাঃ)-কে আঘাত করতে চায়। মনে রাখতে হবে, তারাই নিন্দার উপযুক্ত এবং তারাই হচ্ছে যিনদীক্ব’। [9]
ছাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) যদি বিশ্বস্ত ও ন্যায়পরায়ণ না হন, তাহ’লে যে দ্বীনের মাধ্যমে আমরা আল্লাহ্র ইবাদত করি, সে দ্বীনের অস্তিত্ব কোথায় যাবে?
একদল লোক পথভ্রষ্টতার অতলগভীরে নিমজ্জিত হয়ে হাতে গোনা কয়েকজন ছাহাবী ব্যতীত সকল ছাহাবীকে নিন্দা করে থাকে। তাদেরকে জিজ্ঞেস করি, অবস্থা যদি এই হয়, তাহ’লে দ্বীন কোথায়? আল্লাহ্র দ্বীনকে কিভাবে জানতে হবে? কিভাবে আল্লাহ্র ইবাদত করা সম্ভব হবে? কিভাবে আল্লাহ্র জন্য ছালাত আদায় করতে হবে এবং সিজদা করতে হবে? কিভাবে আল্লাহ্র ফরযসমূহ আদায় করতে হবে? কিভাবে হজ্জ করতে হবে? বা আল্লাহ্র আনুগত্যইবা কিভাবে করতে হবে?
সেজন্য আমাদের খুব ভালভাবে জানতে হবে, দ্বীনের ধারক-বাহক ছাহাবায়ে কেরাম (রাঃ)-কে নিন্দা করার অর্থই হ’ল সরাসরি দ্বীনকে নিন্দা করা। আমাদের আরো জানতে হবে, ছাহাবায়ে কেরাম (রাঃ)-এর প্রতি আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য মূলতঃ দ্বীনের প্রতি আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্যেরই একটি অংশ। কেননা তাঁরাই এই দ্বীনের প্রচার ও প্রসার ঘটিয়েছেন। সুতরাং তাঁদেরকে নিন্দা করা হ’লে দ্বীনও নিন্দিত হবে।
ছাহাবায়ে কেরাম (রাঃ)-এর ন্যায়পরায়ণতা:
যাঁদেরকে মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের বহু আয়াতে ন্যায়পরায়ণ হিসাবে আখ্যা দিয়েছেন; স্বয়ং আল্লাহ যাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন, সেসকল ছাহাবীকে কিভাবে নিন্দা করা যেতে পারে! মহান আল্লাহ বলেন: ‘মুহাজির ও আনছারগণের মধ্যে অগ্রবর্তী ছাহাবীগণ এবং কল্যাণকর্মের মাধ্যমে তাঁদের অনুসারীগণের প্রতি আল্লাহ সন্তুষ্ট হয়েছেন। আর তাঁরাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন’ [তওবাহ ১০০]
উক্ত আয়াতে আল্লাহপাক দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ঘোষণা করলেন, তিনি তাঁদের প্রতি সন্তুষ্ট। দ্বীনের ধারক-বাহক হিসাবে বিশ্বস্ত নন এমন কারো প্রতি আল্লাহ কি কখনও সন্তুষ্ট হ’তে পারেন? রাসূল (ছাঃ)-এর অমিয় বাণী প্রচারে খেয়ানতকারী কারো প্রতি কি তিনি সন্তুষ্ট হ’তে পারেন? অসম্ভব! এমনটি কখনই হ’তে পারে না। আল্লাহ তাঁদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন। কারণ তাঁরা বিশ্বস্ত ও ন্যায়পরায়ণ, তাঁরা সর্বোত্তম আদর্শ এবং আল্লাহ্র দ্বীনের একনিষ্ঠ প্রচারক।আল্লাহ বলেন: ‘আল্লাহ তাঁদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তাঁরাও আল্লাহ্র প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন’।
তিনি অন্যত্র বলেন: ‘আল্লাহ মুমিনগণের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন, যখন তাঁরা বৃক্ষের নীচে আপনার কাছে শপথ করেছেন’ [ফাতহ ১৮]
