সবাকে সকালে বৃষ্টি ভেজা আকাশের শুভেচ্ছা ???
হারুন অর রশীদ কে ছিলেন? তিনি ইতিহাসে এতো বিখ্যাত কেন? পর্ব ০২ এ স্বাগতম আপনাকে ৷
খলিফা হারুন আর-রশীদ ছিলেন আব্বাসীয় খলিফা যিনি ১৭০ হিজরীতে খেলাফতের দায়িত্ব পান আর ১৯৩ হিজরীতে তিনি ৪৫ বা ৪৭ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। তার খিলাফত ছিল ২৩ বছর। এবং তার খিলাফত কে আব্বাসীয় খিলাফতের স্বর্নযুগ বলা হয়।
হারুনুর রশীদ একজন পূণ্যবান খলিফা ছিলেন ঐশ্বৰ্য্য ও প্রাচুর্যের মধ্যে মানুষের পদস্খলন হইয়া থাকে । কিন্তু খলিফা , হারুনুর রশীদ মৃত্যু পৰ্য্যন্ত দৈনিক একশত রাকাত নফল নামাজ পড়িতেন ও নিজস্ব আয় হইতে দৈনিক এক হাজার দেরহাম দান করিতেন । এক বৎসর হজ্ব করিতেন ও অন্য বৎসর জেহাদে যাইতেন । হজ্বের বৎসর একশত ওলামাকে তাহাদের পুত্রগণসহ হজ্বে নিয়া যাইতেন । আর জেহাদের বৎসর তিনশত লােককে সাজসরঞ্জাম সহকারে জেহাদে পাঠাইতেন । ওলামায়ে কেরামের খুব ইজ্জত করিতেন । বিখ্যাত মােহদ্দেছ আবু মােয়াবিয়া অন্ধের খানা খাওয়ার পর হাত বােয়াইয়া বলেন আমি এলেমের সম্মান করিতেছি । নছীহতের কথা শুনিয়া খুব বেশী বেশী ক্রন্দন করিতেন ।
নিচে তার দুটি ঘটনা উল্লেখ করলামঃ
এক সময় খলিফা হারুনুর রশীদ হজ্বে যাইতেছিলেন । পথিমধ্যে কুফা নগরীতে কয়েকদিন অবস্থান করেন । সেখান হইতে যখন রওয়ানা হইবার সময় হইল তাহার কাফেলা প্রত্যক্ষ করার জন্য শহরের বাহিরে বহুলােক জড় হইয়াছিল । বিখ্যাত বাহলুল মাজনুন (মানুষ তাকে পাগল মনে করত) কোন এক আস্তাকুড়ে গিয়া বসিয়া পড়িল। ছেলেরা তাহার চতুর্দিকে একত্রিত হইয়া কেহ হাসি তামাশা ও কেহ কেহ ঢিলা মারিতে লাগিল। খলিফার ছওয়ারী সেখানে পৌছা মাত্রই ছেলেরা এদিক সেদিক সরিয়া গেল ও বাহলুল পাগল জোরে আওয়াজ দিয়া বলিল হে আমীরুল মােমেনীন ! হে আমীরুল মােমেনীন ! হারুন রশীদ ছওয়ারীর পর্দা উঠাইয়া বলিল লাবায়েক হে বাহলুল হে বাহলুল লাব্বায়েক ; কি বলিতে চাও বল । বাহলুল বলিল, হজৱত কোদামা (রাঃ) বলেন হুজুর (ছঃ) কে আমি হজ্বের সময় মিনাতে একটি উটের উপর ছওয়ার দেখিয়াছি যাহার উপর সাধারণ আসন ছিল। লােকজনকে সামনে হইতে হটিয়া যাও , এইরূপ কোন শােরগােল ছিল না। হে আমীরুল মােমেনীন! তুমিও এই ছফরে অহঙ্কার পরিত্যাগ করিয়া বিনয়ের সহিত চলিবে। ইহা শুনিয়া হারুন কাদিয়া ফেলিল ও বলিল বাহলুল আমাকে কিছু নছীহত কর।আল্লাহ তােমার উপর রহম করুন। বাহলুল দুইটা বয়াত পড়িল যাহার অর্থ হইল এই —”মানিয়া লও যে তুমি সারা দুনিয়ার বাদশাহ হইয়া গিয়াছ এবং সমস্ত মাখলুক তােমার কথা মানিতেছে , তাহাতে কি হইল ! আগামীকাল তােমার ঠিকানা হইল কবরের গর্তে । একজন এদিক থেকে মাটি ফেলিবে , অপরজন ওদিক হইতে মাটি ফেলিবে। ইহা শুনিয়া খলিফা বহুত কাঁদিলেন ও বলিলেন বাহলুল তুমি ভাল কথা বলিয়াছ , আরও কিছু নছীহত কর । সে বলিল আমীরুল মােমেনীন ! যাহাকে আল্লাহ পাক মাল ও জামাল দান করেন ও মালকে সে আল্লাহর রাস্তায় খরচ করে এবং আপন জামালকে পাপের কাজে ব্যয় না করে , সে আল্লাহর দপ্তরে পুণ্যবান লােকদের মধ্যে গণ্য হয়। হারুনুর রশীদ বলিলেন তুমি বেশ ভাল