আসসালামু আলাইকুম সবাই কেমন আছেন…..? আশা করি সবাই ভালো আছেন । আমি আল্লাহর রহমতে ভালোই আছি ।আসলে কেউ ভালো না থাকলে TrickBD তে ভিজিট করেনা ।তাই আপনাকে TrickBD তে আসার জন্য ধন্যবাদ ।ভালো কিছু জানতে সবাই TrickBD এর সাথেই থাকুন ।
উপুড় হয়ে শোয়া বা ডান কাতে শোয়া নিয়ে ইসলাম কি বলে
উপুড় হয়ে শোয়া, চিত হয়ে শোয় কিংবা ডান কাতে শোয়া, আসলে কোনটি ইসলামের নিয়ম? ইসলাম পূর্ণাঙ্গ একটি জীবন-ব্যবস্থা হওয়ায় ইসলাম জীবনে চলার সকল নিয়ম কানুন বলে দিয়েছে। ঘুমানোটা মানুষের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই, ঘুমানোর সময় কিভাবে শোয়া উচিত এ সম্পর্কেও ইসলাম বলে দিয়েছে।
সঠিক নিয়মে শোয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ। ভুল নিয়মে ঘুমানোটা যেমন, ইসলামি হুকুম অমান্য করা হয় পাশাপাশি শরীরের জন্যেও ক্ষতিকর। শরীরের জন্য যা ক্ষতিকর সে-সব কাজ বা বস্তুকে ইসলাম হারাম ঘোষণা করেছে।
সুতরাং, একজন মুসলমান হিসাবে সঠিক ভাবে শোয়ার বা ঘুমানোর নিয়ম জানা আমাদের প্রত্যেকের জন্য আবশ্যক। সেই আবশ্যক বিষয় নিয়ে আজকে আমরা আলোচনা করবো। আসলে, ইসলাম কিভাবে শোয়ার কথা বলেছে?
উপুড় হয়ে শোয়া
সাধারণত ঘুমানোর তিনটি অবস্থা দেখা যায়। যথা:
চিত হয়ে শোয়াউপুড় হয়ে শোয়াডান কাত হয়ে শোয়া
এই লেখায় এই তিনটি অবস্থা সহ শোয়ার সঠিক নিয়ম নিয়ে আলোচনা করা হবে।
চিত হয়ে শোয়া
হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শোয়ার সাধারণ নিয়ম ছিল, তিনি ডান কাতে শুয়ে আরাম করতেন। সাধারণভাবে তাঁর ডান হাত মাথা মুবারকের নীচে থাকত এবং চেহারা কেবলা মুখী থাকত।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ইয়াজিদ রা: বর্ণনা করেন, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মসজিদে নববীতে এমন অবস্থায় চিত হয়ে শোয়ে থাকতে দেখেছেন যে, তখন তার একটি পা অপর পায়ের উপর রাখা ছিল।
– বুখারী, মুসলিম ।
উপরোল্লিখিত হাদিসের বর্ণনাকারী একবার মাত্র হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মসজিদে চিত হয়ে শুইতে দেখেছেন। এটা ছিল একটা অসাধারণ ব্যাপার৷ হয়ত কাত পরিবর্তন করার জন্য তিনি এমন করে থাকবেন। এই মতের স্বপক্ষে যুক্তি হল এই যে, স্বয়ং বর্ণনাকারীই বলছেন যে, তখন তার একটি পা মুবারক অন্যটির উপর রাখা ছিল।
আর যদি এভাবেই তিনি শুয়ে থাকেন তবুও এক পা অপর পায়ের উপর রাখার দ্বারা এ বিষয়ে তার পূর্ণ সতর্কতার বিষয়টিই ফুটে উঠে। এভাবে পায়ের উপর পা রাখার কারণে শরীরের কাপড় এদিক সেদিক হতে পারে না। কারণ, ঘুম তো ঘুমই। গভীর নিদ্রায় অবচেতন হয়ে যাওয়া একটি অতি স্বাভাবিক ব্যাপার ৷ এমতাবস্থায় শরীরের কাপড় এদিক সেদিক হয়ে যাওয়া অসম্ভব কিছুই নয়।
একথা ঠিক যে, প্রত্যেক ব্যক্তির অভ্যাস ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে । কিন্তু পরম সৌভাগ্য-শীল সেই ব্যক্তি, যে তার অভ্যাস রাসূল করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মহান আদর্শ মোতাবেক গঠন করে, দুনিয়া ও আখিরাতের অফুরন্ত কল্যাণ ও সফলতার অধিকারী হয়।
উপুড় হয়ে শোয়া
হযরত ইয়াঈশ ইবনে তিখফ রা: হতে বর্ণিত, তিনি বলেন আমার পিতা বর্ণনা করেছেন যে, একদা আমি মসজিদে উপুড় হয়ে শোয়া ছিলাম । হঠাৎ আমি অনুভব করলাম যে, কেউ আমাকে তার পা দিয়ে নাড়া দিচ্ছে। অতঃপর বলছে যে, এভাবে উপুড় হয়ে শোয়াকে আল্লাহ অপছন্দ করেন। আমার পিতা বলেন, অতঃপর আমি চোখ খুলে দেখলাম (এ ব্যক্তি আর কেউ নন) স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
আপনি ভেবে দেখেছেন! নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপুড় হয়ে শোয়াকে কত বড় ভুল ও ক্ষতিকর হিসাবে উল্লেখ করেছেন! মহান আল্লাহ এভাবে শোয়াকে ঘৃণা করেন।
উপুড় হয়ে শোয়ার ফলে মানুষের দৃষ্টিশক্তি, পাকস্থলী, হজমশক্তির উপর অত্যন্ত খারাপ প্রভাব ফেলে। এছাড়া, শ্বাস-প্রশ্বাস ও হার্টে নানা রকম রোগের সৃষ্টি করে।
যে কাজটির মধ্যে এত ক্ষতি, তাহলে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সে কাজটি পছন্দ করবেন কেন? যারা মানুষের মঙ্গল আর কল্যাণ চান, তারা মানুষের জন্য মন্দ ও ক্ষতিকর কোন বিষয়কে কিভাবে মেনে নিতে পারেন?