বায়‘আতকারী এসকল ছাহাবীর সংখ্যা ছিল এক হাযারেরও বেশী এবং তাঁদের সকলের প্রতিই আল্লাহ সন্তুষ্ট হয়েছেন। রাসূল (সা:) বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ছাহাবীগণ সম্পর্কে বলেন: ‘হে ওমর! তুমি কিভাবে জানলে যে, হাত্বেব মুনাফিক্ব হয়ে গেছে? মনে রেখ, আল্লাহ বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ছাহাবীগণ সম্পর্কে জানেন। সেজন্যই তিনি বলেছেন, তোমরা যা ইচছা তাই কর, আমি তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছি’। [10]
এগুলি পবিত্র কুরআন ও হাদীছে বর্ণিত তাঁদের প্রশংসার কয়েকটি নমুনা মাত্র। ছাহাবায়ে কেরাম (রাঃ)-এর প্রশংসায় বর্ণিত আয়াত ও হাদীছ হিসাব করাই কষ্টকর। ছাহাবায়ে কেরাম (রাঃ)-এর গুণকীর্তন শুধুমাত্র পবিত্র কুরআনেই আসেনি; বরং তাঁদের সৃষ্টির আগেই তাওরাত ও ইঞ্জীলে তাঁদের প্রশংসার কথা বিঘোষিত হয়েছে। সূরা আল-ফাত্হের শেষ আয়াতে মহান আল্লাহ ছাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) সম্পর্কে বলেন: ‘মুহাম্মাদ আল্লাহ্র রাসূল এবং তাঁর সহচরগণ কাফেরদের প্রতি কঠোর, নিজেদের মধ্যে পরস্পর সহানুভূতিশীল। আল্লাহ্র অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি কামনায় আপনি তাদেরকে রুকূ ও সিজদারত দেখবেন। তাদের মুখমন্ডলে রয়েছে সিজদার চিহ্ন’ [ফাতহ ২৯]
তাহ’লে দেখা গেল, স্বয়ং আল্লাহ ছাহাবায়ে কেরাম (রাঃ)-এর প্রশংসা করলেন। কিন্তু তাঁদের এই প্রশংসা বাণী কোথায় এবং কোন্ কিতাবে ঘোষিত হয়েছে? আল্লাহ বলেন: ‘তাওরাতে তাঁদের উদাহরণ এরূপ। আর ইঞ্জীলে তাঁদের উদাহরণ হচ্ছে একটি শস্যবীজের মত, যা থেকে উদ্গত হয় অঙ্কুর, অতঃপর তা শক্ত ও মযবূত হয় এবং কান্ডের উপর দৃঢ়ভাবে দাঁড়ায়; এটা চাষীদেরকে আনন্দে অভিভূত করে। কিন্তু আল্লাহ তাঁদের দ্বারা কাফেরদের অন্তর্জ্বালা সৃষ্টি করেন। তাঁদের মধ্যে যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাঁদেরকে ক্ষমা ও মহাপুরস্কারের ওয়াদা দিয়েছেন’[ফাত্হ ২৯]
ছাহাবায়ে কেরাম (রাঃ)-এর প্রতি সুবাসিত এই প্রশংসা ও গুণকীর্তন উল্লিখিত হয়েছে তাওরাত ও ইঞ্জীলে।
প্রিয় মুসলিম ভাই! উক্ত আয়াতে কারীমা আপনাকে স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছে যে, মহামহিম প্রতিপালক তাওরাত, ইঞ্জীল ও কুরআনে ছাহাবায়ে কেরাম (রাঃ)-এর প্রশংসা করেছেন এবং তাঁদেরকে ন্যায়পরায়ণ আখ্যা দিয়েছেন। তিনি তাঁদের প্রশংসা করেছেন তাঁদের সৃষ্টির পূর্বে মূসা (আঃ)-এর উপর তাওরাত অবতীর্ণের সময় এবং ঈসা (আঃ)-এর উপর ইঞ্জীল অবতীর্ণের সময়। অতঃপর তাঁদের জীবদ্দশায় তিনি আবার তাঁদের প্রশংসা করলেন মুহাম্মাদ (সা:)-এর উপর অবতীর্ণ মহাগ্রন্থ আল-কুরআনে।
মহান আল্লাহ কর্তৃক ছাহাবায়ে কেরাম (রাঃ)-এর প্রশংসা সম্বলিত সূরা আল-হাশরের আরো কিছু আয়াত আমরা বিশ্লেষণ করব। মহান আল্লাহবলেন: ‘এই ধন-সম্পদ দেশত্যাগী নিঃস্বদের জন্য, যাঁরা আল্লাহ্র অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি লাভের অন্বেষণে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাহায্যার্থে নিজেদের বাস্তুভিটা ও ধন-সম্পদ থেকে বহিষ্কৃত হয়েছে। বস্তুতঃ তাঁরাই সত্যবাদী’ [হাশর ৮]
এখানে আল্লাহ তাঁদেরকে সত্যবাদী হিসাবে বিশেষিত করলেন। তিনি বললেন, ‘তাঁরাই হচ্ছেন সত্যবাদী’।
