Site icon Trickbd.com

??[কোরআনের আলো পর্ব ১৪৮]সিয়ামের সুন্নত আদব সমূহ সম্পর্কে জানতে পারবো ??

Unnamed

আসসালামু আলাইকুম সবাই কেমন আছেন…..? আশা করি সবাই ভালো আছেন । আমি আল্লাহর রহমতে ভালোই আছি ।আসলে কেউ ভালো না থাকলে TrickBD তে ভিজিট করেনা ।তাই আপনাকে TrickBD তে আসার জন্য ধন্যবাদ ।ভালো কিছু জানতে সবাই TrickBD এর সাথেই থাকুন ।

আজকে আমি আপনাদের মাঝে কোরআনে আলো এ পর্বে সিয়ামের সুন্নত আদব সমূহ জানতে চলে আসলাম ।

সিয়ামের সুন্নত আদব সমূহ

সিয়াম পালনের কিছু মুস্তাহাব বা সুন্নাত আদব আছে যেগুলো পালন করলে সাওয়াব বেড়ে যাবে। আর তা ছেড়ে দিলে রোযা ভঙ্গ হবে না বা গোনাহও হবে না। তবে পুণ্যে ঘাটতি হবে। কিন্তু তা আদায় করলে সওয়াবের পরিপূর্ণতা আসে। নিম্নে এসব আদব উল্লেখ করা হল:-

[১] সাহরী খাওয়া

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামবলেছেন:-

(ক) তোমরা সাহরী খাও, কারণ সাহরীতে বরকত রয়েছে। (বুখারী-১৯২৩ ও মুসলিম-১০৯৫(খ) আমাদের (মুসলিমদের) ও ইয়াহূদী-নাসারাদের সিয়ামের মধ্যে পার্থক্য হল সাহরী খাওয়া। [মুসলিম-১০৯৬]
অর্থাৎ আমরা সিয়াম পালন করি সাহরী খেয়ে, আর ইয়াহূদী-নাসারারা রোযা রাখে সাহরী না খেয়ে।

(খ) মু’মিনের সাহরীতে উত্তম খাবার হল খেজুর। [আবূ দাঊদ-২৩৪৫]

(গ) (রোযাদারদের জন্য) সাহরী হল একটি বরকতময় খাবার। তাই কখনো সাহরী খাওয়া বাদ দিও না। এক ঢোক পানি পান করে হলেও সাহরী খেয়ে নাও। কেননা সাহরীর খাবার গ্রহণকারীকে আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর ফেরেশতারা স্মরণ করে থাকেন। [আহামদ-১০৭০২]

[২] সাহরী দেরী করে খাওয়া

অর্থাৎ তা শেষ ওয়াক্তে খাওয়া উত্তম। রাতের শেষাংশে গ্রহণকৃত খাবারকে সাহরী বলা হয়।

[৩] সাহরীর সময়কে ইবাদতে কাজে লাগানো

প্রতিরাতের শেষ তৃতীয়াংশ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা আরশ থেকে প্রথম আসমানে নেমে আসেন। আর বান্দাদেরকে এই বলে আহ্বান করেন : “এখন যে ব্যক্তি আমার কাছে দু‘আ করবে আমি তা কবূল করব, যা কিছু আমার কাছে এখন চাইবে আমি তাকে তা দিব এবং যে আমার কাছে এখন মাফ চাইবে আমি তাকে মাফ করে দিব। [বুখারী-৬৩২১ ও মুসলিম-৭৫৮]

অতএব তখন কুরআন অধ্যয়ন, তিলাওয়াত, তাহাজ্জুদের সলাত আদায়, তাওবাহ-ইস্তিগফার ও দু‘আ কবূলের জন্য এটা এক উত্তম সময়। তাদের প্রশংসায় আল্লাহ বলেন: “তারা শেষ রাতে জেগে উঠে তাওবাহ-ইস্তিগফার করে।” [সূরাহ যারিয়াত-১৮]

[৪] সূর্য অস্ত যাওয়ামাত্র ইফতার করা

অর্থাৎ তাড়াতাড়ি ইফতার করা। অতিরঞ্জিত সাবধানতার নামে ইফতার বিলম্ব না করা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:-

(ক) অর্থাৎ মানুষ যতদিন পর্যন্ত তাড়াতাড়ি ইফতার করবে ততদিন কল্যাণের মধ্যে থাকবে। (বুখারী-১৯৫৭ ও মুসলিম-১০৯৮)(খ) যতদিন মানুষ তাড়াতাড়ি ইফতার করবে ততদিন দীন ইসলাম বিজয়ী থাকবে। কেননা, ইয়াহূদী ও নাসারাদের অভ্যাস হল ইফাতর দেরীতে করা। [আবূ দাঊদ-২৩৫৩]