ডান কাতে শোয়া
হযরত আবু হুরাইরা রা: রেওয়ায়াত করেন, রাসূল আকরাম সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন যে, তোমাদের কেউ যখন ফজরের দু’রাকআত সুন্নত পড়ে ফেলবে, সে যেন ডান কাতে শোয়ে জামাআত শুরু হওয়ার পূর্বে কিছু সময় আরাম করে নেয়।
– আবূ দাউদ, তিরমিযী, রিয়াযুস সালেহীন
এ বিষয়ে স্বয়ং রসূল আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অভ্যাস কি ছিল? এই প্রশ্নের জবাব রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সম্মানিত স্ত্রী উস্মুল মুমেনীন হযরত আয়েশা রা: এর বর্ণনা –
তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি সুন্নত নামায পড়ার পর ডান কাতে শুয়ে কিছু সময় আরাম করতেন।
উল্লেখিত দু’টি হাদিসে যদিও ফজরের সুন্নতের পর কিছু সময় আরাম করার বিষয়ে হুযুরের মূল্যবান বাণী ও উসওয়ায়ে হাসানা উল্লেখিত হয়েছে।
কিন্তু হুযুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সব সময়ের নিয়মও এরূপই ছিল। তিনি সর্বদাই ডান কাতে শোতেন। ডান হাত মাথার নীচে এবং মুখ কেবলামুখী থাকত।
আমরা একটু পরেই এ সম্পর্কিত অন্যান্য হাদিসের মাধ্যমে বিষয়টিকে আরে! স্পষ্ট করে তুলব। বন্তুতঃ আমাদের জন্যও এভাবে শুয়ার মধ্যেই মঙ্গল নিহিত রয়েছে। মানুষের হার্ট তার বুকের বাঁপাশে রয়েছে।
বর্তমানের সকল ডাক্তারগণ এ বিষয়ে সম্পূর্ণ একমত পোষণ করেন যে, হার্টের উপর কোন প্রকার ভার চাপানো স্বাস্থ্যর জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর ৷ তাই মানুষ যদি বাম দিকে কাত হয়ে শয়ন করে তাহলে অবশ্যই তার হৃদযন্ত্রের উপর চাপ পড়বে ।
চিন্তা করে দেখুন! আজ থেকে চৌদ্দ-শত বছর পূর্বে যখন বর্তমান এই চিকিৎসা শাস্ত্রের নতুন নতুন গবেষণা ও বিস্ময়কর আবিষ্কারের কোন নাম নিশানাও ছিল না তখন একজন উম্মী নবী কত প্রজ্ঞা ও হিকমত পূর্ণ শিক্ষা প্রদান করেছেন । এবং কত সর্বাঙ্গ সুন্দর, সর্বোত্তম একটি আদর্শ জীবন যাপন করে গেছেন।
শুয়ার সঠিক নিয়ম
পূর্ব আলোচনায় আমরা দুটি হাদিস উদ্ধৃত করেছি। যেগুলোর বিষয়বস্তু হল এই যে, হুযুর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের দু’ রাকআত সুন্নাত নামায পড়ার পর ডান কাতে শুয়ে একটু আরাম করতে বলেছেন। তিনি নিজেও এই আমল করেছেন। এ পর্যায়ে আমরা হুযুরের সাধারণ ও ব্যাপক হুকুম উদ্ধৃত করছি। এই হাদিসের বর্ণনাকারী হলেন হযরত সায়ীদ ইবনে আবূ উবাইদা রা:।
তিনি বলেন, হুযূর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন তোমারা যখন শুয়ার জন্য বিছানায় যাবে তখন প্রথমে অযু করবে, যেমন নামাযের জন্য অযু কর । অতঃপর ডান কাতে শুয়ে পড়বে।
– বুখারী শরীক
হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবী হযরত ইয়াঈশ (রাধিঃ) তার পিতার নিকট থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, একবার আমি মসজিদে উপুড় হয়ে শুয়া ছিলাম । হঠাৎ কেউ যেন আমাকে তার পা দিয়ে নাড়া দিল এবং বলল বে, এভাবে শুয়া আল্লাহ তা’আলা অপছন্দ করেন।
অতঃপর আমি যখন চোখ ভুলে তাকালাম তখন দেখতে পেলাম যে, এই ব্যক্তি হলেন স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম । হুযুর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ডান কাতে শুতেন এবং তার ডান হাত মাথার নীচে দিয়ে ঘুমাতেন।
পরিশেষে
এই ছিল ইসলামে শোয়ার সঠিক নিয়ম কানুন। এই লেখায় কেবল শোয়ার অবস্থান নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আশাকরি এখন থেকে সবাই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দেখানো এই নিয়ম অনুসরণ করবেন। এবার জেনে নিন, বিস্ময়কর মানব শরীর, যা জানলে আপনিও অবাক হবেন।
দ্বীনি কথা শেয়ার করে আপনিও ইসলাম প্রচারে অংশগ্রহণ করুন।
সূত্র: islamientertainment.com