অতঃপর মহান আল্লাহ আনছার ছাহাবীগণ সম্পর্কে বললেন:‘যাঁরা মুহাজিরগণের আগমনের পূর্বে মদীনায় বসতি গড়ে তুলেছিলেন এবং ধর্মবিশ্বাস সুপ্রতিষ্ঠিত করেছিলেন, তাঁরা মুহাজিরগণকে ভালবাসেন। আর মুহাজিরগণকে যা দেয়া হয়েছে, সে কারণে তাঁরা অন্তরে ঈর্ষা পোষণ করেন না; বরং নিজেরা অভাবগ্রস্ত হওয়া সত্ত্বেও তাঁরা তাঁদেরকে নিজেদের উপর অগ্রাধিকার প্রদান করেন। যারা মনের কার্পণ্য থেকে মুক্ত, তারাই সফলকাম’ [হাশর ৯]
উক্ত আয়াতদ্বয়ে মুহাজির ও আনছার ছাহাবীগণের প্রশংসা করা হ’ল। আর একথা দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট যে, সকল ছাহাবী এই দুই প্রকারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। মুহাজিরগণ হ’লেন মক্কার অধিবাসী ছাহাবীবর্গ, যারা তাঁদের ধন-সম্পদ এবং ভিটা-বাড়ী ত্যাগ করে আল্লাহ্র সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে হিজরত করেন। আল্লাহ বলেন: ‘তাঁরা আল্লাহ্র অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি অন্বেষণ করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে সাহায্য করে’ [হাশর ৮]
তাঁরা জীবনের সবকিছুর মায়া ত্যাগ করে শুধুমাত্র আল্লাহ এবং তদীয় রাসূল (ছাঃ)-কে সহযোগিতা করার জন্য মদীনায় আগমন করেন। তাই তো আল্লাহ তাঁদের সম্পর্কে বলেন, ‘তাঁরাই হচ্ছেন সত্যবাদী’।
অর্থাৎ ঈমান, সাহচর্য, আনুগত্য এবং আল্লাহ্র দ্বীনের অনুসরণের ক্ষেত্রে তাঁরা সত্যবাদী। মহান আল্লাহ বলেন: ‘মুমিনদের মধ্যে কতক আল্লাহ্র সাথে কৃত ওয়াদা পূর্ণ করেছে। তাদের কেউ কেউ মৃত্যুবরণ করেছে এবং কেউ কেউ প্রতীক্ষা করছে। তারা তাদের সংকল্প মোটেই পরিবর্তন করেনি’[আহযাব ২৩]
তাঁরাই হ’লেন ছাহাবী, আল্লাহ যাঁদের এমন সুবাসিত প্রশংসা করলেন। তিনি মুহাজিরগণের যেমন প্রশংসা করলেন, তেমনি প্রশংসা করলেন আনছার ছাহাবীগণেরও। তিনি বললেন, ‘যাঁরা মদীনায় বসতি গড়ে তুলেছিলেন’।
এখানে الدَّارَ অর্থ মদীনা। সুতরাং আনছার ছাহাবীগণ মুহাজির ছাহাবীগণের আগমনের পূর্বেই মদীনাকে প্রস্তুত করেছিলেন। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়, মুহাজিরগণের খেদমতে আনছার ছাহাবীগণ কি এমন করেছিলেন? জবাবে বলব, আনছার ছাহাবীগণ নিজেদের সম্পদে মুহাজিরগণকে সমানভাবে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দিয়েছিলেন। আনছার ছাহাবী মুহাজির ছাহাবীকে তাঁর বাড়ী ও সম্পদের অর্ধেক দিয়ে দিয়েছিলেন। নিজের উপরে অন্য মুসলিম ভাইকে অগ্রাধিকার দেওয়ার এই মহৎ গুণের কারণে মহান আল্লাহ তাঁদের প্রশংসা করে বলেন, ‘তাঁরা নিজেরা অভাবগ্রস্ত হওয়া সত্ত্বেও তাঁদেরকে (মুহাজিরগণ) নিজেদের উপর প্রাধান্য দেন’।
আনছার এবং মুহাজিরগণ আল্লাহ্র দ্বীনের সাহায্যার্থে সংঘবদ্ধ প্রচেষ্টা করেছিলেন। তাই তো তাঁরা সবাই আল্লাহ্র দ্বীনের সাহায্যকারী। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তাঁরা তাঁদের সংকল্প মোটেই পরিবর্তন করেননি’।
ছাহাবায়ে কেরাম (রাঃ)-এর প্রতি মুসলমানদের কর্তব্য:
এই যাঁদের অবদান, তাঁদের প্রতি তাঁদের উত্তরসূরীদের কি কর্তব্য হ’তে পারে?