(খ) তিনটি বিষয় নাবী চরিত্রের অংশ : সময় হওয়ামাত্র ইফতার করে ফেলা, সাহরী শেষ ওয়াক্তে খাওয়া এবং সলাতে ডান হাত বাম হাতের উপর রাখা। [তাবরানী]

(গ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবীগণ সকলের আগে তাড়াতাড়ি ইফতার করতেন এবং সকলের চেয়ে দেরীতে সাহরী খেতেন। [মুসান্নাফ আঃ রাযযাক]

[৫] মাগরিবের সালাতের পূর্বে ইফতার করা এবং খেজুর বা পানি দ্বারা ইফতার করা

আনাস রাদিআল্লাহু আনহু বলেছেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (মাগরিবের) সলাতের পুর্বে তাজা খেজুর দ্বারা ইফতার করতেন। যদি তাজা খেজুর পাওয়া না যেত তবে শুকনো খেজুর দ্বারা ইফতার করতেন। আর যদি শুকনা খেজুর পাওয়া না যেত তাহলে কয়েক ঢোক পানি দ্বারা ইফতার করতেন। [আহমাদ]

তবে পেট ভর্তি করে খাওয়া ইসলাম সমর্থন করে না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামবলেছেন: “যে ব্যক্তি পেট ভর্তি করে খানা খায় তার ঐ পেট (আল্লাহর কাছে) একটি নিকৃষ্ট পাত্র।”[তিরমিযী]

সুন্নাত হল পেটের তিন ভাগের একভাগ খাবার খাবে, আর তিনভাগের একভাগ পানি পান করবে। বাকী এক তৃতীয়াংশ শ্বাস প্রশ্বাসের জন্য খালী রেখে দিবে। [তিরমিযী]

[৬] ইফতারের সময় দু‘আ করা

এ মুহূর্তটি জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেয়ার সময়।রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামবলেছেন:-

(ক) ইফতারের সময় আল্লাহ রব্বুল ‘আলামীন বহু লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন। আর এ মুক্তি দানের পালা রমাযানের প্রতি রাতেই চলতে থাকে। সে সময় সিয়াম পালনকারী প্রত্যেক বান্দার দু‘আ কবূল হয়।” [আহমাদ]

(খ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ইফতার করতেন তখন বলতেন: হে আল্লাহ! তোমার জন্য রোযা রেখেছি, আর তোমারই রিযিক দ্বারা ইফতার করছি।

উল্লেখ্য যে, আল্লামা নাসিরুদ্দীন আলবানী উপরোক্ত হাদীসটিকে দুর্বল হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

(গ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইফতারের সময় নিম্নের এ দুআটি পাঠ করতেন:“পিপাসা নিবারিত হল, শিরা উপশিরা সিক্ত হল এবং আল্লাহর ইচ্ছায় পুরস্কারও নির্ধারিত হল।” [আবূ দাউদ, দারাকুতনী, বাইহাকী, আলবানী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন]

ইফতারের সময় যখন আযান হয় তখন আযানের পরের সময়টা দু‘আ কবূলের সময়। হাদীসে আছে আযান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়ের দু‘আ কবূল হয়।

[৭] বেশী বেশী কুরআন পাঠ করা, সলাত আদায়, যিকর ও দু‘আ করা

রমযান যেহেতু কুরআন নাযিলের মাস সেহেতু এ মাসে কুরআন তিলাওয়াত ও অধ্যয়ন অন্য সময়ের চেয়ে বেশী করা উচিত।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: সিয়াম ও কুরআন কিয়ামতের দিন (আল্লাহর কাছে) মানুষের জন্য এভাবে সুপারিশ করবে যে, সিয়াম বলবে, হে রব! দিনের বেলায় আমি তাকে পানাহার ও যৌন উপভোগ থেকে বিরত রেখেছি। তাই তার ব্যাপারে তুমি আমার সুপারিশ কবূল কর। কুরআনও বলবে, হে রব! (রাতে কুরআন পাঠের কারণে) রাতের নিদ্রা থেকে আমি তাকে বিরত রেখেছি। তাই এ পাঠকের ব্যাপারে তুমি আমার সুপারিশ মঞ্জুর কর। তিনি বলেন, অতঃপর উভয়েরই সুপারিশ গ্রহণ করা হবে। [আহমাদ-৬৫৮৯]