কথা বলিয়াছ উহার জন্য তােমাকে কিছু পুরস্কার দেওয়া উচিত। বাহলুল বলিল পুরস্কারের টাকা যাহাদের নিকট হইতে ট্যাক্স উছুল করিয়া লইয়াছ তাহাদিগকে ফেরত দিয়া দাও । হারুন বলিলেন তােমার নিকট কাহারও কর্জ থাকিলে তাহা আদায় করিয়া দিব । বাহলুল বলিল কর্জ দ্বারা কর্জ আদায় করা যায় না । প্রথমে অন্যের হক আদায় করিয়া দাও । তারপর অপরের কর্জের ফিকির করিও । খলিফা বলিল তােমার জন্য কি কোন ভাতা নিযুক্ত করিয়া দিব ? যার দ্বারা তােমার খাওয়ার ব্যবস্থা হইয়া যায়। বাহলুল বলিল আমি এবং তুমি উভয়ে আল্লাহর বান্দা। ইহাতাে অসম্ভব যে আল্লাহ পাক তােমার রুজীর ফিকির করিবেন আর আমার রুজীর ফিকির করিবেন না অতঃপর খলিফা ছাওয়ারীর পর্দা ঢালিয়া সম্মুখে অগ্রসর হইয়া গেল ।
খলিফা হারুনুর রশীদ অন্য একদিন হজ্বে যাইতেছিলেন , রাস্তার মধ্যে ছাদুন মাজনূনের সহিত সাক্ষাত । সে কয়েকটা কবিতা পাঠ করিল যাহার অর্থ হইল এই মানিয়া লও যে তুমি সারা দুনিয়ার বাদশাহ বনিয়া গিয়াছ কিন্তু তাহাতে কি হইল তােমার কি মৃত্যু আসিবে না ? দুনিয়াকে নিজের শত্রুদের জন্যই ছাড়িয়া দাও। আজ যেই দুনিয়া তােমাকে বহুত হাসাইতেছে কাল উহা তােমাকে ভীষণ কাঁদাইবে । বয়াত শুনিয়া হারুণ একটা চীৎকার মারিয়া বেহুশ হইয়া পড়িয়া গেল । বর্ণিত আছে খলিফা এত দীর্ঘ সময় বেহুশ ছিল যে , তিন ওয়াক্ত নামাজ তাহার কৃাজা হইয়া গিয়াছিল । তাহার আংটিতে মােহর করা ছিল শ্রেষ্ঠত্ব এবং মহত্ব একমাত্র আল্লাহর জন্য ইহা সর্বক্ষণ তাহার সামনে থাকিত।
আমর ইবন বাহর আল – জাহিজ বলেন , খলিফা হারূন রশীদের জন্য ভাবগাম্ভীর্য ও রসিকতার এমন সমন্বয় ঘটেছিল যা তার পরে আর কারাে ক্ষেত্রে ঘটেনি। যেমনঃ ঈমাম আবু ইউসুফের ন্যায় ব্যক্তিত্ব ছিলেন তার কাযী ( প্রধান বিচারপতি ) , বারমাকী দের ন্যায় বিদ্বান – গুণবানরা ছিল তার উযীর ও মন্ত্রী ; অত্যন্ত সুসতর্ক ও ধীমান ফাযল ইবনুর রাবী ছিলেন তার প্রধান সচিব ( প্রধানমন্ত্রী ) ; উমর ইবনুল আব্বাস ইবন মুহাম্মদ তার একান্ত সহচর । মারওয়ান ইবন আবু হাফসা তার সভাকবি , তার গায়ক ইবরাহীম মাওসিলী – যিনি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সমকালে ছিলেন অতুলনীয় । ইবন আবু মারয়াম তার রসিক বন্ধু এবং তার সুরশিল্পী বারসূমা । আর ( সর্বাধিক উল্লেখযােগ্য ) তার জীবন সংগিনী উম্মু জাফর হতে যুবায়দা যিনি ছিলেন যে কোন ভাল কাজে সর্বাধিক আগ্রহী এবং যে কোন নেক ও পুণ্যের কাজে সকলের চেয়ে অগ্রগামী । হারুনুর রশীদের অস্বীকৃতির পরে যিনি হারামে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা ( নহরে যুবায়দা খনন করে) সম্পন্ন করেছিলেন এবং তার হাত দিয়ে আল্লাহ তা ‘ আলা এ ধরনের অনেক শুভকর্ম সম্পাদন করিয়েছিলেন । খতীব বাগদাদী বর্ণনা করেন হারুনুর রশীদ বলতেন , “আমরা এমন এক সম্প্রদায়ের সদস্য যাদের দর্শন প্রভাব বিস্তারকারী, যাদের উথান সুন্দর, আমরা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর উত্তারাধিকার “।
যদি পোস্টটি ভালো লাগে তাহলে আমার সাইটটি ঘুরে দেখুন একবার ☞ hmvai.com
ধন্যবাদ ৷
সুত্রঃ ইনটারনেট ৷