আমাদেরকে এর জবাব অবশ্যই মনোযোগ দিয়ে অনুধাবন করতে হবে। মুহাজির এবং আনছার ছাহাবীগণের ক্ষেত্রে একজন মুমিনের ভূমিকা কি হবে, তা আল্লাহ স্পষ্টই বলে দিয়েছেন। তিনি বলেন:‘আর এই সম্পদ তাদের জন্য, যারা তাদের পরে আগমন করেছে। তারা বলে, হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদেরকে এবং ঈমানে আমাদের অগ্রবর্তী ভ্রাতাগণকে ক্ষমা করুন। ঈমানদারদের বিরুদ্ধে আমাদের অন্তরে কোন বিদ্বেষ আপনি রাখবেন না। হে আমাদের পালনকর্তা! নিশ্চয়ই আপনি অতিশয় দয়ালু, পরম করুণাময়’ [হাশর ১০]
‘এখানে তাদের পরে যারা এসেছে’ বলতে আনছার ও মুহাজিরগণের পরে যারা এসেছে, তাদেরকে বুঝানো হয়েছে। ছাহাবীগণের ক্ষেত্রে প্রত্যেকটি মুমিনের যে ভূমিকা হওয়া উচিত, তা উক্ত আয়াতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে। এই দায়িত্ব ও কর্তব্য নিম্নোক্ত দু’টি পয়েন্টে সংক্ষিপ্তাকারে উল্লেখ করা যেতে পারে। প্রিয় পাঠক! পয়েন্ট দু’টির প্রতি ভালভাবে খেয়াল করবেন, আল্লাহ আপনাকে এতদুভয়ের মাধ্যমে উপকৃত করবেন। ছাহাবায়ে কেরাম সম্পর্কে আমাদের অন্তঃকরণকে নিষ্কলুষ রাখতে হবে। তাঁদের প্রতি হৃদয়ে কোন হিংসা-বিদ্বেষ বা ঘৃণা থাকবে না; থাকবে না কোন প্রকার শত্রুতা। বরং হৃদয়ের মণিকোঠায় স্থান পাবে শুধু ভালবাসা, অনুগ্রহ আর সহানুভূতি। এরশাদ হচ্ছে,‘আপনি ঈমানদারগণের প্রতি আমাদের অন্তরে কোন বিদ্বেষ রাখবেন না’।
অর্থাৎ আমাদের পূর্বে যাঁরা ঈমানের সাথে গত হয়ে গেছেন, আপনি তাঁদের ব্যাপারে আমাদের হৃদয়সমূহকে নিষ্কলুষ করে দিন। তাঁরা আমাদের ভাই শুধু নয়; বরং তাঁরা আমাদের সর্বোত্তম ভাই। সেজন্য মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর এই সম্পদ তাদের জন্য, যারা তাদের পরে আগমন করেছে। তারা বলে, হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদেরকে এবং ঈমানে আমাদের অগ্রবর্তী ভ্রাতাগণকে ক্ষমা করুন’।
অতএব তাঁরা আমাদের ভাই। তাঁদের আরেকটি মহৎ বৈশিষ্ট্য হ’ল, ‘তাঁরা ঈমানে আমাদের অগ্রবর্তী’।অন্যত্র আল্লাহ বলেন: ‘মুহাজির ও আনছারগণের মধ্যে অগ্রবর্তী ছাহাবীগণ’ [তাওবাহ ১০০]
এই বিশেষ মর্যাদায় আল্লাহ তাঁদেরকে মর্যাদাবান করেছেন।
মূল: আব্দুর রাযযাক বিন আব্দুল মুহসিন আল-বাদর
প্রফেসর, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সঊদী আরব।
এম.এ (অধ্যয়নরত), মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সঊদী আরব।
[1]. বুখারী, হা/২৬৫২; মুসলিম, হা/২৫৩৩।
হাদীছটি ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বর্ণনা করেন।
[2]. যেসব হাদীছ গ্রন্থ ফিক্বহী অধ্যায় বা অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সাজানো হয়, সেগুলিকে ‘সুনান’ (السنن) বলে। যেমন- সুনানে আবু দাঊদ, সুনানে নাসাঈ, সুনানে ইবনে মাজাহ ইত্যাদি। -অনুবাদক