[৮] ইবাদতের তাওফীক কামনা ও আল্লাহর দয়া অনুধাবন করা

আমরা যে ইবাদত করি তাও আল্লাহর দয়া। তিনি যে এ কাজে আমাদেরকে তাওফীক দিয়েছেন সেজন্য আমরা তার শুকরিয়া আদায় করি। অনেকের ভাল কাজও আবার কবূল হয় না।আল্লাহ বলেন: “কেবলমাত্র মুত্তাকীদের কাজই আল্লাহ কবূল করেন। [মায়িদাহ : ২৭]

ভয় ও আশা নিয়ে যেন আমরা ইবাদত করি। গর্ব-অহঙ্কার ও হিংসা বান্দার ইবাদতকে নষ্ট করে দেয় এবং কুফরী ও শির্ক করলে তার কোন নেকই আল্লাহর কাছে পৌঁছে না, বরং ইবাদতসমূহ ধ্বংস ও বাতিল হয়ে যায়।

[৯] ইয়াতীম, বিধবা ও গরীব মিসকীনদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া ও বেশী বেশী দান খয়রাত করা

তাদেরকে যাকাত, ফিত্রা ও সাদাকাহ দেয়া। হাদীসে এসেছে: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশী দানশীল আর রমাযানে তাঁর এ দানশীলতা আরো বেড়ে যেত। [মুসলিম-২৩০]

[১০] উত্তম চরিত্র গঠনের অনুশীলন করা

রমযান ধৈর্যধারনের মাস। আর সিয়াম হল এ কার্য প্রশিক্ষণের ইনিষ্টিটিউট। কাজেই এ সময় আমাদেরকে সুন্দর চরিত্র গঠনের অনুশীলন করতে হবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:‘তোমাদের মধ্যে কেউ যদি রোযা রাখে, সে যেন তখন অশ্লীল কাজ ও শোরগোল থেকে বিরত থাকে। রোযা রাখা অবস্থায় কেউ যদি তার সাথে গালাগালি ও মারামারি করতে আসে সে যেন বলে, “আমি রোযাদার”। [মুসলিম-১১৫১]

[১১] অপচয় ও অযথা খরচ থেকে বিরত থাকা

খাওয়া দাওয়া, পোষাক-পরিচ্ছদ ও আরাম আয়েশে অনেকেই অপচয় ও অপব্যয় করে থাকে। এটা এক গর্হিত কাজ। এ থেকে বিরত থাকা।

[১২] রুটিন করে সময়টাকে কাজে লাগানো

অহেতুক কথাবার্তা, আড্ডা বাজি, গল্প-গুজব, বেহুদা তর্কবিতর্ক পরিহার করা। রুটিন করে পরিকল্পনা ভিত্তিক কাজ করা। এতে জীবন অধিকতর ফলপ্রসূ হবে।

[১৩] দুনিয়াবী ব্যস্ততা কমিয়ে দেয়া

রমাযানের এ বরকতময় মাসে অর্থ উপার্জন ও ব্যবসা বাণিজ্যের ব্যস্ততা কমিয়ে দিয়ে আখিরাতের মুনাফা অর্জনের জন্য অধিকতর বেশী সময় দেয়া আবশ্যক। দুনিয়া ক্ষণস্থায়ী আর আখিরাত চিরস্থায়ী। আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “আর আখিরাতের জীবন সর্বোত্তম এবং চিরস্থায়ী।” [সূরা আ‘লা-১৭]

[১৪] খাওয়া ও নিদ্রায় ভারসাম্য রক্ষা করা

কেউ কেউ এতো বেশী খাবার খায় যে নাস্তা ও দুপুরের খাবার শুধু ইফাতের এক বেলায়ই তা পুষিয়ে নেয়। আবার তারাবীহ ও সেহরীর ওয়াক্তের দ্বিগুণ দিনের বেলায় ঘুমিয়ে তা কাযা করে। এভাবে চললে খাবার ও ঘুমের কুরবানী হলো কীভাবে? তাই এ বিষয়ে রোযাদারকে ত্যাগ তীতিক্ষা করতে হবে এবং এ দু’এর মধ্যে ভারসাম্য বজায় রেখে সিয়াম পালন করে যেতে হবে।

[১৫] আল্লাহর নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা

রমাযানের পবিত্র দিন ও রাতগুলোতে ইবাদত করার তাওফীক দেয়ায় মাবুদের প্রশংসা করা।

আমাদের ফেসবুক group এ জয়েন হতে পারেন এখানে প্রতিদিন ইসলামিক সম্পর্কে পোষ্ট করা হয় কোরআনের আলো

??পোষ্টি কেমন লাগলো কমেন্ট করে জানাবেন। এবং লাইক দিবেন ??