[3]. যেসক হাদীছ গ্রন্থে প্রত্যেক ছাহাবীর ছহীহ, হাসান ও যঈফ হাদীছকে পৃথকভাবে সাজানো হয়, অধ্যায় বা অনুচ্ছেদ অনুযায়ী হাদীছ উল্লেখ করা হয় না, সেসব হাদীছ গ্রন্থকে ‘মাসানীদ’ (المسانيد) বলে। যেমন- মুসনাদে আহমাদ, মুসনাদে বাযযার ইত্যাদি। আবার কখনও যে গ্রন্থে বেশকিছু হাদীছ একত্রিত করা হয়, তবে এর হাদীছগুলিকে ছাহাবীর নামানুসারে না সাজিয়ে অধ্যায় বা অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সাজানো হয়, তাকেও মুসনাদ বলে। যেমন- মুসনাদে বাক্বী ইবনে মাখলাদ আল-আন্দালুসী। -অনুবাদক
[4]. যেসব গ্রন্থে হাদীছের বিভিন্ন মূল গ্রন্থ থেকে হাদীছ একত্রিত করা হয় এবং একত্রিত হাদীছগুলিকে মূল গ্রন্থসমূহের বিন্যাস অনুযায়ী সাজানো হয়, সেগুলিকে ‘মাজামী’ (المجاميع) বলে। যেমন- ছহীহায়েন’, সুয়ূত্বী প্রণীত ‘আল-জামে‘ আল-কাবীর’ প্রভৃতি। এসব হাদীছ গ্রন্থের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য হ’ল, এগুলিতে বিভিন্ন গ্রন্থে উল্লেখিত একই বিষয়ের অনেকগুলি হাদীছ একসঙ্গে পাওয়া যায়। -অনুবাদক
[5]. হাদীছের যেসব ছোট্ট গ্রন্থে লেখকগণ বেশ কিছু হাদীছ একত্রিত করেন এবং হাদীছগুলি সাধারণতঃ বিষয়বস্তু, বর্ণনাকারী অথবা মতন বা সনদের (الأجزاء الحديثية) বলে। যেমন- ইমাম বুখারী প্র-অনুবাদক
[6]. যে শাস্ত্র হাদীছের বর্ণনাকারীগণের অবস্থা বিশ্লেষণ করে, তাকে ‘রিজাল শাস্ত্র’ (عِلْمُ الرِّجَال) বলে। -অনুবাদক
[7]. আবূ দাঊদ, হা/৩৬৬২; তিরমিযী, হা/২৬৫৬; ইবনু মাজাহ, হা/২৩০।
প্রখ্যাত ছাহাবী যায়েদ বিন ছাবেত (রাঃ) হ’তে হাদীছটি বর্ণিত। হাদীছটি বিভিন্ন শব্দে অভিন্ন অর্থে আরো কয়েকজন ছাহাবী থেকে বর্ণিত হয়েছে এবং শায়খ আলবানী ‘ছহীহ’ বলেছেন। দ্রঃ সিলসিলা ছহীহাহ হা/৪০৪।
[8]. ‘যিনদীক্ব’ (زِنْدِيْقٌ) ফারসী শব্দ। রাসূল (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরাম (রাঃ)-এর যুগে শব্দটি প্রসিদ্ধ ছিল না। আববাসীয় যুগে শব্দটির ব্যাপক পরিচিতি ঘটে। ইবনু কুদামাহ (রহঃ) একে সংজ্ঞায়িত করতে গিয়ে বলেন, ‘যে ব্যক্তি প্রকাশ্যে ইসলামের কথা বলে এবং গোপনে কুফরী জিইয়ে রাখে, সে-ই হচ্ছে ‘যিনদীক্ব’।
রাসূল (ছাঃ)-এর যুগে এই শ্রেণীর লোককে ‘মুনাফিক্ব’ বলা হ’ত, বর্তমান এদেরকে ‘যিনদীক্ব’ বলা হয়। দ্রঃ আল-মুগনী, ৬/৩৭০করে না, তাকে ‘যিনদীক্ব’ বলে। তবে ফক্বীহগণ এ মর্মে ঐক্যমত পোষণ করেছেন যে, ‘যিনদীক্ব’ হচ্ছে কাফের এবং পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছে মুনাফিক্বের যেসব বৈশিষ্ট্য বর্ণিত হয়েছে, তার সবগুলিই ‘যিনদীক্ব’-এর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। -অনুবাদক
[9]. খত্বীব বাগদাদী, , পৃঃ ৪৯।
[10]. ছহীহ বুখারী, হা/৩০০৭; ছহীহ মুসলিম, হা/২৪৯৪।
হাদীছটি আলী (রাঃ) বর্ণনা করেন।
আমাদের ফেসবুক group এ জয়েন হতে পারেন এখানে প্রতিদিন ইসলামিক সম্পর্কে পোষ্ট করা হয় কোরআনের আলো